Victor Bulbul

Romance Tragedy

4.0  

Victor Bulbul

Romance Tragedy

তুমি কি কেবলই ছবি_2🅰️ DULTS

তুমি কি কেবলই ছবি_2🅰️ DULTS

7 mins
495


                ।। ২ ।।


    পাহাড়ের সেই খাড়া বিপজ্জনক অধিতক্যাটা, যার কয়েক’শ ফুট নীচে মুখ-ব্যাদান করে আছে মৃত্যু— যেখানে দু’দিন আগে এলোমেলো পায়ে ঘোরাঘুরি করছিল সেই রহস্যময়ী-নারী— সেখানেই খাদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে বজ্রাভ । বেলা পড়ে গেলে আজ দু’দিন ধরে এখানেই ঘাঁটি গেঁড়েছে সে । এখানে বসেই লেখালিখির কাজ চলছে । যদি সেই মেয়েটি আবার আসে ! আবার যদি সুইসাইড করতে যায় ! কিন্তু তার তো আর দেখাই নেই ! হয়তো সে এখানে বজ্রাভর উপস্থিতি আন্দাজ করতে পেরেছে । মেয়েটি যথেষ্ট সজাগ এবং চতুর । অন্য কোথাও হয়তো নতুন জায়গা, বা নতুন কোনও পথ বেছে নিয়েছে আত্মহননের । আদৌ আর বেঁচে আছে কি না কে জানে... বুকের ভেতরটা কেমন ধক্ করে ওঠে বজ্রাভর ।

    হঠাৎ পেছন থেকে খুব চেনা একটা মিষ্টি শব্দ বজ্রাভর কানে ভেসে আসতে থাকে । সে কান দু’টো আরও সজাগ করে— এ সেই সম্মোহনী নূপুরের ধ্বনি, যা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একটা ছন্দময় আওয়াজ তুলে দূরে নীচ থেকে ক্রমশ এদিকেই উঠে আসছে । আওয়াজের উৎসের দিকে না তাকিয়ে বজ্রাভ ল্যাপটপে আরও বেশি মনোনিবেশ করার ভাব দেখায় । চোরা-দৃষ্টিতে সু-নিপুণভাবে ফ্রেমটা ধরে— ল্যাহেঙ্গা পরনে একটা অস্পষ্ট ছায়া মূর্তি ততক্ষণে সে দৃষ্টিপথে ঝড় তুলতে শুরু করেছে... এ সেই রহস্যময়ী নারী ; সেই লাস্যময়ী পদক্ষেপ— এদিকেই এগিয়ে আসছে...

    একেবারে তার পেছনে কিছুটা দূরে এসে থামল আওয়াজটা— আমার জায়গাটা আপনিই দখল করেছেন— সেই চেনা কণ্ঠস্বর ।

    সে দিকে না তাকিয়েই বজ্রাভর নির্বিকার জবাব— বলেছি না, আমি থাকতে কোনও ভাবেই আপনি এখানে সুইসাইড্ করতে পারবেন না ।

    —আমি মোটেই সুইসাইড্ করতে আসি না । সেদিন থেকে কন্টিনিউ বাজে বকেছেন !

    —মানুষের বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ আর তার মনের কথা, আমি খুব রিড করতে পারি ম্যাডাম । বলতে পারেন, এ আমার ইনবর্ন-ট্যালেনট্। আ’য়্যাম্ থাউজ্যান্ড্ পারসেন্ট্ শিওর, সেদিন আপনি সুইসাইড্ করতে এসেছিলেন ।

    —এসেছি তো বেশ করেছি । আপনার প্রবলেমটা কোথায় ?

    বজ্রাভ মেয়েটার দিকে তাকায় । ভ্রূ কোঁচকা— এত শীগগিরই সত্যিটা স্বীকার করে নিলেন ! মুচকি হাসে— বললাম না, আমার কাছে কেউ কিছু লুকোতে পারে না, সব ধরে ফেলি...

    —উফ্ ! সো ইরিটেড্ ! বিড়বিড় করে বলল মেয়েটি ।

    —ডিড্ ইউ সে সামথিঙ্ক্ অ্যবউট্ মি ?

