Sayan Gain

Classics Others

4  

Sayan Gain

Classics Others

-: অচেনা পথের রহস্য :-

-: অচেনা পথের রহস্য :-

6 mins
292


সেই স্কুলের গণ্ডী পেড়িয়ে আসার পর এই তিন বছর পর বাড়ি ফিরলাম । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই কোলকাতা চলে গেছিলাম । বহু দিন পর নিজের বাড়ি ফিরে এসে খুব ভালো লাগছে । যদিও এই তিন বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে । আজ রবিবারের দিন বিশেষ কোনও কাজ নেই । তাই রাস্তার দিকে একটু হাঁটতে বেরোলাম । হাঁটতে হাঁটতে আমাদের স্কুলের সামনে আসলাম, পুরানো কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই স্কুলে । রাস্তার ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে স্কুলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম । অকস্মাৎ আমার সামনে দুটো সাইকেল এসে থামল । দেখলাম অখিলেশ আর রমেশ । দুজনেরই চেহারার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে । অখিলেশ বলল কী ব্যাপার তোর ? কবে ফিরলি কোলকাতা দিয়ে ? কতো দিন পর তোর সাথে দেখা ! আমি ওর কথার জবাব দেওয়ার আগে, রমেশ বলে উঠলো তোর চেহারার তো আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । আমি কিছু না বলে এক গাল হেসে দিলাম । তারপর আমরা তিনজন মিলে গল্পে মত্ত হয়ে গেলাম । হঠাৎ রমেশ বলে উঠলে আজ যখন সবার ছুটি রয়েছে তাহলে চল সবাই আজ সন্ধ্যাবেলা চা খেয়ে আসি । বহুদিন হয়ে গেছে আমরা সবাই একসাথে বসে চা খাইনি, আড্ডাও দেওয়া হয়নি । এতো সুন্দর প্রস্তাবে আমি আর অখিলেশ না করতে পারলাম না । এই কথা হওয়ার পর আমরা যে যার বাড়ি চলে গেলাম ।

সময় মতো সন্ধ্যাবেলা আমরা চার রাস্তার মোড়ে এসে হাজির হলাম । রমেশ বলল কিন্তু চা খেতে যাবি কোথায় ? অখিলেশ বলল তালপুকুর গ্রামের ওখানে একটা ভালো চায়ের দোকান আছে, লোক মুখে শুনেছি ওখানে নাকি খুব ভালো চা করে । রমেশ বলল ধুর সেতো নাকি এখান দিয়ে প্রায় তিন মাইল দূর, এতো রাস্তা যাওয়া মুখের কথা নাকি । অখিলেশ বলল কেন আমরা সাইকেলে যাবো কোনও অসুবিধা হবেনা । অগত্যা রাজি হয়ে গেলাম । ভেবে দেখলাম একটাই তো দিন আনান্দ করবো । না জানি আবার কবে দেখা হবে তাই যাওয়া যেতেই পারে । সবাই যাওয়া শুরু করলাম বড়ো রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম । এদিকে লোকজন সন্ধ্যার পর খুব কমই আসে, সেই জন্য এদিকে ইলেকট্রিক পোষ্টার গুলিতে আলোর ব্যাবস্থা নেই । আন্দাজ মতো ত্রিশ মিনিট সাইকেল চালানোর পর অবশেষে এসে পৌছালাম সেই চায়ের দোকানে । একটা খেলার মাঠের ধারে চায়ের দোকানটা । একটা মাঝ বয়সী লোক চা তৈরি করছে আর তার পাশেই ওনার বয়সই আরেক জন লোক গরম গরম তেলে ভাজা আর সিঙ্গারা তৈরি করছে । চায়ের দোকানের ভিতরে দেখলাম বসার জায়গা আছে, ভিতরে বেশ কিছু লোকও বসে আছে । আমরা তিন কাপ চা ও তিনটি সিঙ্গারা এবং বেগুনি নিয়ে পাশের মাঠটায় গিয়ে বসলাম । বেশ নরম ঘাস মাঠে, একটু ঘাস মতো জায়গা দেখে আমরা বসে গেলাম । চায়ের সাথে গরম গরম তেলে ভাজা আর তার সাথে আমাদের স্কুল জীবনের ফেলে আসা দিন গুলো নিয়ে কথা বলতে লাগলাম । অখিলেশ বলল সত্যি জীবনের সেই দিন গুলি কোনও দিন ভোলার নয় । রমেশ সম্মতি দিয়ে বলল সত্যি তাই, ভাই মনে আছে তোদের ? আগে এমন কোনও দিন ছিল না যে আমরা নদীর ধারে গিয়ে আড্ডা মারিনি, এমনি আরও কতই না স্মৃতি রয়েছে । এই সব আলোচনা করতে করতে ঘড়ির কাটা কখন যে দশটার ঘরে পৌছালো আমরা বুঝতেই পারলাম না । আমি বলে ঊঠলাম ঈশ অনেকটা দেরী হয়ে গেছে, এখনো যে অনেকটা পথ যেতে হবে আমাদের । রমেশ বলল চল তাহলে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পরি । তখন অখিলেশ সেই পরিপ্রেক্ষীতে বলে উঠলো আমার একটা রাস্তা জানা আছে, ঐ রাস্তা দিয়ে গেলে আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারবো । এই কথা শুনে রমেশ বলল, এই রাত্রে অচেনা পথ দিয়ে যাওয়াটা কী ঠিক হবে ? তখন আমি বললাম আকাশের দিকে দেখেছিস হঠাৎ কেমন মেঘ জমেছে, সাথে সাথে ওরা দুজনেই বলে উঠলো সত্যি তাই । আমি আর দেরী না করে বললাম চল, রাহুল যে রাস্তা বলছে সেই রাস্তা দিয়ে আমরা রওনা দিই ।


