আমি মেয়ে
আমি মেয়ে
যার জন্মের আগে সবাই ভেবে থাকে
ফুট ফুটে এক চাঁদের মতো পুত্র আসবে ঘরে।
প্রসবের আগে তার নামও রাখা হয়,
রাজা কিংবা হীরা অথবা বাবু সোনা বলে।
কিন্তু এ ধরিত্রীর বুকে মাতৃ গর্ভ হতে
ভগবান আমায় পাঠায় বার বার ভুল করে।
আমাকে প্রথম যিনি দেখেন, তিনিও মেয়ে
কিন্তু তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে।
তা দেখে সবাই বুঝতে পারে
কুলক্ষন নিয়ে, অলক্ষী এলো ঘরে ।
সেই তখন থেকেই সবাই চিন্তায় পড়ে
লেখা পড়া করে মানুষ নয়, আমার বিয়ের তরে।
গ্রহ নক্ষত্র দেখে কুষ্ঠি বিচার করে
আমার নয়, বাড়ির মঙ্গল অমঙ্গলের হিসেব কষে ।
অবহেলাতে ঠুকরে ঠুকরে বড়ো হতে হতে
কত যাতনা সহিতে হয়,
কেবল মেয়ে হইবার তরে।
কত শাসন অনুশাসনের বেড়া জালে
দিন গুলো কাটাতে হয়, কেবল মেয়ে বলে।
আমি মেয়ে....
আমাকে জোরে কথা বলতে বারন।
মন খুলে আওয়াজ করে হাসতে বারন।
ছেলেদের আগে পেট পুরে খেতে বারন।
আমি মেয়ে.....
আমি যদি কাঁদি, বলা হয় ছিঁচকাদুনি।
আমি যদি হাসি, বলা হয় বেহায়া।
আমি যদি ভুল করি, বলা হয় লক্ষীছাড়ি ।
আমি মেয়ে...
আমায় পড়তে মানা
ছেলেদের সাথে খেলতে মানা
মোড়ের মাথায় রকে বসতে মানা
আমি মেয়ে.....
আমার জন্য আলাদা পোষাক।
শোবার জন্য আলাদা ঘর।
আলাদাভাবে বেঁচে থাকার
এ এক দুর্গম পথ।
আমি মেয়ে....
আমি নাকি কেবল পুরুষের ভোগ্যবস্তু
আমার স্বামী মারা গেলে আমিই হই বিধবা
কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয় না।
আমি মেয়ে.....
আমাকে নিয়ে লেখা হয়,
ভাষণ কবিতায় ছড়ায় গানে
বিখ্যাত সব বইয়ের স্বর্ণালী পাতায় পাতায়।
আমি মেয়ে....
আমাকে লক্ষী বলে ধনদৌলতের পূজা করো
সরস্বতীর কাছে বিদ্যালাভের আরাধনা করো
দেবী দূর্গা বলে অশুভ শক্তির বিনাশ চাহ।
আমি মেয়ে.....
তবুও আমাকে লড়াই করতে হয়
এ সমাজের বুকে পদে পদে টিকে থাকতে,
ব্যাভিচারী রক্তপিপাসুদের হতে রক্ষা পেতে।
আমি মেয়ে....
আমার জন্ম আমি দেই,
এই মহত্বের দম্ভ দেখাইয়া
আমার ধংস আমি করি।
মেয়ে থেকে মা, মা থেকে শাশুড়ি হই.!
আর এক মেয়ের জন্ম দেখিয়া,
অলক্ষী বলে চোখ বাঁকাই.!
আসলে যুগ যুগ ধরে,
আমিই নিজেকেই বোকা বানাই।
আমিই মেয়ে...
ছোট থেকেই বড় ঘন কালো চুলের স্বপ্ন দেখি।
রং মেখে সং করে সাজতে ভালোবাসি।
স্বাধীন ভাবে দুহাত মিলে, নতুন আশার জালবুনি।
টকটকে লাল বেনারসীতে শীবের মতো বর খুঁজি।
ছেলে হোক বা মেয়ে, কেবল সন্তানের আশায় ছুটি
তার পর.! কি যে হয়ে যায়, আমি মেয়ে হয়েও.!
মমকে খুন করি।
আইয়ুব খাঁন