    —নো-নো-নো, অ্যাবসলিউটলি নট্ ! তারপর ভ্রূ বেঁকিয়ে স্পষ্ট বিদ্রূপের সুর মিশিয়ে বলে— নোটিং ইওর ইনবর্ন-ট্যালেনট্... তো আমি না হয় এখানে সুইসাইড্ করতে আসি, ইওর গেইজ ইজ থাউজ্যান্ড্ পারসেন্ট্ রাইট— আই একসেপ্ট্ ইট্ । বাট্ হোয়াট হ্যাপনড্ টু ইউ নাও ! এখন আপনি পাগলের মতো ওখানে ল্যাপি নিয়ে বসে আছেন কোন দুঃখে শুনি ?

    —স্টোরি লিখছি । দু’মাসে কমপ্লিট না হলে, আপনার মতো আমারও এখান থেকে ঝাঁপিয়ে মরা ছাড়া আর কোনও রাস্তা থাকবে না । তাই এখন থেকেই একটু-একটু করে সাহস বাড়াচ্ছি । সবই আপনার থেকে শেখা... বজ্রাভ দাঁত বের করে হাসতে থাকে।

    —দারুণ ট্যালেনট্ আপনার ! উঠে আসুন ? এক্ষুনি উঠে আসুন বলছি ! সেই অচেনা-অজানা মেয়েটি বজ্রাভকে আচমকা ধমক দিয়ে উঠল— আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে আপনার প্রবলেমের অন্ত ছিল না, এখন দিব্যি ওখানে বসে লেকচার মারছেন ! কী হল, উঠুন ?

    সুবোধ বালকের মতো বজ্রাভকে উঠে আসতে হল । তারপর নীচুস্বরে বলে— আমি বিলিয়ন-বিলিয়ন পারসেন্ট্ শিওর, আজ আপনি সুইসাইড্ করতে আসেননি ।

    —কী করে বুঝলেন ?

    —ওই— ইনবর্ন-ট্যালেন্ট !

    —মেয়েটি ঝটতি ঠোঁটের এক কোন বেঁকিয়ে আগের দিনের মতোই বজ্রাভকে বিদ্রূপ করল । এটা ওর মুদ্রাদোষ বোধহয় ! কিন্তু দোষটাকে মোটেই দোষ দেওয়া যাবে না, বরং যে-কোনও পুরুষ-চিত্ত-হরণের পক্ষে সেটা যে কতখানি মারণাস্ত্র, তা কেবল উঁচু দরের মনোবিদরাই বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে । মেয়েটা আচমকা বজ্রাভর হাত থেকে ছোঁ-মেরে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিল । ফ্লিপ্ খুলে টাস্ক বারে মিনিমাইজ্ করে রাখা ওয়ার্কশিট’টা খোলে । স্ক্রল্ করে ওপর নীচে চোখ বোলাতে থাকে... বজ্রাভ চোখ বড়-বড় করে পাশে দাঁড়িয়ে দেখে মেয়েটি কম্পিউটারে কতটা ওস্তাদ !

    ল্যাপটপ ফেরত দিতে-দিতে মেয়েটা জিজ্ঞেস করে— আপনি রাইটার ! স্টোরি লেখেন ? মেয়েটার গলার স্বর আর চোখে-মুখে এবার বজ্রাভর প্রতি স্পষ্ট শ্রদ্ধা— স-সরি... আপনি কত বড় মাপের মানুষ ! আপনার সঙ্গে অনেক বাজে ভাবে কথা বলেছি !

    —বাজে কথা আমার এক-কানে ইন্ করলে, দেন আ্যন্ দেয়ার গো আউট ফ্রম্ অপজিট্ কান । সো, নো হেজিটেশন্, আই জাস্ট্ হিয়ারড্ অব হোয়াট্ আই হিয়ারড্— আই ডোন্ট্ রিমেমবার ।

    মেয়েটি একটুখানি চুপ করে থাকে, তারপর জিজ্ঞাসু চোখ-দুটো আবার এসে পড়ল বজ্রাভর চোখে— ইওর নেম্ প্লিজ...

    —বজ্রাভ মিত্র । 

    —বজ্রাভ... মিত্র ! নামটা আমার খুব চেনা লাগছে... একটু পায়চারি করে স্মৃতির তলদেশ হাতড়াতে থাকে মেয়েটি... তুর্কী নাচের ঢঙে ঘুরে বজ্রাভর সামনে এসে বলে— ইয়েস্ । মনে পড়েছে, রাইটার ছাড়াও আপনার আরও একটা বড় আইডেনটিটি আছে— ইউ আর আ ফেমাস্ ফিল্ম ডিরেক্টর । অ্যাম আই কারেক্ট ? কিছুদিন আগেই ‘তীরন্দাজ’ নামে আপনার একটা ফিল্ম রিলিজ্ করছিল । ম্যাগাজিনে রিভিউ পড়েছি— খুব হিট করেছিল সিনেমটা ।

    —আপনি 'তীরন্দাজ' দেখেছেন ?

    —না । আমি মুভি খুব কম দেখি । তবে এবার থেকে অবশ্যই আপনার মুভিগুলো দেখব !

    —কেনো ?

    —আপনার মুভি অবভিয়াসলি ভাল হবে । আমি আপনার একজন ফ্যান হয়ে গেছি ।

    —আমার ওপর আপনার খুব কনফিডেন্স্ এসে গেছে দেখছি !

    —হুমমম্...

    —সো নাও ইউ ক্যান গিভ মি ইউর রিয়্যাল আইডেনটিটি ?

    —কি ফেক্ ইনট্রো আমি আপনাকে দিয়েছি ? আমার নাম ঈষিকা । যদিও আমি কলকাতার মেয়ে, কিন্তু নীচে লেকের পারে ওই গ্রামে আমার বিয়ে হয়েছে । আমার হাসবেন্ড কর্মসূত্রে আগে কলকাতাই থাকত । সেখানেই আলাপ । প্রেম করে বিয়ে । কিন্তু বছর না ঘুরতেই কলকাতা ছেড়ে ও আমাকে নিয়ে এখানে ওর বাবা-মায়ের কাছে চলে এল । স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ দু’বছরের একটা ছেলে— সবাইকে নিয়ে দিব্যি আছি... আবার জিজ্ঞেস করবেন না, তবে সুইসাইড কেন করতে এসেছিলাম !

    হেসে ফেলে বজ্রাভ ।

    কথার মোড় ঘুরিয়ে ঈষিকা বলে— শুনেছিলাম ওই বাংলোটা, কোনও ফিল্ম প্রডিউসারের । ওখানে মাঝে মধ্যে শুটিংও হয় । আমার জানা ছিল না, ওটা আপনারই বাংলো !

    বজ্রাভ আন্দাজ করে, মেয়েটি যে পরিচয় দিল, তার সবটুকু সত্যি নয় । স্বাভাবিক, এ-টুকু আলাপে একটা বিবাহিতা মেয়েয় থেকে এর বেশী কী আর আশা করা যায় । বজ্রাভও ইচ্ছে করে একটু কৃত্রিমতার আশ্রয় নিল— আমার বাংলো বলেছি বুঝি ! আপনি ঠিকই শুনেছেন, ওটা একজন ফিল্ম প্রডিউসারের । উনিই তো আমার নেক্সট্ ফিল্মের প্রডিউসার । প্রডাকশনের সব কিছু রেডি । বাট্ স্ক্রিপ্ট্ রেডি নেই । লিখতে তো হবে, তাই শহর ছেড়ে চলে এসেছি এই নিরিবিলিতে । আজ চারদিন হয়ে গেল, এতটুকু কাজ এগোয়নি ! মাঝখান থেকে আপনি আবার সুইসাইড্ করতে চলে এলেন ! মাইন্ডটা এমন ডাইভার্ট হয়ে গেল...

    ঈষিকা বজ্রাভর দিকে তাকিয়ে অপরাধীর মতো চোখ নামায়— আ’য়্যাম্ সো সরি ! আমি জানতাম না, আমার জন্যে আপনার এত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ! আমি কথা দিচ্ছি, ইন্ ফিউচারে আমার কারণে আপনাকে আর কোনও সাফার করতে হবে না । ওকেই... বাই— সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল ।

    বজ্রাভ ছুটে এসে ওর পথ আটকায়— আরে ! আমি তো জোক্ করছিলাম । আমি কাজ করতে পারছি না— দ্যাট্’স মাই ফল্ট্ । বাট্ বাহানা করে দোষটা আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াতে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল । আর মন ঠিক থাকলে জানেন তো কাজ করতেও বেগ পেতে হয় না ? সরি-সরি— ডোন্ট মাইন্ড্ । আপনাকে এখন আমার খুব দরকার । আপনার সঙ্গে দেখা করব বলেই তো ঠায় দু’দিন ঠায় বসে আছি !

    —কেন ?

    আপনাকে দেখার পর থেকেই আমার ভাবনার জগতে বিরাট একটা টুইস্ট এসে গেছে । কত বয়স আপনার... ভ্রূ কুঁচকে দু’চোখ ছোটো করে এক ঝলক ঈষিকাকে আপাদমস্তক মাপে বজ্রাভ— ম্যক্সিমাম্ টোয়েন্টি ফোর -টোয়েন্টি ফাইভ হবেন ! এরই মধ্যে কী এমন ঘটে গেল, যে বেঁচে থাকার স্পিরিট’টাই হারিয়ে ফেললেন ! কী সেই হাইড্-স্টোরি ! আপনি এডুকেটেড্ । কথাও বলেন দারুণ ! আর যাই হোক, এই অজ-পাড়া-গাঁয়ের পাহাড়ি মেয়ে যে আপনি নন— সে আমি প্রথম দর্শনেই বুঝে গিয়েছিলাম । আপনার বিষয়টি আমাকে সত্যি বড্ড ভাবাচ্ছে...

    —তবে আর কী ! সেই ভাবনা থেকেই আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখে ফেলুন । সিনেমাও করতে পারেন... কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও, সেই সিনেমাটা যে হান্ড্রেড্ পারসেন্ট্ ফ্লপ করবে, এ আমি আপনাকে হলফ করে বলতে পারি ।

    —প্লিজ ঈষিকা, বি সিরিয়াস্— বজ্রাভ হালকা ধমক দেয় ঈষিকাকে, আওয়াজ নামিয়ে বলে— আমি ওরকমটাই ভাবছি । আপনাকে নিয়ে লেখা উচিত। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে পুরো অন্ধকার...

    ঈষিকার ঘন কালো চোখগুলো চক্-চক্ করে উঠে । বলে— বিষয়টা আলোতে নিয়ে এলেই অন্ধকার কেটে যাবে ! বাট্ সরি স্যার, এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কোনও হেল্প করতে পারব না । এক্সট্রিমলি সরি ! আপনাকে পুরোপুরি ইম্যাজিনের ওপর যেতে হবে । আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ্... একটু থামল ঈষিকা, তারপর বলল— ওকেই ? সন্ধে হয়ে আসছে, এবার আমাকে যেতে হবে... বা-আ-আ-ই... বজ্রাভকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনেকটা পালিয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে ঈষিকা পা বাড়াল ।

    বেশি জোরাজুরি করতে বজ্রাভরও সঙ্কোচে বাঁধল, সত্যি হয়তো ওর অসুবিধা আছে । কেউ স্বেচ্ছায় তার ব্যক্তিগত বিষয় জানাতে না চাইলে অহেতুক নাছোড়পনা অভদ্রতা— অনুচিতও । তবে মেয়েটার বুদ্ধির ধার আছে ! চোখে-মুখে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে। চোখের পলকে ধরে নেয় পরবর্তী পদক্ষেপ । বজ্রাভ সত্যি ইমপ্রেসড্... অল্প একটু হাত তুলে ঈষিকাকে বিদায় জানায়— টেক্ কেয়ার...

    ঈষিকা ঘাড় নেড়ে নূপুরের ধ্বনি তুলে এগিয়ে যায় । ওর ওই সুরেলা আগমন এবং সুরেলা প্রস্থান যেন ওর একান্তই নিজস্ব সত্তা । মনে হয় যুগযুগান্তর ধরে সুদূর অতীত থেকে যেন ভেসে আসা কোনও মায়াবী সুর ! বর্তমান ভেদ করে সে-সুর যেন সুদূর ভবিষ্যতের দিকে বয়ে যায়— অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায় !


 (ক্রমশ...)


(আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগন, আপনাদের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, আমার লেখাগুলো যদি আপনাদের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে, খারাপ-ভালো যেটাই বিবেচ্য, পড়ার শেষে প্লিজ review দিন । আমাকে follow (অনুসরণ) করুন । আপনাদের মননশীল-বিচক্ষণতা এবং বিচার-বিশ্লেষণ একজন লেখককে লেখার জন্য ভীষণভাবে inspired করে এবং ভুল-ভ্রান্তিগুলো সংশোধন করে লেখার গুণমান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance