তুমি কি কেবলই ছবি_1🅰️ DULTS
তুমি কি কেবলই ছবি_1🅰️ DULTS
।।এক।।
ল্যাপটপের কি-বোর্ডে বজ্রাভর তুখড় আঙুলগুলো বড্ড অস্থিরময় । মস্তিষ্ক থেকে অনেক কিছু নির্দেশ সারা শরীর বেয়ে আঙুলগুলোতে এসে পৌঁছচ্ছে অথচ গোটা জিনিসটাই কেমন যেন বল্গাহীন বিক্ষিপ্তময়— কিছুতেই তাদেরকে একটা সরলরেখায় চালিত করে লক্ষ্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না ! কপালে তার চরম বিরক্তি আর পরাজয়ের ভাঁজ । লনের মধ্যে একটা বড় ছাতার তলায় গার্ডেন চেয়ার বসে বজ্রাভ । সামনে টেবিলের ওপর চালু ফ্লিপ্-খোলা আলট্রাস্লিম্ ল্যাপটপ । সে যেখানে বসে আছে তার একেবারে পেছনে পাহাড়ের অনেক ওপর থেকে সশব্দে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ছোটো মাপের ওয়াটার ফল্ । ফেনিল জলধারার ওপর একটু দূরে গদাই-লস্করই চালে এক-মনে ঘুরেছে ওয়াটার-মিল । তার ঘূর্ণমান ব্লেডগুলোতে জল-কাটার একটানা একঘেয়ে ছপাং-ছপ্ আওয়াজ । বজ্রাভ তার অসহায় বিবর্ণ চোখ দু’টো তুলে দূরে পাহাড়ের দিকে তাকাল । দৃষ্টি— ভাবুক ঝাপসাময় । পর্বতময় কার্ডিওগ্রাফিক্ দিকচক্রে তখন পড়ন্ত বেলার রঙের তুলি পড়তে শুরু করেছে ।
—হঠাৎ কিছু ঘটল ! দৃষ্টিটা প্রখর থেকে প্রখরতর হয়ে এক জায়গায় থমকে গেল বজ্রাভর । শরীরের সমস্ত স্নায়ুগুলো শব্দাতিক তৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠল । কিছুটা দূরে যে-পাহাড়টা শেষ হয়েছে একেবারে খাড়া ভাবে— অতীতে হয়তো ল্যান্ড স্লাইড’এ কখনও এই দশা হয়েছে জায়গাটার— সেই ভয়ঙ্কর খাদটার একেবারে ধার ঘেঁসে কেমন অগোছালো ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে একটি জীবন্ত নারীমূর্তি ! বজ্রাভ পাশে রাখা ডি এস এল আর’টা যন্ত্রবৎ হাতে তুলে নেয় । সুইচ্-অন্ করে ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে টেলি-ফটো লেন্সে দ্রুত ফোকাস করে— কোনও নিপুণ শিল্পীর অকৃপণ-হাতে যেন পটে আঁকা কোনও ছবি ! অনেকটা গ্রিক মিথলজির মায়াবী দেবী ভেনাসের মতো । সেমি ট্রান্সপারেন্ট শিফন শাড়ির লম্বা আচল লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে । শাড়ির ফাঁক গলে আঁটোসাঁটো লেস্ বাঁধা কাঁচুলির তলা থেকে বেরিয়ে আসছে উদ্ভিন্ন যৌবন । সহজাতবসত খচাখচ কয়েকটা ক্লিক্ নিয়ে নিল বজ্রাভ । আরও জুম করে মেয়েটার মুখের ওপর আসে— কিন্তু ওর ওই সুন্দর মুখটাতে এমন হতাশা আর বিষণ্ণতার প্রলেপ কেন ! ওই চেহারায় বড্ড বেমানান এই অভিব্যক্তি । মেয়েটাকে স্থানীয় বলে মনে হচ্ছে না, চেহারার মধ্যে স্পষ্ট সম্ভ্রান্ত আর সমতল ভূমির ছাপ ! কে ও ? বজ্রাভ দেরি না করে দ্রুত ছুটতে থাকে ।
বজ্রাভ এখন প্রায় মেয়েটার কাছে এসে পৌঁছেছে, রীতিমতো হাঁপাচ্ছে সে । একটা পাহাড়ের খাড়া উতরাই বেয়ে হড়কে নেমে আবার হাঁচড়ে-পাছড়ে আর একটা চড়াই ভাঙা চারটিখানি কথা ! প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়— এখনই বোধহয় অগস্ত্যযাত্রা করবে ! দু’হাঁটু-মুড়ে একটুখানি বসে প্রাণভরে শ্বাস নিল,পর-মুহূর্তেই উঠে পড়ে —এক-মুহূর্তও দেরি করা যাবে না । মেয়েটা যে-কোনও মুহূর্তে স্লাইড করে যেতে পারে । বজ্রাভ পা টিপে-টিপে এগোতে থাকে । একদম বুঝতে দেওয়া চলবে না মেয়েটাকে । কোনও আওয়াজ করা যাবে না...
