Arnab Deb

Horror Thriller

3.4  

Arnab Deb

Horror Thriller

ভয়ানক সেই কালো বিড়াল

ভয়ানক সেই কালো বিড়াল

4 mins
692


এসএসসি পরীক্ষা শেষ।তাই এবার অনেক লম্বা ছুটি পাবো।তাই কোথায় যাওয়ার জন্য প্ল্যান করতে লাগলাম।অনেক চিন্তা ভাবনার পর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।নিজের প্রিয় বন্ধু সুমনকে আমার সাথে আমার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম,সে রাজি হলো।নির্দিষ্ট দিনে বাসে করে আমি আর সুমন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলাম।আমরা মঙ্গলবার এর দিকে গিয়েছিলাম তাই তেমন ভিড় ছিল না।গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনোর পরেরদিন-ই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা।গ্রামের শরিফ আলী নাকি মারা গেছেন।তাও আবার আত্মহত্যা করে।আমার মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো।পুলিশ তদন্ত করে বলেছে তিনি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।আমি বুঝলাম না উনার মতো মানুষের আত্মহত্যার কি প্রয়োজন।কেননা উনার দুই মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।নাতি-নাতনি ও পেয়েছেন।উনার তো খুশিতে থাকার কথা।যাইহোক সেদিন উনার বাড়িতে আসা যাওয়া করতে করতে আর উনার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত হয়ে গেলো তা বুঝতেই পারিনি।সারাদিন দৌড়াদৌড়ির পর খাওয়া -দাওয়া শেষে আমি আর সুমন বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তবুও রাতের বেলা আমার ঘুমই আসল না।তবুও আমি জোর করে শুয়ে রইলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় দশটা বেজে গেলো।ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার পাশে সুমন নেই।তারপর ভিতরের রুমে গিয়ে দেখি শুধু সুমনই নই আমার দুই কাকী আর দুই বোন ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই।আমি কাকীকে বাকিরা কোথায় জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন বাড়ির সবাই জসীম চাচার বাড়ি গেছেন,সুমনও নাকি সেখানে।জসীম চাচা কাল রাতে মারা গেছেন।তারপর আমি দেরি না করে এক দৌড়ে জসীম চাচার বাড়ি যাই।গিয়ে শুনি জসীম চাচা গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।লোকজন বলতে লাগল যে গ্রামে নিশ্চয়ই কারো অভিশাপ লেগেছে। যার কারণে লোকজন একে একে মারা যাচ্ছে।তারা ভয়ে রাতের বেলা ঘর থেকে বেরুনো বন্ধ করে দিল।তারপর আভি আর সুমন একটি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা রাতে বাইরে বের হবো।আমাদের যা হোক তাই হবে কিন্তু আমরা গ্রামের মানুষের মৃত্যুর রহস্য খুজে বের করব।রাতে খাবার টেবিলে শুধু এ বিষয়েই কথা হচ্ছে।এক পর্যায়ে কাকা বললেন কালকে আমরা গ্রামবাসী মিলে কোন সন্ন্যাসী বা পুরোহিতের কাছে যাবো উনারা যদি কোন সমাধান দেন।খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।আমি আর সুমন অভিনয় করছিলাম তারপর সবাই ঘুমানোর পর চুপিচুপি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি।কিছু পথ হাটার পর দেখি আমাদের প্রতিবেশী আনোয়ার চাচা পুকুর পাড়ের দিকে যাচ্ছেন।আমি তখন কিছু বুঝলাম না শুধু উনাকে ডাকলাম।উনি কোন উত্তর দিলেন না।হঠাৎ মনে পড়ল যে তিনি তো সাতার কাটতে যানেন না।তখন আমি বুঝলাম হয়ত তিনি নদীতে ডুব দিয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন।আমি আর সুমন তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে উনাকে আটকে দিই।কিছুক্ষণ পরে তিনি হুশে এলেন।আমি উনাকে জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন উনি জানেন না যে তিনি কীভাবে পুকুর পাড়ে এলেন।তিনি বললেন তিনি শুধু একটা বিড়ালের কান্নার শব্দ শুনেছিলেন তারপর আর উনার কিছু মনে নেই।তখন আমার সামনে থাকা বিড়ালটি দৌড় দিল। আমি আর সুমন দৌড়ে গিয়ে বিড়ালটির পথ আটকে দিলাম।তারপর পকেট থেকে ম্যাচের বাক্স বের করে বললাম বল তুমি কে নইলে আগুন লাগিয়ে দিবো।বিড়ালটি বলল না না আমায় মেরো না আমি সব কথা খুলে বলছি।বিড়ালটি তার বিড়াল রূপ থেকে এক সুন্দর নারীতে পরিণত হলো।সুমন বলল তিনি আকাশ আলীর স্ত্রী।আকাশ আলী প্রতিদিনই মদ খেয়ে বাড়ি আসতেন।বাড়িতে এসে তিনি তাকে ও তার মেয়েকে মারধর করতেন।মেয়ে শুধু বলতো মা বাবা আমাদের মারছেন কেন?আমি কোন উত্তর দিতাম না।এরকম চলার পর আমি একদিন এক সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করলাম ও তাকে সব কথা খুলে বললাম।তারপর উনাকে জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে আমার মেয়েকে আমার কাছে রাখা যাবে কিন্তু কেউ দেখতে পাবে না।তিনি বললেন আমি একটি বিড়ালের মধ্যে মন্ত্র পড়ে তোমার মেয়েকে ঢুকিয়ে দিচ্ছি তাতে কেউ বুঝতেই পারবে না বিড়ালটির মধ্যে কোন মেয়ে আছে।পরের দিন আমি আমার মেয়েকে উনার কাছে নিয়ে গেলাম আমাদের পোষা বিড়াল সহ।তিনি মন্ত্র পড়ে কাজটি সম্পাদন করলেন।কিছুদিন পরে আকাশ আলীর স্ত্রী কাজের জন্য একটু বাইরে গিয়েছিলেন।তিনি বিড়ালটি তথা তার মেয়েকে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন।আকাশ আলী সেদিন রেগে গিয়ে কাছে কাউকে না পেয়ে বিনা কারণে নিজের রাগ মেটানোর জন্য বিড়ালটিকে মেরে ফেলেন।বিড়ালটিকে মেরে ফেলার পর পরই বিড়ালটি থেকে তার মেয়ে বেরিয়ে আসে।আকাশ আলীর স্ত্রী এসে দেখেন তার মেয়েকে তার স্বামী মেরে ফেলেছে। কিছুদিন পরে আকাশ আলী আরেকটি বিয়ে করেন।মেয়ের শোকে আকাশ আলীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেন ।মৃত্যুর পর তার আত্মা এই বিড়ালটির মধ্যে প্রবেশ করে।তারপর থেকে বিড়ালটি যখন কাদে তখন এই কান্নার শব্দে শব্দ শোনা মানুষ আত্মহত্যা করে।আকাশ আলীর স্ত্রী আমাদের আরো বলেন যতদিন পর্যন্ত আকাশ আলীকে শাস্তি দেওয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত তার আত্মা শান্তি পাবে না।তখন আমি আকাশ আলীর স্ত্রী কে কথা দিই যে আমরা আকাশ আলীকে নিশ্চয়ই শাস্তি দিবো।তারপর বিড়ালটির দেহ থেকে আকাশ আলীর স্ত্রী বেরিয়ে যায় এবং বিড়ালটি মারা যায়।পরেরদিন আমার বন্ধু সুমনকে মৃত পাওয়া যায়।আমি বললাম আত্মাটি তো চলে গেছে তারপর ও আমার বন্ধু কীভাবে মারা গেলো।আমি একটি পুরোহিতের কাছে যাই এবং ঘটনাটি খুলে বলি।তিনি বলেন তোমার বন্ধু র শরীরে কোন খারাপ আত্মা প্রবেশ করেছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল তোমাকে মারা। তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যাও।আমি একটু সুতো তোমার হাতে বেধে দিচ্ছি।এই সুতো কখনো খুলো না নইলে তুমি বিপদে পড়তে পারো। আমি সেদিন ই বাসের টিকিট কেটে বাড়ি ফিরি। আমি আজও বুঝতে পারি না সেদিন আমার সাথে কী ঘটেছিল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror