STORYMIRROR

Riya Singh

Romance Classics

4  

Riya Singh

Romance Classics

শেষ ঠিকানা তুমি (তিন)

শেষ ঠিকানা তুমি (তিন)

6 mins
320

কিছু কি জিজ্ঞেস করার আছে আমাকে মিস্টার স্যানাল? থাকলে করে ফেলতে পারেন কিন্তু এই মুহূর্তে অন্তত দরজা থেকে সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে খুব ভালো হয়।আসলে আসা থেকে আপনি এভাবে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন। ( অয়ন্তিকা)


অয়ন্তিকার কথায় অরিন্দমের হুঁশ ফিরল এতক্ষণ ধরে ওনার পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল। ওনাকে আসা থেকে একঠায় দেখছিল সেটাও বোধহয় নজরে পড়েছে, খেয়াল পড়তেই ওর নিজের কাজে কিরকম লজ্জা লাগলো।


কি বাজে একটা ব্যাপার, প্রথমদিন ই কি অদ্ভুত কাজকর্ম করে ফেললাম। উল্টো পাল্টা ভেবে না বসে । (অরিন্দম)


অরিন্দম এর অবস্থান দিকে কোন রকম পাত্তা না দিয়ে অয়ন্তিকা গটগট করে আগের দিনের মতোই সোফায় বসে পড়লো। কিন্তু অরিন্দম কিছু বলবে যে তার আগেই অয়ন্তিকা মুচকি হেসে বলল,


সরি মিস্টার স্যানাল আপনার আমাকে একটু রুড মনে হলেও , আমি এরকম ই দরকার ছাড়া কোনরকম রিয়াকশন দিই না কখনো। তাই আপনাকে ওইভাবে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। তাহলে মূল উদ্দেশ্যে আসা যাক?


 অরিন্দম কে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যেতে দেখে আবার অয়ন্তিকা বলে উঠলো, 


 এত ভাবার কিছু নেই একজন সাইকোলজিস্ট হয়ে আপনার মনের কথা বুঝতে পারবো এটাই তো স্বাভাবিক তাই নয় কি! এবার কাজের কথায় আসি!


 না এই মেয়ের সামনাসামনি থাকা যাবে না, সাংঘাতিক মানুষ একটা।কখন কি ধরে ফেলবে। ভেবেই অরিন্দম সেটাকে আপাতত চাপা দিয়ে বললো,


আজ থেকে নিশ্চিত আপনি এখানে শিফট করছেন? তাহলে অনুর সাথে কথা বলে নেবেন। বামদিকের পাশেরটা ওর ঘর। ঠিক ওর পাশেই আপনার ও ঘর। কিন্তু আপনার লাগেজ কোথায় ? বলার পর অরিন্দম দেখলো ঠিক একভাবে মিস বসু অরিন্দমের আচার আচরণ গুলো লক্ষ্য করছে আগের দিনের মতো। ঠিক কি কারণে অরিন্দম কে এইভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তা মাথায় ঢুকলো না ওর নিজের।


তাই ওর এরকম রিয়্যাকশন দেখে অয়ন্তিকা বললো,


আমি বিকেল বেলা নিয়ে আসব সবটা ,যদিও খুব বিশেষ কিছু লাগবে না । আমি আগে অনুর সাথে সারাদিন সময়টা কাটাব আর হসপিটালে বলে দেওয়া আছে। আজ থেকে আমি আসছি না কটা দিনের ছুটি নিয়েছি ,পরে আরো সময়টা বাড়িয়ে দেবো। আপনি নিশ্চিত হয়ে বেরোতে পারেন এখন।


অয়ন্তিকার কথায় অরিন্দমের মন ভালো হলেও তবু নিজের নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলে উঠলো,


