শ্রীরামপুর
শ্রীরামপুর
সন্ধ্যে নামে নিশান ঘাটে,
দিনেমার জাহাজের নোঙর পড়ল বলে,
আলো আর সার্চ লাইটে ঘাটে ব্যস্ত বটের ঝুরি।
অলাভ সাহেব এলো বুঝি, সাজ সাজ রব চারপাশে;
সোজা রাস্তা ধরে কাছারি অফিস, আর
পার সাহেবের ড্যানিস ট্যাভারন ঠিক তারই পাশে।
নদী উত্তাল, ঝড়ের পূর্বাভাস ও খবরে-
গাছেদের অনেক কথা, চাপা গুঞ্জন।
শুনতে পেলাম কেরি সাহেবও এলেন
সাথে এলেন মার্স ম্যান আর ওয়ার্ড মিশনারি,
এক যুগের শুরু, বলল মাহেশের ঈশ্বর-
অন্ধ মনে অমৃত জ্যোতি জ্বালাবার।
ফ্রেড্রিকনগরে সাজল শ্রীপুর,
কাপড়ের কল একের পর এক-
নতুন আঙ্গিক, বানিজ্যের আরেক অধ্যায়।
কষ্টিপাথরে রাধাবল্লভ, অপরূপ তার বাঁশি;
ইউরোপ এসে পথে ঘাটে জীবনে যেন মেশে;
হান্না বাড়িতে মেয়েদের স্কুল, পঞ্চানন মনোহরের দিকজোড়া নাম প্রেসে,
কলেজের বহু পুরনো গাছ আজও সব গল্পের কিছুটা যেন বলে সে।
সম্বিৎ ফিরে আমি দেখি দাঁড়িয়ে,
এক বিশাল বাড়ির সামনে, পাশে মাঠের
হৈ হৈ খেলার আনন্দ। গাছের শিকড় আঁকড়ে
ধরেছে যাকে প্রানপনে সে গোস্বামী রাজবাড়ি।
সারি সারি পিলারে পুজোর দালান, পায়ের
শব্দে দেখলাম একঝাক পাখি উড়ে গেল,
ওরাই বলে ‘ভুতের ভবিষ্যতে’র কথা।
ভারী ট্রেনের শব্দে দেখি বইমেলার চত্বর-
বইয়ের গন্ধে তখন পুরনো নতুন একেবারে মিলেমিশে।
ফিরলাম গঙ্গার ঘাটে, ওপারে তাকালাম,
ব্যারাকপুরের সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম আগুন
আর নিবিড় ধ্যানে মহাত্মার শান্তির উপাসনা।
আমি হেটেছি নদী ধরে, শুনেছি গল্পের ঝুরি নিয়ে গাছেদের,
চৈতন্য দেবের পায়ে হাটা পথ, রাজা রাম মোহনের স্মৃতি,
ভয়ঙ্কর আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রেস, তবু উঠে দাঁড়াবার শক্তি।
মাহেশের রথে জগন্নাথ দেবের গুন্ডিচা বাড়ির পুন্য যাত্রা,
স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউয়ের জরুরী সাক্ষী থাকার কথা।
আবার ডানিস চার্চে বিরাট ঘড়িটা মনে করালো, ইতিহাস বেঁচে আছে;
রাম সীতার মন্দির থেকে ‘শ্রীরামপুর’ অবিকল ঠিক তেমনি আছে।