#অপেক্ষায় থাকবো
#অপেক্ষায় থাকবো
ছোটগল্প
বিষয়: প্রেম
কলমে: বুলা বিশ্বাস
শিরোনাম:
#অপেক্ষায় থাকবো
ভীত সন্ত্রস্ত পায়ে যখন নিলয়ের আধভেজা দরজা খুলে, এদিক ওদিক তাকিয়ে টুক করে ঊর্মি ওর ঘরে ঢুকে পড়েছে, নিলয় ওর ভরসার হাতটা ঊর্মিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনটে পাঁচশো টাকার নোট ঊর্মির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলে, 'এতে হবেতো? না আর কিছু লাগবে?'
ঊর্মি ছলোছলো চোখে বলেছিলো, 'না, এতেই হবে, নিলয়। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি, তোমায় শোধ করে দেবো।' বলে আলতো হাতে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ঊর্মি ওই ঝড় জলের রাতে যেভাবে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই বেরিয়ে গেল।
ওষুধের দোকান থেকে স্বামী প্রদোষের জন্য ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরলো। ঘরে ঢুকতেই, প্রদোষ বিচ্ছিরি রকম গালিগালাজ করে ঊর্মিকে অপদস্থ করতে লাগলো। 'এই ঝড় জলের রাতে কোথায় পয়সা আয় করতে গেছিলি। আমি তোর পাপের আয়ের থেকে আনা ওষুধ খাবো না।' বলে বিধূম কাশতে লাগলো।
হাঁফানির কাশিটা ওর এতটাই বেড়েছিল, যে ওষুধ না পড়লে আর চলছিলো না। প্রদোষের কারখানার কাজ বহুদিন হলো চলে গেছে। ছেলেমেয়ে হয়নি, তাই রক্ষে। ঊর্মি সেলাই করে আর টিউশনি করে সংসার চালায়। প্রদোষের বংশগত রোগ চাগিয়ে উঠেছে। হাঁফানি ছিলো। সেটা ঠাণ্ডা পড়াতে আরো বেড়েছে।
ঊর্মির ওই সামান্য আয়ে কোনোমতে সংসার চলে।
বিপদে আপদে নিলয় ওর পাশে থাকে। নিলয়কেই ও বিয়ের আগে ভালোবাসতো। চাকরি করেনা বলে ঊর্মির বাবা মা নিলয়ের সাথে ঊর্মির বিয়ে না দিয়ে, প্রদোষের সাথে বিয়ে দেয়। নিলয় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচার কাজ করে। এ কাজে ও বেশ এক্সপার্ট। ঊর্মিকে না পেয়ে ও আর বিয়ে করার কথা ভাবেই নি। এদিকে ঊর্মির জীবনটা যখন দুর্বিষহের মধ্যে পড়ে গলায় ফাঁস লাগার মত অবস্থা এসে দাঁড়ায়, ঊর্মির বন্ধু নিলয় ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয় বহুবার। ঊর্মি কতবার বলেছে, 'নিলয় তুমি এবার একটা বিয়ে করো। শেষ বয়সে কে দেখবে তোমায়? আমিতো তোমার থেকে নিয়েই গেলাম। তোমার জন্যতো কিছু করতে পারলাম না, আর পারবোও না। ভগবান আমার সব শক্তি শেষ করে দিয়েছে। তোমার জন্য বড় চিন্তা হয় আমার। দুকুলেতো তোমার কেউ নেই যে তোমাকে একবার চোখের দেখাও দেখে যায়।'
নিলয় নির্লিপ্তভাবে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, 'কেন তুমিতো আছো। একবার করে এসে শুধু দেখে যেও, তাহলেই হবে। পারবেনা?'
ঊর্মি বলে, 'কী পাগলের মত কথা বলো? লোকে কী বলবে? শুধু কী তাই? আমার ঘরের মানুষটাকেতো তুমি চেনো। তোমাকে নিয়ে আমায় এখনো সন্দেহ করে। আমি যে তোমার থেকে টাকা ধার করি, ও সব বোঝে। কিছু করার মুরোদ না থাকলে কী হবে, তোমাকে নিয়ে আমাকে বীভৎস গালিগালাজ করে। বলে আমি খারাপ কাজ করে পয়সা আনি।' বলে ঊর্মি চোখের জল কাপড়ের আঁচল দিয়ে মোছে। বলে 'থাক। আমার দুঃখের কাহিনী আর তোমায় শুনতে হবে না।'
'শুনতে চাই না। পালিয়ে এসো। তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। তোমারতো দুঃখ পাবার কথা নয়। সুখের জন্যইতো তোমার বাবা মা চাকুরিজীবি প্রদোষের সাথে তোমায় ধূমধাম করে বিয়ে দিলো। তুমিতো রাজরাণী হয়ে থাকবে। সেই যদি না হলো, চলে এসো। দুঃখের জ্বাল আর তোমায় দিতে হবে না।'
ঊর্মি হাউ হাউ করে খানিকটা কেঁদে নেয়। যাবার সময়, চোখের জল মুছে হাসতে হাসতে বলে, 'এ জন্মে পেলাম নাতো কী আছে, পরের জন্মে তোমায় ঠিক পাবো। তুমি দেখো, তোমার জন্য ঠিক অপেক্ষা করে থাকবো।' বলে ও এক দৌঁড়ে নিলয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
----------
কলমে: বুলা বিশ্বাস
ফোন নাম্বার: 7980205916
মেল আইডি:
bulabiswas60@gmail.com