 চলুন অনুর সাথে আপনার আলাপটা করিয়ে দি আসুন ।তাহলে হয়তো আপনার সাথে মিশতে সুবিধা হবে ওর। ভুল করেও বলবেন না আপনি ওর চিকিৎসা করাতে এসেছেন বরং বলবেন আপনি আমার কলেজের আমার বান্ধবী। এখানে কটাদিন থাকছেন ব্যস এর বেশি কোনরকম কিছু বলার দরকার নেই তাহলেই ওর নিজের কথা বলতে কোন অসুবিধা হবে না।যদিও ও বেশিরভাগ চুপচাপ থাকে।


আমাকে না বললেও, আমি ওর কাছে আপনার বান্ধবী হিসেবে ই পরিচিত হতাম মিস্টার স্যানাল। তবুও দাদা বললে কথাটা যেহেতু বিশ্বাস যোগ্য হবে তাই আপনি ই বলতে পারেন। যেটা সুবিধা আপনি করুন, আমি বাকিটা সামলে নেবো। ( অয়ন্তিকা)


আপনি তো বলেছিলেন দুটো দিন পর থেকে কিন্তু একটা দিন পরেই! না মানে আপনি তো সময় নিলেন, এতো তাড়াহুড়ো না করে আপনি আপনার সময়মতো শুরু করতে পারতেন সবটা যেহেতু আপনি ডক্টর তবুও আপনার দিকটা দেখাও জরুরি ছিল মিস বসু ।(অরিন্দম)


কোন জবাব না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অনুর ঘরের কাছাকাছি এসে অয়ন্তিকা বললো,


আমি কোন কাজ ফেলে রাখি না মিস্টার স্যানাল, একদিন এর মধ্যে সব শেষ করে নিয়েছি । তাই আর দেরি করলাম না , আফটার অল আমিও চাই আপনার বোন সুস্থ হয়ে উঠুক। সেইজন্য আমি বিকালে দরকারি কিছু জিনিস নিয়ে চলে আসবো আপনি ব্যস্ত হবেন না। ঘরে সব রেডি করেই এসেছি। একজন ডক্টরের কাছে পেশেন্ট এর রিকোভার করা কতটা ম্যাটার করে আপনি বুঝবেন না।


ওয়েট ওয়েট আপনি আবার বাড়ি যাবেন নাকি! এককাজ করুন আপনার ঠিকানা দিন আমি নিজেই ড্রাইভার পাঠিয়ে দিচ্ছি ।যেহেতু গোছানো আছে আপনার মা বাবাকে বললেই ওনারা দিয়ে দেবেন , এটাই বেশি সুবিধা হয়ে যেত আপনার।( অরিন্দম)


নিজে কাজ আমি করতে পছন্দ করি মিস্টার স্যানাল, রিল্যাক্স আই উইল ম্যানেজ এভরিথিং। আমি অল্প কয়েকটা জিনিসপত্র আনবো এতো ব্যস্ত হবেন না, সময়ের দাম আছে।( অয়ন্তিকা) 


এতো ফাস্ট সবকিছুতে,বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো। বেশ সবকিছু মেইনটেইন করে চলেন দেখছি, ভেরি গুড, ইমপ্রেস হলাম আমি । অরিন্দমের ভাবনার মাঝে অয়ন্তিকা বললো,


ধন্যবাদ কিন্তু আপনাকে ইমপ্রেস করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। অনু কে ডাকুন, পরিচয় সেরে ফেলি। কথায় কথায় এটাই মিস করে যাচ্ছেন। চলুন দেখি ওকে আগে।


ওয়েট, অনু ! এই অনু দরজা খোল বোন একবার। দেখ কে এসেছে? ( অরিন্দম)


ধীরপায়ে দরজা খুলে গেলেও ভিতরের মানুষ কোনরকম সাড়া না দিয়ে ই বিছানায় শুয়ে পড়লো। অরিন্দম বোনের দিকে একবার তাকিয়ে একটু হেসে বললো,


তুই বলিস না আমার সময় নেই অনেক ব্যস্ত থাকি, এই দেখ আমার বন্ধু এসেছে। কলেজ টাইমের জুনিয়র ছিল , এখানে থাকার জায়গা খুঁজছিল বলে আমাদের বাড়ি নিয়ে এলাম। কথা বলিস আলাপ করে নে ভালো লাগবে তোর।


