ত্যাগের নাম যখন পিতা
ত্যাগের নাম যখন পিতা
পাঁচ বছরের ছেলেটিকে মা আপেল গাছের
নীচে বসিয়ে রেখে বাড়ীর সমস্ত কাজ
সম্পন্ন করে সন্ধ্যায় বাড়ী নিয়ে আসতো।
ছেলেটি গাছের চার পাশ ছুটাছুটি করতো।
একদিন গাছটি বললোঃ খোকা তুমি আমার গায়ে
উঠে খেলো। আমার ডাল পালায় ঝুলো।
ছেলেটি গাছের ডালে উঠে। কতক্ষন ডাল
ধরে ঝুঁলতে থাকে।
গাছটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদতে থাকে।
ছেলেটি ক্লান্ত হলে গাছের নীচেই শুয়ে
পড়ে।
গাছ আস্তে আস্তে বাতাস করে যায়।
ছেলেটির স্কুল জীবন শুরু হলো অনেক বন্ধু
পেলো। আর গাছের নীচে আসে না। গাছটি
সারাক্ষন ছেলেটির পথ চেঁয়ে থাকে।
হঠাৎ একদিন গাছের নীচে বসতেই
গাছ জিজ্ঞাসাঃ বন্ধু, এতোদিন কোথায় ছিলে?
ছেলেঃ স্কুল শুরু করেছিতো। সময় পাই না। গাছ
বন্ধু জানো আমার বন্ধুদের সবার খেলনা আছে।
আমার নেই তাই মায়ের কাছে চেয়েছিলাম।"
গাছ বললোঃ তো, মা কি বললো?
ছেলেঃ আমার কাছে পয়সা নেই।
মৃদু হেঁসে গাছ বললোঃ তোমার খেলনা
লাগবে?
আমি কিনে দেবো।
ছেলেঃ তুমি টাকা পাবে কোথায়?
গাছ বললোঃ আমার আপেলগুলো নিয়ে বিক্রী
করে
তোমার সকল সাদ পূরণ করো।
ছেলেটি আপেলগুলো বাজারে বিক্রী করে।
মনের মত খেলনা কিনলো। এখন ছেলেটির
আর পাত্তা নেই। গাছটি ছেলেটির জন্য উদ্বিগ্ন।
কয়েক বছর পর হঠাৎ হাজির।
গাছ আনন্দের সাথে বললোঃ বন্ধু, কেমন
আছো?
তুমিতো যুবক হয়ে গেছো।
যুবকঃ ভালো নেই বন্ধু, বাসায় রান্না হচ্ছে না।
গাছ বললোঃ কেনো বন্ধু?
যুবকঃ গ্যাস নেই।
মৃদু হেঁসে গাছ বললোঃ আমার ডাল পালা দিয়ে
রান্নার কাজ সেড়ে ফেলো। সেই উছিলায়
তোমার সাথে আমার দেখা হবে।
যুবকটি সপ্তাহে একদিন ডালপালা নিয়ে যায়। আস্তে
আস্তে ডাল পালা শেষ যুবকটি আর আসে না।
যুবকটি বিয়ে করলো। একদিন গাছের নীচ দিয়ে
যাচ্ছিলো।
গাছ ছেলেটিকে ডেকে বললোঃ বন্ধু কেমন
আছো?
ভদ্রলোকঃ স্ত্রীর খুব সখ নৌভ্রমণ। নৌকা যে
কোথায় পাই।
গাছ বললোঃ আমাকে দিয়ে নৌকা বানাও।
ভদ্রলোকঃ তোমাকে চিঁড়ে নৌকা বানাতে হবে।
তুমিতো ব্যাথা পাবে।
মৃদু হেঁসে গাছ বললোঃ তোমার আনন্দের
কাছে আমি সর্বস্ব কোরবান করতে পারি।
গাছটিকে কেঁটে নৌকা বানানো হলো।
প্রায়ই গাছের গুঁড়ির পাশ দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে
হেঁটে যায় কিন্তু গাছের দিকে ফিরেও তাঁকায় না।
গাছের গুঁড়িটার ডাক দেবার সেই শক্তিটুকুও নেই।
ভদ্রলোক বৃদ্ধ হয়ে গেলো।
বৃদ্ধ একদিন গাছের গুঁড়ির পাশে বসে কি যেনো
ভাবছিলো।
গাছের গুঁড়িটা আস্তে আস্তে বললোঃ বন্ধু,
আমার ডাল পালা নেই, তুমি যে উঠে চঁড়ে
খেলবা।
কর্কষ ভাষায় বৃদ্ধ বললোঃ বাজে কথা বলবে না।
আমার কি গাছে উঠার বয়স আছে।
গুঁড়ি বললোঃ আপেলও নেই তোমাকে
খেতে দেবো।
কর্কষ ভাষায় বৃদ্ধ বললোঃ আবারও বাজে কথা,
আমার কি দাঁত আছে আমি আপেল খাবো।
বৃদ্ধ রাগ দেখিয়ে চলে যাবার সময় শুধু বললোঃ
যত্তসব পাগল।
শিক্ষনীয়ঃ গাছটি হলো আমাদের বাবার মত।
নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাদেরকে
বাঁচিয়ে রাখে। বাবার যখন কিছুই দেবার ক্ষমতা
থাকে না তখন বাবার প্রতিটা কথাই আমাদের কাছে
বিষের মত লাগে । আর আমরা কর্কষ ভাষায় উত্তর
দেই। আমরা খুব স্বার্থবাদী মানুষ।