STORYMIRROR

Anjar

Horror Thriller

4.5  

Anjar

Horror Thriller

অদৃশ্য হাততালি

অদৃশ্য হাততালি

7 mins
9

গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষার আগমন হলো। আজ সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে থামার নাম নিচ্ছে না।

সন্ধ্যা বেলা আমি একটা ছাতা নিয়ে ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম কেউ আসেনি, এমনকি ক্লাবের দরজাটাও খোলা হয়নি। সেটা দেখে আশ্চর্য হলাম, অতএব আমি দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ছাতাটা এক কোণে রেখে দিয়ে আলো জেলে চেয়ারে গিয়ে বসলাম। কিন্তু একা একা কি ক্লাবে আর ভালো লাগে কিছুক্ষণ একা বসে থাকার পর আর ধৈর্য হলো না যে কারোর জন্য অপেক্ষা করি, চেয়ার থেকে উঠে ছাতাটা হাতে নিলাম বেরিয়েই যাবো তখনই দেখি বিক্রম ছাতা মাথায় দিয়ে আসছে ওকে দেখে আমি ছাতাটা তার জায়গায় রেখে আবার চেয়ারে গিয়ে বসলাম।

বিক্রম ও এসে তার চেয়ারে বসলো আমরা এই বৃষ্টি আর আমদের ক্লাবে আসা নিয়ে আলোচনা করছিলাম এতি মধ্যে দেব ও সুদীপ্ত হাতে চপ, পেঁয়াজি আর মুড়ি নিয়ে হাজির। একে তো বৃষ্টি হচ্ছে আর যদি তেলেভাজা হয়ে তাহলে তো আর বলতে লাগবে না যে কি ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তারা এসে পকড়াগুলো একটা প্লেটে ঢাললো আর বিক্রম চা বানিয়ে আনলো, সকলে বসে ভালোই চা, মুড়ি-পকোড়া খাচ্ছিলাম হঠাৎ দেব বলল আনজার দা একটা গল্প হলে কেমন হয়। একথা বলা মাত্রই বিক্রম ও সুদীপ্ত তার সাথে আগ্রহ প্রকাশ করলো।

কিছুক্ষণ চুপ করে কোন গল্পটা বলা যায় সেটাই ভাবছি, গল্প বলা ভুল হবে।যেগুলো এরা গল্প ভেবে শোনে আসলে আমি সত্যিই সেগুলির সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু এরা বিশ্বাস করে না, এরা ভূত-প্রেতে মানে না এদের বিশ্বাস ভূত, প্রেত, অশরীরী, ইত্যাদি মানুষের মনের ভুল মাত্র মানুষ অন্ধকারে ভয় পেয়ে এইসব জিনিস আবিষ্কার করেছে, আমিও এদেরকে কখনও বিশ্বাস করার জন্য জোর করি নি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই কেউ বিশ্বাস করে না। আমিও করতাম না কিন্তু আজ যে কাহিনীটা এদেরকে শোনাবো এটার পর থেকে আমার বিশ্বাস হয়েছিল যে মানুষ বা অন্য প্রাণী ছাড়াও আমাদের সাথে এই পৃথিবীতে কেউ বসবাস করে যাদেরকে মানুষের চোখ দেখতে পাইনা যতক্ষণ না তারা দেখা দেই।

অনেক্ষন চুপ থাকতে দেখে সুদীপ্ত বলল যে কিগো আনজার দা তোমার গল্পের ভান্ডার কি শেষ হয়ে গেলো নাকি একটা গল্প ভাবতে এত সময় লাগে, আমি বললাম তোমরা তো শুধু গল্প মনে করো কিন্তু আমি যেগুলো তোমাদেরকে শোনাই সেগুলো যে গল্প না সত্যি ঘটনা সেটা তোমরা বিশ্বাস করো না, সত্যিই ঘটনা কে গল্পের রূপে সাজাতে তো একটু সময় লাগে। এবার বলছি, তোমাদেরকে আজ আমি আমার স্কুল জীবেরনের একটা ঘটনা বলব তখন আমি দ্বাদশ ক্লাস এ পড়ি। তাহলে শুরু করি বলে আমি চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলা শুরু করলাম।

সেদিন ছিল বুধবার। বিকাল বেলা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাসে করে টিউশন পড়তে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাসের পেছনের সিটে চোখ গেলো দেখি আমার একজন টিউশনের বন্ধু বসে আছে তার পাশে গিয়ে বসলাম তার নাম হলো অর্পণ। কিছুক্ষন পরে আমি বললাম কি রে আজ পড়তে না গিয়ে ঘুরে বেড়ালে কেমন হয়, একথা শুনতেই সে এক পায়ে রাজি হয়ে যায়। বাস থেকে নেমে স্ট্যান্ডে আরো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো তার নাম হলো বিশ্বজিৎ আমরা তাকেও আমাদের এই পরিকল্পনার কথা বললাম। সেও দেখি বলতে না বলতেই রাজি হয়ে গেলো।

আমরা কিছুক্ষন রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গল্প করে সময় কাটাতে লাগলাম। এবার সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমরা একটা চায়ের দোকানে গেলাম আমি গিয়ে তিনটে চায়ের অর্ডার দিয়ে আসলাম। চা আমাদের টেবিলে দিয়ে গেলো আমরা চা পান করতে করতে এর পরে কোথায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ওরা দুজনে বলল কিছুটা হেঁটে গেলেই খুব ভালো একটা জায়গা আছে সেখানে যাওয়া যাক আমিও বললাম ঠিক আছে তবে সেখানেই যাওয়া যাক। চা শেষ করে আমরা চায়ের টাকা দিয়ে বের হলাম সেখানে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিলাম।

ঠিক সাড়ে ছ' টা বাজে। হাঁটতে হাঁটতে বিশ্বজিৎ হঠাৎ বলে উঠলো আর কিছুটা গেলে নাকি একটা ভূত বাংলা আছে। গ্রাম গঞ্জে ভূত বাংলা মনে হচ্ছে কি কোনো একটা বাড়ি যেখানে আগে মানুষ বসবাস করতো কিন্তু বহুবছর ধরে সেখানে কেউ থাকে না তাই নাকি বাড়িটাতে ভূতেরা বসবাস করা আরম্ভ করেছে। আমি ছোটবেলা থেকে ভূত, প্রেত, অশরীরী, জিন ইত্যাদি দেখার প্রতি খুবই আগ্রহ যদিও আমি বিশ্বাস করতাম না যে ভূত বাংলা নামের এই জায়গাটাতে আদেও ভূত থাকে। বহুবছর ধরে কেউ থাকে না বলে বাড়িটা পুড়ু হয়ে গেছে এবং বাড়ির দেওয়ালে ছাদে ও বহু জায়গায় কিছু আগাছা জন্মেছে, যেহেতু বাড়িটা পুরু কেউ থাকে না তো সেখান আলোও জ্বলবে না সাভাবিক বেপার, সেই অন্ধকার পুরু বাড়ি দেখে লোকজন বেকার ভূত থাকে একথা রটিয়ে বেরিয়েছে মাত্র।

আমি বিশ্বজিৎ এর ভূত বাংলার কথার প্রতি উত্তরে বললাম তাহলে সেখানেই যাওয়া যাক বিশ্বজিৎ এবং অর্পণ প্রথমে রাজি হলো না আমার জোর করার কারণে তারাও রাজি হয়ে গেলো যে আমরা এখন ভূত বাংলাতে যাবো। বিশ্বজিৎ যেমন বলেছিল ভূত বাংলাতে যেতে হলে কিছুটা যেতে হবে কিন্তু সেই কিছুটা যে প্রায় তিরিশ মিনিট লেগে গেলো, রাস্তা টা অনেকটাই ছিল। এখন ঘড়িতে প্রায় সাতটা বেজে গেছে আমাদের বাড়ি ফিরতে হলো বাস স্ট্যান্ডে আটটার আগে পৌঁছাতে হবে, এখন থেকে বাস স্ট্যান্ডে যেতে প্রায় পৈতাল্লিস মিনিট লেগে যাবে, তো আমাদের এই ভূত বাংলাটা তারা তারি ঘুরে দেখে ফিরে যেতে হবে।

