এক অসহায় মায়ের চিঠি
এক অসহায় মায়ের চিঠি
বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় কাঁদছে অসহায় মা বসে,
মনকষ্টে লিখলো চিঠি একমাত্র ছেলেকে৷
খোকা আমার কেমন আছিস ?
আমি ভালোই আছি বেশ৷
বছর দুয়েকের পরিচিত সঙ্গী-সাথীদের সাথে,
দিব্যি খুঁজে নিয়েছি নিজের বাঁচার পথটাকে৷
আমার মতই কত অভাগা,সব জুটেছে আদর্শ ছেলের মা৷
ভর্তি আজকে নিঃশ্বাস চেপে,বৃদ্ধাশ্রমকে করে নিজেদের ঠিকানা৷
মনে আছে পুরোনো কথা?
চড়ক পূজোয় মিঠুকে কেনা?
দিতিস ছোলা,লঙ্কা,পেয়ারা খেতে ছোট্ট নিজের দুটি হাতে৷
যেদিন মিঠু চলে গেল মায়া কাটিয়ে,
কেঁদেছিলি সারারাত এই মাকে জড়িয়ে....
আমি মরলেও কাঁদবি তুই জানতে ইচ্ছে করে৷
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে,যদি খুঁজে না পেতিস মাকে,
কান্না-কাটি দিতিস জুড়ে,তুই মা-মা ডাকে৷
পেছন থেকে বলতাম খোকা যেদিন থাকব না আমি,
কী করবি পাগল খোকা সেটাই ভেবে মরি৷
কুঁড়ে ঘরটায় কষ্ট করে মানুষ যখন হতিস,
বলতিস মা বড় হয়ে পাঁচতলা বাড়ি নেব ঠিক৷
থাকবে সেথা অনেক-অনেক ঘর,কষ্ট যাবে ঘুঁচে,
মা তোমাকে রাখব সুখে ঝি-চাকরে ভরে৷
ছেঁড়া চাদর দিতাম গায়ে, শীতের সময় এলে,
বলতিস মা বড় হলে অনেক দেব চাদর কিনে৷
এই বাড়িটাও মস্ত বড়, অনেকগুলো ঘর,
এবার শীতে দিল চাদর নীলুদি আমার পাশেই ঘর,
ওর ছেলেও মস্ত মানুষ বিদেশে করে বাস,
ওর কাছেও মা মানেই শুধুই ছাই-পাঁশ৷
সবাই
বলে দু-বছরেই গেল তোমার খোকা ভুলে?
আমি বলি মস্ত মানুষ নামকরা ইঞ্জিনিয়ার যে,
কাজের ফাঁকে সময় কোথায় রাখবে মনে মা-কে৷
প্রথম ঘড়ি দিয়েছিলাম লক্ষ্মীর ঘট ভেঙে,
মাধ্যমিকের ঠিক টেস্ট পরীক্ষার আগে৷
বলেছিলাম খোকা সময় ধরে চলবি,
তবেই তুই জীবনের পথে প্রতিষ্ঠিত হবি৷
সত্যি আজ সময় দেখ বড় স্বার্থপর,
তালমিলিয়ে তুইও করলি হিসেব মত ছল৷
পুরোনো দিন পুরোনো মা-কে সব গেলি ভুলে,
শাশুড়ি মা-কে আপন করলি বউকে কাছে পেয়ে৷
শুনলাম নাকি আমার ঘরটা আজ ওদের দখলদারিতে,
গুছিয়ে সংসার পেতেছিস নতুন মা-বাবা কে নিয়ে৷
জন্মদিনের পায়েসটা আজও আমি রাঁধি,
কেক কেটেই পালন করিস জানি শুভ জন্মদিন৷
পারলে একবার খেয়ে যাস তোর প্রিয় নলেন গুড়ের পায়েস,
ফোন শুধুই ব্যস্ত বলে তাই চিঠি লিখলাম অবশেষ।
ঠিকানা খানা তোরই দেওয়া,বৃদ্ধাশ্রম যার নাম,
নির্ঘাত এটাও গেছিস ভুলে তাই চিঠির সাথে দিলাম,
৫/A নিরুবালা লেন,তোর অফিসের ঠিক পাশের গলি।
সর্বশেষে কুশল কামনায় এই আশাটি রাখি,
কন্যার পিতা তুই যেন হোস বউমা হলে গর্ভবতী৷
তুই যে আমার পরম আদরের নাড়ী ছেঁড়া ধন,
এমন জীবন অসহ্যনীয় তুই কি মানতে পারবি বল?
পুত্র হলে তোদের কপালেও বৃদ্ধাশ্রম না জোটে!
নাতনী আসুক তোদের ঘরটি আলো করে,
প্রাণ ভরে আশীর্বাদ রইল তোদের দুটির জন্যে৷৷