Ariyam Bhattacharya

Classics

2  

Ariyam Bhattacharya

Classics

ভালো থাকবেন ....... বিপিনদা

ভালো থাকবেন ....... বিপিনদা

7 mins
925


শ্যামবাজার মুখী পাইকপাড়া টালা ব্রিজ টা পার হয়েই যে চার মাথার মোড় টা পড়ে সেখান থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে খান তিন এক বাড়ি পেরোলেই আমাদের পৈতৃক বাস। আমার বাবা ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশন এর এক মধ্য পদস্থ কেরানি। মা এর কাছে শুনেছি বাবা নাকি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বাবার লেখাপড়ার ধরণ ধারণ অবিশ্যি আমার নিজের চোখে দেখা। সামান্য মাইনে থেকে সংসার খরচ আর আমার,মা এর ছোটোখাটো শখ আহ্লাদ মেটানোর পরেও ঠিক টাকা বাঁচিয়ে কত রকমের বই যে কিনে আনতেন তা বলে শেষ করা যায় না। অফিস থেকে ফিরে স্নানের পর সেদ্ধ ছোলা আর দুধ চিনি ছাড়া চা ছিল বাবার বাঁধা। মুড়ি বাবা চামচ এ করে খেতেন। হাত ছোয়াতেন না। আর চা আসতো বড়বাজারের দত্ত টি স্টোর থেকে। সে ব্যাপারে বাবার বিশেষ খুঁতখুঁতামি ছিল। সেই তখন থেকে পড়াশুনো শুরু হতো। চলতো বহু রাত অবধি। মাঝে খাবার সময়টুকু আমাদের, মানে আমার আর মায়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। পারিবারিক যাবতীয় আলোচনা,পরামর্শের জায়গা ছিল খাবার ঘরটা। এরকম একজন মানুষের সাথে সামান্য কেরানির পেশা ছিল ভয়ঙ্কর বেমানান। বড় হয়ে সেকথা মা কে বলায় মা বলতেন বাবার জীবনে ,অবশ্যই বিয়ের আগে ,এমন কিছু ঘটে যার ফলে তড়িঘড়ি লেখাপড়া একপ্রকার বন্ধ করে চাকরিটা নিতে হয়। কিন্তু সেই ঘটনা যে আসলে কি তা বাবা মা কেও কোনোদিন বলতে চাননি।

 

বই ছাড়া বাবার আর একটা সাংঘাতিক নেশা ছিল ফুটবল। বাবাকে আমি কোনোদিন প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এই ফুটবল ব্যাপারটা বাবা এতটাই উপভোগ করতেন যে তাতে মনে হতো একটা চাপা কষ্ট ,যন্ত্রনা বাবার মনের খুব গভীরে জমাট বাঁধা আছে এবং ফুটবল কে আশ্রয় করে সাময়িক সেই সবকিছু ভুলে বাবা অন্য একটা জগতে হারিয়ে যেতেন। একরকম বাবার ফুটবল নিয়ে পাগলামির জেরেই আমাদের মতো ছাপোষা পরিবারে বড় হয়ে ওঠা আর পাঁচ টা ছেলের মতো গতানুগতিক ক্যারিয়ার এর রাস্তা ছেড়ে আমি হয়ে গেলাম ফুটবলার । শুরুটা হয় বছর কুড়ি আগে। বাবাই ছুটির দিনগুলোয় আমাকে পাইকপাড়া স্পোর্টিং এর ক্যাম্প এ নিয়ে যেতেন। একদিন ক্লাব এর প্রাক্তন অধিকর্তা রমেশ মুখুজ্জে কে ধরে আমাকে সেখানে ভর্তি করে দিলেন। সেই থেকে আমার ফুটবল এর প্রশিক্ষণ শুরু। পড়াশুনোর সময় একটু একটু করে কমতে থাকলো। বাবা অবশ্য সেসব কেয়ার ই করতেন না।বলতেন ,"শিক্ষা শুধু বই পড়েই অর্জন করা যায় এমন নয়। স্বামীজী বলতেন গীতা পড়ার চেয়েও মন দিয়ে ফুটবল খেললে ঈশ্বরের বেশি কাছাকাছি পৌঁছনো যায়। সার্বিক ভাবে মানুষের মতো মানুষ তৈরী করতে পারে ফুটবল। " 

