ভাই
ভাই


এক
- কিরে দাঁত বের করে হাসির কি হল?
- হাসলাম, কেন? এই কষ্টের দিনে একটু কি হাসতেও পারব না?
- আমি কি সেটা বললাম? সব কথায় এত খুঁত ধরলে হবে?
- বাদ দে ! আমিই অন্য ঘরে চলে যাচ্ছি |
দুইভাইয়ের ঝগড়া আর শেষ হয় না | একে তো কোয়ারেন্টাইন, তার ওপর সদ্য চাকরি হারিয়েছে ছোট ছেলেটা | জীবনটা একপ্রকার বিষ হয়ে গেছে | ভালো কথাও শুনতে কটু লাগে |
মাথাটা গরম নিয়েই দরজার দিকে পা বাড়ালো সুজিত | দু পা এগিয়েছে, তার পরই হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে দাদার দিকে ফিরে গম্ভীর অথচ কান্না মাখা গলায় বলল - তোর আর কি দাদা? বাড়িতে বসে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, বেশ ভালোই আছিস ! বাবা কতদিন হল কাজে যাচ্ছে না ! আমি কাজ হারালাম | সংসারটা চলবে কি করে বলতো? বৌদিকে নিয়ে তো দিব্বি আছিস | আলাদা সংসার | আলাদা হাঁড়ি |
দাদার মুখ দিয়ে কোনো স্বর বেরোলো না | চুপ করে শুধু শুনে গেল | রান্নাঘর থেকে বড়বৌ ঘরে ঢুকল | সুজিতের সব কথাই সে শুনেছে, কিন্তু সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললে - আরে ঠাকুরপো? কোথায় চললে? আর এদিকে তোমার ভাইপো কাকা, কাকা করছে !
সুজিতের মুখ লজ্জায় ভরে উঠল | রাগের মাত্রা কমলো | আর কথা না বাড়িয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল |
দুই
দুপুর দুটো বাজতেই, ভোজনের আয়োজন শুরু হল | খাবার টেবিলে যে যার স্থান গ্রহণ করল | হঠাৎ সুজিত লক্ষ্য করল, আজ মুরগির মাংস হয়েছে | তারপর, খাবার পরিবেশন শুরু হল | সুজিত লক্ষ্য করল, তার থালায় মাংসের পিস চারটে, আর দাদার থালায় দুটো | সুজিত ভাবলে, এসব নাটক, তাকে ছোট করবার জন্যে দাদা বৌদি, দুজনে মিলে পরিকল্পনা করেছে | খাবারের থালা ভর্তি রেখেই সুজিত উঠে গেল | মা , বাবা বোঝানোর চেষ্টা করলেন ঠিকই, কিন্তু সব যেন বৃথা !
তিন
রাত দশটা, বাবার বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে | সুজিত বাবা, মার পাশের ঘরেই শুত | টিভি দেখছিল, এমন সময় মা খবর দিতেই সে ছুটে গেল | দেখল, বাবা ব্যাথায় কাঁত্ড়াচ্ছেন, বুকে রাখা বাঁ হাত যেন কাঁপছে অল্প অল্প |
সুজিত ভয়ে পেয়ে তাড়াতাড়ি ওষুধ খুঁজতে শুরু করলে, কিন্তু ওষুধ সব শেষ, কিনে আনতে হবে, কিন্তু, পয়সা যে তার সব শেষ | বাবার বুকের দিকে তাকাতেই তার বুকটাও যেন ছ্যাৎ করে উঠল |
তারপর হঠাৎ মনে পড়ল, দাদা আছে তো ! সে নিশ্চয় কিছু করবে |
দাদার ঘরের দিকে ছুটে গেল সে | দরজা ধাক্কা দিল একবার, দুবার, তিনবার |
বৌদি দরজা খুলল | সুজিতের মুখ ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে | ভয়ার্ত স্বর নিয়েই জিগ্যেস করলে, - বৌদি, দাদা আছে?
স্ত্রী রতির গলার স্বর টাও কেমন যেন কাঁপা
কাঁপা | বললে - তোমার ভাইপোর শরীর খুব খারাপ ঠাকুরপো | শ্বাসকষ্ট বেড়েছে | ইনহেলার শেষ, তাই ওষুধ কিনতে গেছে |
- কখন থেকে? কিভাবে...
পুরো কথা শেষ হল না সুজিতের | সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করল বড়ভাই স্পন্দন |
ছুটে গিয়ে বাবার ঘরে প্রবেশ করে ইনহেলারটা
মুখে ধরল সে | তারপর, আবার ছুটলো নিজের ঘরের দিকে | ছেলের কাছে বসে অন্য পকেট থেকে বের করল কম ডোজের ইনহেলারটা |
খানিক পর ছেলে এবং বাপের সুস্থ এবং আরামে নিদ্রায় ঢুলে পড়া মুখটা দেখে দুইভাইয়ের চোখ দিয়ে অশ্রুধারা ঝরে পড়ল |
দাদার প্রতি শ্রদ্ধা সুজিতের মনটাকে আরও বেশি অনুতপ্ত করে দিল |
পরেরদিন সকালে আবার আগেরদিনের মত ফেসবুকে কি দেখে সুজিত হাসতে লাগল | আজকের হাসির শব্দ আরও জোড়ালো | দাদাকে শোনানোর জন্য | কিন্তু আজ দাদা কোনো মন্তব্য করল না | মুচকি একটা হাসি হাসলে শুধু | সুজিত এর অর্থ বুঝল | বুঝল, পরিস্থিতি যতই জটিল হোক, পরিবার সর্বদা সর্বদা পাশেই থেকেছে, আর ভবিষ্যতে থাকবেও |