ভাগ্যস্কোপ
ভাগ্যস্কোপ
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
বিষয় : মানুষ নিজের ভাগ্য নিজের কর্মের দ্বারা তৈরি করে ও পরিবর্তন করে। "ভাগ্যস্কোপ" কোনদিনই একটা মানুষের বাঁচা মরা উথান পতন নির্নয় করতে পারে না।
"অঙ্কুশ, এই অঙ্কুশ বাবা ওঠ। সময় হয়ে গেল পড়ার। ওঠো সোনা আমার। ওঠ।।"
মায়ের ডাকে চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল অঙ্কুশ তিনটে পঁচিশ।
"কি গো তুমি মা।ভোর তিনটে পঁচিশে ডেকে দিলে, এদিকে রাত একটা পাঁচ অবধি পড়লাম।"
- আরে ভাগ্যস্কোপে দেখলাম তোর রাশিতে আজ তিনটে পঁচিশে পড়তে বসলে স্টার মার্কস কেউ আটকাতে পারবেনা।
- তুমি আর তোমার ভাগ্যস্কোপ। সরো পড়তে বসেই যাই।
মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অঙ্কুশ হাতের দশটা আঙুলে দশটা আংটি নিয়ে পড়তে বসে গেল। মায়ের সাথে সাথে তারও বিশ্বাস জন্মে গেছে ভাগ্যস্কোপ যা বলবে সত্যি বলবে। তাই সেও এই ব্যাপারটা খুব গভীরভাবে মানে। গলার মাদুলিটা একবার প্রনাম করে পড়তে বসলো অঙ্কুশ। আর একমাস পর থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা তার।
"""""""""""""""""""""""
-উফফ খেয়ে নে না। এত চিন্তা করিস না। ভাগ্যস্কোপ এ দেখলাম এই সপ্তাহটা ধনুর খুব ভালো সময়।
- সত্যি দেখলে মা?
- হ্যারে। নে এবার খেয়েনে দেখি।।
- সবিতা তোমার এই ভাগ্যস্কোপ ছেলেটাকে না নিয়ে ডোবে। বাবা বলে।
- ভাগ্যস্কোপ বলেছে ধনুর এই সপ্তাহটা খুব ভালো যাবে। আর দু দিন পর রেজাল্ট।দেখবে ও এবছর কিছু একটা করবেই। এমনি কি আর চূনী পান্না গুলো দিয়েছি?
কিছু না বলে চলে গেলেন পরিতোষ বাবু।।
"""""""""""""""""""""""""""
- অঙ্কুশ ও অঙ্কুশ বাবা উঠে পড়।
চিন্তায় প্রায় সারারাত ঘুম হয়নি ছেলেটার। ভোর বেলা মায়ের ডাকে উঠে পড়ল অঙ্কুশ।
- একটু জেগে থাক বাবা। ভাগ্যস্কোপ বলেছে আজ চারটে কুড়ি থেকে জেগে থাকলে কোন ভালো খবর আসবে।
- আচ্ছা। ঠিক আছে যাও। আমি জেগে আছি।
মা চলে যাওয়ার পর অঙ্কুশ বেশ খ
ানিকক্ষণ জেগে থাকলেও আবার ঘুমিয়ে পড়ল। যখন ঘুম থেকে উঠল তখন অলরেডী সাতটা বেজে গেছে।
ভোরের পাখিরা ডাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সূয্যি মামা বেশ খানিকটা পথও অতিক্রম করে নিয়েছে।
বিছানায় বসে কিছু ভাবতে পারলনা অঙ্কুশ। মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকল সে ঘুমিয়ে পড়েছে আর ভাগ্যস্কোপ তাকে জাগতে বলেছিল। নিজের এই ভুলের জন্য নিজেকে যেন ক্ষমাই করতে পারছেনা সে।
না আর কিছু করার নেই। তার ভূলে যেটা ভাগ্যস্কোপ বলেছিল ঠিক তার উল্টোটা হবে। এ হার সে মানতে পারবে না। ভালো রেজাল্ট না হলে কেউ তাকে পাত্তা দেবেনা। সাত পাঁচ ভেবে মাথা ব্যাথা শুরু করে তার। নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে থাকে।
শেষ পর্যন্ত সিলিং ফ্যানের সঙ্গে হালকা বাতাসে ঝুলতে থাকে অঙ্কুশ।
সবিতা দেবীর হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। ঘামে একেবারে নেয়ে গেছেন তিনি। দু চোখ দিয়ে ঝড়ঝড় করে জল পড়ছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটা বাজে। একছুটে চলে যায় অঙ্কুশের ঘরে।
দরজাটা খুলে দেখে অঙ্কুশ তখনও নির্দ্বিধায় ঘুমাচ্ছে।
উফফফ, কি ভয়ংকর স্বপ্ন।
আজ তিনিও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ভাগ্যস্কোপ চারটে পাঁচে উঠতে বললেও ছেলেকে ডাকতে পারেননি তিনি।
অঙ্কুশকে এবার ডাকেন তিনি।
- অঙ্কুশ, বাবা ওঠ। উঠে পড় সোনা।
অঙ্কুশ উঠে বলে - মা ভাগ্যস্কোপ কি বললো আজকে?
মা হেসে উত্তর দেয় - ভাগ্যস্কোপ বলেছে ন'টা পর্যন্ত ঘুমাতে ধনু রাশিকে। কারন কাল রাতে তো চিন্তায় ঘুমাসনি শরীর খারাপ হয়ে যাবে। আর একটু ঘুমিয়ে নে। আয় আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।
সকাল দশটা নাগাদ রেজাল্ট আউট হলে অঙ্কুশ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়।
মনে মনে ভাবে সবিতা দেবী যদি স্বপ্নটা সত্যি হত। এই রেজাল্ট নিয়ে তিনি কি করতেন।
মন খারাপ করে বসে থাকা অঙ্কুশের কাছে গিয়ে তার হাত থেকে সমস্ত আংটি খুলে ফেলেন সবিতা দেবী। আর বলেন - আজ থেকে যা করবি নিজে করবি। ভাগ্যস্কোপ করবে না।