সাতটা বেজে গেছে। আমরা সেই ভূত বাংলাটায় পোঁছে গেলাম কিন্ত..... সেখানে কি হয়েছিল বলার আগে বলে নিই যে সেটা কেমন জায়গায় অবস্থিত, পাকা রাস্তা থেকে একটি সরু মাটির রাস্তাতে নেমে খানিকটা গিয়ে খোলা মাঠ, মাঠের দান দিক থেকে আরো সরু একটা মাটির রাস্তা সেটা দিয়ে গিয়ে চাষের খেতের মতো জায়গা পরে সেখান থেকে আবার বা দিকে কিছুটা গিয়েই সেই ভূত বাংলাটা পরে। জায়গাটা পুরো নিঝঝুম, আমরা তিনজন ছাড়া মাইল খানিকের মধ্যে যে আর কোনো মানুষ নেই সেটা আমরা বুঝতে পারছি। এখন আবার আসল ঘটনায় আসা যাক।

ভূত বাংলায় পৌঁছে দেখতে পেলাম যে বা দিকে একটা ছোট মতো পুকুর রয়েছে পুকুরের জলে হালকা চাঁদের আলো পড়ে জলকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। আর ঠিক আমাদের সামনে দুটো বড় বড় পুরু বাড়ী। আমি আগে বলছিলাম যে এইসব ভুত-প্রেত দেখার প্রতি আমার ছোট থেকে আগ্রহ আছে আর অনেক বার দেখেছিও বটে কিন্তু ভূত বাংলা জিনিসটার প্রতি কখনোই বিশ্বাস করতাম না আমি। করতাম না বলছি কারন এখানে আসতেই একটা বাড়ির দিকে আমার নজর যায় তখন আমরা ছিলাম ঠিক পুকুরের পাশে নজর যেতেই আমার মাথাটা কেমন যেনো ঘুরে উঠলো এবং মনে হলো যে আমার ডান পাশ দিয়ে একটা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেল। মুহূর্তেই আমার শরীরটা কেমন হিম হয়ে গেল। মনে হলো, সেই ঠান্ডা হাওয়া কিছুটা যেন আমার ডান কাঁধে ধাক্কা দিলো, ঠিক যেনো বলতে চাইছে, ‘আর এক কদমও এগিও না।’ আগে গেলে আমাদের কপালে বিপদ আছে...অনেক বড় বিদপ।

আমার সাথে যে এমন কিছু হলো আমি তখন বিশ্বজিৎ এর অর্পণ কে কিছুই বললাম না আমরা সেই দুটো বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, আমরা ভিতরে ঢুকতেই যাবো তখনই অর্পণ বলে উঠলো যে বাড়ির ভিতরে না গিয়ে আমরা ফিরে চলে যাই, আমি বললাম যে এত দূর এসেছি ভিতরে কি আছে দেখব বলে আর তুই বলছিস ফিরে যাবো?

আমার প্রশ্নে অর্পণ বলল যে বাড়িটা অনেক পুরোনো আগাছাতে পুরো বাড়ি ভরে গেছে ভিতরে সাপ-খপ থাকলে অন্ধকারে আমরা দেখনে পাবোনা উল্টে তারা আমাদেরকে কামড়ে নিলে বিপদ বাড়বে। আমি আর বিশ্বজিৎ ভেবে দেখলাম কথাটা তো ঠিক কিন্তু এতটা দূরে এসে ভিতরে না গিয়েই ফিরে যাবো তখনই আমি অর্পণ এর মুখের দিকে চেয়ে দেখি যেন সে সত্যিই কোনো অশরীরীকে দেখেছে ওর চোখে মুখে খুব ভয় ফুটে উঠেছে, সেই কি আমার মত কিছু অনুভব করেছে নাকি দেখেছেও?

আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিশ্বজিৎ কে বললাম যে ভিতরে না গিয়ে বাইরেটাই একটু ঘুরে দেখে ফিরে যাবো। আমরা পেছন ফরে যেই একটু হাঁটা শুরু করি ঠিক তখনই আমাদের পেছন থেকে একটা গাছের ডাল ভাঙার একটা কর্কশ শব্দ হয়, আমরা সকলেই সেটা খুব ভালো করে শুনতে পাই এবং পেছনে তাকিয়ে দেখি জায়গাটা পুরো খালি কেউ যে গাছের ডাল ভেঙেছে না ডাল আছে না অন্য কিছু, আমরা কেউই এবিষয়ে ওখানে কথা না বলে আবার হাঁটা শুরু করি।

আরেকটা কথা বলে নিই সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল আবহাওয়াটা অনেকটা ঠান্ডা ছিল কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর থেকে আমাদের তিনজনেরই গা থেকে অনবরত ঘাম বেরোচ্ছিল, ওখানে যে কিছু আছে সে আগে থেকেই আমরা তিনজনে ভালো করে বুঝতে পারি। কিন্তু এবার যে আমরা তার প্রমাণও পেয়ে গেলাম। আমরা একটু জোড়ে হাঁটা শুরু করলাম তখনই আবার একটা আওয়াজ শুনতে পাই।

আওয়াজটা ছিল ঠিক কেউ যেনো আমাদের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিচ্ছে আওয়াজটা আসছিল যেই জায়গা থেকে সেটা হলো ঠিক প্রথমে সেই জায়গায় যেখানে কোনো অদৃশ্য কিছু আমার দান কাঁধে ধাক্কা মেরেছিল। আমরা যতো এগিয়ে যাচ্ছি তত আওয়াজটা আরো জোড়ে হচ্ছে, এবার আমাদের তিনজনেরই শরীর হিম হয়ে গেছে কারোর গোলা থেকে কোনো প্রকারের কথা কিংবা আওয়াজ বার হচ্ছিলো না, শুধু ভাবছিলাম যে কখন এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারব আমরা। আমরা সেখান থেকে দৌড় দিই কিছুটা সামনে ভূত বাংলা টা পার করে আমরা দাঁড়ায় তখনও সেই হাততালির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে..... এক অদৃশ্য হাততালি, যেনো সে আমাদেরকে দেখে খুব খুশি হয়ে হাততালি দিচ্ছে।

আমরা তখনই ওই জায়গা টা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যায় কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাদের তিনজনের মধ্যে সারাজীবন থেকেই যায় যে সেই হাততালিটা কে দিচ্ছিল আর কেনোই বা দিচ্ছিল সে কি আমাদেরকে দেখে খুশিতে হাততালি দিচ্ছিল নাকি আমাদের সাহস দেখে হাততালি দিচ্ছিল?

গল্পটা শেষ করা মাত্রই দেব প্রশ্ন করল আনজার দা হাততালিটা কে দিচ্ছিল?

আমি বললাম সেটা আমদের তিনজনের মধ্যে কারোরই আর সাহস হয়নি যে হাততালি কে দিচ্ছিল সে বিষয় নিয়ে তদন্ত করি। হাততালি কে দিচ্ছিল আর কেনোই বা দিচ্ছিল সেটা শুধুমাত্র একটা রহস্য হয়েই থেকে গেছে। সেই দিন থেকে অদৃশ্য হাততালি শুধু একটা শব্দ বা রহস্য নয় এটা একটা স্মৃতি হয়ে গেছে যা কখনও ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভোলা যায় না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror