Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Dhoopchhaya Majumder

Drama

2  

Dhoopchhaya Majumder

Drama

আলোর গল্প

আলোর গল্প

5 mins
2K


সে আছে একরকমের সোনা ঝরা আলো, জানলে? অবিশ্যি কেবল সোনাঝরা আলোই বা বলি কেন? কুসমিরাঙা মোলায়েম আলো, আলোর নদীর জলে খেলা করা সাতরঙা আলো, আঁধারের পাড় দিয়ে ঘেরা গোধূলির মায়াবী আলো, আলোর যে কত রকমফের, শুধু কথায় বলে বোঝানো মুশকিল। যদি ছবি আঁকতে পারতাম, তবে কিছুটা চেষ্টা করা যেতো। বলে না, 'একটা ছবি হাজার শব্দের সমান'! কিন্তু তাও বোধহয় সবকটা রং ধরা যেতো না ছবিতে। ধরো, তুমি সূর্য আঁকছো। কী রং দেবে সূর্যের? কমলা? বেশ, তাই দিলে না হয়। কিন্তু কমলা সূর্যটা ঠিক যে মুহূর্তে রং বদলে আস্তে আস্তে দুধে-আলতা রঙের হচ্ছে, সেই মুহূর্তের কোনও রং কি পাবে ছবিতে ধরার মতো? পাবে না। 


আমাদের গল্পের পিনাকী, ধরে নাও সে-ই নায়ক এই গল্পের। এত ছোট গল্পের তো আলাদা করে নায়ক হয় না, সেই পিনাকীও চেষ্টা করছিল আলোর রংকে ছবিতে ধরার। পিনাকী ছিল শিল্পী, সোনাঝরা আলোর সেই দেশে তার ছিল অবাধ বিচরণ। ভাতের চিন্তা সেভাবে ছিল না, তাই আলোর চিন্তাতেই দিনরাত সব পেরোতো ওর। যে আলোর যা রং, ঠিক সেইগুলোকেই ছবিতে ধরার নেশা ক্রমশ পেয়ে বসছিল পিনাকীকে। কিন্তু চোখের তৃপ্তি আর মনের তৃপ্তিকে মেশাতে পারছিল না কিছুতেই। যে আলোকে চোখের সামনে দেখে চর্মচক্ষে, তাকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে ছবিতে। স্থানকাল ভুলে মাঝদরিয়াতেই বলো, কিংবা রাজবাড়ির গাড়ি-বারান্দায়, ছবি ধরার কল মেলে বসে পড়ে পিনাকী। কিন্তু ছবি যখন তৈরি হয়, দেখা যায় রং মেলেনি। ছটফট করে ওঠে পিনাকীর অন্তরাত্মা। নিজের অধ্যবসায় আর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার প্রতি জাগে প্রশ্ন, সত্যিই কি সে শিল্পী? সে যদি শিল্পী হতো, তবে কি সে পারতো না যে রং দেখছে তাকেই নিঁখুতভাবে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে? এই অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত ছারখার করে চলে পিনাকীর শিল্পীসত্তাকে, গড়ে ওঠা ছবিগুলোকে ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলতে ইচ্ছে করে। একরকমের হতাশাবোধ থেকে কোনও কোনও দুর্যোগের রাতে মনের মধ্যে জন্ম নেয় তীব্র হননেচ্ছা, ছবিগুলোর প্রাণ নেওয়ার পর সেই ইচ্ছে হাত বাড়ায় পিনাকীর নিজের প্রাণের দিকেও। এমনই একেকটা নাটকীয় মুহূর্তে পিনাকীর ঘরের জানলার ভারী পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে আসে সূর্যের প্রথম আলো, কিংবা ঝিলপাড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছটা থেকে ভেসে আসে পাখিদের ব্যস্ততার আওয়াজ। প্রাণ নিতে চাওয়া সেই ইচ্ছেটা রং পাল্টে হাতে তুলে নেয় ছবি তৈরির সরঞ্জাম, পিনাকীর ফাঁড়া কেটে যায় আরও একবার। 


এভাবেই চলছিল ততদিন, যতদিন না পিনাকীর জীবনে এল প্রভা। প্রভা নামটা যে খুব আধুনিক নয়, সেটা মানতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রভা নামটার সঙ্গে প্রভার জীবনের গল্পের কোনো মিল নেই। আদ্যোপান্ত অন্ধকারে মোড়া জীবন তার। আর, সে পিনাকীর 'জীবনে এল' মানে যে জীবনসঙ্গিনী হয়ে এল, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ, পিনাকী কোনওদিনই কোনও মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। আর প্রভা? সে ছোটবেলা থেকে চারপাশে এত প্রেমের মৃত্যু আর বিয়ের মৃত্যু দেখেছে যে প্রেম বিয়ে সংসারধর্ম এই শব্দগুলোর ওপর থেকে তার আস্থা চলে গেছে। তার বিদ্যা নেই, রূপ নেই, অর্থবল নেই, কিন্তু তার কাঁধে দায়িত্ব আছে পর্বতপ্রমাণ। শয্যাশায়ী মা, আর দুই দিদির তিন মেয়ে, এদের দায়িত্ব তার কাঁধে তুলে দিয়ে একে একে সরে পড়েছে সবাই। প্রভার রূপ নেই, কিন্তু বিধাতা বোধহয় তার শরীরখানা গড়ার সময় নিজের যাবতীয় মনোযোগ এক জায়গায় করে তাকে গড়েছিলেন। এমন নিঁখুত গড়নের শরীর সচরাচর চোখে পড়ে না। কাঁধে দায়িত্বের পাহাড় এবং রোজগার পুরোপুরি শূন্য হলেও প্রভার নীতিবোধ ছিল প্রবল। সেই নীতিবোধ থেকেই শরীরের গড়নকে পুঁজি করে রোজগারের পথে যেতে সে রাজি হয়নি, যদিও প্রলোভন ছিল অঢেল। বিধাতার ইচ্ছেতেই হয়তো, শেষ পর্যন্ত এমন একটা রাস্তা পাওয়া গেল, যাতে শরীরের গড়নকে ভাঙিয়েই সে মা আর বোনঝিদের ভাতের জোগাড় করবে, অথচ তার নীতিবোধে আঘাত লাগবে না, তার চরিত্রে দাগ লাগবে না। সেই পেশার সূত্রেই প্রভার সঙ্গে পিনাকীর আলাপ।


পিনাকী তখন তার আলোর খোঁজের গল্পের জন্য আলো আর শরীরের নানা বিভঙ্গের সম্পর্ক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে। তার পরীক্ষার মেইন অ্যাপারেটাস হিসেবে যোগ দিল প্রভা। সোনাঝরা আলোর সেই দেশের নানা ক্ষণের নানা রঙের আলো শরীরের কোন রেখাকে স্পষ্ট করে, কোন রেখাকে ঝাপসা, সেসব রেখারা আলোর গল্প লেখে, নাকি আঁধারের, এসবই ছিল পিনাকীর এক্সপেরিমেণ্টের অঙ্গ। পিনাকীর অর্থের অভাব যেহেতু ছিল না, তাই প্রভার আয়ের পথও প্রশস্ত হলো বেশ। এই কাজটার ওপর ভরসা করে প্রভা বেশ কয়েকটা ডিসিশন নিয়ে ফেললো। মায়ের জন্য আয়া, বড় বোনঝির অঙ্কের টিউশন, ছোট বোনঝির স্কুলে ভর্তি, এসব হতে লাগলো আস্তে আস্তে। 


পিনাকীর অবস্থার অবশ্য বিশেষ হেরফের হয়নি। সেই একইরকম হতাশার আসা আর যাওয়া, এর মাঝেই দিন চলছিলো। এরকমই কোনও এক হতাশার রাতে পিনাকী বুঝতে পারলো ও যা চেয়েছে, তার কিচ্ছু পায়নি। কোনও রং, আলো, রেখা, গল্প কিচ্ছু ধরা পড়েনি ওর কোনও ছবিতে। প্রভার শরীরটা কেবল শরীর হয়েই রয়ে গিয়েছে প্রতিটি ছবিতে, আলোয় ছোঁয়া রেখা হয়ে বাঙ্ময় হয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিবার যা হয়, এবারও তাই হওয়া শুরু হলো। একটার পর একটা ছবি টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো সারা ঘরে।। তাণ্ডব শেষ হওয়ার পর পিনাকীর চোখ পড়ল নিজের দুটো হাতের দিকে। কী লাভ এদুটোর বেঁচে থেকে? যে রং প্রকৃতিতে আছে, যে আলো ছড়িয়ে আছে হাতের নাগালেই, তাকে যদি ছবিতে চিরস্থায়ী করেই না রাখা গেল, তবে শিল্পী হাতের কী প্রয়োজন? ধ্বংস করো এই হাত, এক্ষুনি।


হাতের ওপর আঘাত হানতে গিয়েও থমকালো পিনাকী। প্রভা, প্রভারই বা বেঁচে থেকে কী লাভ? কী হবে ওই নিঁখুত রেখা দিয়ে গড়া শরীর রেখে, যদি আলোর ছোঁয়ায় তা ভাষাই না পেলো! ভেবে নিলো পিনাকী, আগে প্রভার শরীরটাকে শেষ করতে হবে, তারপরেই শেষ করবে এই হাতদুটোকে। 


ভোর হয়েছে, কৃষ্ণচূড়ার ব্যস্ততার আওয়াজ কানে আসছে, সূর্য উঁকি মারছে পিনাকীর স্টুডিও অ্যাপার্টমেণ্টে, কলিংবেল বাজলো। প্রভা এসেছে। দরজাটা খুলতেই একগাল হেসে ঘরে ঢুকলো প্রভা, হাতে মিষ্টির বাক্স। স্বভাববিরুদ্ধভাবে কলকল করে হেসে সে জানালো তার বড় বোনঝি ভালোভাবে মাধ্যমিক পাশ করেছে, অঙ্কে আর ইংরিজিতে লেটার আছে। এই কাজটা না থাকলে এসব কিচ্ছু হতো না, বারবার বলছিল প্রভা।


পিনাকীর কানে অত কথা ঢুকছিল না কিচ্ছু। ওর চোখ তখন প্রভার চোখে। সে চোখে রেখা আঁকছে আলো, রং আঁকছে সূর্য। মানুষের চোখে এত আলো থাকে? এত সহজে আলোর রং ধরা পড়ে? এই সত্যিটুকু পিনাকীর এতদিন জানা হয়নি, ও তবে কীসের সন্ধান করেছে এতদিনের এক্সপেরিমেণ্টে?

"এক মিনিট। ম্যাডাম, আপনি যেভাবে তাকিয়ে আছেন, থাকুন। ওই হাসিটা ধরে রাখুন চোখে, আসছি আমি।"


দৌড়ে চলে যায় পিনাকী ছবির সরঞ্জাম আনতে, স্থির হয়ে খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে প্রভা, প্রাণপণে চোখের মধ্যে ধরে রাখতে চায় একটু আগের খুশির রংটা। কে জানে, এই রংটা ঠিকঠাক ধরা গেলে হয়তো মেজ বোনঝিটাও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারবে!


ঠিক সেই মুহূর্তে ঘর ভেসে যায় সোনাঝরা সেই আলোটায়, মনে হয় ঘরখানা সাজানো রয়েছে একরাশ ছোট্ট ছোট্ট হিরের কুচি দিয়ে।

(সমাপ্ত) 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama