Sucharita Das

Inspirational

3  

Sucharita Das

Inspirational

অবকাশের বিড়ম্বনা

অবকাশের বিড়ম্বনা

2 mins
546


প্রিয় ডায়েরি,


আজকের গল্প লক ডাউনের এই সুদীর্ঘ অবকাশ আমাদের কি কখনও কাম্য ছিল?


ঘটনাটি আজ থেকে এক মাস আগের----


"রিমি আমার ব্রেকফাস্ট টা তাড়াতাড়ি দাও টেবিলে। রাস্তায় এত বেশি জ্যাম থাকে, অফিসের দেরি হয়ে যাবে।" ঋক রিমিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো।আর রিমি একবার কিচেন আর একবার ডাইনিং এ দৌড়াদৌড়ি করছে তখন। তার ই মাঝে দোতলায় তুলতুল কে স্কুলের জন্য তৈরি করতে হবে বলে ওকে ঘুম থেকে ওঠাতেও গেছে বার দুয়েক। রিমিকে নিজেকেও স্কুলের জন্য তৈরি হতে হবে। সকালের এই সময়টুকু নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না রিমির। কোনোরকমে ঋককে ব্রেকফাস্ট আর টিফিন দিয়ে , তুলতুলে র কাছে দৌড়ালো ও। ঘুমন্ত তুলতুল কে টেনে তুলে ব্রাশ হাতে দিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে , আবার কিচেনে এলো ও। তুলতুলে র জন্য দুধ, কর্ণফ্লেক্স টেবিলে চাপা দিয়ে রেখে , আবার উপরে গিয়ে তুলতুলকে স্কুলের জন্য তৈরি করিয়ে নামালো। কোনোরকমে ওকে খাইয়ে,স্কুল বাসে তুলে দিয়ে, পড়িমরি করে রিমি দৌড়ালো নিজে তৈরি হতে স্কুলের জন্য।



 এই ছিল আজ থেকে দু মাস আগের রিমির বাড়ির ছবি। তারপর তো এক মাসের মধ্যে পুরো দেশ তথা দুনিয়ার ছবি পাল্টে গিয়েছিল এক লহমায়। করোনা ভাইরাস তার করাল ছায়ায় গ্ৰাস করতে শুরু করেছে ,তখন পুরো দুনিয়াকে। আমাদের দেশ ও তার থেকে বাইরে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশানুযায়ী পুরো দেশে লক ডাউনের ঘোষণায় দেশ সম্পূর্ণ রূপে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।আজ শুধু রিমির বাড়ির ভেতরের চিত্র ই নয়, পুরো দেশের প্রত্যেকটি ঘরের ভেতরের চিত্রতেই আমূল পরিবর্তন এসেছে।



আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে রিমির কোনো ব্যস্ততা নেই অফিসের টিফিন দেবার, তুলতুল কে স্কুলের জন্য তৈরি করিয়ে দেবার, আর না নিজের স্কুলের জন্য তৈরি হবার। আজ বাইরের কর্ম ব্যস্তময় জগত স্তব্ধ হয়ে গেছে। সপ্তাহ শেষের যে অবকাশের জন্য আমরা অধীর আগ্ৰহে অপেক্ষা করে থাকতাম, সেই সুদীর্ঘ অবকাশ আর আমাদের আনন্দ দিচ্ছে না। আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি এই অবকাশে। আসলে কর্ম ব্যস্ততার মাঝে যে অবকাশ ,তা আমাদের নতুন করে কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু এ কেমন অবকাশ, যেখানে পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই ভয়াবহ অবকাশ কি কোনোদিন আমাদের কাম্য ছিল? এই প্রশ্নের একটাই উত্তর, না। অবকাশ আমাদের সকলের ই কাম্য, কিন্তু তা কাজের মাধ্যমেই। কর্ম ব্যস্ততার অবকাশ আমাদের যে আনন্দ দেয়, দেশের এই দুর্দিনের বিষন্নতার অবকাশ আমাদের সেই আনন্দ কখনও দিতে পারে না। 



পরিশেষে এটাই বলার যে, এই অবকাশ শুধু মাত্র আমাদের সুরক্ষার জন্য, সর্বোপরি দেশের সুরক্ষার জন্য। রিমির মতো আমরাও আবার অপেক্ষা করে আছি, সেই কর্মব্যস্তময় সকালের।

ধন্যবাদান্তে

কলম রাখলাম।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational