আত্মমর্যাদা
আত্মমর্যাদা
ভোগাল পাম্প এণ্ড ভালভ লিমিটেড -এর অন্তর্গত 'ভোগাল ভালভ' - এর ডিরেক্টর পদ- এ অভিষিক্ত হলেন কোপানির মেন ডিরেক্টর ব্রজেশ আগরওয়ালের পুত্র ঋতেশ আগরওয়াল। ঋতেশ- কে তিলক পরিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে দিলেন ব্রজেশ আগরওয়াল । হাতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল হলঘর। চা আর স্ন্যাকস পরিবেশনের মাধ্যমে অনুঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হল।
পরদিন চেয়ারে বসেইঋতেশ ডেকে পাঠালেন টেনো কাম টাইপিস্ট ঋতা সান্যালকে। ঋতা মধ্যবয়সী হলেও সুঠাম সুন্দরী, কথাবার্তায় স্মার্ট -- ইংরাজী উচ্চারণ স্পষ্ট , লেখেনও খুব সুন্দর। ঋতেশ তাই ঋতা-কে ভালভ কোপানিতেই রাখতে চাইলেন। ব্রজেশেরও কোনো আপতি ছিল না অবশ্য।
প্রথম দিনই কিতু অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হলেন ঋতা। স্যুইং ডোর ঠেলে কামরায় প্রবেশ করামাত্র ঋতেশ বলে উঠল, " হ্যালো রিটা, লাঞ্চের পর আসবে, একটা বড়িয়া অর্ডার এসেছে - লেটার ভি বানাতে হোবে।"
ঋতা সান্যাল এই কোম্পানিতে রয়েছেন পনেরো বছর। পঁচিশ বছরের সেই তরতাজা সুন্দরী স্টেনোগ্রাফার এখন পা রেখেছেন চল্লিশে। ক্লাস ফোর- এ পড়া এই ঋতেশ তখন তাঁকে বলত - 'রিটা আটি'। সেই ঋতেশ ডিরেক্টরের পোস্ট- এ বসতে না বসতেই তাঁকে দিব্যি 'রিটা' আর 'তুমি' বলে সবোধন শুরুকরে দিল। এদিকে বিনা প্রয়োজনে তার চেম্বারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঋতেশ বিরতি প্রকাশ করে বলে ফেলল, " ওকে রিটা, ইউ মে গো নাউ।"
ঋতা নিজের চেয়ারে বসে বেশ কয়েক মিনিট ধরে মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলেন তাঁর কী করা উচিত ! তারপর টেবিলে কম্পিউটার অন করে টাইপ করে ফেললেন একটি চিঠি। তার প্রিণ্ট বের করে খামে মুড়ে রাখলেন। লাঞ্চের ঘণ্টা পড়ল। নিজের ব্যাগ থেকে খাবার বের করে লাঞ্চ সারলেন তিনি , তারপর খামে ভরা চিঠিটা নিয়ে হাজির হলেন বড়সাহেব ব্রজেশ আগরওয়ালের চেম্বারে।
ব্রজেশ তাঁকে দেখে কিঞ্চিৎ বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, " আরে রিটা ! তুমি এখানে ! ঋতেশ তো তোমাকেই চেয়ে নিয়েছিল।"
- স্যার , সেই ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছি।
বলো কি বলবে ?
- স্যার, ছোটোবেলা থেকে ঋতেশ আমায় 'রিটা আণ্টি' বলে এসেছে। এই ক'দিন আগে পর্যন্তও সেটিই বজায় রেখেছিল আর আজ আপনারই মতো আমায় ' রিটা - তুমি' সম্বোধন করছে।এটা আমি মানতে পারছি না স্যার
!
- তা বললে তো হবে না।সে এখন তোমার মালিক ! যতদিন কোম্পানিতে দেখাশোনা করতো ততদিন অন্যরকম ব্যাপার ছিল !
- ঠিক আছে স্যার। আমিও সিধান্ত নিয়েছি আর এখানে থাকবো না।আমার রেজিগনেশন লেটারটা আপনাকে দিতে এলাম স্যার। আত্মমর্যাদা আমি বিলিয়ে দিতে পারবো না স্যার!
