STORYMIRROR

Itz Nizam

Tragedy

4  

Itz Nizam

Tragedy

The Sky Moon ( আকাশের চাঁদ )

The Sky Moon ( আকাশের চাঁদ )

5 mins
8





The Sky Moon ( আকাশের চাঁদ )




সময়টা ১ এপ্রিল ২০২৪



ফিলিস্তিনের রাফাহ শহরের এক শান্ত পাড়ায় একটি সাধারণ দোতলা বাড়ি। বাড়িগুলো খুব বড় না  

সকালে ছাদে কাপড় শুকানো হয়, বিকেলে গলির ভেতর দিয়ে বাচ্চারা দৌড়ে খেলাধুলা করে। ঘরের 

জানালা দিয়ে সব সময় মানুষের কথা, হাঁড়ির শব্দ, আর দূরের আজানের সুর ভেসে আসে

এই বাড়ির এক ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে দশ বছরের একটি ছেলে। তার নাম খালিদ।

ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে লাগানো। আজ সে স্কুলে যায়নি। সবাইকে বলেছে তার পেটে ব্যথা। কিন্তু 

আসল কারণটা অন্য।


খালিদের হাতে একটি বই।

বইটার নাম A Walk to Freedom

গতকাল রাত থেকে সে বইটা পড়ছে। পড়তে পড়তে সে যেন বইটার ভেতর ঢুকে গেছে। চারপাশের 

কিছুই তার আর মনে নেই। সময় কখন সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল হয়ে গেল—সে বুঝতেই 

পারেনি। এখনো সে বইটার পাতায় চোখ ডুবিয়ে রেখেছে।

হঠাৎ বাইরে থেকে শব্দ ভেসে আসে—
 
......আম্মু..... আম্মু ...........

খালিদ বুঝে যায়, তার ছোট বোন স্কুল থেকে ফিরে এসেছে।

তার বোনের নাম মরিয়ম। এই বছরই সে প্রথম স্কুলে যেতে শুরু করেছে। নতুন ব্যাগ, নতুন বই—

সবকিছু নিয়েই সে খুব খুশি।


ঠিক তখনই, দূরে কোথাও থেকে খালিদ একটা খুব জোরে শব্দ শুনতে পেল।

একটা ভারী শব্দ।


কিন্তু সে গুরুত্ব দিল না।

আবার চোখ নামিয়ে আনল বইয়ের পাতায়।

ঠিক তখনই আবার তার কানে এল মরিয়মের ডাক—

......আম্মু ........

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই—

একটি ভয়ংকর বিকট শব্দ।

মাটি যেন কেঁপে উঠল।

এক মুহূর্তের মধ্যে কিছু একটা আছড়ে পড়ল তাদের বাড়ির ওপর…

না হলে, পুরো এলাকার ওপর 




খালিদ ধীরে ধীরে চোখ খুলল।

সে বুঝতে পারল, সে আর তার ঘরে নেই

সে শুয়ে আছে খোলা জায়গায়। চারপাশে আগুন জ্বলছে। ভাঙা ইট, ভাঙা দেয়াল, আর ধুলোবালিতে সব ঢেকে গেছে। বাতাসে পোড়া গন্ধ। দূরে কয়েকজন মানুষ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কথা বলছে না

খালিদ নিজের দিকে তাকাল।

সে দেখল, তার দুই হাত দিয়ে সে শক্ত করে কিছু একটা আঁকড়ে ধরে আছে

সে তাকিয়ে দেখে—

ওটা সেই বই।

A Walk to Freedom

কিন্তু কিছু একটা বদলে গেছে।

বইয়ের কভারে যেখানে Freedom লেখা ছিল, সেখানে কাগজের সেই অংশটা নেই। ছেঁড়া।

খালিদের বুকের ভেতর কেমন একটা কেঁপে উঠল

সে চারদিকে তাকিয়ে ডাকতে লাগল—

 ......আম্মু.......

 ......আব্বু.......



ঠিক তখনই তার সামনে এসে দাঁড়াল একজন মধ্যবয়স্ক লোক। লোকটার মুখে ক্লান্তি তার পোশাক ধুলোতে মাখা 

লোকটি নরম গলায় বলল,

 .......তুমি ঠিক আছো ........

খালিদ ভীত গলায় বলল,
 
........আমি কোথায়? আমি বাড়ি যাব...... আমার আম্মু-আব্বুর কাছে যাব ...........

লোকটির পেছন থেকে আরেকজন এগিয়ে এল
তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। চুল সাদা 


মধ্যবয়স্ক লোকটি ধীরে করে বৃদ্ধ লোকটিকে জিজ্ঞেস করল,

 ........বাচ্চাটাকে কি বলা ঠিক হবে ...........


বৃদ্ধ লোকটি একটু চুপ করে থেকে বলল,

 .......এক সময় তো বলতেই হবে ........

তখন মধ্যবয়স্ক লোকটি হাঁটু গেড়ে খালিদের সামনে বসে পড়ল


খালিদ কিছুই বুঝতে পারছে না

তার হাত এখনো বইটাকে শক্ত করে ধরে আছে

তার ভেতরে অজানা এক ভয় জমে উঠছে

লোকটি ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল,

 ..........এই শহরের ওপর আক্রমণ হয়েছে। প্রায় সবাই মারা গেছে। অল্প কিছু মানুষ বেঁচে আছে বাড়িঘর—সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে ..........


খালিদ হঠাৎ বলে উঠল,
..........আমার আম্মু? আমার আব্বু কই? আমার শরীর জ্বালা করছে… আমি তাদের কাছে যাব..........


লোকটি কথা বলল না।

সে একবার মাটির দিকে তাকাল।

তারপর ধীরে করে চোখে হাত বুলালো

সে বলল,

 .......তোমার পরিবারের… হয়তো কেউ বেঁচে নেই। যদি থাকত, এতক্ষণে আমরা তাদের খুঁজে পেতাম ..........


খালিদ ফিসফিস করে বলল,
 
......বেঁচে নেই মানে .......


লোকটি নিচু গলায় বলল,

 ........তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে গেছেন............


খালিদ চুপ করে গেল

তার চোখ দিয়ে অল্প অল্প পানি পড়তে লাগল

সে কাঁদছে কিনা, সেটাও সে বুঝতে পারছে না

তার মনে হচ্ছে, এখন তার কী অনুভব করা উচিত—সে জানে না


মধ্যবয়স্ক লোকটি বলল,

.............চলো, আমার সাথে চলো। তোমার ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগাতে হবে ............


খালিদের হাত আর পায়ের কয়েক জায়গা দিয়ে রক্ত ঝরছে

সে কিছু বলল না

সে শুধু লোকটির হাত ধরল

আর ধীরে ধীরে সামনে হাঁটতে লাগল

তার অন্য হাতে তখনো সেই বইটি



কিছু মাস কেটে গেছে।


খালিদ এখন সেই মানুষগুলোর সঙ্গেই থাকে যারা তাদের পরিবার, বাড়িঘর, সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।

তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়—কখনো এক জায়গায়, কখনো অন্য জায়গায়।

একসময় যেটি স্বপ্নের শহর ছিল, এখন সে ধুলোর শহরে পরিণত হয়েছে।


তারা কখনোই এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকে না।

তাবু গেড়ে রাতে ঘুমায়, দিনভর কিছু খোঁজে।

খালিদ, যে আগে সবসময় হাসিখুশি থাকতো, এখন একদম গম্ভীর হয়ে গেছে।

সে সবসময় একা থাকে।

কখনো কখনো দূরের এলাকায় আবার প্রচন্ড শব্দ হয়—ছুটে চলে আসে ধ্বংসের গন্ধ।

কিছুদিন আগের সেই স্থান, যা তারা ছেড়েছিল, সেখান আবার আক্রমণ হয়েছে।

যারা সেখানে ছিল, সবাই মারা গেছে।

আজ খালিদ একটি ছোট তাবুর কোনায় বসে আছে
তার পাশে নেই কেউ

তখন তাঁবুর ভিতরে তার বয়সের একটি ছেলে আসে এবং বলে , 

 ..........আস, খেতে আসো। খাবার দেওয়া হচ্ছে। এখন না গেলে পরে পাবা না ...........


খালিদ নীরবভাবে বলল,

 ........আমি আসছি, তুমি যাও ........



ছেলেটি বাইরে চলে গেল।

খালিদ চুপচাপ বসে থাকল।

তার হাতের মধ্যে সেই বই।

A Walk to…—বাকি অংশ ছিড়ে গেছে


কিছুক্ষণ পরে খালিদ বাইরে গিয়ে দেখল, একজন লোক খাবার বিতরণ করছে।

কিন্তু সে পৌঁছানোর আগেই খাবার শেষ
খালিদ আবার তাবুর ভেতরে ফিরে এল।

তখন সেই ছেলেটি যে তাকে একটু আগে তাবুর ভিতরে ডাকতে এসেছিল সে তাঁবুর ভিতরে আসলো এবং খালিদের হাতে একটি পাউরুটি দিল

তখন খালিদ বলল , 

......... তোমার .........


ছেলেটি বলল , 

.......... আমার আছি আমি জানতাম তুমি নিতে পারবে না এজন্য আমি চুপ করে তোমার জন্য একটা নিয়ে রেখেছিলাম.........


খালিদ কিছু বলল না

সে শুধু পাউরুটি নিল

রাত হলো

তাবুর ভিতরে সবাই ঘুমাচ্ছে—মাটিতেই

কিন্তু খালিদ বাইরে বসে আছে।

সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে

হাতের মধ্যে সেই বই


সেদিন আকাশ একদম পরিষ্কার।

চাঁদ যেন পৃথিবীর অনেক কাছে চলে এসেছে


হঠাৎ দূরে প্রচণ্ড শব্দ হলো।

খালিদ দ্রুত তাবুর ভিতরে চলে আসে

সে কোনায় গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে

দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে তার সেই বইটিকে

অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পড়ে 

যখন চোখ খুলল, সে নিজেকে এক অজানা জায়গায় পেল

চারপাশে কিছুই নেই, শুধু সাদা আলো

খালিদ ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে থাকলো—নিজেও বুঝতে পারছে না কেন।


কিছুদূর হাঁটতেই সামনের দিকে এক প্রচণ্ড আলো।
 
খালিদ তাকাতে না পেরে সে হাত দিয়ে চোখ ঢাকল সে বলল , 

 ..........আমি কোথায়? কেউ কি আছে ? বলতে লাগল .............

আলোর দিক থেকে আওয়াজ এল,
 
..... খালিদ .......

খালিদ বলল , 


 ........ কে ওখানে .......


তখন সেখান থেকে আওয়াজ এলো , 

....... তুমি তোমার একটি ইচ্ছে বল যেটি তুমি বলা মাত্রই পূরণ হয়ে যাবে .......

খালিদ বলল,

 .......তুমি কিভাবে পূরণ করবে? তুমি কি সৃষ্টিকর্তা? আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখাও ............

আওয়াজ এল,
 
..........তুমি আগে বলো .........


খালিদ বলল,
 
 .........আমার বইটি কই? সেটা আমার সাথে ছিল ........

আওয়াজ এলো , 

 ..........তুমি ইচ্ছে বলো...... বই পরে পাবে ...........

খালিদ বলল,
 
 .........তুমি এত জোর কেন দিচ্ছো .........

আওয়াজ আবার এলো , 

 ..........বলেই তো দেখো ..............


খালিদ গম্ভীর স্বরে করে বলল,

 ........আমি চাই পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক .........

সেদিক থেকে আওয়াজ এলো , 

 .......কেন ? ........

খালিদ কাঁদতে কাঁদতে বলল,

 ............আমি আমার পরিবারের কাছে যেতে চাই। আমি শুনেছি তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে আছে। পৃথিবী ধ্বংস হলে, হয়তো আমি তাদের কাছে যেতে পারব ............


হঠাৎ, কোন আওয়াজ নেই।

আলোও নেই।

সামনে উড়তে শুরু করল অজস্র সাদা পাখি

খালিদ হাত দিয়ে মুখ ঢাকল

কিন্তু হঠাৎ বিকট শব্দ হলো

সেই রাতেই সেই স্থানে আক্রমণ হলো

যেখানে খালিদ ছিল, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেল

সবাই মারা গেল

পরের দিন, একটি বাচ্চা এবং কিছু মানুষ সেই জায়গায় এলো আশায় যদি কিছু খুঁজে পায়

বাচ্চাটি আশেপাশে খুঁজছিল

হঠাৎ তার পায়ের নিচে কিছু অনুভব করল

সে নীচে তাকাল সে তার পায়ের নিচের বালু সরালো

একটি পোড়া বই পড়ে আছে — বইটির নাম: A Walk to Freedom 











Rate this content
Log in

More bengali story from Itz Nizam

Similar bengali story from Tragedy