ভৌতিক সভা
ভৌতিক সভা
আরে রাখুন মশাই, এমন লেখা রোজ রোজ কত মানুষ যে নিয়ে আসে আমাদের কাছে, তার মনে তো এটা নয় লেখা আনলেই সেটা ছেপে বের করতে হবে, আরে বাবা বাজার খাবে তবে না, মোদ্দা কথা হলো বাজার এ বই এর কাটতি কেমন সেটা বড়ো কথা. এর আজকাল তেমন ইন্টেলেক্টওলা লেখাটেখা মানুষ এতো পড়ে না মশাই. এই তো ধরুন না সাইফুল হক এর নাম দিয়ে সেদিন এত বড়ো একটা আর্টিকেল আমরা বের করলাম আমাদের মাসিক পত্রিকাতে, তা লেখাটা কটা মানুষ পড়েছে শুনি? হাঃ?
ওনার নাম আছে তাই ছাপতে হয়, তাই বলে সব্বারটা নাকি? শেষ এর কথাটা রবীন্দ্র বাবু এর কেমন একটা কানে লাগলো, শুরুর দিকে লেখক কবিদের কপাল এ সম্মান জোটে না, সেটা তিনি জানেন, তা বলে এভাবে পত্রপাঠ অপমান করে বের করাটা মেনে নিতে পারলেন না, একটা তীব্র অভিমান আর চোখ ফেটে বেরিয়ে আসা কান্নাটা চেপে অস্ফুট একটা হাসি দিলেন, চ্যানেল ফাইল এ বাংলা হরফ এ কাল রাত এ ডিটিপি করা লেখাটা হাত এ তুলে শুকনো নমস্কার জানালেন.
“এই দেখো, আপনি তো আবার রাগ করে ফেললেন দেখছি”, প্রকাশক এর এই কথা টা তে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না রবীন্দ্র বাবু, বললেন, “কি করবো বলুন আমার নাম রবীন্দ্রনাথ সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো নয়, তাই এত ভালো প্রবন্ধ টা শুধু প্রথম অংশ টুকু পরেই আপনি রিজেক্ট এর খাতায় ফেলে দিলেন”,
এবার মুচকি হাসলেন প্রকাশক, আরে না না, ব্যাপারটা তেমন নয়, রবি ঠাকুর হতে হবে না, আমি বলি কি সামান্য কিছু খরচাপাতি করুন, একটা দুটো বই আমরাই বের করে দেব, একটু ষ্টল এ ষ্টল এ বলে শোকেসে এর সামনের দিকে সাজিয়ে রাখলেই কেল্লা ফতে, তখন দেখবেন আপনার ঘরে আমার মতো কত প্রকাশক লাইন দিয়েছে এমন সব লেখা এর বায়না নিয়ে. “ও বুঝলাম”, উত্তর দিলেন রবীন্দ্রনাথ. আচ্ছা দেখি.
আর কথা না বাড়িয়ে প্রকাশক এর অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লেন, কলেজ স্কয়ারে এর একটু এগিয়ে বাম দিকে যে চা এর দোকান টা আছে, ওখান এ বসে চিনি ছাড়া চা এর অর্ডার দিয়ে নিজের মনকে প্রশ্ন করতে লাগলেন, এই যে সবাই বলে গেছে চেষ্টা করে যাও ফল এর আসা না করে, কথাটা কতটা সত্যি? শালা, চেষ্টা এর কোনো ত্রুটি রেখেছি?
চ্ছেরি
হাঁটুর বয়েসী ছোকরা প্রকাশক কে স্যার স্যার করে তেল দেওয়া থেকে লিটল ম্যাগাজিনে এর ইন্টেলেক্চুয়াল প্রকাশক এর সস্তা বুর্জোয়া সমাজশত্রু এর আসরে গল্প সোনা, চা খাওয়ানো সব এ তো করলেন, ফল কি মিললো? নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে তার টেনিদা এর ভাষা তে বলতেই পারতেন তোমার কেস টা পুদিচ্ছেরি । ভালো অফিস এর অফিসার ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, স্ত্রী এর অসুস্থতা তে ভি.র.স. নিয়ে নিলেন, যা ছিল সব তাই ডাক্তার আর হাসপাতাল এ চলে গেল, তাও বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রী মাধবী কে, সন্তানাদি ও নেই, তাই একদম একা হয়ে গেলেন, আর সঙ্গী হলো সাহিত্য, কিন্তু তাতেই আর সাফল্য কোথায়! রোজই প্রকাশক এর দোরে দোরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, আরে বাবা নিজের টাকা এ বই ছাপাবার সামর্থ থাকলে তোদের আমি তেল দিতাম!!, কবে বের হয়ে যেত আমার বই.
"যাক বাঙালি তাহলে আজ কাল ইন্টেলেক্চুয়াল নিবন্ধ লিখতে পারে," পাস্ থেকে কেমন একটা মেয়েলি টাইপ পুরুষ কণ্ঠ কানে এল, চা এর দোকান এর বেঞ্চ এ তার ফেলে রাখা তার লেখা টার দিকে তাকিয়ে কথা টা বলছেন একজন পঞ্চাশ উর্ধ মানুষ. "আমাকে কিছু বললেন?" প্রশ্ন করলেন রবীন্দ্রনাথ, উত্তর এল হা, বেশকিছু টা চুপ থেকে ব্যাক্তি টি আবার ও প্রশ্ন করলেন " ছাপছে না বুঝি? ", বিরক্ত স্বরে রবীন্দ্রনাথ এর জবাব এল, না.
ছাপবে কি করে, এসব লেখা এর মর্ম বোঝে যারা তাদের কাছে পৌঁছতো হবে, তবে না. ঘাড়টা ঘুরিয়ে রবীন্দ্রনাথ লোক টিকে একটা শ্লেষ জড়িয়ে বললেন বললেন “তারা করা শুনি? ইহো জগৎ না অন্য জগৎ এর কোনো কেও?” মুচকি হেসে এবার আগুন্তুক বললেন, “১৩ নম্বর বনমলি এভিনিউ এ আসুন আজ সন্ধে বেলা, অনেক প্রকাশক আর বাঙালি সাহিত্যের দিকপালরা আসেন, একবার লেখা টা পরে শোনান, আসা করি এ লেখার সেখান এ অবহেলা হবে না”. কথাটা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক, “আপনার নাম টা জানা হলো না!! ওখান এ পৌঁছে কি করে খুঁজবো আপনাকে” জিজ্ঞাসা করলেন রবীন্দ্রনাথ, “আমার নাম পরিতোষ পাঠক, আমারই বাড়ি তে সভা টা বসে, আমি সন্ধেবেলা বাড়ি থাকবো, আমি সন্ধে ৭ টা নাগাদ আসুন, আমরা অপেক্ষা করবো”. বলেই চলে গেলেই ভদ্রলোক
ঠিক বিকাল ৬ টা নাগাদ এক কাপ চা এর দুটো বিসকুট খেয়ে রবীন্দ্রনাথ লেখা টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, বেশি খুঁজতে হলো না, প্রকান্ড বাড়ি, দেখে বেশ বড়লোকি ছাপ পাওয়া যায়. কলিং বেল বাজাতেই একজন কম বয়েসী ছোকরা চাকর দরজা খুলে দিলো, আর নিয়ে গেল এক প্রকান্ড হল ঘরে, ঘরটি সুন্দর করে সাজানো, চারি দিকে আভিজাত্যর চিহ্ন, ইতিমধ্যে অনেক মানুষ বসে আছেন, যাদের কেউকেও তেমন চেনা লাগছে না একজন মানুষ এর মুখটা একটু শুধু চেনাচেনা লাগছে, তরুণ বয়েস কবি কবি চেহারা, একজন বেশ লম্বা হালকা দাড়ি আছে সুপুরুষ, আর একজন এর বেশ বলিষ্ট চেহারা সরু গোফ, ঘর এর আলো খুব কম, একটি করে চেয়ার, আর পাসে একটি করে ছোট টেবিল. আর তাতে টেবিল ল্যাম্প এর আলো তে, কাগজ রাখা, রবিন্দ্রনাথ কে চাকর টি একটি টেবিল দেখিয়ে দিলো,
হঠাৎ ওই সাইড এর বড়ো দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকলেন, সকাল এর সেই পৌঢ় ব্যাক্তিটি. সকলকে নমস্কার করে রবীন্দ্র এর পরিচয় দিলেন সকলকে, সভা শুরু হলো, সভা এর নিয়ম সহজ, সকল এ একটি মাত্র নিজ রচনা পাঠ করতে পারবেন, লেখা পথ শেষ হলে অন্যরা সমালোচনা করতে পারবেন. কেও কবিতা পরে শোনাচ্ছেন, কেও বা প্রবন্ধ, কেও বা গল্প, লেখা পথ হলে, সকলেই মন্তব্য রাখছেন. রবীন্দ্রনাথ বাবু তার নিবন্ধ টি পাঠ করলেন আর ভূয়সী প্রশংসা পেলেন সকল এর থেকে, একজন তো জানালেন সভা শেষে তিনি যেন তার সাথে কথা বলেন, তিনি তার প্রত্রিকা তে ছেপে বের করবেন লেখা টি, সব এ ঠিক চলছিল কিন্তু হঠাৎ সেই তরুণ কবি টি, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর কবিতা পরে সোনাতে লাগলেন, অবাক হলেন রবীন্দ্রনাথ এত পুরো টুকে দিয়েছে, এর পাঠ শেষ হলে সকল এ মন্তব্য করলো প্রশংসা করলেন , আরো অবাক হলেন এর পরে জন এর লেখা টা শুনে "হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে" এই টুকু বলতেই রবীন্দ্রনাথ এর থাকতে না পেরে বললেন, থামুন মশাই, এ কেমন সভা, বিখ্যাত কবি দের লেখা এর পাঠ করছেন, আবার নিজের বলে চালাচ্ছেন, সবাই চুপ. আর পরিতোষ বাবু, আপনি আমাকে বললেন এটা নাকি স্বরচিত লেখা পাঠ এর আসর এ তো পুরো তাই টোকা, আমার এখন খেয়াল হচ্ছে, ওই যে উনি যে কবিতা পড়লেন এটা তো রবি ঠাকুর এর লেখা, ওনার টা সুকান্ত ভট্টাচার্য্য আর উনি পাঠ করছেন জীবনানন্দ এর বনলতা সেন, মশাই টোকা টুকি এর একটা লিমিট থাকে, হাত তুলে থামতে বললেন পরিতোষ পাঠক আর তার পাসের দেওয়াল এ ইলেকট্রিক এর সুইচ বোর্ড এর আলোটা জেলে দিলেন, সাথে সাথে ভীষণ চমকে গেলেন রবীন্দ্র নাথ, এ সব কারা, ওনার সামনে বসে আছে, তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যী, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণ আরো কত কত নামি মানুষ, মাথা তা বন বন করছে, ছুটে বেরিয়ে গেলেন, ঘর থেকে, বাইরের দরজা ঠেলে সামনের রাস্তা তে এলেন, একটা ইট এ ঠোক্কর খেলেন তারাহুরতে, হোঁটচ খেয়ে পড়লেন সামনেই, তাও উঠে দাড়িযে ছুটলেন , সামনেই একটা ট্রাম যাচ্ছিলো, চলন্ত ট্রাম এ উঠে পড়লেন. ধপ করে বসে পড়লেন সামনের কাঠের সিট এ.