 ২০০১ সালের ১৪ই অগাস্ট। একরকম হঠাৎই প্র্যাক্টিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাড়ার মিলন দা হাপাতে হাপাতে এসে খবর দিলো বাবাকে R .G Kar এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ম্যাসিভ কার্ডিয়াক এটাক। দিগ্বিদিক ভুলে ছুটলাম হাসপাতালে। ভর্তির ঘন্টা তিন একের মধ্যে সব শেষ। বাবা ফিরলেন না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হলো অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে কোনোরকম চিকিৎসা শুরু করারও নাকি সময় পাওয়া যায়নি। আমার বয়স তখন ১৭।সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। বাবার অফিস থেকে মা কে একটা কাজ দেওয়া হয়। শুরু হয় জীবনের এক নতুন পর্ব।এতকাল বাবার ছায়ায় থেকে ঘরকন্না সামলানো আমার মা রাতারাতি কঠিন বাস্তবের মাটিতে নিজেকে সম্পূর্ণ একা এক আপাত অগম্য গন্তব্যের সামনে আবিষ্কার করলেন। তবে বাবার স্বপ্ন কে ম্লান না হতে দেবার সংকল্পে অনড় ছিলেন তিনি। মন শক্ত করে হিসেবে করে পা ফেলে আমাকে নিয়ে চালিয়ে যান বেঁচে থাকার অদম্য লড়াই। তাই আমার খেলাধুলো একইরকম চলতে থাকে।


 ২০০৪ সাল নাগাদ কলকাতা A ডিভিশন এর ট্রায়াল এর জন্য সমস্ত ক্লাব জুড়ে হিড়িক পরে গেলো। তাবড় তাবড় মানুষের সামনে নিজেকে প্রমান করার পরীক্ষা। সেই ট্রায়াল এর হপ্তা দু এক আগে ক্লাব এ নতুন কোচ হিসেবে join করলেন বিপিন দা। বিপিন লাহিড়ী। বিপিন দা ছিলেন ভীষণ কম কথার মানুষ।ওনার নিষ্ঠা ও সময়ানুবর্তিতা সমস্ত ছাত্রদের মধ্যেই একটা সদর্থক পরিবর্তন নিয়ে আসে। নিজের মতো করে প্রত্যেকের খেলার ধরণ,ভুলত্রুটি সব চুপচাপ মাঠের ধার থেকে অবজার্ভ করতেন বিপিন দা।মোক্ষম জায়গা গুলো হাতে ধরে শুধরে দিতেন। ট্রায়াল এর প্রথম ম্যাচ ইছাপুর এর একটা দলের বিরুদ্ধে। স্কোয়াড এ নাম থাকলেও প্রথম এগারোতে যে জায়গা হবে না তা আমি জানতাম। ইছাপুরের striker ছেলেটির হাইট তাক লাগিয়ে দেবার মতো। ওরকম উচ্চতা পেলে মাঠে কি সুবিধেটাই না পাওয়া যায় বসে বসে সেই কথাই ভাবছি এমনসময় পিঠে টোকা পড়লো। ফিরে দেখি বিপিন দা। বললেন, "ওয়ার্ম up কর। নামতে হবে।" পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দেখি লাইনসম্যান এর নির্দেশে পিনাকী বেরিয়ে আসছে মাঠের বাইরে। আমি হাফ এ খেলি আর পিনাকী লেফট উইং এ। এক বাঁ পায়ের ফুটবলার ছাড়া আমাদের আর কোনো মিলই নেই। তাহলে নিশ্চই পসিশন বদল হবে। কিন্তু না। বিপিন দা এক অদ্ভুত স্ট্রাটেজি শুনিয়ে বসলেন। "centre ফরওয়ার্ড অতনু ডাবল মার্কিং এ পড়ে যাচ্ছে। ওর খেলা খুলছেনা। ও উইং থেকে ঢুকবে। তুই অপারেট করবি হাফ থেকে কিন্তু লক্ষ থাকবে ওভারল্যাপ এ যাওয়ার। তুই উঠলে অতনু ঢুকে আসবে স্ট্রাইকিং জোনে। আর পিছনে সেন্ট্রাল ডিফেন্স থেকে হাফ এ সাপোর্ট দেবে উজ্জ্বল।" এরকম কৌশল টেলিভিশনেই দেখে অভ্যস্ত ছিলাম আমরা । কিন্তু মাঠে নেমে পরবর্তী কুড়ি মিনিটের মধ্যেই দেখলাম প্ল্যান কাজে লেগে গেছে। খেলা যদিও ১-১ ড্র হয় কিন্তু আমার ক্যারিয়ার এর মোড় ঘুরিয়ে দেয় সেই ম্যাচ। উপস্থিত অনেকেরই চোখে পড়ি আমি কারণ বিপিন দার স্ট্রাটেজি আমাকে অনেকটা মাঠ জুড়ে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলো। বিপিনদার সাথে গিয়ে সেই বছরের শেষেই তারাতলা স্পোর্টিং এ সই করলাম।পরের দিন আমাদের বাড়িতে এলেন বিপিন দা। হাতে একজোড়া নতুন বুট। কি ব্যাপার জানতে চাওয়ায় বললেন ,"ওই ভারী ওল্ড ফ্যাশন এর বুট আজক্যাল আর চলেনা। এখন থেকে তুই এ ডিভিশন প্লেয়ার। কোয়ালিটির সাথে কম্প্রোমাইস করলে চলবে কেন?" আরো বললেন,"অনেক অনেক খেলা বাকি আছে। লক্ষ স্থির রাখবি। দেশের হয়ে তোকে খেলতেই হবে। জীবনে উত্থান পতন থাকবেই। বিপদ আপদ আসবে আবার চলেও যাবে। শুধু ফুটবল কে আঁকড়ে থাকিস। জানবি, যথাযথ সাধনা কাউকে খালি হাতে ফেরায় না।"আমি বললাম,"কিন্তু বিপিন দা এবার থেকে যে রোজ রোজ আর আপনার সাথে দেখা হবেনা "! উত্তরে শান্ত হাসি হেসে বিপিনদা বললেন ,"দূর বোকা, তাতে কি? আমি তো একজন শিক্ষক। শিক্ষক শিক্ষা কে ছাপিয়ে নয়। আরো কত কোচ আসবে যাবে। তোর কাজ হলো নতুন যা কিছু শিখবি সব রপ্ত করা। আমি তো আছিই। একদিন তুই ঠিক মোহনবাগানে খেলবি আর আমি গেস্ট পাস নিয়ে ডার্বি দেখতে যাবো। শুধু এগিয়ে যা। অনেক দূর যাওয়া বাকি। " এর পর থেকে জোর কদমে প্রাকটিস শুরু হয়ে গেলো। কলকাতার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ঘুরে অনুশীলন শিবির। আর লীগ এর খেলা। এরই মাঝে একদিন খবর পেলাম বিপিন দা পাইকপাড়া স্পোর্টিং ছেড়ে দিচ্ছেন। হঠাৎ করেই নাকি শরীর টা খারাপ হওয়ায় হালিশহরে দেশের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। কটা দিন সেখানে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরবেন। ভেবেছিলাম একবার দেখা করে আসব। তবে ব্যস্ততার কারণে হয়ে উঠলোনা।..... শুধুই কি ব্যস্ততা ?

পরবর্তী ৩টি বছর আমার জীবনে স্বপ্নের মতো একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে কেটে গেলো। কলকাতার ফুটবল সিন এ আমি এখন একটা পরিচিত মুখ। মোহামেডান স্পোর্টিং এ রেগুলার লেফট ব্যাক। এভাবে চলতে থাকলে মোহনবাগানে সুযোগ হওয়া কিছুমাত্র অসম্ভব নয়। অর্থকরী দিকটাও মোটামুটি স্থিতিশীল। পাইকপাড়ার বাস তুলে দিয়ে মা এর সাথে বালিগঞ্জ এ ফ্লাট নিয়ে থাকি। কলকাতা লীগ ,আই লীগ , সন্তোষ ট্রফি মিলিয়ে ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে পুরোনো বন্ধুবান্ধব ,পাড়া ,ক্লাব এর কোনো খোঁজ ই প্রায় রাখা হয়না। এইরকম একটা সময়ে গত রবিবার সকালে হঠাৎ মিলান দার আবির্ভাব।খবরাখবর বিনিময় আর সোনালী স্মৃতিচারণ পর্ব মিটতে মিলান দা এক প্রস্তাব পেড়ে বসলো। রবিবার পাইকপাড়া স্পোর্টিং এর মাঠে একটা এক্সিবিশন ম্যাচে এর আয়োজন করা হয়েছে। ক্লাব এর তরফে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে যে আমি পাইকপাড়ার হয়ে মাঠে নামছি। তাই প্রচুর লোকসমাগম প্রত্যাশিত। টিকিট বিক্রির টাকা নাকি একটি বিশেষ উদ্দেশে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আজকের দিনে ফুটবলার দের জীবন আর আগের মতো নেই।অত সহজে এই ধরণের খেলায় নেমে পড়া যায়না। একটা চোট সারা জীবনের মতো ক্যারিয়ার এর দফারফা করে দিতে পারে। সারাবছরই আজকাল খেলার মধ্যে থাকতে হয়। ইনজুরি নিয়ে বসে গেলে দ্বিতীয়বার ফিরে আসা নিয়ে রীতিমতো সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু মিলান দা নাছোড়বান্দা। কিছুতেই কিছু শুনতে চাইলো না। অগত্যা অনুরোধ রাখতে হলো। দিনক্ষণ মতো ম্যাচ এর দিন ক্লাব এ পৌঁছে দেখি কাতারে কাতারে লোক। বেশিরভাগই এসেছে আমাকে দেখতে। এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎ চোখে পড়লো বিশাল বড় ব্যানারে জ্বলজ্বল করছে " বিপিন লাহিড়ী মেমোরিয়াল ম্যাচ". আমার পায়ের নিচের মাটি যেন কেঁপে উঠলো। অবিশ্বাস আর দম আটকানো একটা অদ্ভুত শিরশিরানি বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু করলো।প্রাথমিক হতভম্ভ ভাবটা কোনোরকমে কাটিয়ে উঠে মিলান দা কে দেখতে পেয়ে ছুটে গেলাম। "এসব কি মিলান দা ?বিপিন দা.....মেমোরিয়াল ম্যাচ ??? !!!" মিলান দা কাঁধে হাত রেখে বললো ,"শান্ত হ। ইচ্ছে করেই সেদিন তোকে বলিনি। তুই ক্লাব ছাড়ার পর পর ই সেই যে দেশের বাড়ি গেলেন আর ফিরলেন না। astrocytoma ,,. লাস্ট স্টেজ। কিছুই করতে পারলাম না রে। সবথেকে বড় কথা কি জানিস ? উনি আগে থেকে সবটাই জানতেন। অথচ কাউকে কিছু বুঝতে দেন নি। পাগলের মতো ফুটবল আঁকড়ে পড়েছিলেন। তাই আজকের টিকিট বিক্রি বাবদ যা টাকা আসবে তার সবটা ওনার স্ত্রীর হাতে তুলে দেব ঠিক করেছি ক্লাব এর পক্ষ থেকে। এবার বলতো তোকে জোর করে খুব ভুল করেছি কি ?"ক্লাব ক্যান্টিন এর সামনের খোলা জায়গাটায় ধপ করে বসে পড়লাম আমি। চোখের জলের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রইলনা । একে একে ফেলে আসা দিনগুলো ভেসে উঠতে লাগলো স্মৃতিতে।এরিয়ান্স ক্লাব এর সেই ৭ নম্বর জার্সি ,শর্টস,বুট পরিহিত বিপিনদা রোদ -ঝড়-বৃষ্টি মাথায় মাঠ কামড়ে ট্রেনিং দিচ্ছেন।ক্লাব ক্যান্টিন এর রোযাকে বসে উত্তেজিত হয়ে নতুন নতুন স্ট্রাটেজির সাথে পরিচয় করাচ্ছেন আমাদের। আমার ফুটবল জগতে পা রাখা যদি বাবার হাত ধরে হয় তবে সেখানে পাকাপাকি বাসা বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিপিন দা। শুধু খেলা নয়। জীবন কে চিনতে শিখিয়েছিলেন।

নিজেকে সামলে কোনোরকমে ক্লাব ঘরে ঢুকে এলাম। আমার লকার এখনো সেরকমই আছে যেমনটা ছেড়ে গিয়েছিলাম। ক্লাব এর ছেলেরা ইচ্ছে করেই তাতে আর হাত দেয়নি। এই লকার এই রেখে গিয়েছিলাম বিপিন দার দেওয়া সেই বুটজোড়া। সত্যিই অনেক পথ যাওয়া বাকি। হয়তো কিছুই হয়ে ওঠা হয়নি এখনো।কিন্তু যেটুকু যা তার সবটাই ওই মানুষটার জন্য। ধীরে সুস্থে তৈরী হলাম। চোখের জল থামলেও সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আছে। মনে মনে বললাম, প্রাকটিস ,লীগ,বড় দল পড়ে থাক । এই ম্যাচ টাই আজ আমার কাছে সব। আগামী নব্বই টা মিনিট শুধুই বিপিন দার জন্য। যতদিন বাঁচবো আপনাকে ভুলবোনা বিপিনদা । কোনোদিনও না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics