অনিয়ম
অনিয়ম
"মহাজাগতিক কোনো জগতে পাড়ি দিতে পারলে খুব ভালো হতো।" অন্তত সামাজিক এবং পারিবারিক যে চাপ, বর্তমান সহজ সরল ভাষায় ডিপ্রেশান টা থেকে বেঁচে যেতো বলেই মনে করে পলাশ। বর্ষাকাল পেরিয়ে শরতের নাতিশীতোষ্ণ ফুরফুরে বাতাস কার না ভালো লাগে! কিন্তু পড়ন্ত রক্তআভায় রঙিন বিকেলে নির্জন ধানের মাঠের ধারে বসে এই আবহাওয়া টা যেনো পলাশের মন খারাপের কারণ। তার কাছে এই বাতাস যেনো অপার্থিব, যেটা তার জন্যে দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে দুঃখের জগৎ থেকে, মনের ভার যেনো বাড়িয়ে দেয়।
দুই মাস হলো ফিজিক্স-এ এম.এস.সি করে বাড়ি ফিরেছে সে। পাড়ার সবাই তাকে এক নামে চেনে তার ভালো পড়াশোনার জন্যে, আর তাছাড়া সে তার গ্রামের প্রথম ছেলে যে বিজ্ঞান-এ এম.এস.সি. করেছে তাও আবার কলকাতার এক নামী কলেজ থেকে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাকে নানান অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, "বাড়ি বসে আছিস, এর পর কী প্ল্যান? অনেক তো পড়াশুনা হলো, চাকরির কী খবর? কোনো চাকরি হবে তো? মেয়ের চক্করে পড়িসনি তো? যা তা!" কিন্তু তার চাকরি করার কোনো সখ বা ইচ্ছে নেই। কিন্তু বাড়ির লোক আর পাড়ার লোক তো সেসব শুনবে না। তাদের মতে এতো পড়াশুনা করার পর সে যদি চাকরি না পায় তো তার জীবন বৃথা।
ছোটো থেকে বাড়ির কড়া নিয়মের মধ্যে মানুষের হয়েছে সে। বাড়ির লোকে যেটা ভালো মনে করবে, সমাজের চোখে যেটা করা ঠিক সেটা করতে সব সময়েই বাধ্য ছিলো সে। কোনো দিনও তার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, যে সে কী করতে চায়, তার কোনটা ভালো লাগে বা কোনটা করলে তার ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হবে! নিজের কাছেই নানা অভিযোগ করে চলেছে সে। নিজের অস্তিত্ব টা কেই হারিয়ে ফেলেছে দিন দিন। এখন তার মানসিক অবস্থা এরকম যে তার ভালো লাগা কোনো কিছুও যদি বাড়ির লোকে করতে বলে সেটাও তার কাছে যেনো বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ছোটো থেকে একটু যদি স্বাধীনতা তাকে দেওয়া হতো তাহলে হয়তো এরকম টা হতো না।
"জীবন যেনো ক্রমাগত শুকনো রুক্ষ জলহীন মরুভূমির মরিচিকার মতো হয়ে চলেছে। এবার বুঝতে পারছি যে গরম রক্তের ছেলে মেয়েরা কিভাবে ভেঙে পড়ে, কেনো আত্মহত্যার মতো একটা বড়ো ভয়ঙ্কর পথ কে বেছে নেয়, শুধুমাত্র এই চাপ, ডিপ্রেশান থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু প্রশ্ন একটাই আত্মহত্যা কি আদৌ মুক্তির পথ! মৃত্যুর পর কি মুক্তি আছে! কে জানে?" দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে সে অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার ভালোর জন্যে বাড়ির লোকের শাসন, কড়া নিয়মই যেনো হয়ে উঠেছে তার জীবনে সব থেকে বড় অনিয়ম।