Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

শিখন্ডী

শিখন্ডী

8 mins
413


"শিখন্ডী খাড়া করা" অর্থাৎ আড়ালে থেকে কারুর ক্ষতি করা- এই ধরনের জনশ্রুতি বাংলায় খুব প্রচলিত। আসলে এসেছে এই কথাটি মহাভারত থেকেই।শিখন্ডীর এই খাড়া হওয়া মহাভারতের গতি সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছিল।

প্রতিহিংসা কত ভয়ানক হতে পারে অম্বাকে দেখলে বোঝা যায়। কি করেনি সে ভীষ্ম হত্যার জন্য। নিজের জীবন সে দিয়েছে দুই বার। সহ্য করেছে অশেষ লাঞ্ছনা গঞ্জনা কিন্তু প্রতিশোধ নিয়েই ছেড়েছে।

আর সেই চেষ্টায় ছোট ছোট ভূমিকায় অংশ নিয়েছেন রাজা দ্রূপদ যক্ষ ইত্যাদি অনেকে, এমনকি মহাদেব আর কার্তিকেয় পর্যন্ত টানা হয়ে এসেছেন তার ইচ্ছাশক্তির জোরে। শ্রীকৃষ্ণ পর্য্যন্ত সহায়তা করতে বাধ্য হয়েছেন তাকে।

পুরো ব্যাপারগুলো কি নিছকই কাকতলীয় নাকি পুরোটাই ছকে বাঁধা সংঘবদ্ধ?

সময়ের এক আশ্চর্য খেলা, এটুকু সন্দেহ নাই...


অম্বা:

********

কাশীর রাজা ছিলেন কাশ্য। ওনার সুন্দরী তিন কন্যা ছিল নাম ছিল অম্বা অম্বিকা আর অম্বলিকা। যথাসময়ে তিনি স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করেন তিন কন্যার বিবাহের জন্য। এদিকে শাল্ব রাজার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল অম্বার। কথা ছিল শাল্ব রাজা আসবেন স্বয়ম্বর সভায় আর সেখানে মালা দেবেন অম্বা।

শাল্ব

এদিকে হস্তিনাপুর রাজ্যে নিমন্ত্রণ পাঠান নি কাশীরাজ।

কারন হস্তিনাপুরের সুযোগ্য পুত্র ভীষ্ম জ্যেষ্ঠ সন্তান হওয়া স্বত্ত্বেও রাজা হন নি। আর ছোটপুত্র বিচিত্রবীর্য তিনি ছিলেন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কিন্তু তিনি ছিলেন অসমর্থ, তাই কেউ কন্যা দিতে রাজি ছিলেন না। তাই কাশীরাজও চুপ ছিলেন।


কিন্তু হস্তিনাপুরের এরম অসম্মান ভীষ্ম থাকতে হয় কি করে এদিকে কন্যাও প্রয়োজন বিচিত্রবীর্যর সাথে বিবাহের জন্য।

পিতা শান্তনুর ইচ্ছে সেরকমই...

তাই পিতার ইচ্ছেয় ভীষ্ম গেলেন স্বয়ম্বর সভায়। হরণ করলেন তিন কন্যাকে। কাশীরাজ হারলেন গোহারা। উপস্থিত সমস্ত রাজারা হারলেন। হারলেন শাল্ব।

উপস্থিত সমস্ত রাজাদের সামনেই তিন কন্যাকে রথে তুলে তিনি ফিরে চললেন হস্তিনাপুর।


পথে অম্বা বলেন ভীষ্মকে- তিনি ভালোবাসেন রাজা শাল্বকে। শুনে ভীষ্ম তাকে বলেন- রাজা শাল্ব তো হেরে গিয়েছেন। এরকম হেরে যাওয়া রাজার সাথে থাকার চেয়ে হস্তিনাপুরের মত শক্তিশালী রাজ্যে যাওয়া ভালো।

কিন্তু অম্বা রাজি নাহলে ভীষ্ম একদল সৈন্য সহকারে সসম্মানে পাঠিয়ে দেন রাজা শাল্বর কাছে।


অম্বাকে গ্রহন করতে রাজি হন না শাল্ব। তিনি হেরেছেন কিছুক্ষন আগেই ভীষ্মর কাছে। সেই অপমানের জ্বালা ছিল তরতাজা।

তার উপর ভীষ্মর এই দান তাকে অসহ্য করে তুলেছিল। তিনি কঠোর ভাষায় আক্রমন করেন অম্বাকে, বলেন- তোমায় ভীষ্ম করেছে হরণ, জিতেছে ও তোমায়। এখন তুমি ওর সম্পদ। তোমায় আমি আর গ্রহন করতে পারি না। এখন তোমার মালিক একজনই সে হল ভীষ্ম।

অম্বা প্রতিবাদ করেন, বলেন- স্বয়ম্বর সভায় তিনি মালা দিতে চেয়েছিলেন শাল্বকেই। আর মনে প্রানে চাই তোমাকেই, তাহলে কি করে আমি সম্পদ হলাম ভীষ্মর? যেখানে ও আমায় হরণ করেছে জোর করে, যাতে আমার কোন সায় ছিল না।

এরপরে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরে নিজেকে আর অপমানিত না করতে চেয়ে সেখান থেকে চলে যান অম্বা।


সব রাগ অম্বার গিয়ে পড়ে ভীষ্মর উপরে। সোজা যান তিনি ভীষ্মর কাছে। বলেন যে ভীষ্ম তাকে অপহরণ করেছে তাই এখন শাল্ব তাকে আর গ্রহন করবেন না। এখন যেহেতু ভীষ্ম দায়ী, এর জন্য তাই ভীষ্মকেই গ্রহণ করতে হবে অম্বার দায়িত্ব ।

ভীষ্ম বলেন- তিনি চিরকুমার ব্রত ধারণ করেছেন, তাই বিবাহ করতে অপারগ। তিনি বলেন যুবরাজ বিচিত্রবীর্যর সাথে বিবাহ দেওয়া হবে তিনকন্যার। অম্বাও হবেন বিবাহিত।

কিন্তু অম্বা তখন ক্ষিপ্ত। কোন কথাতেই শান্ত হতে চান না। একটাই জেদ বিবাহ তাকে করতে হবে ভীষ্মকেই।

কিন্তু ভীষ্ম রাজী নন। প্রচন্ড রাগে সেই মুহূর্তে সেখান থেকে তিনি চলে যান।


এরপরে তিনি চলে যান জঙ্গলে সেখানে হোত্রাবর্ণ নামে এক মুনির আশ্রমে তিনি আশ্রয় নেন। সেই মুনি সম্পর্কে তার মামা ছিলেন। আশ্রমে আসেন অকৃতবর্ন, যিনি নিজেও পরশুরাম এর শিষ্য ছিলেন।

তারা নিয়ে যান অম্বাকে ভীষ্মর অস্ত্রগুরু পরশুরামের কাছে। পরশুরামের কাছে খুলে বলেন সমস্ত কাহিনী।

পরশুরাম জিজ্ঞাসা করেন কাকে তিনি বন্দী করবেন- রাজা শাল্বকে নাকি ভীষ্মকে।

অম্বা বলেন এদের দুজনের মধ্যে যে মূল দোষী তাকে করতে হবে বন্দী ।

সবার বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন ভীষ্ম।


রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে পরশুরাম তখন ভীষ্মর কাছে গিয়ে আদেশ দেন এই বিবাহে রাজী হবার জন্য, কিন্তু ভীষ্ম অনড় থাকেন তার প্রতিজ্ঞা রক্ষায়।

পরশুরাম এমনিতেই রগচটা মানুষ। বেশি কথা তার পছন্দ নয়। আদেশ না শুনার জন্য তিনি ধারণ করেন তার পরশু অর্থাৎ কুঠার। আক্রমন করেন ভীষ্মকে। ভীষ্ম তার আক্রমন করেন প্রতিহত। এরপরে হয় ভয়ঙ্কর যুদ্ধ।

কিন্তু কোনভাবেই গুরু পেরে উঠেন না শিষ্যকে পরাস্ত করতে। তেইশ দিন ধরে চলেছিল সেই মহাযুদ্ধ।

এমনকি ভীষ্মমাতা গঙ্গা পর্য্যন্ত এসে থামাতে চেয়েছিলেন সেই যুদ্ধ। কিন্তু অসফল হয়ে ফিরে যান। এরপরে সমস্ত দেবদেবী আর নারদ এসে পরশুরামকে শান্ত হবার জন্য অনুরোধ জানান।

শেষে ভীষ্ম নিজেও প্রার্থনা করেন পরশুরামের কাছে শান্ত হবার জন্য। আশ্বস্ত করেন অম্বার সাথে বিবাহ দেবেন বিচিত্রবীর্যর। শুনে পরশুরাম চলে যান।

কিন্তু অম্বা রাজী নন বিবাহ করতে বিচিত্রবীর্যকে।


অম্বা এরপরে শুরু করেন কঠোর তপস্যা। বায়ুভূক হয়ে কখনো যমুনার জলে কখনো যমুনার তীরে শুরু করেন কঠোর তপস্যা। এইভাবে বারো বছর কঠোর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন।


দেবসেনাপতি - কার্তিকেয়র সাধনা করে লাভ করেন একটি নীল পদ্মের মালা। সেই মালাটির বৈশিষ্ট্য হল এটি কখনো শুকবে না। সেই মালা গলায় ধারণ করলে ভীষ্ম কে বিনাশ করা যাবে।

সেই মালা ধারণ করে তিনি যান রাজা দ্রূপদের কাছে। কিন্তু রাজা দ্রূপদ রাজী হন না ভীষ্মর বিরুদ্ধে যেতে।

তখন বিরক্ত আর হতাশ হয়ে অম্বা সেই মালা একটি স্তম্ভের উপরে রেখে কাঠের চিতা জ্বেলে ঘোষণা করেন- আমার এই দেহ নষ্ট করছি যার জন্য তার নাম হল ভীষ্ম।

ধীরে ধীরে তিনি জীবন্ত জ্বালিয়ে নেন নিজেকে।


এরপর ভয়ে আর কেউ সেই মালায় হাত লাগায় না। দিনের পর দিন সেই মালা তাজা হয়েই ঝুলতে থাকে সেই

স্তম্ভে।


শিখন্ডী:

*********

এদিকে দীর্ঘদিন কোন সন্তান হয়না রাজা দ্রূপদের। তিনি তখন কঠোর তপস্যা শুরু করলে মহাদেব প্রীত হন। আশীর্বাদ দেন সন্তানের।

তবে কন্যা সন্তান হবে সে, পরে সেই সন্তান বদলে যাবে পুরুষে।

অম্বা পুনর্জন্ম নেন রাজা দ্রূপদের ঘরে। নাম হয় এইজন্মে শিখন্ডিনি। রাজা দ্রূপদের মনের ইচ্ছে ছিল সন্তান হোক পুরুষ। জন্মগত কন্যা সন্তান #শিখন্ডিনির মধ্যে যত দিন যাচ্ছে প্রকাশ পাচ্ছিল পুরুষ ভাব। তখন রাজা তাকে পুরুষের মত করেই লালন পালন শুরু করেন।

যুদ্ধবিদ্যা সহ বিভিন্ন শাস্ত্র অস্ত্র সবই শিখিয়ে একজন যোদ্ধা বানিয়ে তোলেন।


এরপরে যৌবন প্রাপ্ত হলে বিয়ে দেন রাজা হিরণ্যবর্ণের কন্যার সাথে।

আশা ছিল মহাদেবের আশীর্বাদ যাবে না বিফলে।

কিন্তু বিয়ের পরে যথারীতি শিখন্ডিনি যে পুরুষ নন বরঞ্চ একজন মহিলা, এই তথ্য ফাঁস হলে রাজা হিরণ্যবর্ন পুরোপুরি দায়ী করেন রাজা দ্রূপদকে। জেনেশুনে ঠকানো হয়েছে এই অভিযোগে যুদ্ধ ঘোষণা করেন রাজা দ্রূপদের বিরুদ্ধে।


এইসব ঘটনায় হতচকিত ব্যথিত হয়ে শিখন্ডিনি সব ছেড়েছুড়ে চলে যান জঙ্গলে। আত্মহত্যা করবার জোগাড় করলে এক যক্ষ এসে বাঁচান শিখন্ডিনিকে। শিখন্ডিনির মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে নিজের পুরুষত্ব দিয়ে দেন শিখন্ডিনিকে।

শিখন্ডিনি হন মহিলা থেকে পুরুষ, নতুন নাম হয় শিখন্ডী।

এদিকে যক্ষদের রাজা #কুবের সব শুনে যক্ষকে দেন অভিশাপ, বলেন- যতদিন না শিখন্ডীর মৃত্যু হচ্ছে তুমি থাকবে মহিলাই।


ফিরে গিয়ে শিখন্ডী ধারণ করেন স্তম্ভে রাখা সেই চির সতেজ নীল পদ্ম মালা। সমস্ত লোকজন বুঝে যান ভীষ্মর বিনাশ আসন্ন।


এদিকে অম্বার দুই বোন অম্বিকা আর অম্বলিকা যারা ছিলেন বিচিত্রবীর্যর দুই স্ত্রী। তাদের ভাগ্য বেশিদিন ভালো যায় না। কিছুদিনের মধ্যেই বিচিত্রবীর্য দুর্বল হয়ে পড়েন মতান্তরে দেহান্তর ঘটে।

তখন বংশ রক্ষার জন্য ডাক পড়ে কুলগুরু ব্যাসদেবের। ব্যাসদেবের ঔরসে অম্বিকা ও অম্বলিকা গর্ভে জন্মায় ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু আর দাসীর গর্ভে বিদুর।


ব্যাসদেব ছিলেন ঘোর কালো আর দেখতে মোটেও ভালো নয় বরঞ্চ কুৎসিতই বলা চলে। সেই ভয়ানক রূপ দেখে অম্বিকা চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন ভয়ে, তাই গর্ভস্থ সন্তান জন্মান অন্ধ হয়ে।

আর অম্বলিকা ভয়ে পাণ্ডুর বর্ন ধারণ করেন তাই গর্ভস্থ সন্তান হয় পাণ্ডুর বর্ণের আর জন্ম দুর্বল।

কথিত রয়েছে অম্বলিকা নিজের জায়গায় প্রথমে পাঠান দাসীকে কিন্তু সেই দাসী খুবই শান্ত মনে প্রার্থনা করছিলেন গর্ভস্থ সন্তান যেন হয় ব্যাসদেবের মতোই জ্ঞানী তাই তার গর্ভস্থ সন্তান হন জ্ঞানী।


কুরুক্ষেত্র:

***********

যাইহোক ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র কৌরব আর পাণ্ডু পুত্র পাণ্ডব দের মধ্যে যুদ্ধ লাগে কুরুক্ষেত্রে। ভীষ্ম নেন কৌরব পক্ষ।

ভীষ্ম থাকেন কৌরবপক্ষর সেনাপতি। তার যুদ্ধকৌশলে পান্ডবপক্ষ সেনাদের প্রচুর ক্ষতি হয়। পাণ্ডবদের হার প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে যায়।

কিন্তু পাণ্ডবদের কোন ক্ষতি হয় না।

এইভাবে যুদ্ধ চলতে চলতে অষ্টম দিনে রাত্রে যুদ্ধ শেষে দুর্যোধন বাক্যবানে বিদ্ধ করেন ভীষ্মকে। বলেন- আপনি পান্ডবপক্ষর ক্ষতি করেছেন ঠিকই কিন্তু পাণ্ডবদের সাথে করছেন পক্ষপাতিত্ব। তাই তাদের হত্যা করেন নি।

শুনে ভীষ্ম খুব হতাশ হন।

পরেরদিন যুদ্ধে ভীষ্ম রুদ্ররূপ ধারণ করলে শ্রীকৃষ্ণ খুব দক্ষতার সাথে পাণ্ডবদের বাঁচিয়ে নিতে সমর্থ হন। যুদ্ধশেষে দেখা যায় পাণ্ডব সৈন্য প্রায় অর্ধেক।

এইভাবে লোকবল ক্ষয় দেখে উপায়ান্তর না পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ যান ভীষ্মর কাছে। জিজ্ঞাসা করেন তার মৃত্যু রহস্য, তখন পান্ডবপক্ষ বাঁচাবার জন্য ভীষ্ম বলে দেন তার মৃত্যুর জন্য জন্ম নেওয়া শিখন্ডীর কথা।


সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শিখন্ডীকে পরেরদিন তিনি সারথি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেবেন নিজের পেছনে অর্জুনের রথে।

শ্রীকৃষ্ণ জানতেন অস্ত্র ধারণ করা ভীষ্ম সাক্ষাৎ পিনাক হাতে রুদ্রদেব। তার সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু মহিলার সামনে ভীষ্ম তুলবেন না অস্ত্র।


পরেরদিন যুদ্ধে শিখন্ডীকে আটকানোর বহু চেষ্টা হয়। কৌরবদের একেক ভাই আটকান পাণ্ডবভাই দের। দুঃশাসন আক্রমন করেন শিখন্ডীকে। কিন্তু রাজা দ্রূপদের সহায়তায় বেঁচে যান শিখন্ডী। কিন্তু শকুনির ছুরির আঘাতে জখম হন শিখন্ডী।

আহত শিখন্ডীকে রথে তুলে নেন শ্রীকৃষ্ণ।

এরপর

যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হয় অর্জুনের রথ ভীষ্ম রথের। পিতামহ আর দৌহিত্র হয় সম্মুখ সমর। কিন্তু মাঝখানে রয়েছেন শিখন্ডী। শিখন্ডীকে দেখে অস্ত্র নামিয়ে নিন ভীষ্ম। কারন তিনি মহিলার করবেন না ক্ষতি। শিখন্ডী তখন হাজার তীরের এক বান ছোঁড়েন। সেই তীরের ধাক্কায় ভীষ্মর সারা শরীর হয়ে যায় শরবিদ্ধ। এত এত তীর বিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন রথে ভীষ্ম।

শ্রীকৃষ্ণ আদেশে অর্জুন তখন নিক্ষেপ করেন তীর। সেই তীরের আঘাতে ভীষ্ম পড়ে যান রথ থেকে।


এদিকে ধরিত্রী দেবী গ্রহণ করতে রাজী হন না ভীষ্মর শরীর। কারন ভীষ্ম তার দৌহিত্রর দৌহিত্র গনের দর্শন করেছেন। আর ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করে তিনি পৃথিবীর নিয়ম খন্ডনও করেছেন।

তাই ভীষ্ম শেষ কদিনের জন্য পৃথিবীর আশ্রয় না নিয়ে শরের শয্যা গ্রহন করেছিলেন।


সেইদিন রাতে যুদ্ধশেষে ভীষ্ম পিতামহের কাছে সমস্ত দৌহিত্র গন হাজির হলে ভীষ্ম বলেন তার জন্য বালিশের ব্যবস্থা করতে। দুর্যোধন বহুমূল্য বালিশের ব্যাবস্থা করলে ভীষ্ম তা গ্রহন করতে অস্বীকার করেন, এরপরে শ্রীকৃষ্ণ আদেশে অর্জুন ভীষ্মর মাথায় মারেন তীর। হয় উপযুক্ত বালিশের ব্যবস্থা।

এরপরে ভীষ্মর জল পিপাসা পেলে আরেকটি তীর মাটিতে ছুঁড়লে স্বয়ম গঙ্গা উঠে আসেন মাটির ভেতর থেকে। যত্ন নেন তার মরনোন্মুখ সন্তানের।

ভীষ্ম এরপরে অপেক্ষা করতে থাকেন সূর্য্যের উত্তরায়নের জন্য।


প্রতিদিন তিনি যুদ্ধশেষে তার দৌহিত্র দের নানারকম উপদেশ দিতেন যা পরে যুধিষ্ঠিরের খুব কাজে দিয়েছিল যখন তিনি রাজা হয়েছিলেন।

এইভাবে 58 দিন অপেক্ষা করার পর সূর্য্যদেব মকরক্রান্তি রেখা স্পর্শ করলে তিনি ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেন।


মৃত্যু:

******

এদিকে শিখন্ডী আহত হয়ে থাকেন পাণ্ডব শিবিরে শুশ্রূষার জন্য। আঠেরতম দিনে রাতে ঘুমন্ত পাণ্ডব শিবিরে হামলা করেন অশ্বত্থামা। তিনি পর পর হত্যা করেন উপপাণ্ডবদের, সাথে হত্যা করেন শিখন্ডী আর তার ভাই ধৃষ্টদুমন্যকে।

অন্য আরেকটি মতে, শিখন্ডী মারা যান সেই দশম দিনেই। শকুনি আর অশ্বত্থামার তরোয়ালের আঘাতে হয়ে যান রক্তাক্ত।

কিন্তু রক্তাক্ত শিখন্ডীকে রথে তুলে নেন শ্রীকৃষ্ণ। বেঁচে থাকেন কিছুক্ষন, সেটুকু সময়েই বধ করেন তিনি ভীষ্মকে। কারন দশম দিনের পরে ওনাকে কখনো দেখা যায় নি যুদ্ধক্ষেত্রে।


তবে যেদিনেই মৃত্যু হোক না কেন

শিখন্ডীর মৃত্যুর সাথে সাথে সেই যক্ষ, যিনি তার পুরুষত্ব দান করেছিলেন শিখন্ডিনিকে, তিনি তার পুরুষত্ব ফিরে পান।



              


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance