Mithun Mondal

Drama

0.5  

Mithun Mondal

Drama

অসময়ের অতিথি

অসময়ের অতিথি

11 mins
11.2K


সকাল ৯টা বাজে। সৌমি তিন বার ডেকেছে। সায়ন্তন কোন সাড়াশব্দ দেয় নি।

মোবাইলের রিংটোনটা বেজে উঠল। সায়ন্তনের ফোনে কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই। কোন

রকমে হ্যা-না বলে রেখে দেয়।সায়ন্তন ঘাড় সরাতে গিয়ে দেখে ব্যথা হচ্ছে। দুদিন আগে

ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ঘাড়ে লেগে যায়। ছেলেটাও হয়েচ্ছে এক! বাবার সাথে

খেলব! সৌমি ড্রেসিং টেবিলের আয়না মুচ্ছতে মুচ্ছতে জিজ্ঞেস করে, ‘কার ফোন ছিল’?

সায়ন্তন চোখ না খুলেই বলে, ‘অফিসের’।

‘হোয়াট! এতো সকালে অফিসের’!

‘আরে এতো চিৎকার করার কি আছে?আই.টি তে আবার সকাল বিকেল আছে নাকি!

আমাদের এখানে সকাল, ক্লাইন্টের কাছে তো বিকেল!আরে তুমি কি বুঝবে? স্কুলে

পড়াও! সরকারী চাকরী, পড়ালেও মাইনে, না পড়ালেও মাইনে। দুদিন পর এই সরকারী

স্কুল উঠে যাবে দেখে নিও’।

‘এই সব কথা তুমি আমাকে শোনাচ্ছ কেন? তুমি কি দেখতে গিয়েছ আমি স্কুলে পড়ায়, না

ঘুমায়’?

‘না, ঠিক তোমাকে বলতে চাই নি’।

‘তো কি, তোমার আদরের রিয়াকে শোনাতে চেয়েছিলে’?

‘রিয়া এলো কোথা থেকে’? সায়ন্তন একটু গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করে।

সৌমি সায়ন্তনের মুখের দিকে চেয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

‘আয়নায় মুখটা দেখ, রিয়ার নাম শুনে তোমার মুখটা কেমন পাল্টে গেছে’। সায়ন্তন

বিছানা থেকে উঠে বলে, ‘যত সব আজেবাজে কথা, সকাল সকাল মুডটাই নষ্ট করে দিলে!

দয়া করে এক কাপ স্পেশাল চা খাওয়ালে ধন্য হই আমি’।

‘আমার হাতের চা কি ভালো লাগবে তোমার? তোমার তো ‘স্পেশাল চা’ লাগবে। সেটাতো

রিয়ার বাড়ীতেই সম্ভব। কারণ স্পেশাল কোয়ালিটির চা-তো ওখানেই থাকে’।

‘থাক! তোমাকে চা বানিয়ে দিতে হবে না, আমি নিজেই বানিয়ে খেতে পারব। উই আর

বংস... । আমরা জুতো শেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ সব করতে পারি’।

‘সেটাই তো দেখছি! শুধু বউ বললে সেটা করার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু বান্ধবী...’

‘এই এবার তুমি চুপ করবে’? সায়ন্তন চিৎকার করে ওঠে।


‘চুপ না করলে তুমি কি করবে’? সৌমি সায়ন্তনের চিৎকারকে কোন গুরুত্ব না দিয়েই

বলে।

‘কি আর করব? আমি তোমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব’।

সৌমি চেয়ারে বসে পা-টা বাড়িয়ে বলে, ‘এই নাও ধরো’!

সায়ন্তন প্রায় ছুটে এসে সৌমিকে ধরে একটা চুমু খায়। সৌমি কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘সকাল সকাল তোমার আদিখ্যেতা ভাল লাগছে না, মুখ ধোয়নি, নোংড়া লোক’। সায়ন্তন

সৌমিকে ছেড়ে দিয়ে বলে, ‘সরি, আমি মুখ ধুয়ে আসছি’। সৌমি সায়ন্তনের মুখের দিকে

চেয়ে থাকে তারপর একটু অভিমানী গলায় বলে, ‘আগে তো এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে না,

এখন খুব তাড়াতাড়ি মন ভরে যায় বলো? কিংবা মন লাগে না, যেটা করো, জোর করে বা

অভ্যাস বশত’।

‘আরে এই সেই দিনই তো পিঙ্ক সিনেমা দেখে এসে বললে, ‘নো মিন্স, নো! সব সময়

ঝাপিয়ে পড়বে না’।

‘আমি ‘সব সময়’ বলেছিলাম, কোন সময় পড়বে না সেটাতো বলিনি। আজ প্রায় ২ মাস পর

আমাকে জড়িয়ে ধরলে’।

‘উফ! আমার মাথা ধরে যাচ্ছে, আমি বাজারে চা খেয়ে নেব, বলো কি কি আনতে হবে’।

‘যা খুশি নিয়ে এসো, শুধু মাংস নিয়ে এসো না, খবরে সব সময় ভাগাড়ের মাংস শুনে আমার

বমি আসছে’।

‘আরে চিন্তা করো না, আমি জ্যান্ত মুরগী কাটিয়ে নিয়ে আসব। আজ আমি তোমাকে দই

চিকেন বানিয়ে খাওয়াবো। দেখবে তোমার মন খুশিতে ভরে গেছে’।

‘আমার মন তো ভরবে, তোমার মন কিসে ভরবে’?

‘ঐ, জানো তো’!

‘কি জানি’? সৌমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘আরে ভাবো! ভাবো! ভাবা প্র্যাকটিস করো’!

‘রিয়া’! বলেই সৌমি একটা চিরুনি সায়ন্তের দিকে ছুড়ল।

সায়ন্তন আর কোন কথা না বাড়িয়ে বাজারের থলে নিয়ে বেরিয়ে যায়।


সৌমি ঘর থেকেই চিৎকার করতে থাকে, ‘বাজার থেকে ফেরো, তারপর তোমাকে যদি না

পিস পিস করে কেটে পকড়া বানাতে পারি তো আমার নামও সৌমি সিনহা নয়’।


II


বৈশাখী ফ্রুট ব্রীজ পেরিয়ে সৌমি এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে, ‘দাদা পৌলমি সেন

গুপ্তের বাড়ী কোথায় বলতে পারবেন’? ‘না, দিদি আমি এখানে নতুন এসেছি, আপনি অন্য

কাউকে জিজ্ঞেস করুন।সৌমি রুমাল বার করে কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামটা

মুছল।মুঠোফোনটা বার করে রিং করল।

‘হ্যালো। হ্যাঁ বল, কেমন আছিস! আরে তোর তো কোন পাত্তাই নেই। সেই ৬ মাস আগে

বিধাননগর মেলায় দেখা হল। তারপর একদিনও এলি না। বল কেমন আছিস? আরে কিছু

বলবি তো? হ্যালো, শুনতে পাচ্ছিস’?

‘হ্যাঁ রে শুনতে পাচ্ছি!তুই থামলে তবে না বলব। তোর বাড়ীর ঠিকানাটা বল তো’?

‘ঐ তো, কেষ্টপুর, রবীন্দ্রপল্লী, দূর্গামন্দিরের পাশে, আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের নাম

‘মালঞ্চ’।

‘আমি রবীন্দ্রপল্লী মিনিট দুয়েকের মধ্যে ঢুকে যাব, আসলে আমি তোর

অ্যাপার্টমেন্টের নামটা ভুলে গেছিলাম।আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি’।

‘হ্যালো, আসছি মানে? তুই কোথায়? আগে বলিসনি তো? হ্যালো! হ্যালো!’

পৌলমি আয়নার সামনে চুল ঠিক করতে করতেই শুনতে পেল, দরজায় কলিং বেল

বাজচ্ছে। পৌলমি যতোটা সম্ভব মুখে চওড়া হাসি নিয়ে এসে দরজা খুলেই বলল, ‘হোয়াটে

প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ’।

‘তাই আমার তো মনে হয় না! মনে হয় বিরক্তই করলাম তোকে’!

‘কি যে বলিস! আগে জানা থাকলে কোল্ড ড্রিংস এনে রাখতাম, আজই কোল্ড ড্রিংসটা

শেষ হয়ে গেল।একটু মিষ্টি, জল খা’।

‘আরে, না, না। শুধু জল দে। আমার ওজন ৬৫। এরপর মিষ্টি খেলে আর দেখতে হবে না’।

‘আরে একটু সবুর কর, তোকে একটু দেখতে দে, সেদিন মেলায় তো ভিড়ে ভাল করে দেখায়

হয় নি। একটু মোটা হয়েছিস, তাছাড়া বাকীটা একই আছে’।

‘একটা জিনিস লক্ষ্য করলি না’?


পৌলমি একটু উদ্গিন্ন চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কি রে’?

‘এই চোখের নীচে দেখ, একটু কালো হয়ে গেছে’।

‘হ্যাঁ তাই তো! রাজ্য সরকার বকেয়া ডি.এ দিচ্ছে না বলে ঘুম হচ্ছে না বুঝি’!

‘আরে সেই সব নয়, টাকার জন্য আর কবে ভেবেছি’! সৌমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।

‘তবে বাচ্চার জন্য টেনশন করছিস’?

‘আরে না, বাচ্চার বাবার জন্য’!

‘বাহ! বিয়ের ৮ বছর পরও এতো সোহাগ’! সত্যি তুই খুব লাকী। পৌলমি ঠোঁটের কোনে

হাসি রেখে বলল।

‘হুম! বলে সৌমি আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর তোর খবর বল’?

‘আমি ভাই তোর মতো সরকারী স্কুলে পড়ায় না, সল্টলেকের এক বেসরকারী স্কুলে নাচ

শেখায়। বাড়ীতেও কয়েক জন আসে নাচ শিখতে’।

‘তোর ফিগারটা ভাল ধরে রেখেছিস, কে বলবে, তোর বয়স ৩৬। দেখে ২৭-২৮ এর বেশি

মনেই হয় না’।

‘ইস! এই কমপ্লিমেন্টটা যদি কোন ছেলে দিত রে? তবে একটু তুই বাড়িয়েই বললি, মুখ

দেখলে বোঝা যায়! মুখের বলিরেখা গুলো কোথায় যাবে বল? তবে নাচলে বডির ফিটনেসটা

থাকে। আমি রামদেব বাবার কিছু যোগাও করি। তুইও করতে পারিস’!

‘আমার আর যোগা! স্কুল, ছেলে, সংসার তারপর এই খাতা দেখা শুরু হয়েছে, পাগল, পাগল

অবস্থা!

পৌলমির ফোনটা বেজে উঠল, স্কিনে নাম ওঠে ‘সান’। পৌলমি ফোনটা কেটে দেয়।

‘কার ফোন রে’?

‘আমার এক স্টুডেন্টের! তুই বল, কেষ্টপুর কোন কাজে এসেছিলিস’?

‘হ্যাঁ একটু কাজ আছে, তারপর ভাবলাম তোর সাথে তো অনেকদিন দেখা হয়নি, একবার

দেখা করে যাই। তুই বেরবি নাকি’?

‘না, সন্ধ্যে ৬টায় আমার নাচের ক্লাস আছে। কয়েকজন আসবে নাচ শিখতে’।

‘ও আচ্ছা! এখন তো ৫.৩০। আধঘণ্টা গল্প করা যাক!


‘হ্যাঁ আধঘণ্টা তুই বসতে পারিস’।

‘আজ যদি তোর ক্লাসে আমি থাকি তোর কোন অসুবিধা আছে’?

‘না, মানে, আমার নেই, বাচ্চা গুলো আনকম্ফর্টেবল ফিল করবে। ইউ নো, তোকে চেনে

না। প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড’।

‘ওকে, তুই বল, তোর বেড পার্টনারের কি খবর?

‘হোয়াট’! পৌলমি একটু আঁতকে ওঠে।

‘বছর তিনেকের ছোট একটা ছেলের সাথে লিভ ইন করছিলিস, তার কথা জিজ্ঞেস

করছিলাম।

‘ও রঞ্জু,লিভ ইন ঠিক না, ও আমার ভাল বন্ধু। ও এখন নইডা চলে গেছে’।

‘সম্পর্কটা আছে না, সেটাও গেছে’। সৌ্মি কপালে ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করে।

পৌলমি ঠোঁট চেপে জোর করে হাসার চেষ্টা করে। কয়েক মুহূর্ত দুজনেই চুপ থাকে।

‘তুই আর বিয়ে করবি না’? সৌমি এবার জিজ্ঞেস করে।

‘এই বয়সে, কে করবে বল’?

‘কত জন আছে? তুই করবি কিনা বল’?

‘না রে আর অ্যাডজাস্ট হবে না’।

‘তাহলে ক্যাজুয়্যাল রিলেশনশীপে যেতে চাস’?

‘এটা মন্দ নয়’! পৌলমি একটু হেসে উত্তর দেয়।

পৌলমি দেওয়াল ঘড়ির দিকে একবার তাকায়। ৬টা বাজতে ১০ মিনিট বাকী। সৌমিকে কি

করে বলবে উঠতে সেটাই ভাবতে থাকে।

‘তুই বলছিলিস না কেন আমার চোখের নীচে কালো হয়ে গেছে? আসলে লাস্ট ৬ মাস ধরে

ভাল ঘুম হচ্ছে না। সায়ন্তন একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছে...’। পৌলমি সৌমিকে থামিয়ে

বলে, ‘একটু দাড়া আমি একবার ওয়াস রুম থেকে আসছি’। সৌমি খুঁটিয়ে দেখতে থাকে

ফ্যাটটাকে। ফ্ল্যাটের একদিকে বিরজু মহারাজের ছবি, তার ঠিক পাশেই মমতা শঙ্করের

সাথে পৌলমির ছবি।ডাইনিং প্লেসটা বেশ বড়ো। একদিকে বেড কাম সোফা রেখেও

অনেকটা জায়গা পরে। মনে হয় এখানেই নাচ শেখায়।পৌলমি ঘরে ঢুকেই বলল, ‘সরিরে,

আমাকে বেরতে হবে, হটাৎ করেই একটা কাজ পরে গেছে’।


‘ও, কিন্তু তুই যে বললি তোর স্টুডেন্ট আসবে’।

পৌলমি একটু নিজ মনেই বিড় বিড় করে, তারপর বলে ‘কাছেই একজনের বাড়ী যাব, মিনিট

১৫ এর মধ্যে ফিরে আসব’।

‘আমার সন্ধ্যে ৭টার সময় সল্টলেকে, একজনের সাথে দেখা করার আছে। তুই যদি কিছু

মনে না করিস আমি কি আর আধ ঘণ্টা বসতে পারি’।খুব কাছের না হলেও ছোটবেলার

বান্ধবী,তাই একটু ইতস্তত হয়ে পৌলমি বলল, ‘আচ্ছা, আমি না হয় আধ ঘণ্টা পরেই

বেরব’। পরিবেশটাকে একটু হালকা করার জন্য সৌমি বলে, ‘তোর ঘরটা খুব সুন্দর করে

সাজানো রে। মমতা শঙ্করের সাথে কোথায় ছবি তুললি? আমার খুব ফেবারিট

অ্যাকট্রেস। আগুন্তুকে কি ভাল অভিনয় করেছে বল’?

‘আমার এক নাচের অনুষ্ঠানে উনি গেস্ট হয়ে এসেছিলেন। তখন তুলেছিলাম। উনি

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আবহমান’ ছবিতেও খুব ভাল অভিনয় করেছিলেন’।

‘একদম! স্বামী অন্য মেয়ের প্রেমে পড়লে স্ত্রীর কিরকম অভিব্যাক্তি হয়, উনি খুব

সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।তবে সিনেমা আর বাস্তবের কিছুতো পার্থক্য আছে।

আমারও কিছু দিন ধরেই সায়ন্তনকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু মানুষের মন, আশায়

ঘর বাঁধে। যদি ফিরে আসে, একটা সুযোগ দেওয়া যাক’!

পৌলমি গলার স্বরকে খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তোর সাথে কি সায়ন্তনদার...’

সৌমি, পৌলমির মুখের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু

করে, ‘এখনও কিছু হয়নি! এখনও নাটক করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। এটাই মনে হয়

ভারতীয় সংস্কৃতি! আমরা হিপক্রিসিটা ছাড়তে পারিনা। মাস ৬-এক ধরেই দেখছি রিয়া

নামে একটা মেয়ের ফোন আসে। আমি সায়ন্তনকে জিজ্ঞেস করায় বলে ‘কলিগ’। প্রথমে

আমি বেশি গুরুত্ব দিই নি। লাস্ট তিন মাস ধরে সায়ন্তনের কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে।

প্রায় রাত করে ফেরে। ড্রিঙ্ক করে আসে। বেশির ভাগ দিন খায় না। কোন দিন বিছানায়

আমি এগিয়ে আসলে বলে ‘টায়ার্ড, প্লীজ ঘুমাতে দাও’! একটা মেয়ের কাছে এর চেয়ে

অপমান আর কি হতে পারে! আমি খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি। প্রথমে অফিস থেকে

খবর নিয়ে জানি রিয়া নামে একটা মেয়ে সায়ন্তনের কাছে কাজ করে। বাড়ীর সমস্যার

জন্য খুব শীগ্রই নাকি চাকরী ছেড়ে দেবে। দিন ১৫ আগে জানতে পারি রিয়া চাকরী ছেড়ে

দিয়েছে কিন্তু সায়ন্তনের কাছে ফোন আসা বন্ধ হয়নি। এই একটা ফোন আসলে

সায়ন্তন ঘরের বাইরে গিয়ে ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে কথা বলে। আমি জিজ্ঞেস করলে বলে,

‘অফিসের কনফিডেন্সিয়াল মেটার সবার সাথে ডিসকাস করা যায় না’। আমি একটু রেগে

গিয়ে বলেছিলাম তুমি আমাকেও বিশ্বাস করো না? সায়ন্তন বলেছিল, ‘তোমাকে করি,

কিন্তু তোমাদের পেটে তো কোন কথা থাকে না, স্টাফ রুমে গিয়ে আলোচনা করবে, পাচ


কান হয়ে আমাদের কম্পিটিটরের কাছে পৌঁছাবে। এই রকম এড়িয়ে যাওয়া উত্তরে কি

আর বলা যায়।দিন সাতেক আগে আবার রাত এগারটায় ফোন আসে।এবার খুব চিৎকার

করে জিজ্ঞেস করি যে মেয়ে চাকরী ছেড়ে দিয়েছে তার সাথেও কি অফিসের কথা বলছ?

এটাতে কি তোমার কনফিডেন্সিয়ালিটি ব্রেক করে না? সায়ন্তন বলে ছিল, ‘কলিগ,

ফ্রেন্ডও হতে পারে, চাকরী ছেড়ে দিলেই সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না’। কি উত্তর দেব

বুঝতে পারছিলাম না। দিন দুয়েক কথা বললাম না। কিন্তু সায়ন্তনের যে কিছু ইফেক্ট

হলো, তেমন নয়! আমি অবাক হয়ে গেলাম।ভার্চুয়াল প্রেমের গভীরতা এতোটা! আমি কি

কোথাও ভুল করছি! আমি মিথ্যে সন্দেহ করছি আজ সকালে একটা ফোন এলো

সায়ন্তনের মোবাইলে। সায়ন্তন বাথরুমে। আমি ফোনটা রিসিভ করতে গিয়ে দেখি ‘রিয়া’।

আমার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। ফোন ধরেই যা খুশি বলে দিই। এতো বাজে কথা আমি

জীবনে কাউকে বলিনি। খারাপ লাগছিল। তবে কথা গুলো বলে মনটা হালকা হয়েছিল।

জানিস মেয়েটা কোন কথা বলেনি। পৌলমি বার বার ঘড়ি দেখে। এক গ্লাস জল খাওয়াবি?

পৌ্লমি জল আনতে গেলে, পৌ্লমির মোবাইলটা বেজে ওঠে। সৌমি ফোনটা রিসিভ করে।

ফোনের ওপার থেকে ‘আজ ভদকা নিয়েছি, মিনিট দশেকের মধ্যে ঢুকব। রাস্তায় জ্যাম

ছিল বলে একটু দেরি হয়ে গেল। পৌ্লমি রিংটোনটা শুনেই জল নিয়ে তাড়াতাড়ি আসে।

পৌলমি জলের গ্লাসটা টেবিলে রেখে একটু গলা চড়িয়ে বলে, ‘অন্যের ফোন রিসিভ করাটা

অভদ্রতা। তোর অনেক কথা শুনলাম এবার আমাকে বেড়তে...’। সৌ্মি ভাবলেশ হীন হয়ে

পৌ্লমির দিকে তাকায়। ‘কোথায় আর যাবি? সে আসছে তো! বস, গল্পের বাকীটা

শুনেনে।‘সান’ নামে সেভ করা নাম্বারটা আমার মুখস্ত। যখন দেখলাম আমার এখনও

পর্যন্ত লিগ্যাল হাসবেন্ডের ফোন তখন ধরাই যাই। যাইহোক তোকে যে সকালের

ঘটনাটা বলছিলাম। সায়ন্তনের মোবাইলে রিয়ার নাম্বারটা আমার খুব চেনা লাগল।

বিশেষ করে শেষ দুটো সংখ্যা। আমার মোবাইলে সেভ করা সব নাম্বারের সাথে মেলাতে

লাগলাম। দেখলাম তোর নাম্বারের সাথে মিলে গেল। মিনিট খানেক কেউ কোন কথা বলে

না। গ্লাসে রাখা আর্ধেক জলটা খেয়ে সৌ্মি বলল, ‘তুই নিশ্চয় ভাবছিস আমি এখন

তোকে খুব গালাগালি করব বা একটা সিঙ্ক্রিয়েট করব।একদমই না। আমি জাস্ট হাতে

নাতে ধরতে চাইছিলাম। যেলোক ভালবাসে না তার সাথে ঘর করার কি মানে আছে বল।

যাইহোক কিকরে তোদের সম্পর্কটা হল বলবি’। পৌ্লমি কিছুক্ষণ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে

থাকে। তারপর বলে, ‘তোদের সাথে দেখা হওয়ার ৮-১০ দিন পর সায়ন্তনদার সাথে দেখা

হয় একটা রেস্তরাঁয়।রঞ্জু চলে যাওয়ার পরই একাকীত্ব অনুভব করছিলাম। একদিন

ফোন করে সায়ন্তনদাকে ডিনারে ইনভাইট করি। সায়ন্তনদা সেদিন আসেননি।বলেছিল

তোকে নিয়ে একদিন আসবে। এর ঠিক দুদিন পর সায়ন্তনদা ফোন করল। জিজ্ঞেস

করল ফ্রী আছ? আমি এই দিকে এক বন্ধুর কাছে এসেছিলাম, যদি ফ্রী থাকো দেখা

করে যাব। আমার নাচের ক্লাস শেষ হতে মিনিট দশেক বাকী ছিল। আমি সায়ন্তনদা কে

মিনিট ১৫ পরে আস্তে বললাম। সায়ন্তনদা এলো প্রায় ১ঘন্টা ১৫ মিনিট পর। সেদিন


ভীষণ গরম পড়েছিল। আমি স্রান করে একটা স্লিভলেস নাইটি পড়েছিলাম। সায়ন্তনদা

বলল, ‘রে আর বলোনা, বন্ধু বলল তুমি যখন ব্যস্ত আছ তখন কাছেই একটা বারে

কিছুক্ষণ বসি। বেশ কয়েক পেগ পেটে পড়ে গেছে। এখন শরীরটা খারাপ করছে। জানোই

তো তোমার বান্ধবীকে! মদ খেয়ে গিয়ে যদি বলি শরীর খারাপ করছে তাহলে আর রক্ষে

নেই। সায়ন্তনদা ঘড়ে ধুকতে গিয়েই হোঁচট খাচ্ছিল। আমি হাতটা ধরি। সায়ন্তনদার হাত

আমার বুকের উপর আসতেই আমার শরীর অবশ হতে থাকে। তাও আমি কিছুটা সংযত

হওয়ার চেষ্টা করি।সায়ন্তনদা বিছানায় শুয়েই জামার বোতাম খোলার চেষ্টা করছিল।

একটা খোলার পর আর খুলতে পারছিল না। আমি গিয়ে জামার বোতাম খুলে দিতে গেলেই,

সায়ন্তনদা আমাকে জড়িয়ে ধরে। মিথ্যা কথা বলব না, আমি কিন্তু ছাড়ানোর চেষ্টা

করে ছিলাম। কিন্তু সায়ন্তনদা যখন জড়িয়ে ধরে, ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরল,

আমি আসতে আসতে সায়ন্তনদার কাছে হারিয়ে যেতে লাগলাম।তারপর থেকে সায়ন্তনদা

মাঝে মাঝে আসতে শুরু করে। সৌমি, পৌলমির দিকে চেয়ে থাকে। পৌ্লমি আর কিছু বলে

না। কলিং বেলটা বেজে ওঠে। পৌ্লমি দরজা খুলতে গেলে বলে, ‘তুই দাড়া, আমি খুলছি’।

‘তুমি’! সায়ন্তন ভূত দেখার মতো আঁতকে উঠে বলে। সৌ্মি কোন কথা না বলে সায়ন্তনের

মুখের দিকে চেয়ে থাকে। সায়ন্তন একটু ধাতস্ত হয়ে বলে, ‘মানে এই দিকে যাচ্ছিলাম,

পৌ্লমি বলল কিছু জিনিস কিনে এনে দিতে। বেচারা একা থাকে। তাছাড়া তোমার বান্ধবী

বলেই আমি এতো কিছু করছি। তোমার সম্মানের একটা ব্যপার আছে তো’! সৌ্মি একটু

ব্যাঙ্গের সুরে বলল, ‘আচ্ছা, সব আমার জন্য’! সায়ন্তন এরপরও হাল না ছেড়ে অনেক

কথা বলতে থাকল। সৌ্মির কানে যেন আর কোন কথায় আর ঢুকছে না। ৮ বছর ধরে তৈরি

হওয়া বিশ্বাস যেন একটু একটু করে কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে যাচ্ছে। আর যেন এই

মিথ্যা কথা গুলো সহ্য হচ্ছিল না। সায়ন্তনের গালে একটা চড় মেরে সৌ্মি বলে, ‘এনজয়

দা ইভিনিং, সামওয়ান ইজ ওয়েটিং ফর ইউ’।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama