Bhattacharya Tuli Indrani

Inspirational

3  

Bhattacharya Tuli Indrani

Inspirational

আন্দোলন, ছদ্মবেশী

আন্দোলন, ছদ্মবেশী

3 mins
569


আজ আমরা একটা ভিডিও দেখব, গুড টাচ আর ব্যাড টাচ... মণিকা ম্যামের কথা শেষ হতেই আনন্দে চিৎকার করে উঠল ক্লাস টু এর ছেলেমেয়ে গুলো।

কী বুঝলে? মা ছাড়া আর কাউকে তোমাদের প্রাইভেট পার্ট এ হাত দিতে দেবে না...'     

ছোট্ট ক্লারার ঠোঁটদুটো কেঁপে ওঠে, ম্যামকে কিছু বলার জন্যে... ক্লাস শেষের ঘন্টা বেজে যায়। 


'এই মেয়েটা দিন দিন এরকম রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে কেন? খাবার ফেলে উঠে যায় রোজ, বলে পেটে ব্যথা, হিসু করতে কষ্ট হয়।' 

মারিয়াকে চিন্তিত দেখায়, মা-হারা ছোট নাতনিটার রুগ্নতায়। 

'রোজ রাতে রাক্ষস আসে আমার কাছে, ঠামা।' ফিস ফিস করে বলে ক্লারা, 'কাউকে বোল না... রাক্ষস রেগে গেলে তোমাদের খেয়ে ফেলবে...'


ঠামা আর বাবাকে খুব ভালবাসে ক্লারা। বাবা তাকে চান করিয়ে, রাজা আর রাক্ষসের গল্প বলে খাওয়ায়। রাতে ঘুম পাড়িয়ে দেয় তার পরীকে, আদর করে। কিন্তু দাদুকে খুব ভয় পায় ক্লারা… দাদুর চোখগুলো কেমন লাল লাল, রাক্ষসের মতো।

'ডেভিড, ওকে ওই গল্পগুলো আর বলবি না তো। সারাক্ষণ সেগুলো মাথায় ঘুরছে আর ভয়ে শুকিয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।

মা'র কথা হেসেই উড়িয়ে দেন ক্লারার বাবা।


'ক্লারা, বেবী... উঠে পড়। একি! এর তো গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। বিছানায়, প্যান্টিতে রক্তের দাগ... সারা শরীরে আঁচড়ানো- কামড়ানোর চিহ্ন... কী হয়েছে? আবার রাস্তার কুকুর গুলোর সঙ্গে খেলছিলি? কতবার বারণ করেছি না তোকে... '

কে নিয়ে যাবে এখন ক্লারাকে, ডাক্তারের কাছে ? ডেভিড তো বাইরে গেছে অফিসের কাজে।


'বাবাকে ডাক ঠামা, বাবা তো রাজা... রাক্ষসটার প্রাণভোমরাটাকে মেরে দেবে।' জ্বরের ঘোরে ভুল বকে ক্লারা।

'কী অবস্থা হয়েছে মেয়েটার... আপনারা কী কিছুই খেয়াল রাখেন না? এই শিশু তো যৌন- অত্যাচারের শিকার, ওর যোনী ছিন্ন ভিন্ন... ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা। কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে খেয়াল রাখেন না?'

ডাক্তারবাবুকে খুব চিন্তিত দেখে মারিয়া আর জন মুখ চাওয়া চাওয়ি করেন...

'ও তো কোথাও যায় না ডাক্তারবাবু, শুধু স্কুলে। আমরাই দিয়ে, নিয়ে আসি।


ডেভিডের বাবা- মা মুখ খোলেন কোর্টে। তাঁদের কাছে আজ পরিষ্কার সবকিছু, তাঁদের প্রিয় সন্তান ডেভিডই দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে তার আত্মজার... রাক্ষসের ছদ্মবেশে।   

পুত্রকে ধরিয়ে দিতে একটুও দ্বিধা করেন না তার বাবা- মা... শাস্তি ওকে পেতেই হবে। 


'আর ভয় নেই ক্লারা রাজকুমারী, আর আসবে না রাক্ষস… মারা পড়েছে সে।'  


শুরু হোক ঘরে ঘরে আন্দোলন… বন্ধ হোক ভ্রূণ হত্যা, শিশু কন্যার প্রতি অবহেলা- অবিচার। মা- বাবারাই পারেন তাঁদের পুত্র সন্তানদের যথাযোগ্য ভাবে শিক্ষিত করে তুলতে। মা যদি তাঁর মেয়েকে তার বয়ঃসন্ধির মাসিক ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছেলেটিকেও শিক্ষিত করে তুলতে পারেন, তাহলে হয়তো সামাজিক সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। বেশিরভাগ সমস্যারই জন্ম হয় অজ্ঞানতা থেকে… অহেতুক কৌতুহলে, লব্ধ ভ্রান্ত- জ্ঞানের জন্যেই।

অনেকদিন থেকেই আমরা আমাদের মেয়েদের বড় করে তুলতে চেষ্টা করছি, ছেলেদের মতো করে… সবরকম স্বাধীনতা দিয়ে… সময় এসেছে, আমাদের ছেলেদের এবারে আমাদের মেয়েদের মতো করে বড় করে তোলার… সবরকমের কাজ শিখিয়ে, সংসারে মানিয়ে চলার শিক্ষা দিয়ে… সমানতার কথা, মহিলাদের প্রাপ্য সম্মান তাদের দিতে।


আসুন সবাই, হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাই এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে… যেখানে আমরা গর্ববোধ করতে পারব আমাদের সন্তানদের নিয়ে...


মহিলাদেরই বদলাতে হবে বেশী... কারণ, এখনও আমাদের এই পোড়া দেশে পিতৃ তন্ত্রের ধারক ও বাহক কিন্তু মা, দিদি, বোন, ঠাকুমা, মাসীমারাই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational