STORYMIRROR

Ornate Blaise Pereira

Drama Romance Others

4  

Ornate Blaise Pereira

Drama Romance Others

অবহেলা

অবহেলা

67 mins
413

আকাশের কোণে মেঘ জমেছে। বিকেলের শেষ আলোয় যেন একটা বিষণ্ণতা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। মৃণ্ময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপ্সরার অপেক্ষা করছে। অপ্সরার ফোনে কল দিয়েছে কয়েকবার, কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। ব্যস্ততা নাকি অবহেলা – মৃণ্ময় বুঝতে পারছে না।

অপ্সরার সাথে মৃণ্ময়ের সম্পর্কের শুরুটা ছিল একেবারে সিনেমার মতো। দুজনেই কলেজে পড়ে, প্রথম দেখা হয়েছিল এক ক্লাস পার্টিতে। অপ্সরার হাসির ঝলক আর মিষ্টি ব্যবহারেই মৃণ্ময় হারিয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে তারা বন্ধু হয়, আর সেই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়। মৃণ্ময় ভাবত, অপ্সরার ভালোবাসাই তার জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছে।

কিন্তু এখন সব কিছু বদলে গেছে। অপ্সরা আগের মতো আর কথা বলে না। মৃণ্ময় ফোন করলে সে বলে, “আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো।” মেসেজের রিপ্লাই আসে ঘন্টার পর ঘন্টা পরে, তাও খুব সংক্ষিপ্ত। আগের সেই উচ্ছ্বাস, সেই মায়াভরা চোখের চাহনি হারিয়ে গেছে কোথাও।

আজ সন্ধ্যায় মৃণ্ময় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অপ্সরার সাথে সরাসরি কথা বলবে। কতদিন আর এই অবহেলা সহ্য করা যায়? মৃণ্ময় ফোন করল, রিং হচ্ছে, কিন্তু অপ্সরা ধরছে না। কিছুক্ষণ পরে মেসেজ এল, "আমি এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলবো।"

মৃণ্ময় ফোনটা রেখে দেয়। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে এসে লাগে। এক সময় অপ্সরা মৃণ্ময়ের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করত। কিন্তু এখন অপ্সরার কাছে মৃণ্ময় যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।

রাত বাড়ছে। মৃণ্ময় অপ্সরার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করতে থাকে। অপ্সরার হাসি, চোখের চাহনি, হাতে হাত রেখে পথচলা – সবই যেন এখন স্মৃতি। মৃণ্ময়ের ভেতরে একটা যন্ত্রণা জমতে থাকে। এই অবহেলা কি ভালোবাসার মৃত্যু, নাকি নতুন কিছু শুরু হবে?

সকালবেলা মৃণ্ময়ের ঘুম ভাঙল মোবাইলের রিংটোনে। চোখ কচলে ফোন হাতে নিল সে। স্ক্রিনে অপ্সরার নাম জ্বলজ্বল করছে। আশ্চর্যের ব্যাপার! অপ্সরা আজ সকালেই কল দিয়েছে! দ্রুত ফোনটা ধরল মৃণ্ময়।

— "হ্যালো?"
— "কী করছো?" অপ্সরার স্বরটা ছিল নির্লিপ্ত, যেন দায়সারা ভাবে ফোন করেছে।
— "ঘুম থেকে উঠলাম। তুমি?"
— "আমি ভালো আছি।"

অপ্সরার স্বরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। মৃণ্ময়ের বুকের ভেতর চাপা যন্ত্রণা বাজল। এই মেয়েটা কি সত্যিই সেই অপ্সরা, যাকে সে একসময় চোখের মণির মতো আগলে রেখেছিল?

— "আমাদের আজ দেখা করা উচিত, অপ্সরা," মৃণ্ময় বলল।
— "আজ? আমি ব্যস্ত আছি।"
— "তুমি সবসময় ব্যস্ত থাকো, অপ্সরা। কিছুটা সময় কি আমায় দিতে পারো না?"

ওপাশ থেকে কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। তারপর অপ্সরা বলল,
— "ঠিক আছে, বিকেলে দেখা করবো। ফার্মগেটের কফি শপে আসবে।"

মৃণ্ময়ের বুকের ভেতর আশার ঝলক ফুটে উঠল। হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

 

বিকেলটা ছিল রোদেলা। ফার্মগেটের ব্যস্ত রাস্তায় মানুষজনের ভিড়। মৃণ্ময় কফি শপে এসে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর অপ্সরা এল। পরিপাটি পোশাক, চুল খোলা, ঠোঁটে হালকা রঙ। অপ্সরাকে দেখে মৃণ্ময়ের মনটা আনন্দে ভরে উঠল।

— "বসো," মৃণ্ময় চেয়ার এগিয়ে দিল।
অপ্সরা বসল। তার চোখে ক্লান্তির ছাপ।
— "কেমন আছো?" মৃণ্ময় জিজ্ঞেস করল।
— "ভালো।"

অপ্সরা মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রল করছে। মৃণ্ময় তাকিয়ে আছে অপ্সরার দিকে। আগে অপ্সরা চোখে চোখ রেখে গল্প করত, এখন যেন তার দৃষ্টিও পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

— "অপ্সরা, আমাদের মধ্যে এমন দূরত্ব কেন তৈরি হচ্ছে?"
অপ্সরা ফোনটা টেবিলে রাখল।
— "দূরত্ব?"
— "তুমি তো বদলে গেছো। আগে আমাদের মধ্যে যে উষ্ণতা ছিল, সেটা কোথায় হারিয়ে গেল?"

অপ্সরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
— "মৃণ্ময়, তুমি কি মনে করো ভালোবাসা সবসময় এক রকম থাকে?"
— "তাহলে কি তুমি আমায় আর ভালোবাসো না?"

অপ্সরা কিছু বলল না। কফির কাপটা হাতে নিল, তারপর বলল,
— "ভালোবাসা হয়তো রয়ে গেছে, কিন্তু আগের মতো নেই।"

মৃণ্ময়ের বুকটা ধক করে উঠল।
— "মানে?"
অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
— "তুমি আমায় সময় দাও, মৃণ্ময়। আমি এখন সব কিছু নিয়ে দ্বিধায় আছি।"

মৃণ্ময়ের মনটা ভেঙে গেল। সে বোঝে, অপ্সরার হৃদয়ে ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেছে। তবু সে আশা ছাড়তে চায় না।

অপ্সরা উঠে দাঁড়াল।
— "আমি এখন চললাম। পরে কথা হবে।"

অপ্সরা চলে গেল। মৃণ্ময় বসে রইল একা। তার কফির কাপ ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাইরে বিকেলের আলো ম্লান হয়ে আসছে। মৃণ্ময় জানে, এই অবহেলার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না।

রাতে ঘুম আসে না মৃণ্ময়ের। অপ্সরার বলা শেষ কথাগুলো মনের মধ্যে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে — "ভালোবাসা হয়তো রয়ে গেছে, কিন্তু আগের মতো নেই।"

বিছানায় শুয়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে মৃণ্ময়। তার মনে হচ্ছে, অপ্সরা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কী এমন বদলে গেল যে অপ্সরা আর আগের মতো নেই?

মৃণ্ময় উঠে বসে। ঘরের কোণে রাখা একটা ফটোফ্রেমে অপ্সরার হাসিমাখা মুখ। ওরা যখন কক্সবাজার গিয়েছিল, তখনকার ছবি। অপ্সরার চোখেমুখে সেই হাসি, যে হাসি মৃণ্ময়কে বেঁচে থাকার শক্তি দিত। কিন্তু এখন অপ্সরার সেই হাসি ফিকে হয়ে গেছে।

ফোন হাতে নিয়ে মৃণ্ময় অপ্সরাকে একটা মেসেজ লিখল:

 "ঘুমিয়েছো?"

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রিপ্লাই এল —
"হ্যাঁ।"

মৃণ্ময়ের বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল।
"ভালোবাসো আমাকে?"

অপ্সরা রিপ্লাই দিল না। মিনিট পাঁচেক পর একটা মেসেজ এল —
"কাল কথা বলবো।"

মৃণ্ময় ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে দিল। কেন অপ্সরা এমন করছে? অন্য কাউকে পছন্দ করছে নাকি সে নিজেই মৃণ্ময়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে গেছে?

 

পরদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার কথা থাকলেও মৃণ্ময় বেরোল না। অপ্সরাকে বারবার কল করল, কিন্তু অপ্সরা ফোন ধরল না। বিকেলে মৃণ্ময় ঠিক করল, অপ্সরার বাসায় যাবে। আজ সে সব কিছু পরিষ্কারভাবে জানতে চায়।

অপ্সরার বাসার সামনে গিয়ে কল করল মৃণ্ময়। মিনিটখানেক পর দরজা খুলল অপ্সরা। অপ্সরা অবাক চোখে তাকাল।
— "তুমি এখানে?"
— "হ্যাঁ। কথা বলতে চাই তোমার সাথে।"
অপ্সরা ভেতরে আসতে বলল না।

— "বলো, কী কথা?"
মৃণ্ময়ের গলা ভারী হয়ে গেল।
— "অপ্সরা, তুমি কেন এমন করছো আমার সাথে?"
অপ্সরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
— "কী করলাম আমি?"
— "তুমি কি আমায় আর ভালোবাসো না?"

অপ্সরা চোখ নামিয়ে নিল।
— "ভালোবাসা কমে গেছে, মৃণ্ময়। আমি আর আগের মতো অনুভব করি না।"

মৃণ্ময়ের কণ্ঠ থেমে গেল।
— "কিন্তু কেন? আমি কি তোমার প্রতি কোনো অন্যায় করেছি?"
— "না, তুমি কোনো অন্যায় করোনি। আসলে... আমি নিজেই নিজের কাছে স্পষ্ট নই।"

মৃণ্ময়ের চোখে পানি চলে এল।
— "তাহলে কি সব শেষ?"

অপ্সরা কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল,
— "আমাকে সময় দাও, মৃণ্ময়। আমি নিজেকেও বুঝতে পারছি না।"

মৃণ্ময় অপ্সরার হাতটা ধরতে চাইল। অপ্সরা ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিল।

— "আমি এখন একটু একা থাকতে চাই," অপ্সরা বলল।
— "একা?"
— "হ্যাঁ। আমি ক্লান্ত, মৃণ্ময়। সবকিছু থেকে বিরতি নিতে চাই।"

মৃণ্ময়ের বুকটা ধক করে উঠল।
— "তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাও?"

অপ্সরা চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
— "সময়ই বলে দেবে।"

মৃণ্ময় বুঝল, অপ্সরা তাকে আর আগলে রাখতে চায় না। ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলে অবহেলাই তো বাকি থাকে।

অপ্সরা দরজা বন্ধ করল। মৃণ্ময় ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল। রাস্তায় বেরিয়ে এলো সে। বিকেলের রোদ পড়ছে তার গায়ে। তার মনে হচ্ছে, রোদ নয়, যেন একটা ভারী অন্ধকার তাকে গ্রাস করছে।

বিকেলটা একেবারে নিরানন্দভাবে চলে গেল মৃণ্ময়ের। অপ্সরার স্নেহময়ী স্মৃতিগুলো যেন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল। কতদিন ধরে সে নিজের ভালোবাসাকে বিশ্বাস করেছিল, আর এখন সেই ভালোবাসা কেমন অদৃশ্য হয়ে গেছে।

মৃণ্ময় কফি শপের এক কোণে বসে ছিল। চারপাশের হইচই, হাসিঠাট্টা, কিন্তু সে কিছুই অনুভব করতে পারছিল না। টেবিলের উপর রাখা চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। গতকালকার কথা, অপ্সরার চোখের নিরুত্তাপ দৃষ্টি, তার অনীহা... সবই এখন মৃণ্ময়ের মনে চিত্র হয়ে ভেসে উঠছে।

এটা কী ছিল? ছিল, না ছিল? কেন অপ্সরা এতটা বদলে গেল? কেন তাকে দূরে ঠেলে দিল?

ফোনটা হাতে তুলে মৃণ্ময় আবার অপ্সরাকে কল করে। একবার, দুইবার... তৃতীয়বারে ফোনটা ধরল।

— "হ্যালো?" অপ্সরার কণ্ঠ শুনে মৃণ্ময়ের বুকের ভেতর কষ্ট এক ঝাঁক জেগে উঠল।
— "অপ্সরা, আমি জানি, তুমি কিছু বলবে না। কিন্তু আমি এই অবস্থা আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি কি আমাকে সারা জীবন এভাবে এড়িয়ে চলবে?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল,
— "তোমার কোনো দোষ নেই, মৃণ্ময়। কিন্তু আমি নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে পারছি না। আমি কি চাই, কী চাই না, কিছুই জানি না।"

— "তাহলে কেন এমন করছো?" মৃণ্ময়ের গলা থেমে গেল।
— "আমি তোমাকে খারাপ কিছু বলব না, মৃণ্ময়। কিন্তু আমরা যে দুজন একসাথে চলতাম, সে সম্পর্কটা আর সত্যি ছিল না। আমি তোমার প্রতি অন্যরকম অনুভব করি না এখন।"

মৃণ্ময়ের হৃদয় থেমে গেল। অপ্সরার কণ্ঠে কোনো প্রেম নেই, শুধুই নিরাসক্তি।

— "তুমি কি আমাকে একা ছেড়ে যেতে চাও?" মৃণ্ময় আরও একবার প্রশ্ন করল।
— "না, আমি তোমাকে যেতে বলছি না। কিন্তু আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি সমাধান করা অসম্ভব।"

মৃণ্ময়ের কণ্ঠে একধরনের অবিশ্বাস ছিল। কিছু বলতে না পেরে ফোনটা রেখে দিল সে। হাত কাঁপছিল, শরীর ক্লান্ত।

 

বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। মৃণ্ময় অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় সংকট এখন সামনে। অপ্সরার সঙ্গ ছাড়া সে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না।

অপ্সরার প্রতি ভালোবাসা ছিল, সেটা বিশ্বাস করত সে, কিন্তু সে ভালোবাসা এখন কেন এত দূরে চলে গেছে? মৃণ্ময় জানে, তার থেকে অপ্সরা দূরে সরে যেতে চাইছে, কিন্তু সে হার মানতে চায় না।

পরদিন সকালে, মৃণ্ময় একটি চিঠি লিখল অপ্সরার জন্য। চিঠির শব্দগুলো তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে উঠে এসেছিল।

প্রিয় অপ্সরা,
যতই সময় চলে যাক, আমি জানি আমার ভালোবাসা কখনো ফুরাবে না। তোমার প্রতি আমার অনুভূতি পরিবর্তন হবে না। তুমি যা ইচ্ছা করো, কিন্তু আমি একটুকুও হাল ছাড়ব না। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো

মৃণ্ময় চিঠি হাতে নিয়ে অপ্সরার বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে এক অদ্ভুত আশা ছিল, হয়তো আজ অপ্সরা কিছু বলবে। কিন্তু তাকে কি সত্যিই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে?

মৃণ্ময় জানে না, তবে সে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে।

চিঠি হাতে মৃণ্ময় অপ্সরার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। তার পায়ে শীতলতা অনুভব হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন পৃথিবী থেমে গেছে। কিন্তু তার হৃদয়ে এখনও কিছু আশা বেঁচে আছে, এই শেষ চেষ্টাটুকু করতে হবে। চিঠি হাতে নিয়ে সে দ্বারে কড়া নাড়ল।

অপ্সরার মা দরজা খুললেন। মৃণ্ময়ের উপস্থিতি দেখে কিছুটা অবাক হলেন।
— "তুমি এখানে?"
— "জি, আপা। আমি অপ্সরার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।"
— "ও এখন বাসায় নেই।"

মৃণ্ময়ের মনে কিছুটা খারাপ লাগল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
— "আচ্ছা, আমি এই চিঠিটা তাকে দিতে পারি?"
অপ্সরার মা চিঠি নিয়ে নিলেন।
— "দেব, তবে একটু পরই অপ্সরা আসবে। তুমি কি চাও, বসো?"

মৃণ্ময় কিছুটা সময় অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এক কোণে বসে ছিল সে। কিছুটা পর অবশেষে দরজা খুলল। অপ্সরা দাঁড়িয়ে ছিল। মৃণ্ময়ের চেহারা দেখে অপ্সরা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল।

— "তুমি?" অপ্সরা হালকা অভিমানে বলল।
— "হ্যাঁ। আমি তোমার কাছে একটা বার্তা রেখে গিয়েছিলাম।"

অপ্সরা চুপচাপ চিঠিটি হাতে নিল। তারপর ঢোক গিলে বলল,
— "তুমি কি এখনও বিশ্বাস করো, মৃণ্ময়, আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিতে চাই?"

মৃণ্ময় এক পা এগিয়ে এসে বলল,
— "আমি জানি না। আমি শুধু তোমাকে জানাতে চাই, আমার ভালোবাসা এত সহজে ফুরাবে না। তুমি যা সিদ্ধান্ত নাও, আমি তোমার পাশে থাকব। তবে তুমি যে কোনোভাবে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছ, সেটি আমি আর সহ্য করতে পারছি না।"

অপ্সরা দীর্ঘ সময় চুপ থেকে বলল,
— "তোমার ভালোবাসা চমৎকার। কিন্তু যখন কিছু জিনিস আমাদের মাঝে ক্লান্তি নিয়ে আসে, তখন কিছুটা বিরতি নিতেই হয়। তোমার এই ভালোবাসা, মৃণ্ময়, সার্থক হবে যদি তুমি নিজেকে প্রমাণ করো। আমি শুধু এই মুহূর্তে নিজেকে নিয়ে কাজ করতে চাই।"

মৃণ্ময় এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। তার মনে হচ্ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে।
— "তুমি কি মানে দিতে চাও, অপ্সরা?"

অপ্সরা ঝুঁকে পড়ল।
— "তোমার ভালোবাসা সত্যি, আমি জানি। তবে আমারও কিছু একা পথ চলার সময় প্রয়োজন। সেদিন হয়তো... আবার আমি ফিরে আসব। কিন্তু আজ না।"

মৃণ্ময়ের চোখের কোণে জল চলে এল।
— "তুমি কি সত্যিই আমায় ছেড়ে যেতে চাও?"

অপ্সরা কিছু সময়ের জন্য চুপ করে থাকল। তারপর, একটুও যেন গাঢ়তা ছাড়াই বলল,
— "না, আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না, কিন্তু কিছু সময় একা থাকতে চাচ্ছি। এই সময়টা না থাকলে, আমার মনের শান্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব।"

মৃণ্ময় কিছু বলতে পারল না। সে জানে, অপ্সরার জন্য তাকে কিছু সময় দিতে হবে। হয়তো তখনই সে সত্যিকারভাবে বুঝবে, ভালোবাসার যাত্রাটা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

মৃণ্ময় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— "তুমি যা চাও, তাও আমি করবো। তবে জানো, তোমার অভাব আমি সহ্য করতে পারি না। আমি অপেক্ষা করবো, অপ্সরা, যতদিন তোমার হৃদয় আবার ফিরে আসবে।"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থাকল, তারপর বলল,
— "তুমি শুধু নিজেকে হারিয়ে দিও না, মৃণ্ময়। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তোমারও কিছু সময় প্রয়োজন।"

মৃণ্ময় অপ্সরার দিকে এক দীর্ঘ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
— "আমি চেষ্টা করব। কিন্তু কখনো তুমি যদি ফিরে আসো, আমি তোমাকে জানাতে চাই, আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।"

অপ্সরা দরজা বন্ধ করতে যেতে যেতে এক মুহূর্ত মৃণ্ময়ের দিকে ফিরে তাকাল, তার চোখে মায়া ছিল, কিন্তু সেই মায়া তেমন কোনো নিশ্চয়তা দেয় না।

মৃণ্ময় বের হয়ে এসে ধীরে ধীরে রাস্তা পার হতে লাগল। তার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা, এক ধরনের অস্থিরতা ছিল।

সে জানে, আজকের এই দিনই হয়তো তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। অপ্সরা ফিরে আসবে, না আসবে, সে জানে না। তবে সে অপেক্ষা করবে, নিজের মধ্যে একটা শান্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।

মৃণ্ময় ঠিক করে ফেলল, আজ থেকে তাকে নিজেকে এক নতুনভাবে দেখতে হবে। অপ্সরা যদি তার ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত না হয়, সে একা থাকলেও চলবে। এই অবস্থাটা আর দীর্ঘসময় ধরে রাখা সম্ভব নয়। সে যেন একটা পিপঁড়ে, যারা প্রতিদিন কিছু না কিছু সংগ্রহ করতে জানে, কিন্তু কখনোই মনে হয় না তারা পূর্ণ হবে।

দুই দিন পর, মৃণ্ময় ভাবল, সময় এসেছে তার জীবনের কিছুটা পরিবর্তন আনার। অপ্সরার প্রতি তার ভালোবাসা অনেক গভীর, কিন্তু এটি তার জীবনকে থেমে রাখতে পারে না। সে সিদ্ধান্ত নিল, কিছুটা সময় নিজেকে খুঁজে বের করা দরকার।

মৃণ্ময় নিজের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে নেমে পড়ল। অফিসের কাজ, পড়াশোনা, গান—সবকিছুতেই একদম মনোযোগ দিতে শুরু করল। সে জানত, অপ্সরা এখন সময় চাচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যে তার মন যেন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।

 

এক সপ্তাহ পর, মৃণ্ময় বাসায় বসে ছিল। হঠাৎ তার ফোনে একটা মেসেজ এল— অপ্সরা।

 "তুমি কেমন আছো?"

মৃণ্ময়ের হাত কাঁপছিল। সে দ্রুত রিপ্লাই করল:
"ভালো আছি। তুমি?"

 "তুমিও জানো, আমি ভালো আছি।"

মৃণ্ময়ের মনের মধ্যে কিছু একটা গুঞ্জন করতে শুরু করল। কেন অপ্সরা এতক্ষণ পর যোগাযোগ করছে?

"তোমার সঙ্গে কথা বলার পর কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।"

 "আমি কি ভুল করেছি?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ ছিল। তারপর এক এক করে মেসেজ আসল:
"না, তুমি কিছু ভুল করোনি। আমি নিজেই কিছু বুঝতে পারছিলাম না। এই সময়টা কিছুটা নিজেকে চিনতে পারলাম।"

মৃণ্ময়ের মন কিছুটা শান্ত হল, কিন্তু তবুও সে বুঝতে পারছিল না, অপ্সরা আসলেই কী চায়।

 "তুমি কি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে চাও?"

অপ্সরা একটানা কয়েক মিনিট চুপ ছিল। শেষমেষ সে লিখল:
"আমি জানি না, মৃণ্ময়। তবে তুমি যে আমাদের সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হারাওনি, সেটা আমি মুল্য দিচ্ছি। কিন্তু আমি জানি, আমাদের দুজনের জন্য কিছুটা সময় দরকার।"

মৃণ্ময়ের মুখে এক অদ্ভুত হাসি চলে এলো। অপ্সরা শেষমেষ কিছু বলেছে। সে বুঝতে পারছিল, যে সম্পর্ক তারা তৈরি করেছিল, তা এত সহজে ভাঙতে পারে না।

 "আমি অপেক্ষা করবো, অপ্সরা। তবে নিজেকে কখনো হারিয়ে ফেও না। আমি এখানে আছি।"

অপ্সরা দীর্ঘ সময় কোনো উত্তর দিল না। তবে মৃণ্ময় জানত, কিছু একটা পরিবর্তন এসেছে। তারা হয়তো একে অপরের কাছাকাছি ফিরতে শুরু করবে।

 

পরবর্তী কিছুদিনে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরকে একটু একটু করে নতুন করে বুঝতে শুরু করল। তারা মিটিং করেছিল একদিন, সেদিন অপ্সরা বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো, কিন্তু আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে একদম পরিষ্কার থাকা দরকার।"

— "তাহলে তুমি কি ভাবছো?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।
— "আমি কিছু সময় চাই, মৃণ্ময়, কিছু নিজের জন্য। কিন্তু আমি জানি, আমাদের মধ্যে যা কিছু ছিল, তা হারিয়ে যায়নি।"

মৃণ্ময়ের চোখের কোণে কিছু জল চলে এল।
— "তুমি যদি ফিরে আসো, আমি অপেক্ষা করবো।"

অপ্সরা হালকা হাসল, তবে তার চোখে এক ধরনের দুঃখ ছিল।
— "আমিও ফিরে আসবো, মৃণ্ময়, তবে সময়টা ঠিকমতো আসবে।"

মৃণ্ময় জানত, তার কাছে এখন সময়ই সব। অপ্সরার জন্য সে অপেক্ষা করবে। যদিও আজকের দিনেও সম্পর্কের কোন সুস্পষ্ট উত্তর ছিল না, তবুও মৃণ্ময় জানত, তাদের মাঝে অবহেলা ছিল, কিন্তু ভালোবাসা ছিল আরও অনেক বেশি।

দিনগুলো একে একে কাটতে থাকল। মৃণ্ময় নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অফিসের কাজ, বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা, গান—সবই যেন তাকে অপ্সরার কথা ভুলিয়ে দিতে চেষ্টা করছিল। তবে তার হৃদয়ের কোনো এক কোণে অপ্সরার প্রতি ভালোবাসা এখনও জ্বলজ্বল করছিল।

অপ্সরার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেল, তবে মাঝে মাঝে দু'একটি মেসেজ আসতো। মৃণ্ময় জানত, অপ্সরা এখনো তাকে পুরোপুরি ত্যাগ করেনি। তার নিজের ভেতরে একটা অদ্ভুত শান্তি চলে এসেছিল, এক ধরনের উপলব্ধি—যে সম্পর্কটা তাদের মধ্যে ছিল, তা ভালোবাসার ছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে, তারা দুজনেই নিজেদের নিজের মতো করে খুঁজে পাক।

 

একদিন সন্ধ্যেবেলায় মৃণ্ময় কফি শপে বসে ছিল। হঠাৎ তার ফোনে একটা মেসেজ এল। এটি ছিল অপ্সরার মেসেজ।

 "আমার সাথে দেখা করতে পারবে?"

মৃণ্ময়ের হৃদয় জোরে ঠুকপুক করতে শুরু করল। এতদিন পর আবারও অপ্সরার মেসেজ! সে তাড়াতাড়ি রিপ্লাই করল:
"কোথায়?"

 "কফি শপে, যেখানে আমরা প্রথমবার একে অপরকে দেখেছিলাম।"

মৃণ্ময় হাসল, সে জানত অপ্সরা তার জন্য কোন জায়গায় আসবে না, সে জানত, কফি শপেই তাদের প্রথম দেখার সেই স্মৃতি রয়েছে। সেখানে তারা একে অপরের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছিল।

সে দ্রুত বের হয়ে পড়ল। কফি শপে গিয়ে বসে থাকা মৃণ্ময় খুব একটা চিন্তা করতে পারেনি। শুধুমাত্র অপ্সরার মুখ দেখার অপেক্ষা ছিল।

কিছুক্ষণ পর, অপ্সরা এসে বসে পড়ল। তার মুখে এক ধরনের মৃদু হাসি ছিল।

— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, যখনই আমি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না, তখন আমি এই জায়গাটিতে এসে বসি।"

— "কফি শপ?" মৃণ্ময় কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।
— "হ্যাঁ, এখানেই তো আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। এখানে এসেই আমার মনে হয়, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নেব।"

মৃণ্ময় হাসল, তবে তার মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল।
— "তাহলে তুমি আজ কী সিদ্ধান্ত নিতে চাও?"

অপ্সরা চুপচাপ মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু সময় পর সে ধীরে ধীরে বলল,
— "আমি জানি, আমি অনেক দিন তোমাকে অবহেলা করেছি। তোমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার মনে যে পরিবর্তন আসছে, তা তোমাকে জানানো প্রয়োজন।"

মৃণ্ময়ের চোখের কোণে জল চলে এলো।
— "তুমি কি আবার আমার সাথে থাকতে চাও?"

অপ্সরা একবার মাথা নেড়ে বলল,
— "হ্যাঁ, তবে আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক আগের মতো হবে না। আমরা যে ভালোবাসা ছিলাম, সেটি নতুন করে গড়তে হবে। আমি চাই, আমরা একে অপরকে নতুনভাবে জানি, একে অপরকে নতুনভাবে ভালোবাসি।"

মৃণ্ময়ের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল।
— "তুমি জানো, অপ্সরা, আমি অপেক্ষা করেছি, কিন্তু অপেক্ষার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। আমি চাই, আমাদের সম্পর্কটা নতুন করে শুরু হোক, তবে এইবার সাবধান হয়ে।"

অপ্সরা হালকা হাসল, তার চোখে আবারও সেই প্রিয় আগের মতো চেহারা ফিরে এল।
— "তাহলে, আমরা শুরু করব। কিন্তু এটাই আমাদের নতুন শুরু।"

মৃণ্ময় অপ্সরার হাতটি একটু একটু করে ধরল। অপ্সরাও সাড়া দিল, দু'জনের হাত মিলিয়ে একটি নতুন পথচলার সূচনা হয়েছিল।

এখন তাদের সম্পর্কের মাঝে আর কোনো অবহেলা ছিল না, বরং এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হয়েছিল। তারা জানত, তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আগের মতো শক্তিশালী ছিল, তবে এখন তারা নতুনভাবে একে অপরকে জানবে, একে অপরকে সমর্থন করবে, আর সেই সম্পর্ক হবে এক নতুন রূপে।

মৃণ্ময় ও অপ্সরা একে অপরকে নতুন করে বুঝতে চেষ্টা করছিল। সম্পর্কের যে চেনা পথ ছিল, তা ছিল একধরনের অভ্যাসের মধ্যে। কিন্তু তারা এখন চেষ্টা করছিল পুরনো অভ্যস্ত পথে না গিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার। যদিও এটি সহজ ছিল না, তাদের মধ্যে কিছুটা শংকা, কিছুটা ভয় ছিল।

 

একদিন, বিকেলে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হলো। সেদিনটা ছিল কিছুটা রোদে ভরা, কিন্তু বাতাসে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছিল। তারা হাঁটছিল একে অপরের পাশে, চুপচাপ, কিন্তু একে অপরকে বুঝতে পারছিল।

— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, আমি যখন একা ছিলাম, তখন আমার মনের মধ্যে অনেক কিছু বদলেছে।" অপ্সরা বলল, তার চোখে একটু দুঃখ, কিন্তু শান্তি ছিল।

— "আমি জানি, অপ্সরা, অনেক কিছুই বদলেছে। তবে তুমি জানো, আমরা যদি আবার শুরু করি, তাহলে সবকিছু একসঙ্গে হয়ে যাবে। শুধু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে।" মৃণ্ময়ের কণ্ঠে মোলায়েমতা ছিল।

অপ্সরা কিছুটা থেমে গিয়ে বলল,
— "আমার মনে হয়, কিছু কিছু জায়গা ছিল যেখানে আমরা একে অপরকে বোঝেনি, অথবা হয়তো জানতাম, কিন্তু একে অপরের অনুভূতিগুলো বুঝতে সময় নিয়েছিলাম।"

মৃণ্ময় কিছুটা চিন্তা করে বলল,
— "তাহলে আমরা কি নতুনভাবে একে অপরকে জানবো?"

অপ্সরা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
— "হ্যাঁ, নতুনভাবে। এখন আর পুরনো ভুলগুলোকে আমাদের মধ্যে থাকতে দেব না। আমরা চেষ্টা করবো একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার। আর যদি কখনো কিছু সমস্যা হয়, তবে একে অপরের কথা শুনতে হবে।"

এ কথা শুনে মৃণ্ময়ের মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি এল। এই নতুন পথচলা, নতুন শুরু, তাকে এক ধরনের নির্ভরতা দেয়। সে জানতো, অপ্সরার কাছে তার একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে, এবং অপ্সরাও জানে, মৃণ্ময় তার জন্য সত্যিই কিছু।

 

কিছুদিন পর, তারা একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো শুরু করল। ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, একে অপরের ছোট ছোট চাহিদা পূরণ করা—এগুলো তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হয়ে উঠেছিল। একদিন, এক জায়গায় বসে, মৃণ্ময় অপ্সরার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, তুমি জানো, আমি যে কোনো মুহূর্তে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারি। তবে, এই সময়ে তুমি আমাকে যা দিয়েছ, তাতে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমাদের মধ্যে যে সেতুটা তৈরি হয়েছে, আমি সেটা হারাতে চাই না।"

অপ্সরা মৃদু হাসল, তারপর বলল,
— "আমিও। তবে, জানো, মৃণ্ময়, আমি মনে করি, আমাদেরকে কখনো একে অপরকে হারানোর ভয় নিয়ে চলতে হবে না। আমাদের সম্পর্ক বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেন একে অপরের প্রতি কোনো অবহেলা না থাকে।"

মৃণ্ময় অপ্সরার হাতটা ধীরে ধীরে ধরল।
— "বিশ্বাস, অপ্সরা, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা। আমাদের সম্পর্কের ভিত সেই বিশ্বাসে নির্মিত হবে, কোনো গড়বড় হলে, আমাদের একে অপরকে ঠিক করতে হবে।"

অপ্সরা তাকিয়ে থেকে বলল,
— "আমরা চেষ্টা করবো, মৃণ্ময়। আমাদের বিশ্বাস একে অপরকে, আর কোনো কিছুই আর অবহেলার জায়গা হবে না।"

তাদের মধ্যে এমন একটি অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হয়েছিল, যা কেবল ভালোবাসায় পুষ্ট হচ্ছিল। তারা জানতো, তাদের সম্পর্ক সহজ ছিল না, কিন্তু তাদের একে অপরের প্রতি সৎ ভালোবাসা এবং ভালো মানসিকতা এই সম্পর্কের ভিত রচনা করেছিল।

 

মৃণ্ময় ও অপ্সরা এখন একে অপরকে বুঝতে শিখেছে, একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ, তাদের কষ্টের জায়গাগুলো, সুখের সময়গুলো—সবকিছুই তারা শেয়ার করছিল। অপ্সরা এখন মৃণ্ময়ের সঙ্গে অনেক সহজেই কথা বলতো, তার জীবনের ছোট বড় বিষয়গুলো নিয়ে।

এখন আর অপ্সরা মৃণ্ময়ের প্রতি অবহেলা নয়, তাদের মধ্যে ছিল এক গভীর সমঝোতা। তাদের সম্পর্কের নানান দিক ছিল, কিন্তু কিছু ছিল সত্যি—তাদের ভালোবাসা, আর বিশ্বাসের ভিত।

এখন তারা জানতো, সম্পর্কের মাঝে কখনো না কখনো সমস্যার মুখোমুখি হবে, তবে সেই সমস্যা মোকাবিলা করা আর একে অপরকে কাছে রাখা ছিল তাদের অঙ্গীকার।মৃণ্ময় আর অপ্সরার মধ্যে এখন আর কোনো অভাব ছিল না, শুধুই একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা। একে অপরের সম্পর্কে অনেক কিছু খুঁজে বের করতে গিয়ে, তারা আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু জীবন এমনই—কখনো কখনো অজানা কোনো সমস্যা সামনে আসে, যা সবকিছু এলোমেলো করে দিতে পারে।

 

একদিন বিকেলে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন দিল। আজ সে একটি বিশেষ কিছু পরিকল্পনা করেছিল—অপ্সরাকে একটা নতুন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা। তিনি তার জীবনটা তার সঙ্গেই কাটাতে চান।

— "অপ্সরা, আজকে কি তুমি আমার সঙ্গে কোথাও বেরাতে চাও?" মৃণ্ময় ফোনে বলল।
— "কোথায় যাবো?" অপ্সরা একটু থেমে গিয়ে প্রশ্ন করল।
— "চল, আমরা নতুন কিছু করি। নতুন জায়গায় চল, শুধু আমরা দুজন।"

অপ্সরা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
— "নতুন কিছু! আমি প্রস্তুত, তবে তুমি জানো, আমি কোথাও যেতে চাচ্ছি না, যেখানে মানুষ বেশি থাকে।"

মৃণ্ময় হেসে বলল,
— "তাহলে তুমি চিন্তা করোনা, আমি তোমার পছন্দ অনুযায়ী জায়গা ঠিক করব।"

তারা ঠিক করল, শহরের বাইরে কিছুটা শান্ত, মনোরম জায়গায় গিয়ে কিছু সময় কাটাবে। সেদিন তারা গ্রামের একটি ছোট্ট হ্রদে গিয়ে বসেছিল। চারপাশে গাছপালা আর পাখির গান, প্রকৃতির শান্ত পরিবেশে তারা একে অপরকে আরও নতুনভাবে বুঝতে পারছিল।

 

হ্রদের পাশে বসে, অপ্সরা হালকা ভাবে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমাদের সম্পর্কের প্রথম দিকটাতে আমি যেটা অনুভব করেছিলাম, সেটা এখন মনে হয় অনেক সময় ছিল ভুল। আমি তখন অনেক কিছুর দিকে খেয়াল করতাম, কিন্তু জানতাম না যে আসল মূল্যটা কোথায়।"

মৃণ্ময় তার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "তুমি জানো, আমি কখনও তোমার প্রতি কোনো ক্ষোভ পোষণ করি না। আমাদের মধ্যে অনেক কিছু ভুল হয়েছিল, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভুলগুলো আমাদের শেখায়। আমাদের মধ্যে যেটা ছিল, সেটা শুধুমাত্র ভালোবাসা ছিল, আর এখন সেটা আরো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি।"

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, আমি কখনও ভাবিনি তুমি আমাকে এতটা বুঝবে। তোমার মধ্যে সেই বিশ্বাসটাই ছিল, যা আমি ভেবেছিলাম কখনো পাবো না।"

মৃণ্ময় তার হাত ধরে বলল,
— "আমরা একে অপরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কটা কেবল ভালোবাসায় তৈরি হয় না, অনেক সময় আমরা একে অপরকে সহ্য করার ক্ষমতা, বুঝতে পারার শক্তি, একে অপরকে সমর্থন করার মনোভাবও তৈরি করি।"

 

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, অপ্সরা তার মন খুলে বলল,
— "মৃণ্ময়, একসময় আমি তোমার কাছে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মনে হয়েছিল, এত সময় পর যদি আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করি, তাহলে তুমি আমাকে অনেক ভুল বুঝবে। আমি জানতাম, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছো, কিন্তু আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না।"

— "তুমি জানো, অপ্সরা," মৃণ্ময় চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি যদি ফিরে আসতে না, তাও আমি তোমাকে সবসময় সম্মান করতাম। তোমার সিদ্ধান্ত আমি কখনোই চাপিয়ে দিইনি।"

— "তবে তুমি কি কখনো আমাকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলে?" অপ্সরা প্রশ্ন করল।

মৃণ্ময় একটু সময় নিয়ে উত্তর দিল,
— "না, আমি কখনো তোমাকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চাইনি। আমি জানতাম, একদিন তুমি বুঝতে পারবে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, তবে সেটা সঠিক সময়েই।"

অপ্সরা মৃণ্ময়ের হাতটি আরও শক্ত করে ধরল, তার চোখে নতুন এক অনুভূতি দেখা দিল।
— "তাহলে, মৃণ্ময়, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আবার তোমার সঙ্গে শুরু করতে চাই। কিন্তু এইবার, একদম নতুনভাবে।"

মৃণ্ময় হালকা এক হাসি দিয়ে বলল,
— "তুমি যদি সত্যিই ফিরে আসো, তাহলে আমিও শুরু করবো। আমাদের নতুন গল্প শুরু হবে আজ থেকে, কোন অবহেলা ছাড়াই।"

এভাবেই, মৃণ্ময় ও অপ্সরার মধ্যে পুরনো সম্পর্কের অবহেলা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেল, এবং তারা আবার একে অপরের সঙ্গে নতুনভাবে পথচলা শুরু করল।

মৃণ্ময় ও অপ্সরা একে অপরকে নতুন করে বোঝার চেষ্টা করছিল। তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল, যেখানে আর কোনো অবহেলা বা ভুল বোঝাবুঝি ছিল না। তবে জীবনের বাস্তবতা কখনও সহজ ছিল না, আর তাদের সম্পর্কও একে অপরকে নিখুঁতভাবে বোঝার পথেই থেমে থাকেনি।

 

একদিন মৃণ্ময় অফিস থেকে ফিরে এসে তার ফোনে একটি অজানা নম্বর দেখল। কিছুক্ষণ ভাবার পর, সে ফোনটি ধরল।
— "হ্যালো?"

ফোনের ওপাশ থেকে এক পুরনো পরিচিত কণ্ঠ ভেসে এল,
— "হ্যালো, মৃণ্ময়! আমি রিফাত, অপ্সরার ছোট ভাই। তুমি কেমন আছো?"

মৃণ্ময় এক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেল। রিফাতের ফোন আসবে, এমনটা সে কখনও ভাবেনি। তবে সে নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিল,
— "হ্যাঁ, রিফাত, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"

— "ভালো আছি, ভাই। আসলে একটু সাহায্য দরকার ছিল। অপ্সরাকে আমি কিছুটা চিন্তায় দেখেছি। তার সঙ্গে কিছু সমস্যা হয়েছে। আমি জানি, তুমি তার কাছে ফিরেছো, কিন্তু আমি চাই, তুমি তাকে আরও সহায়তা করো।"

মৃণ্ময় একটু চিন্তা করে বলল,
— "কী সমস্যা? তুমি তো জানো, আমি সবসময় তার পাশে আছি। তবে কী সমস্যা হয়েছে, সেটা আমাকে জানাও।"

— "আমি জানি, ভাই, তুমি তার জন্য অনেক কিছু করছো, কিন্তু মাঝে মাঝে অপ্সরা কিছু চাপ অনুভব করে। সে জানে, তুমি তাকে সঙ্গী হিসেবে চাও, কিন্তু সে নিজে বুঝতে পারছে না তার কী করতে হবে। অনেক সময় সে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, এবং আমি জানি, তুমি তার পাশে থাকতে চাও, কিন্তু হয়তো তোমার সমর্থন তাকে আরো বেশি চাপ অনুভব করাচ্ছে।"

মৃণ্ময় কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সে বুঝতে পারছিল, অপ্সরা এখনও পুরোপুরি তার অনুভূতিগুলোকে ঠিকভাবে খুঁজে বের করতে পারেনি। এটা ছিল তাদের সম্পর্কের নতুন সমস্যার শুরু।

 

অপ্সরা সেই রাতে মৃণ্ময়ের কাছে এসে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমি তোমাকে অনেক কিছু বলিনি। অনেক কিছুই ভেবেছি, কিন্তু সাহস পাইনি। রিফাত ঠিক বলেছে। আমি তোমার প্রতি অনেক দায়িত্ব অনুভব করি, কিন্তু কখনো কখনো নিজের সঙ্গে মেলাতে পারি না। আমি জানি, আমি অনেক কিছু চেয়েছি, কিন্তু কখনোই আমার আসল চাহিদাটা জানি না।"

মৃণ্ময় তার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক সহজ ছিল না, কিন্তু আমি চাই, তুমি জানো, আমি এখানে আছি। তুমি যতটা চাপ অনুভব করছো, আমি সেটা বুঝতে পারছি। তুমি যদি আমার কাছে একসঙ্গে থাকতে চাও, তাহলে সেটা কেবল ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করবে, কোনো চাপ নয়।"

অপ্সরা মৃদু মাথা নেড়ে বলল,
— "আমি চাই, মৃণ্ময়, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানি, কিন্তু সে জন্য আমাদেরকে কিছু সময় একা থাকতে হবে।"

মৃণ্ময় অপ্সরার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "তুমি যদি চাও, আমি কিছুদিন তোমাকে সময় দিতে পারি। তবে মনে রেখো, আমি তোমার কাছে আছি, এবং কোনো কিছুই আমাদের সম্পর্কের মাঝে অবহেলা আনবে না।"

অপ্সরা তার কপালে একটি অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল। সে জানতো, মৃণ্ময় তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত, তবে তাকে নিজেকে খুঁজে বের করার জন্য কিছুটা সময় দরকার ছিল।

 

কিছুদিন পর, অপ্সরা নিজের চিন্তা করতে থাকল। সে বুঝতে পারছিল, মৃণ্ময়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল, তবে তাকে নিজের অনুভূতি ও চাহিদাগুলো বুঝতে সময় লাগছিল। মৃণ্ময়ও তার প্রতি সাপোর্ট ছিল, তবে তাকে নিজের অস্থিরতা থেকে বের হতে দিতে হয়েছিল।

এই সময়, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরকে সেইভাবে বুঝতে পারছিল, যেমন তারা কখনো আগে পারেনি। অপ্সরা জানতো, তার ভুলের জন্য সে একে অপরকে কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু এই নতুন সময়ে তাদের সম্পর্কের নতুন ভিত্তি ছিল—বিশ্বাস, সময়, এবং একে অপরকে সহ্য করার শক্তি।

তারা বুঝতে পেরেছিল, সম্পর্কের মধ্যে কোনো অসম্পূর্ণতা থাকবে না। যদিও জীবন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে চলে, তাদের মধ্যে ছিল এক বন্ধন, যা অবহেলা ছাড়াই এগিয়ে যাবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা নিজেদের সম্পর্কের নতুন দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল, কিন্তু জীবনের অবাস্তবতা কখনোই সহজ ছিল না। তাদের মধ্যে প্রেম, বিশ্বাস, এবং সহানুভূতির রশি আরও দৃঢ় হচ্ছিল, তবে কিছু অজানা সমস্যাও আছেযা তাদের সামনে আসতে পারত। তারা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু খোলামেলা বিষয় ছিল, যা মৃণ্ময় ও অপ্সরার একে অপরকে জানাতে ভয়ে ছিল।

 

একদিন, মৃণ্ময় হঠাৎ এক বার্তা পেল। এক পুরনো বন্ধুর কাছ থেকে, যার নাম ছিল সৌরভ।

— "মৃণ্ময়, অনেক দিন হলো কথা হয় না। কেমন আছো? তোমার সাথে দেখা করতে চাই।"

মৃণ্ময় কিছুটা অবাক হয়ে ফোনটা হাতে নিল। সৌরভ ছিল তার কলেজের বন্ধু, যার সাথে সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল কয়েক বছর আগে। অনেক দিন পরে সৌরভ তাকে ফোন করল—এটা ছিল মৃণ্ময়ের কাছে অপ্রত্যাশিত।

— "হ্যালো, সৌরভ, কেমন আছো?" মৃণ্ময় উত্তর দিল।
— "ভালো আছি, ভাই। তবে একটাই কথা বলার ছিল, আমি জানি তুমি হয়তো বুঝবে না, কিন্তু তুমি ও অপ্সরা কি ঠিকভাবে একে অপরকে বুঝতে পারছো?"

মৃণ্ময় সৌরভের কথায় কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
— "আমরা ঠিক আছি। তবে তুমি কেন এমন প্রশ্ন করছো?"

সৌরভ একটু থেমে বলল,
— "আমি জানি, তুমি তার জন্য অনেক কিছু করছো। তবে আমি জানি, অপ্সরা কিছুটা বিভ্রান্ত। সে হয়তো ভালোবাসে, কিন্তু তার মনে কিছু রহস্য আছে। তুমি যদি আবার একে অপরকে নতুনভাবে বুঝতে চাও, তোমাদের একে অপরের মধ্যে কিছু শ্বাস নেওয়ার জায়গা থাকা উচিত।"

মৃণ্ময় ফোন রেখে দিল, কিন্তু তার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। সৌরভের কথা সে একসময় পুরোপুরি না বুঝলেও, কিছু একটা বুঝতে পারছিল—অপ্সরা এখনও তার অনুভূতি পুরোপুরি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারছে না।

 

রাতের দিকে, মৃণ্ময় অপ্সরার সঙ্গে বসে বসে দীর্ঘ সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল। সে বুঝতে চাইছিল, অপ্সরা নিজের মতো করে কোথাও আটকে আছে।

— "অপ্সরা, তুমি কি জানো, আমাদের সম্পর্কের প্রতি আমি কতটা আস্থাশীল? আমি বুঝতে পারছি, তুমি অনেক কিছু চিন্তা করছো। তবে তোমার এই ভাবনায় আমি কিছুটা চিন্তিত। তুমি ঠিক আছো তো?"

অপ্সরা কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। তবে এক জায়গায় আমি একটু আটকে আছি। জানো, আমি যা অনুভব করি, সেটার মাঝে কিছু বিভ্রান্তি আছে। আমি চাই, তবে কিছুটা সময় নিই, নিজেকে বুঝতে।"

মৃণ্ময় মাথা নেড়ে বলল,
— "আমি জানি, তুমি অনেক কিছু ভাবছো। কিন্তু তুমি যদি বলো, আমি জানি যে আমি তোমার পাশে আছি। তোমাকে নিজেকে বুঝতে সময় দিতে হবে, এবং আমি কখনো তোমাকে চাপ দেবো না।"

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি সবসময় আমার পাশে থেকেছো, কিন্তু মাঝে মাঝে, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তুমি যেমন আমাকে বোঝো, আমি নিজেকে সেইভাবে বুঝতে পারি না।"

মৃণ্ময় একদম শান্তভাবে বলল,
— "তবে একদিন, যখন তুমি নিজেকে বুঝতে পারবে, তখন আমাদের সম্পর্ক নতুন জায়গায় যাবে। এখন, শুধু তোমাকে জানাতে হবে—যতই সময় লাগুক, আমি আছি।"

 

কিছুদিন পরে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা আবার একসাথে বেশ কিছু সময় কাটাতে শুরু করল। তারা একে অপরকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছিল, এবং এই সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে আসতে, তাদের একে অপরকে আরও সুযোগ দিতে হত।

অপ্সরা জানত, সে যখন নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করবে, তখন মৃণ্ময়ের পাশে থাকতে সবকিছু আরও সহজ হবে। এই সময়, মৃণ্ময়ের পাশে অপ্সরা নিজেকে আরও খোলামেলা এবং মুক্ত মনে করছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে আর কোনো অবহেলা ছিল না।

তারা জানতো, তাদের সম্পর্ক শুধু ভালোবাসার গল্পে সীমাবদ্ধ নয়; তাদের মাঝে ছিল আরো কিছু অজানা অনুভূতি, যা সময়ের সাথে সাথেই প্রকাশিত হবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা, সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়ে, আরও গভীরভাবে একে অপরকে জানার চেষ্টা করছিল। তাদের মধ্যে সম্পর্কের কোনও দুর্বলতা বা ভুল বোঝাবুঝি ছিল না, তবে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলি এখনও তাদের মাঝে একটি অদৃশ্য রেখা তৈরি করেছিল। সময়, বিশ্বাস, এবং ধৈর্য তাদের সম্পর্ককে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছিল, কিন্তু এই চিরকালীন প্রশ্ন ছিল—"আমরা কি পুরোপুরি একে অপরকে বুঝতে পারছি?"

 

একদিন সন্ধ্যায়, মৃণ্ময় পার্কে হাঁটতে বেরিয়েছিল। হঠাৎ, তার ফোনে একটি বার্তা এল। অপ্সরার কাছ থেকে। বার্তাটি সংক্ষেপে ছিল,
— "মৃণ্ময়, আমি তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।"

মৃণ্ময় তৎক্ষণাৎ ফোন করল।
— "অপ্সরা, তুমি কী বলতে চাও?"

অপ্সরা একটু নরম সুরে বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি জানো, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কিছু বিষয় আছে, যা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। আমি জানি, তুমি সবসময় আমার পাশে আছো, তবে কিছু জায়গায় আমি মনে করি, আমরা একে অপরকে পুরোপুরি বুঝতে পারছি না।"

মৃণ্ময় একটু অবাক হয়ে বলল,
— "তুমি কী বলছো? আমি তো ভাবছিলাম, আমরা একে অপরকে অনেক ভালো বুঝছি। কী সমস্যা?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
— "সমস্যা হচ্ছে, মৃণ্ময়। আমি এখনও আমার মধ্যে কিছু ভয় অনুভব করি। তুমি জানো, একসময় আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু এখন, আমি যদি এই ভয়গুলো থেকে মুক্ত না হই, তবে কি আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত পরিষ্কার হতে পারে?"

মৃণ্ময় মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করছিল,
— "তুমি যদি ভাবো যে তুমি কিছু ভুল বুঝেছো, তবে সেটা শুধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ভয়গুলো যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে কি আমাদের সম্পর্ক পুরোপুরি এগোতে পারবে?"

অপ্সরা একটু বিরতি নিয়ে বলল,
— "আমি জানি, আমি তোমার কাছে অনেক কিছু চেয়েছি, কিন্তু কখনো নিজে জানতাম না, আমি আসলে কী চাচ্ছি। আমি নিজেকে কখনোই পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করিনি।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার পাশে বসে, তার চোখে চোখ রেখে বলল,
— "অপ্সরা, সম্পর্ক শুধু ভালোবাসা দিয়ে তৈরি হয় না। আমাদের একে অপরকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হবে, আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, এবং আমাদের লক্ষ্য কী। তুমি যদি কখনো ভয় পাও, আমি জানি, তুমি আমাকে বলবে। তুমি একা নও, আমি আছি। তবে আমি চাই, তুমি নিজেকে বুঝো—যতটা সময় নেবে, আমি অপেক্ষা করবো।"

অপ্সরা মাথা নিচু করে কিছুটা সময় ভাবল। তারপর বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি আমাকে সময় দিয়েছো, এবং আমি বুঝতে পারছি—আমার নিজেকে চিন্তা করার সময় দরকার। তবে একটাই কথা বলবো, আমি চাই তোমার কাছে একটা সুযোগ। আমি জানি, আমি সবসময় ভালো কিছু করতে পারিনি, কিন্তু এখন আমি পরিবর্তন চাই।"

মৃণ্ময় একটু চিন্তা করে বলল,
— "তুমি যদি পরিবর্তন চাও, সেটা আমার জন্যও। তবে মনে রেখো, এই পরিবর্তন শুধু সম্পর্কের জন্য নয়, বরং তোমার নিজের জন্যও। আমরা একে অপরকে ভালোভাবে জানলে, তখনই আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।"

অপ্সরা ধীরে ধীরে মৃণ্ময়ের হাত ধরল।
— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, আমি কখনও চেয়েছিলাম তুমি আমাকে সময় দাও। আমি চাইছি, আমরা একে অপরকে নিজের মতো করে গ্রহণ করি।"

 

কিছুদিন পরে, মৃণ্ময় ও অপ্সরা একটি চা-বাগানে বসে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছিল।
— "মৃণ্ময়, আমি এখনও বুঝতে পারছি না, সব কিছু এত সহজভাবে হবে না, তবে আমি জানি, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। শুধু, এই সম্পর্কের মধ্যে যেন কোনো অবহেলা না আসে, সেটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে।"

মৃণ্ময় নরমভাবে হাসল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, তুমি কি বলতে চাও। সম্পর্ক কখনোই সোজা হয় না, তবে যদি আমরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করি, তাহলে সব কিছু ঠিক হবে। তুমি যা চাও, আমি সেটা করতে প্রস্তুত।"

অপ্সরা সেদিনের পর, মৃণ্ময়ের পাশে আরও দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মনে শান্তি অনুভব হচ্ছিল। সে জানতো, মৃণ্ময় তাকে সহ্য করতে প্রস্তুত, এবং সেও নিজেকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে শিখছে।

তাদের সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়টি ছিল সমঝোতা, সময়, এবং ভালোবাসার মধ্যে এক নতুন নিদর্শন। এই সম্পর্ক থেকে অনেক কিছু শেখা ছিল, যা তাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছিল।

অপ্সরা এবং মৃণ্ময়ের সম্পর্কের মাঝখানে অনেক কিছু বদলেছিল। তারা একে অপরকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু অজানা চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে ছিল। অপ্সরা তার নিজস্ব ভয় এবং সংশয়গুলো নিয়ে মৃণ্ময়ের সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছিল, কিন্তু মাঝে মাঝে তার মনে হতো যে, মৃণ্ময় হয়তো আর সেই আগের মতো আগ্রহী নয়। মৃণ্ময়ের এই ধৈর্য এবং সহানুভূতির প্রতি অপ্সরা এখনও কিছুটা সন্দিহান ছিল, যদিও সে জানতো, মৃণ্ময় তার প্রতি গভীর অনুভূতি রাখে।

 

একদিন, মৃণ্ময় এবং অপ্সরা তাদের পুরনো কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেল। যেখানে একসময় তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, যেখানে তারা একে অপরকে প্রথম অনুভব করেছিল। সেই পুরনো স্মৃতির মধ্যে ঢুকে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে দেখিয়ে বলল,
— "এখানে, তোমার চোখে চোখ রেখে, প্রথমবার অনুভব করেছিলাম যে, আমার জীবনটা বদলে যাবে। তুমি জানো, সেদিন আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি তোমার জন্য একেবারে তৈরি।"

অপ্সরা একটু থেমে, মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "তুমি কি মনে কর, আমরা এখনও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি?"

মৃণ্ময় তার হাত ধরল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। আজও মনে হয়, আমাদের গল্প শুরু হয়নি। আমরা শুধু ভেবেছি আমাদের সম্পর্কের শুরুটা কী হবে, কিন্তু সত্যিকারের শুরু হবে তখন, যখন আমরা নিজেদের পুরোপুরি জানব।"

অপ্সরা কিছুটা থেমে, একটু চিন্তা করে বলল,
— "তবে মৃণ্ময়, আমার মাঝে কিছু সংশয় আছে। আমি জানি, তোমার কাছে অনেক কিছু বলতে চাই, কিন্তু মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তুমি আমাকে পুরোপুরি বুঝতে পারছো না। আমি কী জানি, তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পর্ক? তুমি কি আসলেই ভেবো, আমরা একে অপরকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারব?"

মৃণ্ময় একটু সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে, কিন্তু একটা জিনিস আমি জানি—আমি তোমার কাছে যা চাই, সেটা সময়, বিশ্বাস এবং একে অপরকে বোঝার ইচ্ছা। সম্পর্কের মধ্যে সব সময় সন্দেহ থাকবে, কিন্তু আমি জানি, একদিন তুমি বুঝবে যে আমি তোমার পাশে আছি।"

 

অপ্সরা মৃণ্ময়ের কথায় একটু স্বস্তি পেল, তবে তার মনে কিছু কষ্ট ছিল। সে ভাবছিল, সে নিজেই যেন এখনও পুরোপুরি নিজের অনুভূতিকে বুঝতে পারে না। সে জানতো, মৃণ্ময় তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত, কিন্তু নিজে কি সে সেই সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত?

একদিন রাতে, যখন তারা একসাথে সময় কাটাচ্ছিল, অপ্সরা চুপচাপ কিছুটা সময় কাটানোর পর, মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমি অনেক কিছু বলিনি। আমি জানি, তুমি হয়তো ভাবছো, আমি জানি না কী চাই। কিন্তু আসলে, আমি নিজেকে জানতে চাই।"

মৃণ্ময় বুঝতে পারল অপ্সরা কী বলছে। সে ধীরে ধীরে বলল,
— "তুমি যদি জানাতে চাও, আমি এখানে আছি, অপ্সরা। আমি তোমাকে এমনভাবে ভালোবাসি, যা তোমার মন থেকে আসবে। তুমি যদি সময় চাও, তাহলে তাও দেবো। তোমার জন্য আমি সবসময় অপেক্ষা করবো।"

 

দিনটি ছিল এক শান্তিপূর্ণ দিন। মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝে এবং তার অতীতের ভুলগুলোকে মেনে নিয়ে সামনে এগোতে চলেছিল। তাদের সম্পর্ক এখন কোনো চাপের মধ্যে ছিল না; বরং ছিল এক ধরনের খোলামেলা আলাপ, যেখানে উভয়ই নিজেদের ভুল এবং সংশয়গুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছিল।

অপ্সরা জানত, সে কিছুটা সময় চায়, তবে মৃণ্ময়ের সাথে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার মন আরও পরিষ্কার হতে চলেছিল।

সন্ধ্যার দিকে, যখন তারা একে অপরের চোখে চোখ রেখে বসেছিল, মৃণ্ময় বলল,
— "এটা বিশ্বাস করতে পারছি না, আমরা এতদিন একে অপরের পাশে ছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এখন সত্যি আমাদের সম্পর্কের নতুন শুরু হবে।"

অপ্সরা একটু চুপ করে থেকে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। এখন আমি বুঝতে পারছি, আমি আমার অনুভূতিগুলোকে তোমার কাছে খুলে বললে, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।"

মৃণ্ময় তার হাত ধরে হাসি দিয়ে বলল,
— "ঠিক তাই। আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক এখন নতুন পর্যায়ে যাচ্ছে। আর আমরা একে অপরকে আরেকটু ভালোভাবে জানার চেষ্টা করব।"

এই কথাগুলি তাদের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। তবে সবারই কিছু সংশয় থাকে, কিছু আগের অমীমাংসিত অনুভূতি থাকে। কিন্তু মৃণ্ময় এবং অপ্সরা জানতো, তাদের সম্পর্ক একদিন পুরোপুরি পরিষ্কার হবে—যতটা সময় লাগুক, যতটা গভীরই হোক, তাদের মধ্যে কোনো অবহেলা আর থাকবে না।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরকে বুঝতে পারার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল। তবে তাদের সম্পর্কের মধ্যে কিছু জটিলতা এখনো ছিল। অপ্সরা বুঝতে পারছিল, মৃণ্ময়ের প্রতি তার অনুভূতি এখনও অব্যক্ত। মৃণ্ময়ের মধ্যে সে কি এখনও সেই আগের মতো আগ্রহ অনুভব করেছিল? তার মাঝে এতদিনের দূরত্ব কি সহজেই ভাঙতে পারবে?

একদিন, একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়, যখন মৃণ্ময় পার্কে হাঁটছিল, অপ্সরা ফোন করেছিল। তার গলা কাঁপছিল, যেন কিছু বলার আগে একে অপরকে শেষবারের মতো পরীক্ষা করতে চাইছিল।

— "মৃণ্ময়, আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।" অপ্সরার কণ্ঠে অদ্ভুত এক শূন্যতা ছিল।

মৃণ্ময় চিন্তা না করেই ফোন ধরে বলল,
— "অপ্সরা, কী হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ ছিল, তারপর বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো। কিন্তু আমি এতদিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমি জানি, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। আমি নিজেই জানতাম না, আমি কিভাবে তোমার কাছে আসবো, তবে আমি অনুভব করছি, এখন আমি ঠিক বুঝতে পারছি—আমার ভেতরে কিছু একটা অবহেলার জায়গা ছিল, যা আমি মানতে পারছিলাম না।"

মৃণ্ময় ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল, এক দৃষ্টিতে কিছুটা সময় কাটিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, তুমি যখন মনে করো, আমি তোমার কাছে কিছু দাবি করছি, তখন কি মনে হয়, তুমি আমার কাছ থেকে কোনো অপেক্ষা করতে পারো?"

অপ্সরা কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিল,
— "না, মৃণ্ময়, আমি কখনোই তোমার কাছ থেকে কিছু চাইনি, কিন্তু আমার মধ্যে কিছু ভয় ছিল—ভয়, যা আমি অনুভব করছিলাম, এবং এখন আমি বুঝতে পারছি, সেই ভয় থেকে বেরিয়ে আসা আমার জন্য কতটা জরুরি ছিল।"

 

মৃণ্ময় একবারও অপ্সরার কথাগুলো অগ্রাহ্য করেনি। তার মধ্যে ছিল ধৈর্য, শান্তি এবং প্রেমের এক অদৃশ্য দৃঢ়তা। সে চুপ করে থেকে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, সম্পর্ক শুধুমাত্র আমাদের মাঝে ভালোবাসা থেকে চলে না। অনেক সময় নিজেকে বুঝতে এবং মেনে নিতে হয়। আমি জানি, আমরা দুজনই একে অপরের জন্য প্রস্তুত না হলেও, হয়তো একদিন আমরা একে অপরকে পুরোপুরি বুঝতে পারব।"

অপ্সরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
— "তুমি যা বললে, তা ঠিক, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমি অনেক কিছু হারিয়েছি, অনেক কিছু ভুল বুঝেছি। কিন্তু আমি এখন পুরোপুরি বুঝতে পারছি—আমার হৃদয়ে কষ্টগুলো মুছতে হবে, এবং আমি জানি, তুমি আমার সাথে থাকতে চাও, এমনকি যখন আমি বিভ্রান্ত ছিলাম।"

 

এর পর, কিছুদিনের জন্য তারা একে অপরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিল, কিন্তু অপ্সরা এখনও নিজের ভেতরে কিছু সংশয়ের গুঞ্জন অনুভব করছিল। তার মনে হতে লাগল, সম্পর্কের ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র একে অপরকে ভালোবাসার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না; বরং তাদের নিজেদের ভেতরে কিছু পরিবর্তন আসা জরুরি।

একদিন, তারা একে অপরকে সময় দিতে বসেছিল। মৃণ্ময় জানালো,
— "অপ্সরা, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ, তবে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কিছু জায়গায় যন্ত্রণা আছে। আমি জানি, তুমি কষ্ট পেয়েছো, তবে আমি তোমার পাশে আছি।"

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "আমার পাশে থাকার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, মৃণ্ময়। তবে তুমি জানো, আমি যখন কোনো সম্পর্কের মধ্যে ভেঙে পড়ি, তখন আমি কখনোই ভাবি না, এটি শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে তৈরি। সম্পর্কটি বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি কিছু সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানি, এখন আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি।"

মৃণ্ময় তার হাত ধরতে একটু নরমভাবে বলল,
— "আমরা জানি না ভবিষ্যত কী হবে, কিন্তু আমাদের সম্পর্ক একে অপরের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তুমি যদি এখনো কিছু দ্বিধা বোধ করো, আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু যদি তুমি আমার সঙ্গে থাকতে চাও, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানবো, সময় দেবো।"

 

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
— "আমি জানি, মৃণ্ময়, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, তবে সম্পর্কের শক্তি শুধুমাত্র ভালোবাসায় নয়, বরং বিশ্বাস এবং একে অপরের পাশে থাকা। আমি মনে করি, আমরা যা চাই, তা ঠিক পথেই আসবে।"

এভাবে, অপ্সরা এবং মৃণ্ময় তাদের সম্পর্কের পরবর্তী ধাপে পৌঁছেছিল, যেখানে কোনো অবহেলা বা অজানা ভয় আর ছিল না। সম্পর্কের মধ্যে ছিল এক গভীর সংবেদনশীলতা এবং একটি নতুন দৃষ্টিকোণ। তারা জানতো, সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসা এবং সময়ের বিষয় নয়, বরং নিজেদের অন্তরের সৎ উপলব্ধি এবং সম্মান যে একটি সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা, দুজনই জানত, তাদের সম্পর্ক অনেকটা পরীক্ষার মুখোমুখি ছিল। অনেক সময় মনে হচ্ছিল, তারা একে অপরকে বুঝতে আরও গভীরে যেতে পারবে, আবার কখনো কখনো মনে হতো, সম্পর্কের মাঝে কিছু সীমাবদ্ধতা এবং বাধা আছে, যা একে অপরকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। তবে এই সব কিছু সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে কিছু এমন ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরও দৃঢ় হতে শুরু করেছিল—বিশ্বাস, সাহস, আর একে অপরকে বুঝতে চাওয়ার অদম্য আকাঙ্ক্ষা।

 

একদিন, মৃণ্ময় আর অপ্সরা ক্যাফে-এ বসে চা খাচ্ছিল। আকাশ ছিল মেঘলা, আর বৃষ্টি এসে পড়েছিল একটু একটু করে। তাদের আলোচনাটা কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল, যেন তারা কোনো গভীর প্রশ্নের দিকে এগোচ্ছে।

অপ্সরা একটু চিন্তা করে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমি তোমার জন্য অনেক কিছুই করেছি, কিন্তু মাঝে মাঝে আমি নিজেই ভাবি—আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যতটা কী হতে চলেছে?"

মৃণ্ময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে স্নেহভরে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, একে অপরকে জানার পর, আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হবে। তুমি আমার কাছে অনেক কিছুই শিখিয়েছো। তুমি যখন আমার কাছে এসে বললে যে, তুমি নিজের অনুভূতিগুলো পুরোপুরি বুঝতে চাও, সেটা আমার জন্য অনেক বড়।"

অপ্সরা একটু থেমে বলল,
— "আমি জানি, মৃণ্ময়। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যেন নিজেই কিছুটা দূরে চলে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে যে কিছু ব্যাপারে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা এখনও মনে হয় পূর্ণভাবে মিলিয়ে উঠতে পারিনি। আমি জানি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো, কিন্তু আমারও কি পূর্ণতা এনে দিয়েছি?"

 

মৃণ্ময় কিছুক্ষণ চুপ ছিল, তার পরে মৃদু হেসে বলল,
— "তুমি কি জানো, অপ্সরা? সম্পর্কের মধ্যে কখনো কখনো দূরত্ব এবং অস্পষ্টতা থাকবে, কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, যখন কেউ নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং সেগুলো সংশোধন করার জন্য প্রস্তুত থাকে, তখন সেই সম্পর্কের মাঝে এক ধরনের অদৃশ্য শক্তি চলে আসে। আমি জানি, তুমি নিজেকে সঠিকভাবে বুঝতে চাচ্ছো, আর আমি তোমার এই পথচলায় তোমার পাশে আছি।"

অপ্সরা তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "তোমার কথাগুলো আমাকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমি কখনোই নিখুঁত ছিলাম না, কিন্তু তোমার পাশে থেকে আমি অনুভব করছি যে, আমার নিজের মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরাকে একটু সময় দিয়ে বলল,
— "দেখো, আমাদের সম্পর্ক কোনো আদর্শ সম্পর্ক নয়। তবে আমাদের মধ্যে যে ভালোলাগা, যে অনুভূতিগুলো রয়েছে, সেটা সত্যি। আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য একে অপরকে আরও সময় দেবো, এবং যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলো বুঝে চেষ্টা করবো, যাতে সম্পর্কের মধ্যে কোনো অবহেলা না থাকে।"

অপ্সরা একটু নরম হয়ে বলল,
— "তুমি ঠিক বলছো, মৃণ্ময়। তবে মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি যদি তোমার জন্য যথেষ্ট ভালো হতে পারতাম। আমি জানি, আমি এখনো আমার ভুলগুলোর পরিণতি ভোগ করছি।"

মৃণ্ময় হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরল,
— "তুমি ভুল কিছু করনি, অপ্সরা। আমরা সবাই মানুষ, আর আমাদের মধ্যে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি জানি, তুমি তোমার মনের মধ্যে অনেক কষ্ট নিয়ে বাঁচো, কিন্তু যদি তুমি চাই, আমি তোমার পাশে আছি। একে অপরকে বোঝার পথে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু সেই বাধা থেকে যদি আমরা কিছু শিখতে পারি, তবে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।"

 

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, অনেক সময় মনে হয়, আমাদের মধ্যে একটা শূন্যতা আছে, যা পূর্ণ করতে হবে। তবে এখন আমি বুঝতে পারছি, সেই শূন্যতাটুকু শুধু সময়ের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা—আমরা একে অপরকে জানার মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা পূর্ণ করব।"

মৃণ্ময় সহমত হয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। আমরা জানি, সম্পর্কের মধ্যে কতটা কষ্ট থাকে, তবে সেই কষ্টের মধ্য দিয়েও আমরা একে অপরকে যতটা ভালোবাসি, সেটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের সম্পর্কের আগামী দিনগুলো সোজা পথে না হলেও, আমরা একে অপরের পাশে থাকব, কারণ আমরা জানি—প্রতিটি দিনই নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে আমাদের জন্য।"

 

এই কথাগুলোর পর, অপ্সরা এবং মৃণ্ময় জানতো, তাদের সম্পর্ক একটি নতুন দিকনির্দেশনা পাচ্ছে। এখনও অনেক কিছু বাকি ছিল—অবিশ্বাস, সংশয়, এবং সঠিক সময়ে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা। তবে তারা জানতো, একে অপরকে ভালোবাসা আর সম্মান জানিয়ে, একদিন তারা সকল বাধা পার করতে পারবে।

আজ তারা একে অপরকে যে সিদ্ধান্ত দিল, সেটা ছিল শুধু একটি প্রারম্ভিক মাইলফলক, যা তাদের সম্পর্কের সত্যিকারের জোরাল ভিত্তি হবে।

সময় কখনও থেমে থাকে না, তবে কিছু কিছু মুহূর্ত অমুলায়নীয় হয়ে যায়। মৃণ্ময় আর অপ্সরা, দুজনেই বুঝতে পেরেছিল, তাদের মধ্যে এক প্রকারের যোগাযোগ আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু তার পরেও এক অস্বীকারযোগ্য কষ্ট ছিল, যা একে অপরের মধ্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছিল। অপ্সরা কখনও কখনও মনে করতো, তার ভেতরের দ্বন্দ্বের প্রতিফলন মৃণ্ময়ের চোখে ধরা পড়ছে।

 

একদিন বিকেলে, যখন মৃণ্ময় হাঁটছিলো তার প্রিয় পার্কে, সে হঠাৎ লক্ষ্য করলো, অপ্সরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। কিছুটা অবাক হয়ে মৃণ্ময় তার কাছে গেল।

— "অপ্সরা, তুমি এখানে?" মৃণ্ময়ের কণ্ঠে কিছুটা অবাকভাব ছিল।

অপ্সরা মাথা নিচু করে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়, ভাবছিলাম একটু একা সময় কাটাই। আমাদের মাঝে যেসব কথা আছে, তা ভাবছিলাম।"

মৃণ্ময় অপ্সরার কাছাকাছি গিয়ে বসে বলল,
— "তুমি কি কিছু বলতে চাও? আমি জানি, এখনও কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে স্পষ্ট হয়নি। তুমি যদি মনে করো, তাহলে তোমার মনে যা আছে, সেটা আমাকে বলতে পারো।"

অপ্সরা কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমি অনেকবারই তোমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছি, আবার ফিরে এসেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার এই চলাফেরা তোমার উপর চাপ ফেলছে, কিন্তু আমি নিজেকে কখনওই সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার কথা শুনে চিন্তা করতে লাগলো, তারপর স্নেহভরে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, তোমার ভেতরে অনেক কিছু জমে আছে। আর আমি জানি, সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে একে অপরকে বোঝা যায় না, বরং নিজের ভুলগুলোর প্রতি দায়বদ্ধতা ও একে অপরকে গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যে ভালোবাসার জন্য সময় নিয়েছো, সেটা আমি সম্মান করি।"

অপ্সরা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ ছিল। তার ভেতরে কিছু বিষয় স্পষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু কিছু প্রশ্ন এখনও তাকে তাড়া করছিল।

— "মৃণ্ময়, তোমার জন্য আমি অনেক কিছু অনুভব করি। কিন্তু জানো, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের মধ্যে একটা অতীতের ভার রয়েছে, যা আমাদের সামনে চলে আসে।"

 

মৃণ্ময় শান্তভাবে বলল,
— "অপ্সরা, সম্পর্কের মধ্যে অতীতের কিছু বিষয় থাকবে, সেটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা একে অপরকে কীভাবে গ্রহণ করি এবং আমাদের ভবিষ্যত গড়ে তুলি। আমি জানি, আমাদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি ছিল, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখি, তাহলে আমরা সেগুলো অতিক্রম করতে পারবো।"

অপ্সরা কিছুটা গভীরভাবে চিন্তা করে বলল,
— "তুমি ঠিক বলছো, মৃণ্ময়। তবে আমাকে বুঝতে হবে, এই সম্পর্ক আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, তোমার পাশে থাকতে আমি অনেক কিছু শিখেছি, কিন্তু আমি যদি নিজেকে পুরোপুরি না বুঝতে পারি, তাহলে আমি কখনোই তোমার পাশে দাঁড়াতে পারবো না।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার হাত ধরে বলল,
— "অপ্সরা, তুমি যা বলো, তা আমি পুরোপুরি বুঝি। সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তুমি নিজের জন্য যা করতে চাও, তা করার অধিকার রাখো, এবং আমি তোমার পাশে আছি, যখন তুমি প্রস্তুত হবে।"

অপ্সরা কিছুটা নরম হয়ে বলল,
— "ধন্যবাদ, মৃণ্ময়। তোমার এই সহানুভূতির জন্য আমি কৃতজ্ঞ। জানো, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তোমাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি, আমাদের সম্পর্ক যদি আরও শক্তিশালী হতে চায়, তাহলে আমাদের নিজেদের মধ্যে কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার।"

 

মৃণ্ময় কিছুটা নীরব হয়ে পড়ে, তারপর হালকা হাসি দিয়ে বলল,
— "এটাই তো, অপ্সরা। সম্পর্ক সবসময় সহজ না, তবে যদি দুজন মিলে একে অপরকে সময় দিতে পারি এবং নিজেদের দুর্বলতা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারি, তাহলে সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। আমি জানি, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, এবং সেই ভালোবাসার শক্তি দিয়ে একে অপরকে জানবো, বুঝবো।"

অপ্সরা তার চোখে একটি মৃদু আভা নিয়ে বলল,
— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, আমি আসলে কেবল সময় চেয়েছিলাম, সময় যেন আমাকে নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। এখন মনে হচ্ছে, আমরা যদি একে অপরের মাঝে নিজের জায়গা খুঁজে পাই, তবে সেই সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে পূর্ণতা পাবে।"

 

এই কথাগুলোর পর, মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানতো, সম্পর্কের জন্য শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং একে অপরকে বুঝতে এবং নিজেদের মধ্যে সম্মান বজায় রেখে এগিয়ে চলা আরো গুরুত্বপূর্ণ। তারা জানতো, সম্পর্কের ভবিষ্যত নিশ্চিত নয়, কিন্তু তাদের হৃদয় যা বলছে, তা সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল।

এই নতুন পর্যায়ে, অপ্সরা আর মৃণ্ময় তাদের সম্পর্কের পথে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল, যাতে তাদের দুজনের মধ্যকার অবহেলা, ভুল বুঝাবুঝি আর সংশয় দূর হয়ে, একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ মেলে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা দুজনেই বুঝতে পারছিল, তাদের সম্পর্কের শুরুর দিকে যা কিছু ছিল, তা এখন অনেকটাই বদলে গেছে। যদিও এখনও কিছু ঝামেলা ছিল, তবুও তাদের মধ্যে এক ধরনের মোলায়েমতা, সহানুভূতি এবং বিশ্বাস গড়ে উঠছিল। তবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনও অনেক কিছু সমাধান হওয়া বাকি ছিল।

 

একদিন, বিকেলের আকাশে সোনালী রঙের আভা ছড়িয়ে পড়ছিল, আর মৃণ্ময় পার্কে হাঁটছিল। সে ভাবছিল, অপ্সরার সাথে তার সম্পর্কের ভবিষ্যত কী হবে। সে জানত, তাদের মাঝে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সে এটাও জানত, সম্পর্কের মাঝে কখনও কখনও দূরত্ব আসতে পারে, এবং সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

এমন সময়, অপ্সরা হঠাৎ তাকে ফোন করে বলল,
— "মৃণ্ময়, আজ কিছু সময়ের জন্য দেখা করতে পারবো?"

মৃণ্ময় কিছুটা অবাক হয়ে উত্তর দিল,
— "হ্যাঁ, আমি পারবো। কোথায় দেখা করতে চাইছো?"

অপ্সরা বলল,
— "তুমি আমার কাছে আসো, আমি কিছু কথা বলতে চাই।"

 

মৃণ্ময় দ্রুত পার্কের দিকে চলে এল। অপ্সরা সেখানে বসে ছিল, আর তার চোখে কিছুটা চিন্তার ছাপ ছিল। মৃণ্ময় কাছে এসে বসতে গিয়ে বলল,
— "তুমি কি চিন্তিত? কিছু বলো, আমি শুনছি।"

অপ্সরা একটু সময় নিল, তারপর বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তোমার কাছে আমার অনেক কিছু বোঝানো বাকি ছিল। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে একটা অস্পষ্টতা ছিল, যা তোমার উপর চাপ ফেলেছিল। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি নিজেকে বোঝাতে, কিন্তু জানো, মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, আমি নিজেকে একদম ভুল বুঝেছি।"

মৃণ্ময় ধীরেসুস্থে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, তুমি নিজের মধ্যে অনেক কিছু অনুভব করো, কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের মধ্যে যে দুরত্ব ছিল, সেটা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।"

 

অপ্সরা মাথা নিচু করে একটু থেমে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি কখনওই চাইনি আমাদের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা থাকুক। আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারে, আর সেই জন্য আমি তোমার কাছ থেকে সাহায্য চাইছি। আমি জানি, এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে অনেক কিছু নিঃশেষ হতে চলেছে, কিন্তু আমি চাই, আমরা আবার একে অপরকে সম্পূর্ণভাবে জানি।"

মৃণ্ময় কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, সম্পর্কের মাঝখানে কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন আমাদের মনে হয়, আমরা একে অপরকে পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। তবে তুমি যদি বুঝতে চাও, আমি তোমার পাশে আছি।"

 

অপ্সরা স্নিগ্ধভাবে বলল,
— "তুমি যে আমাকে কখনও ফেলে চলে যাবে না, আমি জানি। তবে আমি জানি, আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা মুছে ফেলতে হবে। আমার মনে হয়, যদি আমরা একে অপরকে আবার ভালোভাবে জানি, তবে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।"

মৃণ্ময় হেসে বলল,
— "এটা ঠিক, অপ্সরা। সম্পর্কের মাঝে একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পেলে, তাহলে সব কিছু স্পষ্ট হবে। আমাদের মধ্যে কোনো কিছু বাঁধা ছিল না, শুধু আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। সেটা এবার আমরা পূর্ণ করতে পারবো, আমি নিশ্চিত।"

 

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "ধন্যবাদ, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হতে পারে, কিন্তু একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করে, আমরা অবশ্যই সফল হবো। আমাদের একে অপরকে ভালোভাবে জানার এই পথটা সহজ না, তবে আমি জানি, আমরা একে অপরের হাত ধরে চলতে পারব।"

মৃণ্ময় তার হাত ধরল এবং বলল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। সম্পর্কের জন্য আমাদের একে অপরকে সময় দিতে হবে। আমরা জানি, যে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য উভয়ের সদিচ্ছা প্রয়োজন। আমাদের মাঝে এখন যা কিছু বাকি, সেটা আমরা ধীরে ধীরে পূর্ণ করব।"

 

অপ্সরা এবং মৃণ্ময় একে অপরকে গভীরভাবে দেখে নিল, তাদের মধ্যে এখন একটি অদৃশ্য সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। তাদের কথাবার্তাগুলি অনেক কিছু বুঝিয়ে দিল—তারা বুঝতে পেরেছিল, সম্পর্কের সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একে অপরকে জানার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজ, অপ্সরা আর মৃণ্ময় তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে। এই অধ্যায়টি কোনো সহজ পথ ছিল না, তবে তাদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক এবং একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে চাওয়ার ইচ্ছা একে অপরকে আরও শক্তিশালী করেছিল। তারা জানতো, একে অপরকে ভালোভাবে জানার এই পথটি তাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করবে, যেখানে কোনো অবহেলা আর থাকবে না।

আজকে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা দুজনেই নিজেকে একটু আলাদা ভাবে অনুভব করছিল। সম্পর্কের মাঝে নতুন এক ধরনের সঙ্গতি ও সমঝোতা তৈরি হয়েছে। একে অপরকে ভালোভাবে বোঝার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, কিন্তু তাদের জীবনে এখনো কিছু অজানা প্রশ্ন ছিল। তবে তাদের মাঝে যে এক ধরনের শান্তি এসেছে, সেটি ছিল অবহেলা আর ভুল বোঝাবুঝির চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

 

একদিন মৃণ্ময় অফিস থেকে ফিরছিল, আর পথে অপ্সরার মেসেজ পেল। মেসেজে লেখা ছিল—"মৃণ্ময়, আজ তোমার সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।"

মৃণ্ময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে মেসেজের উত্তর দিল,
— "অপ্সরা, কি ব্যাপার? তুমি কি চিন্তিত?"

অপ্সরা লিখল,
— "না, চিন্তা করার কিছু নেই। আমি আসলে কিছু বলতে চাই। আজ সন্ধ্যায় যদি তোমার সময় থাকে, তাহলে কোথাও বাইরে যেতে পারি?"

মৃণ্ময় উত্তর দিল,
— "হ্যাঁ, অবশ্যই। কোথায় যেতে চাও?"

অপ্সরা বলল,
— "পার্কে চলে এসো, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।"

 

মৃণ্ময় পার্কে গিয়ে অপ্সরাকে দেখতে পেল। অপ্সরা একা বসে ছিল, তার মুখে কিছুটা চিন্তা আর কিছুটা অস্পষ্টতার ছাপ ছিল। মৃণ্ময় আস্তে করে তার পাশে গিয়ে বসে বলল,
— "কিছু কথা ছিল তোমার?"

অপ্সরা মাথা নিচু করে কিছুটা সময় নিল, তারপর ধীরে ধীরে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তুমি জানো, আমি যখন তোমার কাছে এসেছিলাম, তখন আমি অনেক কিছু বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সম্পর্কের মধ্যে অনেক কিছু আমাদের সঠিকভাবে জানা বাকি।"

মৃণ্ময় একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়নি, তবে আমাদের সম্পর্কের মাধুর্য এখনও আছে। তবে আমি কখনও তোমার সাথে এমন সম্পর্ক রাখতে চাইনি, যেখানে শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝি থাকবে।"

 

অপ্সরা সজাগ হয়ে মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি শুধু এটুকু বুঝতে চাচ্ছি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে যদি কিছু গভীরতা থাকে, তাহলে আমাদের একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানতে হবে। তোমার সাথে আমার সময় কাটানোর সময় আমি বুঝতে পেরেছি, যে কোনো সম্পর্কের মধ্যে শুধু ভালোবাসা নয়, বরং পরস্পরের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তোলাও খুব জরুরি। আমি জানি, আমাদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি ছিল, কিন্তু আমার ভেতরে এখন যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা আমি তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।"

মৃণ্ময় তার কথা শোনার পর বলল,
— "তুমি ঠিক বলছো, অপ্সরা। সম্পর্কের মাঝে শুধু ভালোবাসা থাকলে তো হবে না, একে অপরকে বুঝতে হলে আমাদের আরও একে অপরের ভেতর ঢুকতে হবে। আমাদের মধ্যে যদি কিছু ভুল হয়, তবে সেটা শুধরে নিতে হবে।"

 

অপ্সরা হেসে বলল,
— "হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি, মৃণ্ময়। আমরা যদি একে অপরকে গভীরভাবে বুঝতে না পারি, তবে সম্পর্কটি স্থায়ী হতে পারে না। তবে আমি মনে করি, আমরা যদি সঠিক পথে এগিয়ে যাই, তাহলে আমাদের সম্পর্কের মুল্যে সত্যিকার অর্থে বৃদ্ধি হবে।"

মৃণ্ময় অপ্সরার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "আমাদের সম্পর্কের মুল্যে সত্যিকার বৃদ্ধি পাবে, তবে আমাদের একে অপরকে সময় দিতে হবে। সেই সময়টা আমাদের নিজেদের সম্পর্কের জন্য একে অপরকে আরও ভালোভাবে বোঝার সময় হয়ে উঠবে।"

 

অপ্সরা আর মৃণ্ময় আজ বুঝতে পেরেছিল, তাদের সম্পর্কের প্রকৃত মান কেবল ভালোবাসার মাধ্যমে নয়, বরং একে অপরকে একেবারে হৃদয়ের গভীরে থেকে বোঝার মাধ্যমে আসবে। তাদের মধ্যে কিছু বিষয় এখনও অজানা ছিল, তবে তারা একে অপরকে নিয়ে নতুন এক দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

আজকের এই কথা বলার মুহূর্তটি তাদের সম্পর্কের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়ে উঠেছিল। সম্পর্কের মাঝে কখনো কখনো কিছু অস্থিরতা, বিভ্রান্তি আসে, তবে যদি একে অপরকে ভালোভাবে জানার সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সেই সম্পর্ক একেবারে পূর্ণতা পায়।

 

মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানতো, তাদের সম্পর্কের মাঝে এখনো কিছু কাজ করার বাকি ছিল, তবে তাদের বিশ্বাস ছিল, তারা একে অপরকে কখনোই ছেড়ে যাবে না। তারা জানতো, সম্পর্কের মধ্যে একে অপরকে বুঝতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি, আর সেই শক্তি দিয়ে তারা তাদের সম্পর্কের প্রতি নিষ্ঠা ও আস্থা বৃদ্ধি করবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা আজ অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে। তারা জানতো, সম্পর্কের মাঝে কোনো কিছু সঠিকভাবে বুঝতে চাওয়ার জন্য অনেক সময়, ধৈর্য এবং বিশ্বাস প্রয়োজন। তবে এতদিনের অবহেলা, বিভ্রান্তি, এবং ভুল বোঝাবুঝি এখন ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। তাদের সম্পর্ক এক নতুন রূপে পরিণত হচ্ছিল। কিন্তু, এখনও কিছু বিষয় ছিল যা তাদের সামনে অপেক্ষা করছিল।

 

একদিন, বিকেলের শেষে মৃণ্ময় পার্কে হাঁটছিল, এমন সময় তার ফোনে অপ্সরার মেসেজ আসল। মেসেজে লেখা ছিল,
— "মৃণ্ময়, আমি আজ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি কি এখন সময় পাবে?"

মৃণ্ময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে ফোনে কল করল,
— "অপ্সরা, কিছু সমস্যা কি হয়েছে?"

অপ্সরা একটু সময় নিয়ে বলল,
— "না, কোনো সমস্যা নয়। আমি শুধু একটু সময় চাই। তুমি কোথাও বের হতে পারো?"

মৃণ্ময় উত্তর দিল,
— "হ্যাঁ, আমি পারবো। কোথায় যেতে চাইছো?"

অপ্সরা বলল,
— "আমরা একটি ক্যাফেতে দেখা করতে পারি। সেখানে কিছু সময় একসাথে কাটাবো।"

 

মৃণ্ময় দ্রুত ক্যাফের দিকে রওনা দিল। অপ্সরা সেখানে বসে ছিল, তার চোখে কিছুটা চিন্তা আর দ্বিধা ছিল। মৃণ্ময় কাছে গিয়ে বসে বলল,
— "কিছু বলো, অপ্সরা, আমি একটু চিন্তিত।"

অপ্সরা একটু থেমে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমাদের মাঝে কিছু সময় কঠিন ছিল। তবে এখন, আমি খুব পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি, আমাদের মধ্যে সঠিক যোগাযোগের অভাব ছিল। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা ছিল, কিন্তু সেই ভালোবাসা কখনও ভালোভাবে বোঝানো হয়নি। আমি এখন বুঝতে পারছি, তোমার প্রতি আমার কিছু অবহেলা ছিল, যা আমি বুঝতেই পারিনি।"

মৃণ্ময় তার দিকে তাকিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, মাঝে মাঝে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তবে আমি তোমাকে কখনোই অবহেলা করতে চাইনি। আমি শুধু চাইছিলাম, তুমি আমার পাশে থাকো, এবং আমরা একে অপরকে বুঝি।"

 

অপ্সরা কিছুটা নম্রভাবে বলল,
— "তুমি জানো, মৃণ্ময়, যখন তুমি আমাকে সঠিকভাবে বুঝতে চাইতে, তখন আমার মনে হয় আমি নিজেও তোমাকে বুঝতে পারি। আমরা একে অপরকে সময় দিয়েছি, কিন্তু মনে হয়, আমরা শুধু একে অপরকে পর্যাপ্তভাবে জানি না।"

মৃণ্ময় ধীরে ধীরে বলল,
— "এটাই তো। সম্পর্কের মাঝে যদি আমরা একে অপরকে জানার সুযোগ না পাই, তবে সেটা আসল সম্পর্ক হতে পারে না। আমরা যদি একে অপরকে চূড়ান্তভাবে বুঝতে পারি, তবে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা থাকবে না।"

 

অপ্সরা সজাগ হয়ে মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা ছিল, কিন্তু সেটাকে ভুলভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক সঠিক পথে চলে। আমি জানি, যদি আমরা একে অপরকে খোলামেলা ভাবে জানি, আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।"

মৃণ্ময় স্নিগ্ধভাবে বলল,
— "অপ্সরা, তুমি ঠিক বলছো। আমাদের সম্পর্ক যদি সুস্থ থাকে, তবে আমাদের একে অপরকে সঠিকভাবে জানার জন্য আরো সময় দিতে হবে। আমরা যদি একে অপরকে ভালোভাবে জানি, তাহলে আমরা কোনো বিপদে পড়ব না।"

 

অপ্সরা হেসে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু আমরা যদি একে অপরকে বুঝে নিতে পারি, তবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো একে অপরকে জানার ইচ্ছা।"

মৃণ্ময় একটু থেমে বলল,
— "এটা ঠিক, অপ্সরা। সম্পর্কের মধ্যে একে অপরকে জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আমরা যদি একে অপরকে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের সম্পর্ক কোনো বাধাই মানবে না।"

 

অপ্সরা মৃদু হেসে বলল,
— "ঠিক বলছো, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমরা একে অপরকে কখনোই ছেড়ে যাবো না। আমাদের মাঝে যে কোনো দূরত্ব ছিল, তা আমরা খুব দ্রুত সাফল্যের সাথে দূর করতে পারবো।"

মৃণ্ময় তার হাত ধরল, আর অপ্সরা তাকে ধীরে ধীরে সরল চোখে দেখল। তারা জানতো, তাদের সম্পর্কের মধ্যে অনেক কিছু জানার ছিল, কিন্তু তারা একে অপরকে সঠিকভাবে জানার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।

আজ তারা বুঝেছিল, সম্পর্কের মাঝে কখনো কখনো বিভ্রান্তি আসে, কিন্তু যদি একে অপরকে বুঝতে চাওয়া থাকে, তবে সম্পর্কের মুল্য বেড়ে যায়। তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলছিল, যেখানে আর কোনো অবহেলা থাকবে না।

এবার মৃণ্ময় আর অপ্সরা তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। যেসব সমস্যা আগে তাদের মাঝে ছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে মিটিয়ে ফেলছিল তারা। তবে, তাদের সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের সংকট আসন্ন ছিল। তারা দুজনেই জানতো, একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারলে, সম্পর্কের জটিলতা কাটানো সম্ভব হবে। কিন্তু, বাস্তবতা তো অনেকটা আলাদা।

 

একদিন বিকেলে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন করল। ফোনের ওপাশে অপ্সরার কণ্ঠ ভেসে এল।

— "হ্যালো, মৃণ্ময়! কী ব্যাপার?"

মৃণ্ময় কিছুটা চিন্তা করে বলল,
— "অপ্সরা, আজকের দিনটা কি তোমার কাছে একটু স্পেশাল মনে হচ্ছে?"

অপ্সরা একটু থেমে বলল,
— "স্পেশাল কেন, মৃণ্ময়? কিছু হয়েছে?"

মৃণ্ময় বলল,
— "না, কিছু না। আসলে আমি ভাবছিলাম, আমাদের সম্পর্কের জন্য আজ রাতে একটা বিশেষ কিছু করা যেতে পারে। হয়তো, আমরা একসাথে কিছু সময় কাটাতে পারি, যে সময়টা আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।"

অপ্সরা হেসে বলল,
— "ওহ, এটা তো ভালো লাগবে। তুমি কী ভাবছো?"

 

মৃণ্ময় তার পরিকল্পনা শেয়ার করল,
— "আজ রাতে যদি তোমার সময় থাকে, তবে আমরা শহরের বাইরে কোথাও চলে যেতে পারি। সেখানকার শান্ত পরিবেশে আমাদের কথা বলা হবে, এবং আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।"

অপ্সরা কিছুটা ভাবনার মধ্যে বলল,
— "ঠিক আছে, মৃণ্ময়। আমি তো মনে করি, আমাদের সম্পর্কের জন্য এই ধরনের সময় সত্যিই প্রয়োজন। চল, তাহলে কোথাও ভালো জায়গায় যাই।"

 

রাতে, মৃণ্ময় ও অপ্সরা একে অপরকে নিয়ে শহরের বাইরে এক শান্ত পাহাড়ি এলাকায় চলে গেল। সেখানে তারা এক সুশীতল হাওয়ার মধ্যে বসে ছিল। মৃণ্ময়, অপ্সরার চোখে চোখ রেখে বলল,
— "অপ্সরা, এই সময়টা যেন আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের মধ্যে যেসব ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা আজ যেন শেষ হয়ে যায়।"

অপ্সরা, মৃণ্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে এখন অনেক কিছু পরিষ্কার হয়েছে। তবে, কিছু বিষয় এখনো অজানা। তবে, আজ আমি শুধু এটুকু চাই, আমাদের মাঝে কোনো অবহেলা আর না থাকে।"

 

মৃণ্ময়, অপ্সরার কথা শোনার পর বলল,
— "অপ্সরা, আমি কখনো তোমার প্রতি অবহেলা করতে চাইনি। তবে, আমার অনেক সময় তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারিনি, কারণ আমি নিজেও কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম।"

অপ্সরা একটু থেমে বলল,
— "ঠিক আছে, মৃণ্ময়। আমি বুঝতে পারছি, তুমি সত্যিই আমাকে বুঝতে চেয়েছো। তবে, কিছু সময় আমাকে মনে হয়েছে, আমরা একে অপরকে অগোচরে চলে গেছি। কিন্তু এখন আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের জন্য একটু সময়, একটু বেশি ভালোবাসা এবং একটু বেশি খোলামেলা যোগাযোগ প্রয়োজন।"

 

মৃণ্ময় তার হাত অপ্সরার হাতে রেখেছিল। তারা একে অপরকে খুব কাছে অনুভব করছিল। মৃণ্ময় বলল,
— "আমি চাই, অপ্সরা, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানি। তুমি জানো, আমি চাই আমাদের সম্পর্ক সব সময় এমন সুন্দর হয়ে থাকুক, যেখানে কোনো দ্বিধা বা অবহেলা থাকবে না।"

অপ্সরা হেসে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি আর থাকবে না। আমরা যদি একে অপরকে সত্যিকারভাবে জানি, তবে আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।"

 

মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানতো, সম্পর্কের মাঝে কখনো কখনো দুঃখ-কষ্ট আসে, কিন্তু যখন ভালোবাসা সঠিকভাবে বোঝানো হয়, তখন সব কিছু সামলে ওঠা সম্ভব। তাদের কাছে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় শিক্ষা—অবহেলা আর ভুল বোঝাবুঝি শুধু দূরত্ব তৈরি করে, আর সঠিক যোগাযোগ এবং বিশ্বাস সম্পর্ককে দৃঢ় করে।

আজ তারা একে অপরকে নতুন করে চিনেছিল। সম্পর্কের মাঝে এত দিন ধরে যে অবহেলা ছিল, তা তারা পেছনে ফেলে দিয়ে এক নতুন পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা, একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছিল। শহরের বাইরে এক শীতল রাতে তারা একে অপরের কাছাকাছি আসার পর, তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছিল। তবে, এই সম্পর্কের পরবর্তী ধাপের জন্য কিছু আরেকটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল।

 

বিকেলের দিকে মৃণ্ময় ফোন করল অপ্সরাকে। তবে, আজ একটু আলাদা কিছু ছিল। তার কণ্ঠে একটু উত্তেজনা ছিল।

— "অপ্সরা, তুমি কি কাল আমার সাথে বাইরে যেতে পারবে?"

অপ্সরা একটু থেমে বলল,
— "কাল? কোথাও যাবে আমরা?"

মৃণ্ময় একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, আমি ভাবছিলাম, আমরা দুজনে একসাথে একটা ছোটো ভ্রমণে যেতে পারি। আজকে আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য সময় দরকার। আমি জানি, আমরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝে নিচ্ছি, তবে এখন আমাদের একে অপরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে হবে।"

অপ্সরা কিছুটা চিন্তা করল, তারপর বলল,
— "ঠিক আছে, মৃণ্ময়। কাল সকালে আমি তোমার সাথে চলে আসবো।"

 

পরদিন সকালে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একসাথে একটি পাহাড়ী এলাকাতে বেরিয়ে পড়লো। যাত্রার পথে, মৃণ্ময় বলতে শুরু করল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমরা একে অপরকে জানার পথে অনেক ভুল করেছি। তবে আমি এখন নিশ্চিত, যে আমরা একে অপরকে পুরোপুরি বুঝতে পারি, তখন আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো বাধা থাকবে না।"

অপ্সরা কিছুটা স্নিগ্ধ হয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি মনে করি, আমরা যদি একে অপরকে গভীরভাবে জানি, তবে আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। কিন্তু, একথাও সত্য, যে কখনও কখনও কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়, এবং এর জন্য আমাদের সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। তবে, আজ আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না।"

 

মৃণ্ময় একটু থেমে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমাদের মাঝে কিছু সময় এমন ছিল যখন আমি তোমাকে অবহেলা করেছিলাম, কিন্তু সে সময়গুলো আজ আর ফিরিয়ে আনতে চাই না। আমাদের সম্পর্ক যদি সত্যিই ভালো হয়, তবে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, সবসময়।"

অপ্সরা তার চোখে চোখ রেখে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তুমি কখনোই আমাকে অবহেলা করতে চাওনি। তবে, কখনও কখনও জীবন আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। আমি শুধু চাই, আমাদের মাঝে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আর বিশ্বাস সব সময় বজায় থাকুক।"

 

যাত্রার মাঝে তারা কিছু সময় একে অপরকে খোলামেলা ভাবে জানার সুযোগ পেল। যখন তারা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালো, তখন সেখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পেয়ে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। অপ্সরা বলল,
— "এটা ছিল এক অদ্ভুত সুন্দর অভিজ্ঞতা, মৃণ্ময়। আমি এখন বুঝতে পারি, আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো একে অপরকে জানার ইচ্ছা।"

মৃণ্ময় হেসে বলল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। আর এখন আমি জানি, আমরা যদি একে অপরকে সত্যিকারভাবে বুঝতে পারি, তবে আমাদের সম্পর্ক কখনো শেষ হবে না।"

 

তাদের এই যাত্রা ছিল শুধু একটি সূচনা। তারা জানতো, সম্পর্কের ভিতরের গভীরতা ও জটিলতাগুলি একে অপরকে জানার মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব। কিন্তু, সম্পর্কের এই দিকটি সুসংহত করতে আরও অনেক সময়, চেষ্টার প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু, আজকের দিনটিতে তারা বুঝেছিল, সম্পর্কের মাঝে যে সবচেয়ে বড় শক্তি থাকে তা হল একে অপরকে বিশ্বাস ও সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করা।

আজকের ভ্রমণ, তাদের সম্পর্কের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। তারা একে অপরের হাতে হাত রেখে, সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকে এগিয়ে চলছিল।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা পাহাড়ি এলাকাতে একসাথে কাটানো সময়ের পর আবার শহরে ফিরলো। যদিও তাদের সম্পর্কের মধ্যে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়েছে, তবুও কিছু অমীমাংসিত বিষয় ছিল যা দুজনের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করছিল। মৃণ্ময় জানতো, অপ্সরা তার প্রতি কখনোই অবহেলা করতে চায়নি, তবে মাঝে মাঝে কিছু পরিস্থিতি সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করতো। আজকের পর, সে চেয়েছিল সম্পর্কের মাঝে কোনো অস্বস্তি না থাকে, এবং অপ্সরার মনোভাব ঠিকভাবে বুঝে, তার পাশে থাকতে চায়।

 

কিছু দিন পর, এক সন্ধ্যায় মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন করল। ফোনের ওপাশে অপ্সরার কণ্ঠ শোনা গেল।

— "হ্যালো, মৃণ্ময়! কী ব্যাপার?"

মৃণ্ময় হেসে বলল,
— "কিছু নয়, অপ্সরা। আসলে আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।"

অপ্সরা কিছুটা চিন্তা করে বলল,
— "কী কথা, মৃণ্ময়?"

মৃণ্ময় একটু গম্ভীর হয়ে বলল,
— "কিছু দিন ধরে আমি বুঝতে পারছি, আমাদের মাঝে কোনো কিছু কম ছিল। সম্পর্কের মধ্যে যা কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আমি তা ঠিক করতে চাই। কিন্তু আমি মনে করি, তোমার কাছ থেকে আরেকটু স্পষ্টতার প্রয়োজন রয়েছে। আমি চাই, তুমি আমার কাছে যেসব অনুভূতি প্রকাশ করতে চাও, সেগুলো আমাকে খুলে বলো।"

অপ্সরা কিছুটা মুচকি হাসল, তারপর বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি জানো, আমি কখনোই তোমাকে অবহেলা করতে চাইনি। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে, তুমি আমাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দাও না। হয়তো, আমার কাছে তোমার প্রতি কিছু আশা ছিল, কিন্তু তুমি তা পূরণ করতে পারোনি। তবে, আমি এখন বুঝতে পারছি, যে সম্পর্কের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি স্বাভাবিক, এবং আমরা একে অপরকে বোঝার জন্য আরও চেষ্টা করতে পারি।"

 

মৃণ্ময় একটু সময় নিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি বুঝতে পারি, তোমার কী অনুভূতি ছিল। তবে, আমি কখনোই তোমাকে অবহেলা করতে চাইনি। সম্পর্কের মাঝে যা কিছু সমস্যা ছিল, আমি তার জন্য নিজেকে দায়ী মনে করি। আজ, আমি শুধু এটুকু চাই, যে আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং আমাদের সম্পর্কের মাঝে যে অবহেলা ছিল, তা দূর হয়ে যায়।"

অপ্সরা একটু থেমে, নিজের মনে চিন্তা করে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে এমন সময় আসে যখন দুজনেরই কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়। তবে, আমি এখন নিশ্চিত যে আমাদের মধ্যে যেসব চ্যালেঞ্জ এসেছে, তা আমরা দুজনেই সমাধান করতে পারি।"

 

পরের দিন, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একসাথে বেড়াতে গেল। তারা শহরের বাইরে এক সুন্দর পার্কে গেলো, যেখানে বিশাল সব গাছ, শান্ত বাতাস আর মধুর পাখির গান তাদের মনকে প্রশান্তি দিলো। সেখানে বসে তারা অনেক কিছু নিয়ে কথা বললো, কিন্তু বিশেষভাবে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে তারা ভাবছিল। মৃণ্ময় বলল,
— "অপ্সরা, আজ আমি জানলাম, আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো একে অপরকে জানার জন্য সত্যিকারের ইচ্ছা। যখন আমরা একে অপরকে খোলামেলা ভাবে জানবো, তখন আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।"

অপ্সরা মাথা নেড়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের ভিতর অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে এসেছে। তবে, কিছু ভুলবোঝাবুঝি এখনও আমাদের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি, যদি আমরা একে অপরকে আরও গভীরভাবে বুঝি, তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।"

 

মৃণ্ময় তার হাত অপ্সরার হাতে রাখলো, তারপর বলল,
— "তুমি জানো, অপ্সরা, আমি প্রতিদিন তোমার সাথে থাকার চেষ্টায় আছি। আমরা যদি একে অপরকে কখনোই অবহেলা না করি, তাহলে আমাদের সম্পর্ক এমন কিছু হয়ে উঠবে, যা কখনো ভেঙে পড়বে না।"

অপ্সরা চোখে চোখ রেখে বলল,
— "তুমি ঠিক বলেছো, মৃণ্ময়। আমরা যদি একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানি এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি, তবে সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। আর সম্পর্কের মধ্যে কখনো অবহেলা বা দুরত্ব আসবে না।"

মৃণ্ময় ও অপ্সরা একে অপরকে ঠিক এমনভাবে দেখছিল, যেন তাদের সম্পর্কের মধ্যে আর কোনো বাধা নেই। তারা জানতো, জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু তাদের সম্পর্ক যদি একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে, তবে সব কিছু সামলানো সম্ভব।

এদিন তারা একে অপরকে কাছে পাওয়ার অনুভূতিটা যেন নতুন করে অনুভব করেছিল। তাদের সম্পর্কের মধ্য থেকে অবহেলা চলে গিয়েছিল, এবং তারা জানতো, এই সম্পর্কের মাঝে কোনো জায়গায় আর কোনো সংকট থাকবে না।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা, সম্পর্কের মাঝে নতুন একটি অধ্যায় শুরু করেছিল। তবে, সেই সম্পর্কের দিকে আরো একধাপ এগোতে গেলে কিছু পুরনো স্মৃতি এবং অবসান হতে না পাওয়া প্রশ্ন তাদের সামনে আসছিল। মৃণ্ময় জানতো, অপ্সরার মনোভাব পুরোপুরি বুঝে ওঠা সহজ নয়। অপ্সরার কিছু আচরণ তাকে মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তুলতো, তবে সে বিশ্বাস করতো, সম্পর্কের মাঝে কষ্ট এবং সন্দেহ একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ দেয়।

 

এক সন্ধ্যায়, মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন করলো। তার কণ্ঠে একটু গম্ভীরতা ছিল।

— "অপ্সরা, তুমি কি আজ একটু সময় পাবে?"

অপ্সরা ফোনের ওপাশে কিছুক্ষণ চুপ ছিল। তারপর বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়, কী হয়েছে?"

মৃণ্ময় একটু থেমে বলল,
— "তুমি জানো, আমি অনেক কিছু ভাবছিলাম আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। যদিও আমরা একে অপরকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি, তবুও কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের মাঝে স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমি তোমার কাছ থেকে কিছু স্পষ্ট উত্তর চাই।"

অপ্সরা একটু চিন্তা করে বলল,
— "কী ধরনের উত্তর, মৃণ্ময়?"

মৃণ্ময় গভীরভাবে বলল,
— "যখন আমরা একে অপরকে বুঝতে চেষ্টা করি, তখন কিছু প্রশ্ন মনে আসে। যেমন, আমি তোমাকে কখনোই অবহেলা করতে চাইনি, তবে মাঝে মাঝে তোমার আচরণ আমার কাছে একটু দূরত্ব তৈরি করেছে। তুমি কি এখন সত্যিই আমার পাশে থাকতে চাও? আমি চাই, তুমি আমাকে তোমার অনুভূতি খোলামেলা ভাবে জানাও।"

 

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তোমার জন্য এটা একটু কঠিন হতে পারে, কিন্তু আমি কখনোই তোমাকে অবহেলা করতে চাইনি। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে, তুমি আমাকে বুঝতে পারোনি, কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারি, আমরা যদি একে অপরকে ভালোভাবে বুঝে নি, তবে সম্পর্কের মাঝে দুরত্ব আসতেই পারে। আমি চাই, আমাদের সম্পর্কের মাঝে আর কোনো অবহেলা বা বিভ্রান্তি না থাকে।"

মৃণ্ময় একটু সান্ত্বনা পেল, তবে মনে একরকম চাপ অনুভব করছিল। সে জানতো, অপ্সরাও এই সম্পর্কের জন্য চেষ্টা করছে, তবে কিছু পুরনো ভুল বোঝাবুঝি দূর হওয়া উচিত ছিল।

 

পরের দিন, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একসাথে একটি পার্কে বেড়াতে গেলো। প্রকৃতির মাঝে, সবুজের মাঝখানে বসে তাদের মাঝে অনেক কিছু খোলামেলা আলাপ হলো। মৃণ্ময় বলল,
— "অপ্সরা, আমাদের সম্পর্ক যদি একে অপরকে গভীরভাবে বোঝার মাধ্যমে আরো শক্তিশালী হতে পারে, তবে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো। আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে অনেক সময় কষ্ট থাকে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমরা একে অপরকে কখনোই অবহেলা না করে, একে অপরের পাশে থাকতে পারবো।"

অপ্সরা মাথা নেড়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি জানি, কিছু কিছু মুহূর্তে আমরা একে অপরকে বুঝতে পারিনি, কিন্তু আজ আমি অনুভব করছি, আমাদের সম্পর্কের মুল্য আরও বেড়েছে। আমি চাই, আমরা একে অপরকে কখনোই অগ্রাহ্য না করি।"

 

এই ছোট্ট আলাপের পর, তারা একে অপরকে নতুন করে জানার সিদ্ধান্ত নিল। মৃণ্ময় জানতো, সম্পর্কের ভিতর সত্যিকার ভালোবাসা থাকতে হলে, একে অপরকে অবহেলা না করে, পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুভূতিকে সম্মান করতে হবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানতো, সম্পর্কের গভীরতা সেই সময়েই প্রকাশ পায়, যখন দুজন একে অপরকে জানার জন্য আরও বেশি সময় ও মনোযোগ দেয়। আর তাদের সম্পর্কের মাঝে আর কোনো অবহেলা থাকবে না, একে অপরকে ভালোভাবে জানার জন্য তারা একে অপরের পাশে থাকবে।

 

দিন শেষে, তারা পার্ক থেকে বেরিয়ে একসাথে রেস্টুরেন্টে গেলো। সেখানে বসে তারা নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে আরো কিছু সময় আলোচনা করলো। অপ্সরা বলল,
— "মৃণ্ময়, আজ আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের সম্পর্কের আসল শক্তি একে অপরকে বুঝতে চাওয়া। আমি এখন জানি, তুমি কখনোই আমাকে অবহেলা করতে চাওনি। আমরা যদি একে অপরকে পুরোপুরি জানি, তবে আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।"

মৃণ্ময় হাসতে হাসতে বলল,
— "হ্যাঁ, অপ্সরা। আমাদের সম্পর্ক এখন নতুন এক দিগন্তে পৌঁছেছে। আর আমি জানি, আমাদের একে অপরকে বুঝতে কখনো দেরি হবে না।"

তারা একে অপরকে চোখে চোখ রেখে কিছুটা সময় চুপ করল। যেন তাদের সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে সূচনা হয়েছে, যেখানে আর কোনো অবহেলা বা দ্বন্দ্ব থাকবে না।

মৃণ্ময় আর অপ্সরার সম্পর্ক এক নতুন রূপে রূপান্তরিত হতে চলছিল। গত কিছু দিনের মধ্যে তারা একে অপরকে আরো ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেছে। একে অপরের সাথে খোলামেলা আলোচনা, ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো শেয়ার করা, এবং নিজেদের মধ্যে কোন বাধা না রাখতে চাওয়া—এসব তাদের সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্তিশালী করেছিল। কিন্তু, সবকিছুই যে ঠিক হয়ে যাবে, এমন নিশ্চয়তা ছিল না। এখনও কিছু অপ্রকাশিত অনুভূতি এবং কিছু ভুল বোঝাবুঝি তাদের মাঝে ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরো পরিষ্কার হতো।

 

একদিন বিকেলে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন করলো। অপ্সরা তখন কাজের ব্যস্ততায় ছিল, কিন্তু মৃণ্ময়ের ফোনটা পাওয়ার পর একটু অবাক হলো।

— "হ্যালো, মৃণ্ময়। কী ব্যাপার?"

মৃণ্ময় একটু নির্ভার হয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। আমি জানি, আমরা দুজন এখন একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানছি, কিন্তু আমি মনে করি, কিছু কিছু বিষয় নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।"

অপ্সরা কিছুটা চিন্তা করে বলল,
— "হ্যাঁ, বলো। আমি শোনার জন্য প্রস্তুত।"

 

মৃণ্ময় তার কণ্ঠে কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো, কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার আচরণ আমার কাছে কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। আমি বুঝি, তুমি অনেক সময় একেবারে অনুপস্থিত থাকো, হয়তো কাজের চাপে, কিন্তু আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা আরো শক্তিশালী হোক। আমি চাই, তোমার মনোভাব সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা পেতে, যেন কোন কিছুতেই ভুল বোঝাবুঝি না হয়।"

অপ্সরা একটু থেমে, গভীর শ্বাস নিয়ে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, মাঝে মাঝে আমি ঠিক তোমার মতো আচরণ করতে পারি না। কিন্তু সেটা মানে এই নয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমার মধ্যে কিছু পুরনো অভ্যাস আছে, যে কারণে আমি মাঝে মাঝে দূরে চলে যাই। তবে, আমি জানি, যদি আমি আরও কাছাকাছি থাকি, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।"

 

মৃণ্ময়ের মুখে একটু হাসি এল।
— "অপ্সরা, আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝি। আমরা যদি একে অপরের অনুভূতিগুলো বুঝে নেই, তবে সম্পর্কের মাঝে কোন সন্দেহ থাকবে না। আমি চাই, তুমি যেন আমার পাশে থাকো, শুধুমাত্র শারীরিকভাবে না, মানসিকভাবে ও তোমার অনুভূতিগুলো শেয়ার করে।"

অপ্সরা একটু মুচকি হাসল, তারপর বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়, আমি বুঝি। আমি জানি, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, কিন্তু কখনো কখনো পুরনো অভ্যাস বা একটুখানি ভুল বোঝাবুঝি সম্পর্কের মাঝে অবহেলা সৃষ্টি করে। আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরও গভীরভাবে জানি, যেন এমন কোনো মুহূর্ত না আসে।"

 

পরের দিন, মৃণ্ময় এবং অপ্সরা একসাথে বসে পার্কে হাঁটছিল। বেশ কিছু সময় পর, মৃণ্ময় আবার অপ্সরার সাথে সম্পর্কের বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাইল।

— "অপ্সরা, গত কিছু দিন আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি মনে করি, কিছু বিষয় যেগুলো আমি তোমাকে বলিনি, তা জানানো উচিত। আমার কিছু নির্দিষ্ট ভয় ছিল, যে তুমি আমাকে কখনোই পুরোপুরি বুঝবে না। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি, আমরা যদি একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে নিই, তবেই আমাদের সম্পর্ক সফল হবে।"

অপ্সরা চিন্তা করে বলল,
— "মৃণ্ময়, তোমার এই কথা শুনে আমি খুব ভালো লাগলো। আমি জানি, তোমার কিছু ভয় ছিল, কিন্তু এখন আমি অনুভব করি, আমাদের সম্পর্ক যদি একে অপরকে সময় দেই এবং যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি মেটাই, তবে সম্পর্ক একে অপরের জন্য শক্তিশালী হবে।"

 

মৃণ্ময় হাসতে হাসতে বলল,
— "অপ্সরা, আমি চাই, আমরা একে অপরকে কখনোই অবহেলা না করি। সম্পর্কের মধ্যে প্রেম এবং বিশ্বাস থাকতে হবে। শুধু সম্পর্কের জন্য নয়, আমাদের জীবনের জন্যও। যদি আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি, তাহলে সম্পর্কের মান আরও বেড়ে যাবে।"

অপ্সরা সজাগ হয়ে মৃণ্ময়ের দিকে তাকালো।
— "তুমি একদম ঠিক বলেছো, মৃণ্ময়। আমাদের সম্পর্ককে শুধু প্রেমের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে না, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা থাকা উচিত। আমরা যদি একে অপরকে সমর্থন করি, তবে আমাদের সম্পর্ক কখনো ভেঙে পড়বে না।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার হাত ধরলো।
— "তুমি জানো, অপ্সরা, একে অপরকে ভালোভাবে জানার পথে আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমরা যদি একে অপরকে ভালোবাসি, সম্পর্কের মাঝে কোনো অবহেলা বা বিভ্রান্তি থাকবে না।"

অপ্সরা মাথা নেড়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক পরিপূর্ণ হবে, যদি আমরা একে অপরকে বুঝতে চেষ্টা করি।"

তাদের মধ্যে যে একে অপরকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা তাদের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। তারা জানতো, যদি তারা একে অপরকে সম্মান করে এবং বিশ্বাস রাখে, তাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরার সম্পর্কের মাঝে একটি নতুন সূচনা ঘটেছিল। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমছিল এবং তারা একে অপরকে আরও খোলামেলাভাবে বুঝে নিতে শুরু করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে এখনো কিছু অপ্রকাশিত ক্ষোভ আর চাপ ছিল, যা সম্পর্কের ভিতের গভীরে লুকিয়ে ছিল। সময়ের সাথে সাথে, তাদের মনোভাব ও অনুভূতিগুলি একে অপরকে জানিয়ে দেওয়া আরও জরুরি হয়ে উঠছিল।

 

একদিন বিকেলে, মৃণ্ময় অপ্সরাকে আবার ফোন করলো। অপ্সরা তখন একটু ব্যস্ত ছিল, কিন্তু ফোনটা পেয়ে সে সোজা উত্তর দিল।

— "হ্যালো, মৃণ্ময়। কী ব্যাপার?"

মৃণ্ময় একটু গম্ভীরভাবে বলল,
— "অপ্সরা, আমি একটু তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। আমি জানি, আমরা বেশ কিছু দিন একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট করা দরকার।"

অপ্সরা একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
— "কী বিষয় মৃণ্ময়? তুমি তো জানো, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই, কিন্তু মাঝে মাঝে একটু সময়ের দরকার হয়।"

মৃণ্ময় একটু শ্বাস নিয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আমাদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমাকে ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে। আমি জানি, তুমি আমাকে কখনোই ক্ষতি করতে চাওনি, কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমি তোমার কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চাই।"

 

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থাকল। এরপর সে বলল,
— "তুমি কী বলতে চাও, মৃণ্ময়?"

মৃণ্ময় খুব মনোযোগ দিয়ে বলল,
— "আমি কখনোই তোমাকে অবহেলা করতে চাইনি, কিন্তু কিছু সময়, আমি অনুভব করি যে তুমি একটু দূরে চলে যাও, এবং সেই মুহূর্তগুলো আমাদের সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে। আমি জানি, তুমি অনেক ব্যস্ত, কিন্তু তুমি যখন দূরে চলে যাও, তখন আমি মনে করি, আমাদের মধ্যে কিছু একটা ভুল আছে। তুমি কি এই সম্পর্কে কিছু বলতে চাও?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চিন্তা করল এবং তারপর বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি বুঝি। কখনো কখনো আমি সত্যিই অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করি, এবং হয়তো আমার মধ্যে কিছু অভ্যস্ততা আছে, যার কারণে আমি তোমার কাছে আগের মতো আসতে পারি না। কিন্তু আমি জানি, সেটা ঠিক নয়। আমি তোমাকে অবহেলা করতে চাই না, তোমার সঙ্গে থাকতে চাই।"

মৃণ্ময় ধীরে ধীরে বলল,
— "আমার মনে হয়, অপ্সরা, আমরা একে অপরকে ভালোভাবে জানলে আমাদের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। আমি চাই, তুমি আমাকে আরো ভালোভাবে জানাও। আমাদের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি যেন না থাকে।"

 

অপ্সরা একটু নীরব হয়ে গম্ভীরভাবে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি চাই আমাদের সম্পর্কের কোনো সমস্যা না থাকে, কিন্তু আমি জানি, কখনো কখনো আমি সঠিকভাবে অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না। আমি তো চাই, তুমি আমাকে বোঝো, কিন্তু আমার মধ্যে কিছু দিধাদ্বন্দ্ব ছিল, যেগুলো আমি বুঝে উঠতে পারিনি। তবে এখন আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে সেই ভুলগুলো কাটানো সম্ভব, যদি আমরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝি।"

মৃণ্ময় একে অপরকে আরো ভালোভাবে বুঝতে চেয়েছিল, আর অপ্সরাও তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। দুজনের মাঝে শান্তির একটি অনুভূতি ছিল, যা তাদের সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করছিল। তারা জানতো, সম্পর্ককে গভীরভাবে বোঝার জন্য আরো অনেক সময় দরকার।

 

পরের দিন, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একসাথে চায়ের দোকানে বসে ছিল। তাদের মধ্যে কোনো কিছু চাপা ছিল না, সব কিছু খোলামেলা হয়ে যাচ্ছিল। মৃণ্ময় অপ্সরাকে বলল,
— "অপ্সরা, আমরা যদি একে অপরকে খোলামেলা ভাবে জানি, তবে সম্পর্কের ভিত আরো দৃঢ় হবে। আর যদি আমাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকে, তা দ্রুত সমাধান করতে হবে। আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক নিঃশর্ত ভালোবাসায় পূর্ণ হোক।"

অপ্সরা হাসতে হাসতে বলল,
— "তুমি ঠিক বলেছো, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে এমন কিছু অপ্রকাশিত দিক ছিল, কিন্তু এখন আমি অনুভব করছি যে, আমাদের সম্পর্কের যাত্রা এক নতুন দিক নিয়েছে। আমাদের একে অপরকে শুধু ভালোবাসা নয়, বিশ্বাসও দিতে হবে।"

 

মৃণ্ময় আর অপ্সরা হাত ধরল। দুজনেই অনুভব করছিল, তাদের সম্পর্ক এখন গভীর এক আস্থা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানতো, এই সম্পর্ককে নষ্ট না করে একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানলেই, তারা একে অপরের জীবনে কখনোই অবহেলা ও বিভ্রান্তির মুখোমুখি হবে না।

এবং তাই, মৃণ্ময় আর অপ্সরা তাদের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চেয়েছিল, যেখানে একে অপরকে কখনোই অবহেলা করা হবে না, কেবল ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা থাকবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরার সম্পর্ক এক নতুন অঙ্গনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা একে অপরকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছে, এবং সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস এবং শুদ্ধ ভালোবাসা গড়ে উঠছিল। তবে, বাস্তবতা সবসময় এত সহজ ছিল না। তাদের সম্পর্কের ভিতর কিছু সমস্যাও ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

 

একদিন সন্ধ্যায়, মৃণ্ময় হঠাৎ করেই অপ্সরাকে ফোন করলো। অপ্সরা তখন এক ক্লান্তিকর দিন শেষে নিজের ঘরে বসে ছিল, কিন্তু মৃণ্ময়ের ফোনটা পেয়ে সে কিছুটা অবাক হলো।

— "হ্যালো, মৃণ্ময়। কী ব্যাপার?"

মৃণ্ময় একপাশে একটু চুপ হয়ে বলল,
— "অপ্সরা, আজ আমি একটা কিছু অনুভব করেছি। আমাদের সম্পর্কের মাঝে আমি কিছু জিনিস খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো হয়তো আমাদের সামনে আসতে হবে।"

অপ্সরা একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
— "কী জিনিস মৃণ্ময়? তুমি কি কিছু খারাপ অনুভব করছো?"

মৃণ্ময় তার কণ্ঠে এক ধরণের সংকোচ নিয়ে বলল,
— "না, অপ্সরা, আমি কিছু খারাপ অনুভব করছি না, তবে আমি তোমার কাছে একটি প্রশ্ন রাখছি। কেন মাঝে মাঝে আমি অনুভব করি, তুমি অন্য দিক দিয়ে চলে যাচ্ছো? কেন তোমার মনে হয় আমি তোমার প্রতি অবহেলিত হচ্ছি?"

অপ্সরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি তুমি খুব মনোযোগী, কিন্তু মাঝে মাঝে আমি খুব ক্লান্ত অনুভব করি। আমি জানি, এটা তোমার কাছে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু কিছু কিছু সময় আমার মনে হয়, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার উত্তর শুনে কিছুটা ভাবতে লাগলো। সে আসলে জানত, অপ্সরা কখনোই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে সরিয়ে দেয়নি, তবে তার মধ্যে কিছু চাপ ছিল, যা তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারেননি।

— "তাহলে, অপ্সরা, তুমি কি আমাকে আরো স্পষ্টভাবে জানাতে পারো যে কী কারণে তোমার মাঝে এই পরিবর্তন আসে?"

অপ্সরা ধীরে ধীরে বলল,
— "আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো, কিন্তু মাঝে মাঝে আমার মধ্যে কিছু ভুল ধারণা আসে, যা আমাকে অস্বস্তি দেয়। আমি নিজেকে অন্য জায়গায় খুঁজে পাই, এবং তখন মনে হয়, আমি আমাদের সম্পর্কের বাইরে চলে যাচ্ছি।"

মৃণ্ময় কিছুটা কষ্ট অনুভব করে বলল,
— "আমি জানি, অপ্সরা, তুমি খুব ভালো মানুষ, কিন্তু যখন তুমি এমনটা অনুভব করো, তখন আমি বুঝতে পারি না, আমি কী ভুল করেছি। আমি চাই না আমাদের সম্পর্কের মাঝে এমন কিছু হয়, যা আমাদের দূরে নিয়ে যাবে।"

 

অপ্সরা একদম নীরব হয়ে গেছিল, তারপর সে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তুমি আমাকে সবসময় ভালোবাসো, কিন্তু আমার মাঝে অনেক কিছু রয়েছে, যা আমি তোমাকে বলিনি। তবে, আমি চাই আমাদের সম্পর্কের মাঝে কোনো অবহেলা না থাকুক। আমি তোমাকে জানাতে চাই, আমি তোমার পাশে আছি।"

মৃণ্ময় কিছুটা তীব্রভাবে বলল,
— "তুমি যদি কখনো কিছু লুকাও, তবে সম্পর্কটা কি সঠিকভাবে চলতে পারবে? আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানি। আমাদের মধ্যে কোনো কিছু যেন কখনো চাপা না থাকে।"

অপ্সরা ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলল,
— "তুমি ঠিক বলছো। তবে, আমার মাঝে কিছু দ্বিধা ছিল, যা আমি তোমাকে জানাতে ভয় পেতাম। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি, যদি আমরা একে অপরকে পুরোপুরি জানি না, তাহলে এই সম্পর্কের মান কমে যাবে।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার হাতে হাত রেখে বলল,
— "অপ্সরা, আমি চাই, তুমি যদি কোনো কিছু অনুভব করো, তবে আমাকে বলো। আমি চাই, আমরা একে অপরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি এবং কখনোই একে অপরকে অবহেলা না করি।"

অপ্সরা তার চোখে অশ্রু জমিয়ে বলল,
— "মৃণ্ময়, তুমি যদি আমাকে অবহেলা করো, তবে আমি জানি, সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি চাই, আমরা একে অপরকে কখনোই এত দূরে না ফেলি।"

মৃণ্ময় অপ্সরার চোখে চোখ রেখে বলল,
— "তুমি কখনোই অবহেলিত হও না, অপ্সরা। আমি তোমার পাশে থাকব, এবং তোমার সব কিছু জানব।"

 

সেই রাতে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরের মাঝে সঠিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিল। তারা জানতো, সম্পর্কের মাঝে কখনো কোনো বাধা আসলে, তা সমাধান করা জরুরি। অবহেলা, ভুল বোঝাবুঝি, অথবা কোনো অপ্রকাশিত ক্ষোভ সম্পর্ককে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে পারলে, সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

মৃণ্ময় আর অপ্সরার সম্পর্কের মাঝে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছিল। তারা একে অপরকে আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে যে গভীরতা ও জটিলতা ছিল, তা সহজে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুভূতির বিভিন্ন দিক আরও স্পষ্ট হচ্ছিল, এবং একে অপরকে যত বেশি জানছিল, তত বেশি তারা বুঝতে পারছিল, সম্পর্কের মাঝেও কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন ছিল।

 

একদিন মৃণ্ময় অপ্সরার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখল, অপ্সরা খুব চিন্তিত। তার মুখে সেই আগের মতো হাসি ছিল না, তার চোখের দিকে কোনো গভীর কষ্টও ছিল।

— "অপ্সরা, তুমি কী ঠিক আছো?"—মৃণ্ময় সরাসরি প্রশ্ন করল।

অপ্সরা একটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে, তারপর তার সিগারেট থেকে শেষটুকু টেনে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তুমি ভাবছো আমি ঠিক আছি। কিন্তু আসলে আমার ভেতরে কিছু অনুভূতি লুকিয়ে রয়েছে, যা আমি তোমাকে জানাতে পারছি না।"

মৃণ্ময় অবাক হয়ে বলল,
— "কী অনুভূতি অপ্সরা? তুমি তো জানো, আমি চাই, তুমি সব কিছু আমাকে বলো।"

অপ্সরা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— "মৃণ্ময়, মাঝে মাঝে আমি অনুভব করি, আমি তোমাকে হারাতে চলেছি। আমাদের সম্পর্কের মাঝে কিছু না কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে, যা আমরা জানি না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কেন আমাদের মধ্যে সেই পুরনো সম্পর্কটা আর নেই।"

 

মৃণ্ময়ের মন কেঁপে উঠল। সে জানত অপ্সরা এক সময়ে তার সবকিছু ছিল, কিন্তু এখন তার মধ্যে এমন এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, যা মৃণ্ময়ের কাছে কল্পনাতীত ছিল।

— "অপ্সরা, তুমি কি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছো? কেন তুমি এমন ভাবছো?"—মৃণ্ময় জিজ্ঞেস করল।

অপ্সরা একটু নীরব হয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি অনুভব করছি, আমাদের মাঝে এখন আর আগের মতো কিছু নেই। আমি জানি, আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আমি জানি না কীভাবে সেটা সমাধান করবো।"

মৃণ্ময় চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ রইল, তারপর বলল,
— "অপ্সরা, আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেক কিছুই ঠিকভাবে আলোচনা হয়নি। তবে আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানি এবং সবকিছু মিলে মিশে যাওয়ার সুযোগ দিই। আমরা যদি একে অপরকে বিশ্বাস করি, তবে এসব সমস্যা অতিক্রম করা সম্ভব।"

 

অপ্সরা একটু নীরব হয়ে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি জানি, তুমি সব সময় আমার পাশে আছো। কিন্তু আমি এখন নিজেকে বুঝতে পারছি না। কখনো কখনো মনে হয়, আমি তোমার প্রতি আগের মতো অনুভব করি না। আমাদের মাঝে কিছু দুঃখজনক বিষয় রয়েছে, যা আমি কাটিয়ে উঠতে পারিনি।"

মৃণ্ময় এক পা এগিয়ে বলল,
— "তুমি যদি কখনো অনুভব করো যে আমি তোমাকে অবহেলা করছি, তাহলে সেটা আমার জন্য সবচেয়ে খারাপ হবে। অপ্সরা, আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে ওঠানামা থাকে, কিন্তু যদি আমরা একে অপরকে সমর্থন করি, তবে এসব দিনগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবো।"

অপ্সরা মাথা নেড়ে বলল,
— "তবে, মৃণ্ময়, আমাদের মধ্যে যে কিছু বিভ্রান্তি আছে, তা কি তুমি দেখ না? আমি জানি, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, কিন্তু কেন যেন আমাদের মাঝে এমন কিছু হয়েছে, যা আমরা ঠিকমতো বুঝতে পারছি না।"

 

মৃণ্ময় অপ্সরার দিকে তাকিয়ে তার হাতটা ধরল,
— "আমি জানি, অপ্সরা, আমাদের মাঝে অনেক কিছু স্পষ্ট নয়। কিন্তু আমি চাই, আমরা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি, এবং সময় নিয়ে সেই ভুলগুলো সংশোধন করি। যদি আমরা একে অপরকে একটু সময় দিই, তাহলে এসব সমস্যার সমাধান অবশ্যই আসবে।"

অপ্সরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল,
— "তুমি ঠিক বলছো, মৃণ্ময়। আমি জানি, আমাদের মাঝে কিছু কঠিন সময় আসতে পারে, তবে আমি চাই, আমরা একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানি এবং সম্পর্ককে শক্তিশালী করি।"

 

এদিনের পর, মৃণ্ময় আর অপ্সরা সম্পর্কের নতুন এক পথ খুঁজে পেল। তাদের মাঝে যে আড়াল ছিল, সেটা ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছিল। তবে, সম্পর্কের মাঝে আসা পরিবর্তনগুলো সহজ ছিল না। তাদের মাঝে আরো অনেক কথা বলা বাকি ছিল, আরো অনেক সময় একে অপরকে বোঝার ছিল, এবং সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে তাদের সম্পর্ককে সঠিক দিকে পরিচালিত করতে হত।

তবে, মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানতো, যদি তারা একে অপরকে ভুল না বোঝে, নিজেদের প্রতি সত্য থাকে, এবং সম্পর্কের মাঝে অবহেলা না রাখে, তাহলে তাদের সম্পর্কের অন্ধকার দিকগুলো একদিন আলোতে পরিণত হবে।

সম্পর্কের মাঝে অস্বস্তি আর অবহেলা যখন বেড়ে যায়, তখন অনুভূতিগুলোও আরও জটিল হয়ে ওঠে। মৃণ্ময় আর অপ্সরা জানত, তাদের সম্পর্কের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সামনে কিছু কঠিন মুহূর্ত আসবে। তারা একে অপরকে বুঝতে শুরু করলেও, হৃদয়ের এক কোণে কিছু প্রশ্ন থেকে গিয়েছিল। এসব প্রশ্ন তাদের মাঝের দূরত্ব বাড়াতে পারত, কিন্তু তারা জানত, যদি তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

মৃণ্ময় অপ্সরাকে এক দিন ফোন করে বলল,
— "অপ্সরা, আমি আর তুমি একসঙ্গে কোথাও যেতে চেয়েছিলাম। আমি জানি, আমাদের মাঝে অনেক কিছু আছে যা নিয়ে কথা বলা হয়নি, কিন্তু কি তোমার মনে হয়, আমরা কিছু সময় একে অপরকে দেবে?"

অপ্সরা একটু দ্বিধান্বিত হয়ে বলল,
— "আমি জানি, মৃণ্ময়, আমাদের সম্পর্কের মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা একে অপরকে সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি, তবে আমি জানি না, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।"

মৃণ্ময় চিন্তিত হয়ে বলল,
— "তুমি কি মনে করো, আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে? অপ্সরা, আমি জানি, আমি হয়তো সব কিছু বুঝতে পারিনি, কিন্তু আমি চাই, আমরা আবার একে অপরকে ভালোভাবে জানি। আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক এক নতুন রাস্তায় চলুক।"

অপ্সরা একটু চুপ থেকে বলল,
— "আমি জানি, তুমি ভালো মানুষ, মৃণ্ময়, কিন্তু আমার ভেতরে অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা যদি একে অপরকে বুঝে উঠতে না পারি, তবে সম্পর্কের মাঝে চাপ বাড়বে, এবং সেটা আমাদের দূরে নিয়ে যাবে।"

মৃণ্ময় অপ্সরাকে গভীরভাবে দেখল,
— "তবে, তুমি জানো, অপ্সরা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাই, তুমি যদি একদিনও ভাবো, তুমি আর আমি একসাথে থাকতে পারবো না, তাহলে তুমি আমাকে বলো। আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছিন্নতা আসে, কিন্তু আমাদের মাঝে যদি সত্যি ভালোবাসা থাকে, তবে সব কিছু সম্ভব।"

 

অপ্সরা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— "মৃণ্ময়, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি, সম্পর্কের মাঝে কোথাও আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি, তুমি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমি চাই, আমি কিছু সময় একা থাকতে পারি, যাতে আমি নিজেকে বুঝতে পারি।"

মৃণ্ময় মাথা নিচু করে বলল,
— "তুমি যদি এমনটা অনুভব করো, তবে আমি তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আমি কখনোই তোমাকে চাপ দিতে চাই না, অপ্সরা। আমি চাই, তুমি নিজে সিদ্ধান্ত নাও। তবে আমি জানি, যদি একদিন তুমি ফেরার সিদ্ধান্ত নাও, আমি এখানে থাকব।"

অপ্সরা একটু নীরব থেকে বলল,
— "তুমি ঠিক বলেছো, মৃণ্ময়। আমি কিছু সময় চাই, এবং আশা করি, যদি একদিন আমরা আবার একে অপরকে ফিরে পাই, তবে সেই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।"

মৃণ্ময় আর অপ্সরা অনেক দিন পর একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সম্পর্কের মাঝে সেই পুরনো অবহেলা আর বিভ্রান্তি এখন আর ছিল না, তবে নিজেদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তারা সময় নিয়েছিল, এবং সেই সময়টাতে তারা নিজেদের একে অপরের প্রতি অনুভূতি পরীক্ষা করেছিল।

 

একদিন মৃণ্ময় অপ্সরাকে ফোন করল। এ সময়, তার কণ্ঠে এক ধরনের শান্তি ছিল, যে শান্তি কিছুটা হলেও সম্পর্কের মাঝের আবেগকে দূর করেছিল।

— "অপ্সরা, তুমি কী ঠিক আছো?"

অপ্সরা একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়, আমি ঠিক আছি। তোমার কি মনে হচ্ছে?"

মৃণ্ময় নীরব হয়ে একটু বলল,
— "আমার মনে হচ্ছে, আমাদের সম্পর্কের যাত্রা এখন নতুন দিকে এগোচ্ছে। আমি জানি, সম্পর্কের মাঝে অনেক কিছু ছিল, কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারি, তুমি আমাকে বুঝতে চেয়েছো, আর আমি তোমাকে বুঝতে চেয়েছি।"

অপ্সরা একটু চিন্তা করে বলল,
— "তুমি ঠিক বলেছো, মৃণ্ময়। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি, আমরা একে অপরকে বুঝে নতুনভাবে শুরু করতে পারি।"

মৃণ্ময় একটু হেসে বলল,
— "তাহলে, অপ্সরা, আমরা কি আবার একে অপরের কাছে ফিরব?"

অপ্সরা তার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস এনে বলল,
— "হ্যাঁ, মৃণ্ময়। আমি চাই, আমরা একে অপরকে ভালোভাবে জানি, এবং সম্পর্কের মধ্যে কোনো অবহেলা না রেখে একে অপরকে আরও ভালোবাসি।"

 

মৃণ্ময় এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— "তুমি জানো, অপ্সরা, আমি কখনোই তোমাকে হারাতে চাইনি। তুমি যে কোনো কষ্টে থাকলে, আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।"

অপ্সরা তার কণ্ঠে মৃদু হাসি রেখে বলল,
— "আমি জানি, মৃণ্ময়। আমাদের সম্পর্ক আর অবহেলা নিয়ে চলবে না। আমরা একে অপরকে বুঝব, এবং আমাদের যাত্রা নতুনভাবে শুরু হবে।"

এদিন, মৃণ্ময় আর অপ্সরা একে অপরের কাছে ফিরে এসে সম্পর্কের পুরনো কষ্টগুলো মুছে ফেলল। তাদের মাঝে কোনো অবহেলা ছিল না, বরং তারা একে অপরকে ভালোভাবে জানার এবং বুঝে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।

 

তাদের সম্পর্ক ছিল এখন পূর্ণাঙ্গ। তারা একে অপরকে বুঝে নিল এবং অবশেষে তাদের সম্পর্কের সত্যিকারের গভীরতা খুঁজে পেল। অবহেলা, ভুল বোঝাবুঝি, আর কষ্ট—সবকিছুই ছিল অতীতের অংশ। এখন তারা একসাথে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত ছিল, একে অপরের পাশে, এক নতুন শুরুতে।

“সমাপ্ত”



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama