কালোও ভালো
কালোও ভালো
বখ্তিয়ারপুর স্টেশনে, কি কারণে কি জানি,
একবার কাটাতে হয়েছিলো সময় অনেকখানি।
অবশেষে একটাসময় এলো ট্রেন এক এক্সপ্রেস,
ভেতরটা একদম বাসের মতোই, চড়ে বসি শেষমেশ।
পাশের সিটে ছিলো বসে অল্প টাক ওয়ালা ভদ্রলোক,
লোকটা দারুণ আলাপী, করছিলো শুধু বকবক।
বিহারের হাথীদা নামে এক জায়গায় ওনার বাড়ি,
আছে বাবা,মা,বৌ আর দুই ছেলে, রীতিমত সংসারী।
ওখানকার জমির মাটির রঙ দেখতে বেশ কালো,
তাই সব জমিতে ফলে ধান, চাষবাস চলে খুব ভালো।
কি যে ছিলো নাম শ্যামল বরণ, সুমন সেই লোকটার,
জিজ্ঞেস করিনি, কথার ফাঁকে সময় হয়নি বলার !
আমি একটু চুপচাপ, একটা গান শোনাতে ছাড়েননি,
গানটায় ছিলো মাটির গন্ধ, মানে যদিও বেশী বুঝিনি, মন ছুঁতে পেরেছিল সুরটা, তাই এখনও তা ভুলিনি।
জানিনা কেন যে বহুদিন পরে খুউব মনে পড়েছিলো, ফনীশ্বর রেনুর কথা, যেন গানটায় ফুঁটেছিলো ব্যাথা।
কানে বাজছিলো "জি হুজৌর" বলে ওঠা সেই কথা।
দেখতে দেখতেই এসেছিলো সেদিন ঘনিয়ে সন্ধ্যা,
খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়েছিলো সেই জংশন হাথীদা।
মনে মনে দুজনেই বলেছিলাম " বিদায় বন্ধু বিদায় ",
এইটুকু পরিচয়ে কি ফোন নম্বর দেয়া নেয়া যায়!
জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি স্টেশনে যথেষ্ট ভিড়,
কিছুতেই পাইনা খুঁজে, সেই লোকটার উন্নত শির।
কে জানে কোন রাস্তায় সে তখন গৃহমুখে হেঁটে যায়,
জানি, এমন মানুষ কি আর কখনও পেছনে তাকায়!
বুরজুয়া, লিডর্, মেরীগন্জ এর নানা টুকরো ছবি,
ভাবতে ভাবতেই পেরোলাম গঙ্গা মাইয়া, প্রণাম কবি।
পাথরে বসা কালো তেন্ডুয়া সত্যিই প্রাণ ফিরে পায়, প্রকৃতি তো দিনরাতে জেগে থাকে, ঠিক রঙ বদলায়!