 এই বলে আমরা সবাই আমাদের সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম কিন্তু রমেশকে দেখে বুঝতে পারলাম ও একটু ভয় পেয়ে আছে । বড়ো রাস্তার পর আমরা সেই রাস্তায় ঢুকলাম দেখলাম রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল । জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে রয়েছে । বৃষ্টি আসার আগে আমরা বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি সাইকেল চালাতে লাগলাম । বড়ো রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসছি । এখন একটা ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, হটাৎ রমেশ বলে উঠলো হ্যাঁরে অভি, ঐ বট গাছের তলায় মনেহচ্ছে কে যেন একটা দাড়িয়ে আছে । আমি বললাম ধুর এই অন্ধকারে কী দেখতে গিয়ে কী দেখেছিস ঠিক নেই, ওসব কিছু না বাদ দে । চল তাড়াতাড়ি, আমাদের বৃষ্টি আসার আগে বাড়ি ফিরতে হবে । আমি কথা বলা শেষ করলাম আর বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেলো । অখিলেশ বলল নাও এবার এটাই বাকী ছিল । আমরা খুব জোরে সাইকেল চালাতে লাগলাম । আমরা একটা ছোটো কালভার্ট এর উপর এসে পরলাম । কালভার্ট এর মাঝ বরাবর এই বৃষ্টিতে কে যেন একজন চাদর মুড়ি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আমরা ভাবলাম কোনও চাষি হয়তো বাড়ি ফিরছে । অখিলেশ আমাদের আগে ছিল ও সাইকেলের বেল বাজাতে লাগলো কিন্তু বেলের আওয়াজ যেন তার কান অবধি যাচ্ছে না । সে দিব্যি তার মতো হেঁটে যাচ্ছে, পিছন দিক থেকে আমি বলে ঊঠলাম, এই যে মশাই কখন দিয়ে আওয়াজ দেওয়া হচ্ছে সরছেন না কেন ? একটু সোরে যান আমরা চলে যাই । সে দেখি কোনও কথা না বলে একটু সরে দাঁড়ালো আমরা পাশ কাটিয়ে চলে এলাম । রমেশ বলল এ ভাই ওটা মানুষ নয়রে, আমার মনে হচ্ছে ওটা কোনও প্রেত আত্মা, ওদিক থেকে অখিলেশ এক ধমক দিয়ে বললো চুপ করতো তোর শুধু আজে বাজে কথা । রমেশ বললো নারে আমরা পাশ কাটালাম সেই সময় পিছন ঘুড়ে দেখলাম লোকটা পিছন থেকে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে । আমি বললাম কী বলছিসরে ? রমেশ বলল যা বলছি সত্যিই বলছি । অখিলেশ কে বললাম, আরও জোরে প্যাডেল কর, এইখান দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বেড়োতে হবে । সামনে আবার একটা কালভার্ট এবার আমরা সবাই বিস্ময়ে ও ভয়তে খুব জোরে সাইকেল এর ব্রেকে চাপ দিলাম । আমরা সামনে যা দেখলাম তা দেখে আমরা রীতিমতো ভীত হয়ে পরলাম । এই প্রচণ্ড বর্ষাতেও আমার কান দুটো গরম হয়ে গেল । আমরা আগের কালভার্টে যে লোকটার পাশ কাটিয়ে চলে এলাম, সেই একই লোক এই কালভার্টেও একই জায়গা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । রমেশ ফিসফিসে গলায় বলে উঠলো আমি আগেই বলেছিলাম এতো রাতে অচেনা রাস্তায় যাসনা, তোরা কেও শুনলি না তখন । এখন কী হবে কী জানি ভগবান শুধু ভালোয় ভালোয় বাড়ি পৌছে দিলেই হল । আমি বললাম শোন ভয় পেলে হবে না আমারা আগে যেমন সাইকেল চালাচ্ছিলাম তেমনি সাইকেল চালাবো কিছু হবে না এই বলে আমি আগে আগে যেতে লাগলাম, আর ওরা আমার পিছন পিছন যেতে লাগলো । আগের মত আবার তার পিছনে গিয়ে বেল বাজালাম কিন্তু সে যেন কোনো গ্রাহ্য করছে না । রমেশ ভয়তে রাম নাম আওরা তে লাগলো । সামনের সেই আগুন্তুক হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পরল । তাই দেখে আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম । সেই বাক্তিটি পিছনে ঘুরল আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সেই খিন আলোয় দেখলাম সে সত্যি কোনও মানুষ নয়, ওর ওই ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে আমরা সিউরে উঠলাম । কি ভয়ানক মুখ চোখের কুঠুরিতে চোখ নেই মুখের চামরা পচে ঝুলে ঝূলে পড়েছে । মুখে জায়গায় জায়গায় খত চিহ্ন । সামনের সেই ভূত বলে উঠলো কোথায় যাবি ? আমায় এই কালভার্ট এর তলায় মেরে পুতে দিয়ে চলে গিয়েছিলি, কি ভেবে ছিলি যে তোরা পার পেয়ে যাবি ? আজ তোরা আমার হাতে মরবি। এই শুনে রমেশ জোরে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচিয়ে উঠলো । আমি কি করব কিছু বুঝতে পারলাম না, পিছন থেকে অখিলেশ বলে উঠলো আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে চল পালাই । আমরা কোনও কিছু না ভেবে ছুটতে লাগলাম । পিছন দিক দিয়ে আওয়াজ ভেসে আসছে দাঁড়া দাঁড়া বলছি আজ তোদের মৃত্যু আমার হাতে… আজ তোদের নিস্তার নেই, এই বলে বিকট শব্দে হেসে উঠলো । কতক্ষণ দৌড়াচ্ছি জানি না, কতটা দৌড়েছি তাও জানি না । আমারা দৌড়াতে দৌড়াতে পাকা সড়ক এর উপর এসে পরলাম । আমরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম । রমেশ বলল এই রাস্তায় আর কোনোদিন নয় । অখিলেশ বলল সাইকেল গুলো ওখানেই আছে । রমেশ বলল বেঁচে আছি এই অনেক, বেঁচে আছি যখন সাইকেল আবার কেনা যাবে । কিন্তু এই রাস্তায় আমি আর যেতে রাজি নই । তিনজন ক্লান্ত শরীর নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম । আমার মনে একটা প্রশ্ন এসে জমাট বাঁধছিল যে ওই অশরীরী ওই কথাটি কেন বলল ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics