Purna Mallik

Crime Thriller Others

3  

Purna Mallik

Crime Thriller Others

আততায়ী কে?পর্ব-৩

আততায়ী কে?পর্ব-৩

4 mins
229


মিঃ.দস্তিদার সুহাসকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন। দামী দামী আসবাব দিয়ে সাজানো বিশাল ঘরটা। সোফায় পুলিশ ইউনিফর্ম পরা একজন বছর চল্লিশের ভদ্রলোক বসে ছিলেন । তিনিই ইন্সপেক্টর নির্মল মন্ডল। তার পাশে একজন বছর পঞ্চান্নর সুন্দরী ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। সুহাসের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। মিঃ.দস্তিদার বললেন, "আলাপ করিয়ে দিই মিস.সেন, ইনি আমার স্ত্রী নলিনী।"

হাসিমুখ নমস্কার করে মিসেস.দস্তিদার বললেন, "আপনার কথা আমি অনেক শুনেছি মিস.সেন। আমিই আমার হাজব্যাণ্ডকে আপনার নামটা বলি।"

ইন্সপেক্টর মন্ডল এতক্ষণ ভুরু কুঁচকে সুহাসের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এবার তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, "আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল মিঃ.দস্তিদার।"

"আগে আপনার সঙ্গে এনার আলাপ করিয়ে দিই। ইনি হলেন সুহাসিনী সে....."

মিঃ.দস্তিদারের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইন্সপেক্টর মন্ডল তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। বললেন, "পরিচয় দিতে হবে না। ওনার নাম আমি শুনেছি। তা, আপনি কি ওনাকে

এপয়েন্ট করেছেন?"

"হ্যাঁ, আমি চাই আপনাদের মতো উনিও এই কেসটা ইনভেস্টিগেট করুন।"

ইন্সপেক্টর মন্ডল এবার একটা বাঁকা হাসি হেসে বললেন, "কেন আপনার পুলিশের উপর বিশ্বাস নেই মিঃ.দস্তিদার?" তারপর সরাসরি সুহাসকে বললেন, "দেখুন ম্যাডাম, মিঃ.দস্তিদার যাকে খুশি এপয়েন্ট করতে পারেন। তাই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আপনার সঙ্গে আমাদের কাজের পদ্ধতি একেবারেই মিলবে না। আপনি নিজের মতো তদন্ত করতে পারেন কিন্তু আমাদের কাজে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না করলেই আমি খুশি হবো।"

মনে মনে হাসলো সুহাস। ইন্সপেক্টর মন্ডলের কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তিনি প্রাইভেট ডিটেকটিভদের পছন্দ করেন না। এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি সুহাস আগেও হয়েছে। তাই সে বলল, "আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ইন্সপেক্টর। আমার আর আপনার কাজ কোন ভাবেই ক্ল্যাশ করবে না।"

ইন্সপেক্টর মন্ডল অল্প ঘাড় নাড়লেন। তারপর মিঃ.দস্তিদারকে বললেন, "আমি সকালে জ্যাকের খাঁচার চাবিটা টেস্ট করতে পাঠিয়েছিলাম। ওই চাবির কোন ডুপ্লিকেট বানানো হয়নি।"

"সে কি? তার মানে তো....."

"হ্যাঁ, তার মানে আপনার কর্মচারী বিষ্ণুপদ দাস নিজেই ওই খাঁচা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলেন এবং পরে সিংহটা তাকে আক্রমণ করে।"

"কিন্তু কেন? জ্যাক শুধু শুধু বিষ্ণুপদকে আক্রমণ করবে কেন? আর বিষ্ণুপদর দেহটা তাহলে খাঁচার বাইরে এলো কি করে? আর খাঁচার দরজাটাই বা কে লক করলো?"

"আগে আপনি আমাকে একটা কথা বললুন তো মিঃ.দস্তিদার, বিষ্ণুপদবাবু ওতো রাত্রে সিংহের খাঁচার কাছে কি করছিলেন?"

"আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি নি ইন্সপেক্টর", একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার।

"আপনি কি দুটো চাবিই টেস্ট করতে পাঠিয়েছিলেন ইন্সপেক্টর?", সুহাস হঠাৎ প্রশ্ন করলো।

"কোন দুটো চাবি?", ইন্সপেক্টর মন্ডল ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন।

"জ্যাকের খাঁচার ডুপ্লকেট চাবি মিঃ.দস্তিদারের কাছে থাকতো। আপনি কি সেটা টেস্টের জন্য

পাঠিয়েছিলেন?"

"আপনি মনে করেন যে মিঃ.দস্তিদারের চাবিটার ডুপ্লিকেট বানানো হয়েছিল?"

"সেটাই কি স্বাভাবিক নয় ইন্সপেক্টর? বিষ্ণুপদবাবুর মৃত্যুর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত। সেই ব্যক্তি খুব ভালো ভাবেই জানতো পুলিশ বিষ্ণুপদবাবুর চাবিটা ফরেনসিকে পাঠাবে। তাই সেই চাবিটা সে ডুপ্লিকেট করেনি। কিন্তু জ্যাকের খাঁচার আরেকটা চাবি আছে মিঃ.দস্তিদারের কাছে। অবশ্য সেটা ফরেনসিকে পাঠানোর কথা কারোর মাথায় আসবে না। কাজেই বিষ্ণুপদবাবুর চাবি নয় মিঃ.দস্তিদারের চাবির ডুপ্লিকেট বানিয়েছিল আততায়ী।"

"কিন্তু আপনি এতো নিশ্চিত হয়ে বলছেন কি করে যে বিষ্ণুপদ দাসের মৃত্যুর জন্য অন্য কেউ দায়ী? সিংহ তাকে আগে কখনো আক্রমণ করেনি বলে যে কোনদিনই করবে না সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কি ভাবে? এইতো, মিঃ.দস্তিদার বলেছিলেন বিষ্ণুপদবাবু যখন ওরিয়ন সার্কাসে কাজ করতেন তখন একটা বাঘ ওনার বাঁ হাতের কিছুটা মাংস তুলে নিয়েছিল। তাহলে?"

সুহাস এবার একটু হাসলো। ইন্সপেক্টর মন্ডল গম্ভীর ভাবে বললেন, "আমি তো তেমন হাস্যকর কিছু বলিনি ম্যাডাম।"

"ইন্সপেক্টর, যদি ধরেও নিই যে বিষ্ণুপদবাবু নিজেই খাঁচা খুলে ভেতরে ঢোকার পর জ্যাক তাকে আক্রমণ করে, তাহলে তার দেহটা খাঁচার বাইরে এলো কি করে?"

"সে হয়তো উনি নিজেই কোনরকমে খাঁচার বাইরে এসে দরজায় চাবি দিয়েছিলেন আর তারপর তার মৃত্যু হয়।"

"আপনি তো ওনার ডেডবডিটা দেখেছেন ইন্সপেক্টর। আপনার কি মনে হয় না একজন মানুষকে ওরকমভাবে আক্রমণ করলে তার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হবে? আহত অবস্থায় বিষ্ণুপদবাবু খাঁচার বাইরে এসে দরজা বন্ধ করেছিলেন- এই কথাটা কি খুব বিশ্বাসযোগ্য?"

ইন্সপেক্টর মন্ডল কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে বসে রইলেন। তারপর মিঃ.দস্তিদারকে বললেন, "আপনার কাছে জ্যাকের খাঁচার যে চাবিটা আছে সেটা আমাকে দেবেন। ওটা ফরেনসিকে পাঠাবো।আর আপনার কাছে বিষ্ণুপদ দাস সম্পর্কে যা যা ডেটা আছে সব কিছু আমার চাই।"

"বেশ। আচ্ছা, পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা কবে পাওয়া যাবে?"

"আগামীকাল বিকেলে থানায় আসবেন। রিপোর্ট পেয়ে যাবেন।"

কথাটা বলে ইন্সপেক্টর মন্ডল সোফা ছেড়ে উঠে পড়লেন। বললেন, "এখন আমি আসি। দরকার পড়লে আবার আসবো।"

মিঃ.দস্তিদার তাকে বাইরে অবধি পৌঁছে দিয়ে এসে সুহাসকে বললেন, "চলুন, আপনাকে আপনার ঘরটা দেখিয়ে দিই।"

"আগে আমি একবার আপনার চিড়িয়াখানাটা দেখতে চাই মিঃ.দস্তিদার। আর বিষ্ণুপদবাবুর কোয়ার্টারটাও দেখবো।"

"বেশ। আসুন আমার সঙ্গে।"

বাড়ির বাইরে একটা সরু রাস্তা

চিড়িয়াখানার গেট পর্যন্ত চলে গেছে। এখন সেই রাস্তার দু'পাশে আলো জ্বলছে। রাস্তাটার সামনে দাঁড়ালে চিড়িয়াখানার বিশাল কালো গেটটা দেখা যায়। গেটের দু'পাশে দু'জন সিকিউরিটি গার্ড দাঁড়িয়ে ছিল। মিঃ.দস্তিদারকে দেখে তারা সরে দাঁড়ালো। মিঃ.দস্তিদার সুহাসকে গেট খুলে ভেতরে নিয়ে গেলেন এবং ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নানারকম জন্তু-জানোয়ারের ডাক শুনতে পেল সুহাস। মিঃ.দস্তিদার বললেন, "আগে আপনাকে পুরো জায়গাটা দেখাবো। সব শেষে জ্যাকের খাঁচা।"

সত্যিই, এই ক'বছরে অনেক জন্তু-জানোয়ার সংগ্রহ করেছেন ভদ্রলোক। হাতি, বাঘ, হায়না, জিরাফ, কুমির, নানারকমের পাখি- কোন কিছুই বাদ নেই।

মিঃ.দস্তিদার এবার সুহাসকে জ্যাকের খাঁচার সামনে নিয়ে গেলেন। খাঁচার সামনে কিছুটা অংশ পুলিশ ব্যারিকেড করে দিয়েছে। সেই দিকে নির্দেশ করে মিঃ.দস্তিদার বললেন, "ওখানে পড়ে ছিল বিষ্ণুপদর ডেডবডিটা। আমি কিছুদিন আগেই ভাবছিলাম জ্যাকের জন্য এবার একটা পার্টনার নিয়ে আসবো, কিন্তু মাঝখান থেকে যে কি হয়ে গেল.....", ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রুদ্রনারায়ণ দস্তিদার।

খাঁচার ভেতর থেকে একটা চাপা গর্জন শোনা গেল এবং খাঁচার দরজার দিকে কিছুটা এগিয়ে এলো জ্যাক। এই বিশাল চেহারার সিংহটিকে যেই দেখবে, সেই ভয় পাওয়ার সঙ্গে মুগ্ধও হবে।

সুহাস বলল, "এবার বিষ্ণুপদবাবুর কোয়ার্টারটা দেখবো।"

"কর্মচারীদের কোয়ার্টারস সোজা গিয়ে বাঁদিকে। আসুন আমার সঙ্গে।"

(ক্রমশ)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime