STORYMIRROR

Pranab Rudra

Tragedy Classics Inspirational

4  

Pranab Rudra

Tragedy Classics Inspirational

যায়দিন

যায়দিন

4 mins
247

নার্সারি স্কুলে কাজের সূত্রে বেশ আমুদে ও মিশুকে ছেলে। কাজ বলতে পড়ানো। শিক্ষকতা। তবে কেউ কি করে জানতে চাইলে বলে -" এক বেসরকারি নার্সারি স্কুলে পড়াই।" সেই কাজের সূত্রে আজ সকাল সকাল স্নান সেরে পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে এলো। আজ পঁচিশে বৈশাখ। রবি ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী পালন হবে। গেটে ঢুকতেই গেটমাসি হেসে বললো-"স্যর,বেশ জামমাই জামমাই লাগগছে!" শুনে কোন কথা না বলে প্রত্যুত্তরে শুধু মুচকি হেসে মাথা নীচু করে চলে আসে সাইকেল রাখার স্ট্যান্ডে - বছর তিরিশের অবিবাহিত যুবক আরুশ গুপ্ত।

            নীলাদি সিনিয়র শিক্ষিকা মাইকে ঘোষণা করছেন -"প্রিয় ছাত্রছাত্রী সবাই চুপ করে নিজের নিজের আসনে ব'সে পড়ো। আর একটু পরেই আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রথমেই আমরা পরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে সমবেত সঙ্গীতের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবো। তারপর অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি এগিয়ে চলবে।" সকল শিক্ষক শিক্ষিকার মিলিত চেষ্টায় অনুষ্ঠান ভালোভাবেই চলতে লাগলো। বাংলার পন্ডিত স্যর এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা রাখলেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ গান, কেউ নাচ, আবৃত্তি করলো। বাকী স্যর ম্যামরা শিশু শিক্ষার্থীদের উপর তাদেরকে শান্ত রাখার নানা রকম কলা কৌশল প্রয়োগ করে সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠান সম্পাদনে সহযোগিতা করে গেলেন। প্রাণবন্ত আরুশও সবার সাথে মিলে সেই সব কাজেই হাত লাগালো। সাড়ে দশটার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হলো। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান শেষ হবার পর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মী এবং বাহনচালকগণ সবাই দু'টো ক'রে বিস্কুট খেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে বাড়ীর পথ ধরলো।

            স্কুলগেট পার করে সাইকেলে উঠতে যাবে এমন সময় ফোনটা এলো আরুশের তাই ফোন ধরে কথা বলতে বলতে হেঁটেই থানামোড়ের দিকে চলতে থাকলো। থানামোড় থেকে ডানদিক ঘুরে বিদ্রোহী মোড়ের দিকে আসতেই তার চোখ পড়লো একজন বৃদ্ধ রাস্তার অপরদিক দিয়ে যাচ্ছেন। অশোকদার চায়ের দোকানটা পার করেই বৃদ্ধ মানুষটি রাস্তার বামদিকে দাঁড়ানো লরির পেছনে মাথাটা ঠুকে দেন। আর ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে পড়েই যান। আরুশ তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে রাস্তা পার হয়ে এসে হাত ধরে টেনে তুলতে তুলতে বৃদ্ধ মানুষটিকে রাগত স্বরে বলে উঠে- "কাকু একটু দেখে চলতে পারেন না! এখনই তো মাথাটা ফাটিয়ে ফেলেছিলেন? চলুন ঐ দোকানটায়। লাগা জায়গায় একটু ঠান্ডা জল দেবেন, চলুন। এরই মধ্যে কেমন ফুলে গ্যাছে! " বৃদ্ধটি হেসে বলেন-" আমি অন্ধ বাবা।" বলেই হাসতে থাকেন। "এ আমার রোজদিনের ঘটনা। প্রায়ই এমন হয়।" 

        আরুশ-" আমি দুঃখিত কাকু। আসলে বুঝতে পারিনি।"বৃদ্ধ-"ঠিক আছে বাবা। আমি আসি। তাড়াতাড়ি আমাকে কদুবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে হবে।"     আরুশ-"কাকু কিছু যদি মনে না করেন। এই দশটা টাকা রাখুন। একটা টোটো ধরে চলে যান। তাড়াতাড়ি হবে।"

বৃদ্ধ_" না বাবা, আমি ভিখারি নই। তোমার টাকা আমি নিতে পারবো না।"   আরুশ-"না না কাকু। আমি এমনটা মোটেও ভাবিনি। আমার বাবাও শেষ বয়সে চোখে দেখতে পেতেন না। আজ উনি বেঁচে থাকলে তাকেও আমি এভাবেই টোটো করে নিয়ে যেতাম। এ যৎ সামান্য,ছেলে হিসাবে বাবার প্রতি কর্তব্য। কতটুকু আর করতে পারি! সারা মাস কাজ করে পাই তো মাত্র কটা টাকা। বর্তমানে চালু হওয়া সবচেয়ে বড়ো নোট, ঐ যে গোলাপি রংয়ের, তার থেকেও কম।"     


বৃদ্ধ-"তবুও তোমায় আর্শীবাদ করি বাবা। টাকাই সব না।মানসিকতা আর মানবিকতাও দরকার হয়। যদিও এখন বাঁচতে গেলে টাকাটাই মানদন্ড। আমারও তো দুই ছেলে। তবে বিয়ের পর থেকে আলাদা। আমি আর বুড়ি একসাথে থাকি। ও দুচার বাড়ি কাজ,যা পারে করে আর আমি এই যে দেখছ থলে এতে ধুপ আছে,বিক্রি করি। যে যেটা নেবে সেটাই দশ টাকা করে।"

   আরুশ-"বাহ্, আপনি তো ভালোই কথা বলেন কাকু।"বৃদ্ধ- "আমি তো প্রথম থেকেই অন্ধ না বাবা। পড়াশোনা করেছি। ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক পাস। তারপর নানা কারণ, সংসারের ওঠা পড়া, আমার দুর্ঘটনা.. যাক্ সে সব কথা। তোমার দেরি হচ্ছে, আমারও। তুমি বরং একটা দুপকাঠি রাখ। এটা আমার পক্ষ থেকে আমার অচেনা অজানা বেটাকে উপহার।"    আরুশ- " নেব। দুটো নেব। তবে কুড়ি টাকা দিয়ে। কোন শুনবো না।"বৃদ্ধটি হেসে কোন কথা না বলে থলেটি এগিয়ে দেয় ওর দিকে বলে-"তোমার যে গন্ধটা খুশি নাও।"    আরুশ- " সবাইকেই কি আপনি এমন করে নিতে বলেন? কেউ যদি বেশি নেয় তো?"বৃদ্ধ- " নেয়। অনেকেই নেয়। এ অন্ধ গরীবকেও কি আর এ সমাজ ছেড়ে কথা বললে? তবে দু'একজন তোমার মতো থাকে।,যারা টাকা দিয়ে নেয় না। শুধু থলে দেখে নিলাম বলে আবার রেখে দেয়। আমার প্রতি সহানুভূতিবশত এমনটা করে।"      


আরুশ- লজ্জা পেয়ে যায় বলে- " না না কাকু। আসলে... ঠিক আছে ;আপনি আপনার ইচ্ছেমতো দু'টো দিন।"বৃদ্ধ ধূপেরগন্ধ শুঁকে শুঁকে ভালো দু'টো বের করে দিলেন। তারপর বললেন-" অনেক কথা হলো বাবা। তোমাকে দেরি করিয়ে দিলাম। আমার কি দিন আর কি রাত! যাও তুমি। আমি চলে যাবো।"    আরুশ-" ঠিক আছে কাকু, আমি আসছি।" বলে সাইকেলে চড়তে চড়তে বলে-" আপনার নামটাই জানা হলো না! বাড়ি কোথায়?" বৃদ্ধ- " বাড়ি আলাল। নাম রবি। রবীন্দ্রনাথ।"


   আরুশ ততক্ষণে সাইকেলে প্যান্ডেল শুরু করেছে। নামটি শুনে ভাবছে। ওনার পদবীটা শোনা হলো না। কি হবে? ঠাকুর! মনে মনে নিজেই হেসে উঠে সে। এক রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ঘটা করে পালন করা হচ্ছে। মনে তো হয় তা শুধু ওই পালনেই সীমাবদ্ধ। কত কিছু তিনি সৃষ্টি করলেন। গল্প কবিতা গানে কত কিছু কত রকমভাবে বললেন, দেখালেন। আজ তিনি কোথায়! আর এক রবীন্দ্রনাথ বর্তমানে পথ চলতে প্রতারিত হন। মুখ থুবড় পড়েন!          হায়! রবীন্দ্রনাথ!


Rate this content
Log in

More bengali story from Pranab Rudra

Similar bengali story from Tragedy