মামাভারত
মামাভারত
বড়মামু আর ছোটমামু আছে আমাদের পুপুনের,
অনেক মজার স্মৃতিতে জড়ানো আদর দুজনের।
কিছু কিছু ঘটা বিদঘুটে মজা এখনো মনের কোণের
আবেগ সুতোয় সুড়সুড়ি দেয়, আহ্লাদ গহীনের।
বড়মামু যেন মাসির সমান, রাত জেগে সামলাত,
সারাদিনভর কোলেকোলে ঘোরা, "তকবত" কথা কত,
মামুর যেমন চাচাছোলা ভাষা, মেজাজও তীব্র তত!
এনে এনে দিত মজার মজার খেলনাপাতি যত।
ছোটমামু খুব গল্প বলতো, উড়োজাহাজের ওড়া,
বাংলা পেরিয়ে নানা জায়গায় ছিল যে তার ঘোরা,
ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তুলে ছোটবেলাটা ধরা,
নিতবর হওয়া বিয়ের সময় মামা-ভাগ্নের ধারা।
পুপুনের আজও মনে আছে সেই ভাইফোঁটা হলো যখন,
দুই মামা এসে খুব হৈচৈ, সুস্বাদু ভক্ষণ,
যাবার দিনটা এগিয়ে আসে, পুপুন আকুল এখন,
ফন্দি করে আটকাতে হবে মামাদের ফেরা তখন!
বনু'কে নিয়ে বন্দুক দিয়ে সদর দরজা ঘিরে,
ছোটমামুকে ভয় দেখাতেই মায়ের গলা চড়ে,
মামুর পায়ে ঝুলতে ঝুলতে পুপুনও শাসায় জোরে,
সুটকেস ধরে পথের মাঝে খুব টানাটানি করে।
রিক্সা চেপে ছোটমামু ঐ চলে গেল রে হায়!
পুপুনসোনার রেগে ওঠা মুখ টকটকে লাল প্রায়।
এমন সময় কলিং বেলটা বাজলো খানিক দ্বিধায়,
"ট্রেন ফেল হলো", ছোটমামু ফিরে এসেছিল ঘামা গায়ে!
হাততালি দিয়ে পুপুন লাফায়, প্ল্যান করেছে কাজ!
পরের দিনই বড়মামু যাবে, সংগ্রামী মেজাজ!
সদর দরজা ঘিরে রেখে তবে লাভ হলোনা আজ,
ব্যালকনি একলাফে টপকিয়ে বড়মামু জাহাঁবাজ!
বনুর সাথে বসে বসে সে তো রাগে ফেটে দশখানা!
পুপুনসোনা কাঁদে চিৎকারে, আটকাতে পারলোনা!
কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ ছিল শুধু, মোটা সুটকেস না,
তাইতো মামু লাফিয়ে পালালো, কিছু করা গেলোনা!
পঁচিশ বছর পেরিয়ে গেছে, পাপাইসোনা এলো
বনুর কোল'টা আলো করে, পুপুন মামা হলো!
পাপাই এসে ডাকবে "মামু", দৌড়াবে টলোমলো,
দুজনে মিলে খেলা-গল্প করবে কলকল!
বনু বলেছে পাপাইসোনার মেজাজ আছে চরম!
চিৎকারেতে একা একশো, পুপুনও ছিল ওরম।
হাত পা ছোঁড়ায় খুব ওস্তাদ, মামার স্বভাব যেরম।
কোলে'তে পুপুন খুব চটকাবে, টিপবে দু'গাল নরম।
এসব তবে দিবাস্বপ্ন, অতিমারী দিলো হানা,
পুপুন যে আজ কোভিড যুদ্ধে সামনে দাঁড়ানো সেনা,
রোজ রোজ কত পাপাইয়ের মতো ছোট ছোট আধখানা
মানুষ শ্বাসের বিকলে নীল হয়ে আর বাঁচেনা।
বাড়ি যাওয়া তার বন্ধ এখন, পাপাই অনেক দূরে,
জন্মের পর মুখ দেখেনি, ভীষণ ইচ্ছে করে।
মাঝে মাঝে বনু ফোনে ফোনে শুধু কথাবার্তা সারে,
পুপুনসোনার ঘুম পাওয়া চোখ আবেগের জলে ভরে।
হাসপাতালের পাপাইগুলোর কেউ কেউ বাড়ি ফেরে,
আবার অনেকে চলে যায় এই বিষদুনিয়া ছেড়ে।
ক্লান্ত পুপুন ফিরলো টানা দু'দিন ডিউটি সেরে,
আজ পাপাইয়ের মামাভাত ছিল, পুপুন বহুদূরে।।