একেবারে মেয়েটার কাছে চলে এসেছে বজ্রাভ । প্রতি মুহূর্তে কমছে ব্যবধান । পেছন থেকে খপ্ করে ওর হাতটা ধরতে যাবে হঠাৎ সামান্য আভাস পেয়েই তড়াক্ করে ঘুরে দাঁড়ায় মেয়েটি । বজ্রাভকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে— কে আপনি ? কীক্...কী চাইছেন ? ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন... মেয়েটি আলত করে এক ঝলক পেছনটা দেখে নিয়ে পেছনে-না-ফিরে ভয়ে এক-দু’পা করে পিছু হটতে থাকে...
বজ্রাভ কোনও জবাব না দিয়ে আচমকা ছুটে গিয়ে মেয়েটার একটা হাত ধরে ঝটকা টান দেয় । টালমাটাল হয়ে হুড়মুড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল মেয়েটি— কোনও রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ঝটতি উঠে তারস্বরে তেতে উঠল— এখনই চলে যান... এক্ষুনি চলে যান বলছি, না হলে চিৎকার করে লোক ডাকব বলে দিচ্ছি ।
বজ্রাভ অতিরিক্ত বিনয়ী হয়— প্লিজ,ডোন্ট্ মিসআন্ডারস্ট্যানড্ মি । আই ডোন্ট্ হ্যাব এনি ব্যাড ইনটেনশন্ । আ’অ্যাম্ জাস্ট্ স্ট্যান্ডিং হিয়ার... আপনি দয়া করে নীচে নেমে যান । আ’য়ল্ নট বদার ইউ অ্যানিমোর ।
—স্ট্রেনজ্ ! এই জায়গাটা যেন আপনার কেনা ! কেন আপনার কথায় আমাকে চলে যেতে হবে ?
—প্লিজ ম্যাম, প্লিজ লিসন্ টু মি— আপনার মনের ভেতরে কী চলছে আমি জানি না । বাট্ আই থিংক, ইউ আর সো ডিপ্রেসড্ । ইউ হ্যাব নো ইন্টারেস্ট অন্ ইওর লাইফ, বাট্ অ্যাজ্ আ হিউম্যান আমার চোখের সামনে এটা ঘটতে দিতে পারি না...
বজ্রাভর মুখের কথা কেড়ে নিল মেয়েটি— আই সি... আপনি তবে ভেবেছেন,আমি এখানে সুইসাইড্ করতে এসেছি ?
—এগজ্যাক্টলি ! অ্যান্ড দ্যাট্ ইস্ ট্রু...
—শুনুন ? আপনার মাথায় যথেষ্ট গোলমাল আছে ! ইমিডিয়েট্ ডক্টর না দেখালে এটাই আপনার বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে— ইয়েস্, আই মিন ইউ । নিজের মনেই গজগজতে থাকে মেয়েটি— ডিজগাস্টিং ! নিজের মতো করে একটু থাকার জো পর্যন্ত নেই ! পাবলিক ডিসটার্ব করবেই করবে— খুবই বিরক্ত হয়ে হন্-হন্ করে চলে যেতে থাকে সে । একটু দূরে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, ঘুরে সোজাসুজি তাকায় বজ্রাভর দিকে । এমন ভাবে দৃষ্টিটা তাকে সরাসরি বিদ্ধ করবে ভাবিনি বজ্রাভ । সেই সম্মোহনী দৃষ্টির সামনে এক মুহূর্ত কেমন যেন নিজেকে খড়কুটোর মতো মনে হল তার । মেয়েটি জিজ্ঞেস করে— আপনাকে এর আগে কখনও দেখিনি তো এখানে ! কোথায় থাকেন বলুন তো ?
—এই গ্রহেই থাকি ডেফিনেটলি, বাট্... ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার নীচে বিশাল একটা লেক । লেকের চারপাশে উঁচু-উঁচু পাহাড় বর্মের মতো সঘন-সবুজ জঙ্গলে ঢাকা । একটি পাহাড়ের এবড়োখেবড়ো খাঁজে কে যেন বর্শার ফলার মতো গেঁথে দিয়েছে ছবির মতো একটি বাংলো । প্রকৃতির সমস্ত সান্দ্র পেলবতা এক নিমেষে শুষে নিয়ে কেমন যেন তাল কেটে সেখানে সেঁধিয়ে যায় দৃষ্টি । বজ্রাভ দূরে সেই বাংলোটা দেখিয়ে বলে—ওই যে বাংলোটা দেখছেন, আপাতত ওখানেই উঠেছি ।
—ও-ও-ও... ঘুরতে এসেছেন বুঝি ? হাতে নিশ্চয় কাজকম্ম নেই !
—কাজ থাক, বা না-থাক ; এই সুইসাইড্ পয়েন্টে আপনাকে ঘুর-ঘুর করতে দেখলেই আমি বাঁধা দিতে আসব !
—আমি কে, জানার পর... সে সাধ আর থাকবে না মশাই— ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি হেসে মেয়েটি বলে— আমার হাজবেন্ড্ এ-তল্লাটের নাম করা ডন্ । একবার তার কানে ব্যাপারটা উঠলে... আপনার কপালে অশেষ দুঃখ আছে ।
—আমার কপালের কথা না ভেবে নিজের কপালের কথাটা ভাবুন, আমি এখানে থকতে... ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ে বজ্রাভ—আপনার কপালে আর সুইসাইড্ নেই ম্যাডাম...
—ও রাবিশ্ ! —মেয়েটি ঝটতি ঠোঁটের এক কোন বেঁকিয়ে অদ্ভুতভাবে ব্যঙ্গ করল বজ্রাভকে । তারপর পেছন ফিরে নূপুরের ঝঙ্কার তুলে দ্রুত পা চালাল । মেয়েটার অপস্রিয়মাণ মূর্তি আর তার পায়ের নূপুরের ধ্বনি খুব শীগগিরই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে অদৃশ্য হয়ে গেল; কিন্তু বজ্রাভর চোখের ক্যানভাসে রেখে গেল তার রহস্যময়-কল্পনাময় আভাস ।
ক্রমশ...
*********👇👇👇
আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগন, আপনাদের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, আমার লেখাগুলো পড়ার পাশাপাশি আমাকে fallow করুন এবং আমার লেখা যদি আপনাদের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে, খারাপ-ভালো যেটাই বিবেচ্য, পড়ার শেষে একটু মূল্যবান সময় খরচ করে comment করুন । আপনাদের মননশীল-বিচক্ষণতা এবং বিচার-বিশ্লেষণ একজন লেখককে লেখার জন্য ভীষণভাবে inspired করে এবং ভুল-ভ্রান্তিগুলো সংশোধন করে লেখার গুণমান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
👆👆👆**********

