STORYMIRROR

Purna Mallik

Crime Thriller Others

5.0  

Purna Mallik

Crime Thriller Others

আততায়ী কে?(প্রথম পর্ব)

আততায়ী কে?(প্রথম পর্ব)

4 mins
283

ডিসেম্বরের এক রবিবার সকাল ।

ব্রেকফাস্টের পর সুহাস নিজের ফোনে কি যেন দেখছিল। প্রভা ওর পাশে সোফায় বসে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল। হঠাৎ সুহাস প্রভাকে জিজ্ঞাসা করলো, "আচ্ছা দিদি, তুমি রুদ্রনারায়ণ দস্তিদারের নাম শুনেছো?"


"রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার?", প্রভা ম্যাগাজিন থেকে চোখ সরিয়ে বলল, "মানে যার সিউড়িতে প্রাইভেট চিড়িয়াখানা আছে?"


"হ্যাঁ, তার কথাই বলছি। আজ ভোরে ওই চিড়িয়াখানায় একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটে গেছে।"


"কি হয়েছে?", প্রভা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো ।


"তুমি তো জানো রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার পারিবারিক সোনার ব্যবসা থেকে অনেক টাকা রোজগার করেছেন। রুদ্রনারায়ণ তার বাবা আদিত্যনারায়ণের একমাত্র সন্তান ছিলেন। সুতরাং সম্পত্তির পুরোটাই তিনি পেয়েছিলেন । ব্যবসায়ী হলেও তিনি বরাবরই জন্তু-জানোয়ার ভালোবাসেন। শুনেছি ওনার বাড়িতে নাকি বিভিন্ন জাতের ছ'টা কুকুর আছে। বছর সাতেক আগে তার ছেলে প্রতাপনারায়ণের হাতে ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দিয়ে তিনি সিউরিতে প্রাইভেট চিড়িয়াখানা বানাবেন বলে ঠিক করেন। এখানে বলে রাখি, কোলকাতার বাসিন্দা হলেও সিউরিতে দস্তিদারদের প্রাসাদের মতো বাড়ি আছে। আর আছে বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া প্রচুর জমি। কোলকাতার বাড়িটা প্রতাপনারায়ণকে ছেড়ে দিয়ে রুদ্রনারায়ণ তার স্ত্রী নলিনীকে নিয়ে সিউরিতে চলে আসেন। বাড়ির লাগোয়া জমিতেই চিড়িয়াখানা তৈরির কাজ শুরু হয়। এই সাত বছরে প্রচুর জন্তু- 

জানোয়ার সংগ্রহ করেছেন ভদ্রলোক। বহু মানুষ সেই চিড়িয়াখানা দেখতে যায়। তবে রুদ্রনারায়ণের কালেকশনের সেরা স্পেসিমেন হলো একটা বিশাল বড়ো আফ্রিকান সিংহ। সেই সিংহের দেখাশোনা করার জন্য আলাদা একটা লোক ছিল- নাম বিষ্ণুপদ দাস। আজ ভোরে কোন এক সময়ে বিষ্ণুপদ দাসকে সিংহের খাঁচার সামনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিংহ তাঁর দেহটাকে একেবারে ফালাফালা করে দিয়েছিল। এমনকি মুখের অনেকটা অংশ খেয়ে নিয়েছিল। সিংহটার মুখে আর থাবাতেও রক্ত লেগে ছিল। আর সব থেকে আশ্চর্য ব্যাপার হলো সিংহটা খাঁচার মধ্যেই ছিল আর খাঁচার দরজাটাও বন্ধ ছিল। এখন প্রশ্ন হলো-"


সুহাস কথা শেষ করার আগেই প্রভা বলল, "বিষ্ণুপদ দাসের মৃতদেহটা খাঁচার বাইরে পড়েছিল কেন? সিংহটা যদি তাকে খাঁচার ভেতরে আক্রমণ করে থাকে তাহলে তার দেহটা বাইরে এলো কি করে? খাঁচার দরজাই বা কে বন্ধ করলো? সিংহ যদি ভদ্রলোককে খাঁচার বাইরে আক্রমণ করে থাকে তাহলেও একই প্রশ্ন থেকে যায়। সিংহটাকে আবার কে খাঁচার ভেতর নিয়ে গেল?"


"আমিও ঠিক এই কথাটাই ভাবছিলাম ।"


সুহাস এবার যেন আপনমনেই বলল, "কিন্তু যে লোক সিংহের দেখাশোনা করতো, সিংহ হঠাৎ তাকেই আক্রমন করলো কেন? অবশ্য হিংস্র প্রাণীদের সম্পর্কে আগে থেকে কিছু বোঝা যায় না.... জন্তুটা কি কোন কারণে বিরক্ত হয়েছিল? যদি তাই হয়.....দিদি,কেসটা যদি একবার পেতাম তাহলে চেষ্টা করে দেখতাম।"


প্রভা সুহাসের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো। সে জানে তার বোন সুহাস অর্থাৎ সুহাসিনীর মাথায় যখন একবার এই ঘটনার কথা ঢুকেছে তখন আর কোন ভাবেই তার মন অন্য কোন দিকে ঘোরানো যাবে না। প্রভা নিজে একটি আই .টি কোম্পানির উচ্চপদে কাজ করে। কিন্তু তার ছোট বোন সুহাস প্রাইভেট ডিটেকটিভ। তার বয়স বেশী নয়- বড়োজোর চব্বিশ-পঁচিশ। কিন্তু এর মধ্যেই দু'তিনটে কেস সল্ভ করে বেশ নাম করে ফেলেছে।


হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠলো। প্রভা ম্যাগাজিনটা একপাশে সরিয়ে রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই একজন অচেনা ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। উচ্চতায় বেশী না হলেও বেশ অভিজাত চেহারা ভদ্রলোকের। বয়স ষাটের কাছাকাছি। মাথায় ঢেউ খেলানো কাঁচা-পাকা চুল, তীক্ষ্ণ দুই চোখ আর পরিষ্কার করে কামানো মুখ। পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর কালো রঙের শাল। পায়ে নাগরাই জুতো। পাঞ্জাবির বোতাম আর হাতের রিস্টওয়াচ সোনার-আলো পড়ে চকচক করছে।

ভদ্রলোক প্রভাকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই সুহাস বলল, "আসুন মিঃ.দস্তিদার। একটু আগে আমরা আপনার ব্যাপারেই কথা বলছিলাম।"


রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার অবাক হয়ে সুহাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনিই তো মিস.সুহাসিনী সেন? আপনি আমাকে চেনেন?"


সুহাস একটু হেসে বলল, "বসুন মিঃ.দস্তিদার আপনার ছবি অনেকবার খবরের কাগজে দেখেছি। আপনার চিড়িয়াখানায় যে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, আমরা তাই নিয়েই আলোচনা করছিলাম। খুব সম্ভবত আমার সঙ্গে ওই বিষয়ে আপনি কথা বলতে এসেছেন। আপনি চা খাবেন তো?"


"নো থ্যাঙ্ক ইউ। আমি কিছু খাবো না।"


রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার সোফায় বসে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছলেন। তাকে বেশ চিন্তিত এবং ক্লান্ত লাগছিল। তিনি বললেন, "আপনি ঠিকই ধরেছেন মিস.সেন। আমি আমার চিড়িয়াখানার ব্যাপারটা নিয়েই কথা বলতে এসেছি। বিষ্ণুপদর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। পুলিশ তদন্ত করছে। কিন্তু তাও আমি চাইবো আপনি এই কেসটা আলাদা ভাবে তদন্ত করুন। আপনি চিন্তা করবেন না- এজন্য আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেবো।"


"পারিশ্রমিকের কথা পরে হবে। আমি আগে পুরো ঘটনাটা আপনার কাছ থেকে ডিটেলে জানতে চাই। আমি যেটুকু জানতে পেরেছি তা যথেষ্ট নয়।"


মিঃ.দস্তিদার এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রভার দিকে তাকালেন।


সুহাস বলল, "উনি আমার দিদি। আপনি ওনার সামনেই সব কথা বলতে পারেন।"


মি.দস্তিদার একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

"রোজ সকাল পাঁচটায় আমি ঘুম থেকে উঠে পড়ি। তারপর চা খেয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে যাই। ততক্ষণে ওখানে সমস্ত কাজ শুরু হয়ে যায়- মানে খাঁচাগুলো পরিষ্কার করা, জন্তু- 

জানোয়ারদের খাওয়ানো, স্নান করানো, এইসব। সকাল দশটায় চিড়িয়াখানা খোলা হয় আর তার পরেই লোকজন আসতে শুরু করে। আজ ভোর চারটে পনেরো নাগাদ টেলিফোনের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চিড়িয়াখানার ভেতরেই কর্মচারীদের কোয়ার্টারস্। সেখান থেকেই ফোনটা এসেছিল। ওরা আমাকে জানালো বিষ্ণুপদ নাকি মারা গেছে। কি ভাবে মারা গেছে সেটা তখনো জানায়নি কিন্তু খবরটা এতোই অপ্রত্যাশিত ছিল যে আমি তখনই চিড়িয়াখানায় চলে গিয়েছিলাম। আমার বাড়ি থেকে চিড়িয়াখানার গেট পর্যন্ত একটা সরু রাস্তা আছে। সেখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাচ্ছিলাম চিড়িয়াখানার গেটের সামনে কর্মচারীরা ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওখানে পৌঁছলে ওরা আমাকে জ্যাকের খাঁচার সামনে নিয়ে গেল। জ্যাক মানে...."


"বুঝেছি। তারপর কি হলো বলুন।"


"দেখলাম খাঁচার সামনে বিষ্ণুপদর মৃতদেহটা পরে রয়েছে। সে যে কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য তা আপনাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না মিস.সেন।মুখ, পা আর শরীরের অনেকটা অংশ ছিল না। জ্যাকের মুখেও রক্ত লেগে ছিল...."


কথাটা শেষ করতে পারলেন না রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার। মনে হলো সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের কথা মনে করে তিনি কেঁপে উঠলেন।


(ক্রমশ)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime