কৃষ্ণদাসী [পর্ব ১]
কৃষ্ণদাসী [পর্ব ১]
- "হ্যাঁ রে এত সকালে কিশোরী কোথায় গেল? আশ্রমের কোনো ঘরেই তো নেই । এ লক্ষী , ও কি স্নানঘরে ?"
- " না গো ঊষা দি । আমি তো স্নানঘর থেকেই এলাম । ও নেই ।"
- " আরে একেতে মন্দিরের চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। বামুন মা এমনিতেই চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে ।তার ওপর এই মেয়েটাও কোথায় গেছে কে জানে?দেখিস ঠাকুর বাবার কানে যেন এসব কথা না যায় ।আমি দেখি গিয়ে বামুন মা পেলো কিনা চাবি টা।"
ঊষা চলে যাবার পর লক্ষী ও চলে গেল কিশোরী কে খুঁজতে ।বাকিরা স্নানঘরে ,শুধু ঘরে রয়েছে দেবিকা , আজ সে বাবার কাছে এই কিশোরী কে ছোট করার সুযোগ পেয়েছে । ঠাকুর বাবা আর বামুন মায়ের মেয়ে হয়েও ওর কোন আলাদা সম্মান নেই কারও কাছে । সবার এমনকি ওর মা বাবার ও দরদ ঐ কিশোরীর প্রতি । আজ এই রাস পূর্ণিমায় ঐ কিশোরীকে মন্দিরের মূল পূজারিণী করা হবে , ওকে নয়। দেবিকা বুঝতেই তো চায় না যে বংশের বিচারে নয় , মানুষ তার আচরণের বিচারে যোগ্যতা অর্জন করে ।তা না হলে কি কিশোরী, লক্ষী, সুতপা , ঊষা র মত সাধারণ অনাথ তথা পালিত সন্তান দের মধ্যে থেকে কি বেছে নিতেন ঠাকুর বাবা , কিশোরীকে ভবিষ্যতের মূল পূজারিণী হিসেবে । ৩ মাসের বাচ্চা হিসেবে বামুন মা কুড়িয়ে পেয়েছিল কিশোরীকে ।তবে থেকেই ওর ঠাঁই হয় তুলসিপুরের এই রাইমুরারীর মন্দিরে - ওর পরিচয় হয় ও এক কৃষ্ণদাসী।
ঠাকুর বাবা জপ সেরে ই পুজোয় বসবে। অথচ ভাবি মুখ্য পূজারিণী নিখোঁজ । এই কথাটা বাবার কানে তুললেই দেবিকার কাজ হয়ে যাবে।বাবা যতই কিশোরী কে ভালোবাসুক , কোনো অনিয়ম বাবা সহ্য করে না। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করল দেবিকা ।
- " আজ মন্দিরেই আমি কিশোরীর শাস্তির বিধান দেব। ওর মত মেয়ে এমন অনিয়ম করলে বাকি রা আরো কি কি করবে ?" বেশ রেগেই কথা গুলো বলেছিলেন ঠাকুরবাবা ।
ওদিকে লক্ষী কিশোরী কে খুঁজতে খুঁজতে মন্দিরে গিয়ে খুঁজে পেল ওকে।কিশোরী পুজো র সব জোগাড় সেরে প্রদীপ সাজাচ্ছে।
- " কি মেয়ে রে তুই ? কাউকে বলে আসতে পারিস নি?সেই কোন ভোর থেকে সবাই তোকে আর চাবি কে খুঁজছে।"
- " ভুল হয়ে গেছে রে লক্ষী । তোরা তো সবাই ঘুমাচ্ছিলি, আর তখন তো ভোর ৩ টে। তাই আর ডাকিনি।"
- " তুই ৩ টেয় উঠে কি করছিলি ? "
- " আরে আমি সবাই কে চমক দিতে চেয়েছিলাম। সবার ভাগের কাজ টা আমি করে দিয়েছি।"
- " অন্যের জন্য এত ভাবতে শুধু তুই ই পারিস । আচ্ছা, আমি সবাই কে ডেকে আনি ।সবাই খুব চিন্তায় আছে। "
- " হুম।"
লক্ষী চলে যেতেই কিশোরী বিগ্রহের সামনে কান ধরে বলল, " মাফ করো রাই দিদি , মাফ করো শ্রীকৃষ্ণ ।আমি সত্যি টা বললাম না লক্ষী কে।কী বলতাম? বলতাম যে দেবী রাধা আর শ্রীকৃষ্ণ র সাথে রোজ ভোরে কথা বলে দিন শুরু করি আমি ।আজ সবাই ভোরে উঠবে বলে আমি মাঝরাতে চলে এসেছি ।কেউ বিশ্বাস করবে না দিদি।"
- "থাক আর অজুহাত দিতে হবে না ।যে মিথ্যা তে কারও ক্ষতি হয় না সে মিথ্যে দু একটা বললে ক্ষতি নেই। কিন্ত হ্যাঁ, তোর জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় আসতে চলেছে ।এই সময় টার জন্য প্রস্তুত হ।" - পুষ্প মাল্যে শোভিত শ্রীরাধা প্রকট হলেন।
-" রাই দিদি তুমি তো বলছোই না যে কী হবে,আমি তো তোমার সব কথা শুনি বলো? তোমরা বলেছ যে আমার দিনে ৪ বার বাকসিদ্ধ হবার যে শক্তি সেটাকে যেন ১ বার ই ব্যবহার করতে ।আমি তাই করছি..."
- " তোর ভালোর জন্যই বলেছি। বড় হয়েছিস তো বল। তোকে তো বুঝতে হবে তুই সাধারণ নস।তোর বাকি ৩ বারের শক্তি জমে তোকে অনেক শক্তিশালী করবে।তোর ভবিষ্যতে কাজে লাগবে ।"
উত্তরে কিশোরী কিছু বলতে যেত তার আগেই, বামুন মা পিছন থেকে বলে উঠলেন ,"তূই যা কান্ড করিস না সত্যি বাপু ।তোকে নিয়ে আর পারিনা... ।"
এদিকে শ্রীরাধা অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।কিশোরীর আজ আর ওর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হলনা ।
.(........... ক্রমশ চলবে)
❣❣❣❣❣❣❣
এটা একটা ধারাবাহিক গল্প ,
এর বিষয়বস্তু :
মন্দিরে পালিত কিশোরী বড় হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেছে তার ঐশ্বরিক সংযোগ ।ভাগ্য ওকে মন্দিরের আঙিনা থেকে নিয়ে এল জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে।কিন্ত হঠাৎ ই ঘটল ওর অকালমৃত্যু।কে ছিল এই খুনের পিছনে?এই শত্রুরা লৌকিক জগতের না অলৌকিক জগতের?কে নেবে এই মৃত্যুর প্রতিশোধ?সব উত্তর পেতে পড়ুন ভালোবাসা , রহস্য আর অলৌকিকতায় ভরা এই ধারাবাহিক গল্প "কৃষ্ণদাসী"।