আগাছা
আগাছা
যখন আমি চলতে শিখেছি, মুখে ফুটেছে কথা;
তখন থেকেই বুঝেছি মা গো তোমার জীবনে ব্যথা।
তোমার কাছে শিখেছি মা গো, জল পড়ে পাতা নড়ে;
বড় হতেই জানতে পারি তোমার দুচোখে শুধু অশ্রু ঝরে।
আমায় তুমি আড়াল করেছো, বুঝিনি তোমার ব্যথা;
যত্নে তুমি লালন করেছো, শোনাওনি কটু কথা।
ভেবেছিলাম জন্ম নিয়েছি কোনো ভদ্র ঘরে,
বুঝেছি আমায় মানুষ করেছো কত কষ্ট করে।
দেখতাম তুমি সারাদিন ধরে শুধু রান্না ঘরে,
যাবতীয় কাজ করতে তুমি আপনার মনে করে।
তবুও চলতো বাক্যবানে বিদ্ধ করার পালা,
কটু কথা বলে বাবায় মেটাতো মনের জ্বালা।
ভেবেছিলাম শিক্ষিত বাপে কদর করে কাজের,
হতাশ হয়েছি যখন দেখেছি মান হারিয়েছে নিজের।
প্রতিদিনই দিনের শেষে মাতাল হয়ে এসে,
অসম্মানে বিঁধতো তোমায় মন্দ কথার বিষে।
গুরুজনে দুষতো তোমায়, তোমার জন্য নাকি,
বাবা আমার বিপথে গেছে, মারতে রেখেছে বাকি।
আমি ভাবতাম, কেন মা গো, এমন দুষ্ট লোকের সাথে;
থাকছো তুমি, পালিয়ে যাবার চিন্তা আসে না মাথে।
তোমার অশ্রু শুস্ক হবার সময় পেতো না যে,
কাঁদতে তুমি জড়িয়ে ধরে আমায় বুকের মাঝে।
আমার জন্য তোমার লড়াই লড়ে গেছো মুখ বুজে,
কবেই আমি বড় হবো, শান্তি পাবে মা যে।
শুনতে পেতাম, বলতো সবাই, তুমি অন্য গাছের ছাল;
মানিয়ে নেওয়া ধাতে নেই বলে মেটাতো মনের ঝাল।
আমার চিন্তা, তুমি আর বাবা, যদি অন্য গাছের হও;
আমি তবে কোন গাছটির, সত্য জানিয়ে দাও।
