কৃষ্ণদাসী ( পর্ব -৩ )
কৃষ্ণদাসী ( পর্ব -৩ )
মন্দির থেকে ফেরার পর এক সপ্তাহ খুব বিজি ছিল শোভন । নিউইয়র্কের ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশনস্টাডিজে এম. এস.সি করার পরেও বিদেশের নামি কোম্পানির প্রোপোজাল রিফিউজ করে বাবার কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে জয়েন করেছে ও , শুধু মাত্র ফ্যামিলির পাশে থাকবে বলে । তবে এই বিজি ওয়ার্ক ডে গুলোতে শোভন এক বারের জন্যও কিশোরী কে ভুলতে পারেনি । তাই সোমবার ফ্রি হতেই রেডি হয়ে বেরোচ্ছিল কিশোরীর সাথে দেখা করতে ।
রুহানা সেই দিন সিংহরায় হাউসেই ছিল।শোভন কে বেরোতে দেখে ও বেশ অনুসন্ধিত্সু হয়ে ই বলল, " শোভন , তুমি কোথাও যাচ্ছো ? আসলে তোমার আজ অফিস নেই বলে আমি প্ল্যান করেছিলাম তুমি আর আমি একটু লংড্রাইভে বেরোব ।"
শোভন : It's not possible Ruhana. It's true that I have not office work today but I have some personal work .Bye...
শোভন আর এক মিনিট ও ওয়েস্ট না করে মায়ের (কিশোরীর বড়মা র)ঘরে চলে গেল ....... সবসময়ই ও কোথাও বেরোনোর আগে মার সাথে দেখা করে বেরোয়।
আর রুহানা ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল শোভনের পিসিমনির রুমে । পিসিমনিকে গিয়ে সব কথা বলল।
পিসিমনি ( বেশ কনফিডেন্ট হয়ে) : " কিছু চিন্তা করো না। আমি আর বড়দা তোমায় পছন্দ করে আনছি তো ....... then don't worry. বাইরে ব্যবসা র সব কিছু বড়দা র কন্ট্রোলে। তেমনি এই বাড়ির অন্দরমহলের সব কিছু আমার কন্ট্রোলে। আমি দাদার সাথে কথা বলছি । তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে শোভনের গাড়ি কে ফলো করো দেখো ও কোথায় যাচ্ছে । "
রুহানা : ওকে ।
এদিকে শোভন মন্দিরের ভিতর চত্বরে ঢুকে বেশ খোঁজাখুঁজি করে ও কিশোরী কে দেখতে পেল না । তারপর বাধ্য হয়ে দেবঘরের সামনে গিয়ে দেখে কিশোরী আর আরেক টা মেয়ে (লক্ষী ) বসে আছে ।
শোভন কে দেখে কিশোরী এগিয়ে এল।
কিশোরী : আসুন ছোট সাহেব ।
লক্ষী ( ফিসফিস করে) : আচ্ছা, এই জন্য ই এ ক'দিন তুই গাড়ির আওয়াজ শুনে ই বড় দরজার দিকে ছুটতিস।"
বলেই লক্ষী চলে গেল ।
কিশোরী : ধুরর। (প্রসাদের থালা নিয়ে শোভনের দিকে এগিয়ে ) এই নিন প্রসাদ ।
শোভন : Please don't mind .....আমি না প্রসাদ খাই না.......
কিশোরী : আপনি ও কি রুহানা ম্যাডাম এর মতোই । একটু খেলে......
শোভন : Please ভুল বুঝোনা .......actually I am not usual to these.....
কিশোরী (একটু আপসেট হয়ে ) : ঠিকাছে . .......আমি রেখে আসছি।
শোভন কিশোরী র এক্সপ্রেশনেই বুঝল ও আপসেট হয়েছে । কিশোরীর মনে আঘাত দিয়ে নিজের ইগো কে স্যাটিসফাই করতে চাইল না শোভন ।
শোভন : কিশোরী, আসার সময় অল্প একটু প্রসাদ নিয়ে এসো।
শোভনের এই আচরণ টা কিশোরীর মনে ওর প্রতি সম্মান টা আরো অনেক টা বাড়িয়ে দিল।
প্রসাদ খেয়ে ওরা নদীর ধারে গেল ।
শোভন : কিশোরী , কখনও ভবিষ্যত নিয়ে বা ভবিষ্যত্ জীবনসঙ্গী নিয়ে কিছু ভাবোনি ?
কিশোরী : ছোট সাহেব, আমরা তো কৃষ্ণদাসী । আমরা বিয়ে করলে কোন কৃষ্ণদাস কেই বিয়ে করি আর না করলে সারা জীবন ব্রহ্মচর্য। এটাই আমাদের নিয়তি । (দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোরী ।)
শোভন : কোনো কৃষ্ণদাস কে তোমার ভালো লাগে?
কিশোরী : না ।
শোভন : এমনি কাউকে ভালো লাগে নি কখনো ?
কিশোরী : ছোট সাহেব , আমি তো অনেক ক্ষণ এখানে , সবাই হয় তো আমায় খোঁজাখুঁজি করবে । আমি না আশ্রমে যাচ্ছি। আবার আসবেন হ্যাঁ ।
সেদিন কিশোরী সত্যি কথাটা স্বীকার করতে পারে নি যে ওর মনেও শোভনের জন্য একটা সফ্ট কর্নার তৈরী হয়েছে ।
তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শোভন কিশোরী র সাথে এসে দেখা করত ঠিকই কিন্তু ভালোলাগা বা ভালোবাসা নিয়ে কোন প্রশ্ন করত না । দুজনেই যেন পরস্পরের প্রতি তাদের অনুচ্চারিত ভালোবাসার কথা জেনে ও মেনে নিয়েছিল ।
তাদের এই ভালোবাসার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল আশ্রমেও । ওদিকে রুহানার মাধ্যমে সিংহরায় হাউসে ও ছড়িয়ে পড়ে ছিল এই কথা গুলো ।
এদিকে শোভন ফাইনালি ডিসাইড করেই ফেলল , যে আগামী কালই কিশোরীর ফেভারিট রং লালের কোনো ড্রেস পড়ে ওকে প্রোপোজ করবে। ও জানত না যে ওর বাবা আশ্রমে ফোন করে কিশোরী র বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নেবার আর্জি জানিয়েছে ।
কিশোরী ও তৈরি ছিল শাস্তি র জন্য । ও ভেবেছিল যদি ওর রাই দিদি শ্রীকৃষ্ণ কে ছেড়ে সব দুঃখ সয়ে জীবনে কাউকে না পেয়ে ও যে ভালোবাসা যায়- তা প্রমাণ করতে পারে তাহলে ও পারবে। কিন্তু সকালে শ্রীকৃষ্ণ যখন ওকে বলল যে ওর নিয়তি বিরহ নয় বরং ভালোবাসার জন্য লড়াই ....তখন থেকেই ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েছে যে যেভাবেই হোক ওকে এই শাস্তি টাকে সুযোগ এ রূপান্তরিত করতে হবে ।
ও বুঝতে পেরেছিল এই কৃষ্ণদাসী আর নাস্তিকের ভালোবাসা টা অন্যায় নয়। শোভনের সঙ্গে কাটানো প্রতি টা মুহূর্তের স্মৃতি ওকে সাহস জোগাচ্ছিল।
পরের দিন যখন ওর ঠাকুর বাবা যখন ওর শাস্তির বিধান দিচ্ছিল, ওর তখন বারবার মনে হচ্ছিল
যে এ যেন ওর চেনা , নিয়মের পূজারী ঠাকুর বাবা নয় , এ যেন অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত হওয়া নিয়মের এক অন্ধ অনুকরণকারী। আর এই প্ররোচনায় বড়বাবু, পিসিমনি , রুহানা ,দেবিকা সবাই সামিল ছিল- তা জানতে বাকি ছিল না কিশোরীর।
এক কৃষ্ণদাসী র এক গৃহস্থ মানুষ কে ভালোবাসার অপরাধে শাস্তি হিসেবে ঠিক হল যে কিশোরী কে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ফুল কদম জোগাড় করে তাকে অর্পণ করতে হবে ।
এই শাস্তির আসল উদ্দেশ্য যে আজ শোভন-কিশোরীর দেখা করা বন্ধ করা - সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিল কিশোরী । কারণ কদম ফুল বর্ষার ফুল । এই শীতে শুধু মাত্র শ্যামাচলে ই কদম ফুল ফোটে। আর এই শ্যামাচল মন্দির থেকে পূর্বে আর সিংহরায় হাউসে যাওয়ার রাস্তা পশ্চিমে। তাছাড়াও কিশোরী যে ফিরে দেখা করবে , তার ও উপায় নেই কারণ শ্যামাচলে হেঁটে যেতে আসতে সময় লাগে প্রায় পনেরো ঘন্টা ।
তবে যদি ওরা কিশোরীর বাকসিদ্ধ হবার শক্তির কথা জানত , মনে হয় না এত টা বোকামি করত।
কিশোরী মন্দিরের থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকেই ( সিংহরায় হাউসে যাওয়ার রাস্তা) গেল। কিছুটা গিয়ে রাধাকৃষ্ণ কে স্মরণ করে কিশোরী উচ্চারণ করল :" রাধাকৃষ্ণ মহানাম মহিমা অপার, অকাল ঋতু তে হোক কদম্ব বাহার ।" অমনি অসংখ্য কদম ফুলের বৃষ্টি হল।
কিছু কদম ফুল কুড়িয়ে নিয়ে কিশোরী শোভনের জন্য ওয়েট করতে থাকল। শোভনও কার থেকে কিশোরী কে দেখতে পেয়ে খুশি আর অবাক দুটো ই হল।
শোভন (গাড়ি থেকে নেমে ) : What a pleasant surprise??!!!!
কিশোরী শোভনকে সবটা বলল। শুধু এই কদম ফুল পেয়ে যাওয়ার অলৌকিক বিষয়টাকে কাকতালীয় বলে চালিয়ে দিল। কারণ ও জানত যে শোভনের মত নাস্তিক এই অলৌকিক বিষয়টাকে মানবে না ।
শোভন (এক্সাইটেড হয়ে) : Wow . তুমি আমার জন্য এত রিস্ক নিয়েছ ? আচ্ছা একটা কথা বলবো ?
কিশোরী : বলো।
শোভন ( আর একটু কাছে এসে ) : তোমায় যেদিন প্রথমবার দেখেছিলাম , সেদিন থেকেই আমার স্বপ্নের রাজকন্যা হিসেবে ভেবেছি । Will you be that in reality???......Will you marry me ?
কিশোরী : I will.
Background Music:
Sun meri shehzaadi
Main hoon tera shehzada
Baahon mein leke tujhe
Main karta hoon vaada
Aye jan-e-tamanna meri
Main khake kasam teri
Yeh karta hoon ikaraar
Marr bhi gaya toh main tujhe
Karta rahunga pyar
শোভন কিশোরী কে সঙ্গে নিয়ে আসা ডায়মন্ড রিং টা পড়িয়ে দিল। এরপর সিনেমাহল , রেস্টুরেন্টে গিয়ে একসাথে ভেরি হ্যাপি টাইম স্পেনড করে কিশোরী মন্দিরে ফিরে এল।
আর এদিকে পিসিমনি , বড়বাবু, রুহানা ও খুব আনন্দ পাচ্ছিল কিশোরী কে শোভনের থেকে দূরে রাখতে পারছে ভেবে ।
রুহানা : Uncle , thank you so much. I am very happy today. বাট আজকের দিনটা তো আটকানো গেল কিন্তু কাল ?? পড়শু ?? Permanent কিছু একটা করতে হবে.....
বড়ো বাবু (হেসে ) : Don't worry my girl . I am Adinath Sinha Roy . ঐ মন্দিরের ঠাকুর বাবা সদানন্দ গাঙ্গুলী র সাথে কথা হয়ে গেছে । কালই উনি ওনার ভাইপোর সাথে ঐ কিশোরীর বিয়ে দিয়ে দেবে।আর আমি কাল একটা ফল্স মিটিং অ্যানাউন্স করে শোভনকে দিল্লি পাঠিয়ে দেব ।
( .............ক্রমশ )
এটা একটা ধারাবাহিক গল্প,এর বিষয়বস্তু :
মন্দিরে পালিত কিশোরী বড় হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেছে তার ঐশ্বরিক সংযোগ ।ভাগ্য ওকে মন্দিরের আঙিনা থেকে নিয়ে এল জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে।কিন্ত হঠাৎ ই ঘটল ওর অকালমৃত্যু।কে ছিল এই খুনের পিছনে?এই শত্রুরা লৌকিক জগতের না অলৌকিক জগতের?কে নেবে এই মৃত্যুর প্রতিশোধ?সব উত্তর পেতে পড়ুন ভালোবাসা , রহস্য আর অলৌকিকতায় ভরা এই ধারাবাহিক গল্প "কৃষ্ণদাসী"।