উত্থান পতন
উত্থান পতন
রবীনের কানটা ভোঁ ভোঁ করছে, কানে গমগম করে বাজছে রোশনী ম্যাডামের শ্লেষ মেশানো উক্তিটা -" সাহা ম্যাডামের কথায় এই ইডিয়েটটাকে ক্লিনারের কাজে রাখাটাই ভুল হয়েছে একদম গবেট আর কামচোর। হে লিসন ইফ ইউ ডোন্ট ডু ইউর জব সিন্সিয়ারলি আই উইল কিক ইউ আউট ফ্রম মাই শপ".
আর হবে না ম্যাম এবারের মোতো মাফ করে দিন।
ওর দোষ বলতে একটি অত্যন্ত ন্যাকা মেয়ে একটা নেক্লেস দেখতে গিয়ে কোথায় একটু নোংরা দেখে টেবিলে, তার জন্য কি প্রচন্ড সিনক্রিয়েট করলো, ও মাই গড সাচ আ বিগ শপ ডাসন্ট হ্যাভ বেসিক হাইজিন সেন্স, রবীন হতভম্ব হয়ে গিয়ে যেই লাল কাপড়টা নিয়ে পুঁছতে গেছে, মেয়েটি চুড়ান্ত অপমান করে বললো ও মা গো কি নোংরা কাপড়, ইউ আর দা ক্লিনার? ডার্লিং লেটস গো। দিস ইস ডিসগাস্টিং, বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।
মেয়েটি যখন দোকানে ঢোকে রবীন কাঁচ দিয়ে দেখেছিল মেয়েটি কিছু খাচ্ছিল, হয়তো নিজেই ফেলেছে।
রোশনী ম্যাডামকে কিছু বলা মানে কাকস্য পরিবেদনা।
রবীন ইংরেজি বোঝে এবং ভালোই বলতে পারে, কমার্সের গ্রাজুয়েট। বৃদ্ধ বাবা মা কে ছেরে যাবেনা তাই কলকাতার বাইরে চাকরি পেয়েও নেয়নি।
দুমাস ধরে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে সব শেষে রবীন এই ডায়মন্ড জুয়েলারির দোকানটায় আকস্মিক ভাবেই কাজ পেয়ে যায়। দুমাস আগে ওই দোকানটার সামনে ফুটপাতের বেঞ্চে বসে ও একটু জিরচ্ছিল, হটাৎ দেখে একজন মহিলা দোকানটায় ঢুকতে গিয়ে সিঁড়ির স্টেপ টা না দেখতে পেয়ে মুখ থুবড়ে পরে গেলো, ও উঠে গিয়ে মহিলাকে ধরে তুলে, জিনিসপত্র গোছগাছ করে দোকানের সিকিউরিটির আনা জল খাইয়ে দেয়, মানুষের বিপদে ও সর্বদাই পাসে দাঁড়ায় এটা ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
মহিলা দোকানে ঢুকে যাবার পরে, রবীন আবার ওই বেঞ্চিটায় গিয়ে বসে। কিছু বাদে দেখে ওই মহিলা ওকে ডাকছে, ও কাছে যেতে উনি বললেন তোমার নাম কি?
আঙ্গে রবীন,
বাড়ি কোথায়?
মধ্যমগ্রাম
তুমি কি পড়ুয়া না কোথাও কাজ করো?
না মাসীমা আমি কমার্সে গ্রাজুয়েশন করে এখন চাকরি খুঁজছি।
পেয়েছো চাকরি?
না
ওহ্। বলে মহিলা ভেতরে ঢুকে গেলেন, কিছু বাদে ওকে দোকানের ভেতরে ডেকে রোশনি ম্যাডামের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন, বললেন ইনি এই দোকানের মালিক আমার বন্ধুস্থানিয়া, এখানে ক্লিনারের আর স্টাফেদের, কাস্টমারদের চা, কফি, জল দেবার লোক চাই, করবে মাসে ১২ হাজার মাইনে।
হ্যাঁ নিশ্চয়ই, বলে রবীন মহিলার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। আরে থাক থাক, খুবই সংস্কারী ছেলে।
দেখো রোশনি আমি তোমার কাস্টমার হয়ে তোমায় এতো ভালো একটা কাজের ছেলের ব্যাবস্থা করে দিলাম। সাহা দি আপনি আমার কাস্টমার কম দিদি বেশী, এই নিন আপনার দুল আর আংটি, আবার আসবেন।
বাড়ি ফেরার পথে কাকলি ওর সাথে শিয়ালদহ স্টেশন অবধি এলো, কাকলি দোকানটায় কাউন্টারে কাজ করে,
রোশনি ম্যাডাম আজ একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললো, ওই মেয়েটা কিনতো না কেবল এটেনশন সিকার আর ন্যাকা, একঘন্টা ধরে এটা ট্রাই করে ওটা ট্রাই করলো, ছবি তুলে পালালো তোমায় ফাঁসিয়ে দিয়ে।
শয়তান একটা।
এর মধ্যে রোশনি আরো দুএকজনের সাথে এই রখম দুর্ব্যবহার করেছে। একটি মেয়েতো মুখের উপরে "এই নে তোর ঢপের চাকরি, আমি রবীন নই যে ত্যর অসভ্যতা মুখ বুঁঝে সহ্য করবো" বলে চাকরি ছেরে চলে গেলো দুদিন আগে।
কাকলি একটা মেয়েকে কানের দুল দেখাচ্ছে, কেমন লাগে দেখাতে গিয়ে একহাতে আয়না আর অন্য হাতে দুলটা নিয়ে দেখাতে গিয়ে কাকলির হাত থেকে দুল টা পরে যায়, ও নিচু হয়ে ওটা তুলতে জেই গেছে ওর হাত লেগে গ্লাসের জলটা পাসের ভদ্রলোকের প্যান্টে,
কথা নেই বার্তা নেই রোশনি ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে কাকলিকে বললো হোয়ার ইস ইউর মাইন্ড, সে সরি টূ দেম।
কাকলি সরি বলে, সামলে নিলো।
কাকলি কাঁদছে, রবীন বললো চলো একটু চা আর ঝাল মুড়ি চিবোই আর ভাবি রোশনি কে চিবোচ্ছি।
কাকলি হেসে ফেললো।
আচ্ছা একটা কথা বলো এই ডায়মন্ডের জুয়েলারি গুলো ও কোথা থেকে বানায়?
আমেদাবাদ থেকে আনে, আমাদের পাড়ার গোপালদা ওই একি ডিজাইনের মাল হুবহু ১০% দামে বানিয়ে বেচে আমাদের গ্রামের দোকানে, ডায়মন্ড নামেই কাটে, কজনে আর দেখে খাঁটি না নকল, ওই দোকানের নামেই সব কাটে।
আমায় আলাপ করিয়ে দিবি তোর গোপালদার সাথে
কেনো?
আরে আমার পিসতুতো বোন কেবল বলে দাদা ডায়মন্ড শপে কাজ করিস বোনকে একটা ডায়মন্ডের দুল তো দিতে পারিস?
রোশনি ম্যাডামের দোকানের জিনিস তো আর কেনার ক্ষমতা নেই তাই ভাবছিলাম,
ওকে ওকে, এই শুক্রবার চলোো আলাপ করিয়ে দেবো খুব ভালো সহজসরল মানুষ, কিন্তু চাবুক কারিগর।
আজ রবীনের দুবছর হোলো এই দোকানে, রবীন কাকলি কে বিয়ে করেছে, চাকরির সাথে সাথে রবীন একটা ব্যাবসা করে, কাকলি অনেক জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু বলেনা, কেবল বলে আমার এক বন্ধু বিদেশে থাকে ওর সাথে পার্টনারশিপ করে এখান থেকে জুয়েলারি বানিয়ে দিই আর ও বিদেশে ওর দোকানে ওটা বেচে।
কাকলি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, পার্টটাইম ব্যাবসার দৌলতে রবীনের হাতেও বেশ টাকা এসেছে, কিন্তু প্রথম কাজটাকে ও লাকি মানে তাই কাজটা ছাড়েনি।
আজ রবীন দোকানের সবাই কে গাঙ্গুরামের মিষ্টি খাওয়াচ্ছে,
রোশনি বললো বাব্বা গাঙ্গুরামের মিষ্টি হোয়াটস আপ?
ম্যাম আমি জার্মানিতে একটা কাজ পেয়েছি, আজ আমার এখানে শেষ দিন। এক সপ্তাহ বাদে আমি চলে যাবো, দুতিন মাসে মধ্যে কাকলি আর মা বাবাকে নিয়ে যাবো।
বা আব্বা লম্বা জাম্প ক্লিনার থেকে সোজা জার্মানি, তা ওখানেও কি দোকানের বাসন মাঝবে না টেবিল পরিস্কার করবে?
সবাই রোশনির দিকে ঘৃণার দৃস্টিতে তাকালো,
তা শুনি কাল থেকে তোমার কাজটি কে করবে,?
একটু আগে জানানোর দরকার বোধ করনি? খুব পাখা গজিয়েছে,
না না ম্যাডাম আপনি যদি বলেন আমার একটি চেনা খুব ভালো ছেলে আছে,
ঠিক আছে কাল নিয়ে এসো।
রবীন গোপালদার ছেলে পল্টু কে নিয়ে গেলো দোকানে পরের দিন। রোশনি ওকে কাজ দিলো, ম্যাট্রিক ফেল শুনে বললো মাইনে ৮০০০, পল্টু তাতেই রাজি।
পরশু ফ্লাইট জার্মানির, রবীন আজ একটা লেদার জ্যাকেট কিনতে এসেছে কাকলিকে নিয়ে,
জুয়েলারি শপের সামনের ওই দোকানটার কাছে এসে রবীন বললো একটু আগের মতো মুড়ি চিবোই আর চা খাই? কি বলো।
কাকলি বলে - আর ভাবি রোশনির মাথা.....
দুজনেই হা হা করে হেসে উঠলো।
চা খেতে খেতে হটাৎ দেখে, দোকানের সামনে দুটো পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ালো, ওরা দূর থেকেই দেখছে, কিছু বাদে দেখে রোশনি কে নিয়ে দুজন মহিলা পুলিশ বেড়িয়ে আসছে, রোশনির হাতে হাতকড়া।
সকালের ফ্লাইট, ফ্লাইটে উঠে রবীন এয়ার হোস্টেসকে বললো একটা প্রতিদিন পাওয়া যাবে? স্যার প্রতিদিন নেই টেলিগ্রাফ আছে, ওকে নো প্রবলেম গিভ মি,
সিটে বসে, পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা খবরে রবীনের চোখ আটকালো,
কলকাতার বিখ্যাত ডায়মন্ড জুয়েলারি শপের মালিক নকল ডায়মন্ড বেচার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
রবীনের ঠোঁটের কোনে একটা অদ্ভুত হাসি ভেসে উঠলো।
রবীন ফোন করলো কাকলিকে, শোনো আমি ফ্লাইটে, তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে
কি সারপ্রাইজ?
আলমারি খোলো উপরের তাকে একটা কালো গহনার বাক্স দেখছো?
হ্যাঁ
ওটা খোলো
ওমা একিগো আমাদের পাসপোর্টের সাথে তো ফ্লাইটের টিকিট?
ইয়েস এটাই সারপ্রাইজ, তোমরা তিন দিন বাদে ফ্লাইটে ঊঠবে, আজকে গিয়ে যা শপিং করার করে ব্যাগ প্যাক করে সোজা চলে আসবে এয়ারপোর্ট হোটেলে পড়শু দুপুরে, ভোর রাতে ফ্লাইট, হোটেল বুক করা আছে। দরজার একটা ডুপ্লিকেট চাবি পল্টুকে দিয়েছি ও বাড়ির দেখভাল করবে।
কে পল্টু
গোপালদার ছেলে,
তোমার সাথে গোপালদার যোগাযোগ আছে নাকি?
হ্যাঁ মানে পুতুলের কানের দুলটা গোপালদা হুবহু রোশনি ম্যাডামের চার লাখ টাকার দুলটার মোতোই বানিয়ে দিয়েছিল এমনকি বম্বের কোম্পানির ছোট্ট লোগোটাও, একদম চ্যাম্পিয়ন মানুষ, মোবাইলে তোলা ছবি দেখে আর আঙুলের মাপ জেনে, ভাবা যায়।
স্যার উই আর রেডি ফর টেক অফ, কাইন্ডলি সুইচ অফ ইয়োর মোবাইল।
আই এম সরি, এই রাখছি, প্লেন ছাড়বে সাবধানে এসো, বাই
কাকলি আওরালো দূগগা দূগগা, সিদ্ধিদাতা গনেশ যাত্রা শুভ হোক।
কে যেন কলিং বেল টিপছে বার বার, কে?
সমাপ্ত....