অরিন্দম যেভাবে কথাগুলো বলছে সেই হিসেবে মনে হয় চিঁড়ে ভিজবে না তাই বাধ্য হয়ে অয়ন্তিকা ই কথা শুরু করলো হাসিমুখে,


হ্যালো আমি অয়ন্তিকা। তুমি অরিন্দমের বোন নিশ্চিত! তোমার কথা শুনেছি। আমার বোন এটা করে না,এটা নয় ওটা নয় ভারী দুষ্টু। কিন্তু তুমি তো ভারী মিষ্টি আর শান্ত। তাহলে অরি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছিলে কেন? তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলতো উমম আজকে ঘুরতে নিয়ে যাবে কোন বাহানা শুনবো না।


অরিন্দম বুঝতে পারছে সবটাই অয়ন্তিকার ট্রিটমেন্টের অংশ, তাই এতো নরমাল বিহেভ করছে যেহেতু বন্ধু। কিন্তু ওর বোনের কোন হেলদোল নেই। একবার অয়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে ওর কথায় তাল মিলিয়ে বললো,


 একদম লঙ ড্রাইভে একেবারে যাবো,আজ সব কাজ বন্ধ হয়ে যাক গে তবু ঘোরা বাতিল হবে না।পাক্কা যাবোই আজ ,জলদি ফিরবো তাহলে।


অরিন্দম কাজ আছে বেরিয়ে গেলেও, অয়ন্তিকাও নিজের বরাদ্দ রুমে গিয়ে বসে অনুর ব্যাপারটা স্টাডি করতে বসলো। সব শেষ করে দেখলো দুপুর অবধি সময় গড়িয়ে গেছে, তাই স্নান সেরে নিচে দেখলো রান্নাঘরে একজন আধবয়সী মানুষ কিছু করছে, ওকে দেখে একগাল হেসে বললো,


আরেহ নতুন দিদিমণি যে। আসেন কি খাবেন? ছোট সাহেব বলেছেন আপনার খেয়াল রাখতে, কেন খাবেন না ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিবো।


খাবার জায়গা থাকতে ঘরে কেন? আমি একসাথে খাবো , আপনার সাথে ই , খাবেন তো আমার সাথে? (অয়ন্তিকা)


আপনি আমার সাথে খাবেন! ছোট সাহেব দুপুরে এখানে আসেন না আর ছোট মামনি ঘর থেকে বেরোয় না খাবারটা দিয়ে আসি তাই আমিও ভাবলাম ... ( রামুকাকা)


তুমি অনুর খাবার দিয়ে আসো অপেক্ষা করছি তুমি আমি একসাথে ই খাবো আজ। ভেবে নাও অনুর পাশাপাশি আমাকে ভালোবাসতে হবে।(অয়ন্তিকা)


রামুকাকা কে অনুর ঘরে খাবার দিতে পাঠিয়ে অয়ন্তিকা ভাবল এই ফাঁকে রামুকাকার থেকে অনুর ব্যাপারে আরো ইনফরমেশন জোগাড় করবে। মেয়েটা একদম ই রেসপন্স করছে না। এই ধরনের পেশেন্ট এই প্রথমবার হ্যান্ডেল করছে অয়ন্তিকা, অনুকে সুস্থ করে তোলাটা ওর কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ আর যাইহোক যে বিশ্বাস ভরসার জায়গা থেকে ওকে কাজটা দেওয়া হয়েছে সেটা সময়মতো চিকিৎসা করলে ভালো ফল দেবে। তাই খেতে বসে রামুকাকার সাথে বিভিন্ন কথা এছাড়া টুকটাক কিছু বলতে বলতে ই জিজ্ঞেস করলো,


আচ্ছা রামুকাকা আমাকে একটা কথা বলো অনুর সাথে আসলে কি হয়েছিলো জানো কিছু? (অয়ন্তিকা)


আমি ছুটিতে এখানে ছিলাম না ছোট সাহেব বিসনেস ট্যুরে গেছিল। আমি তো বড় মা আর বাবার খুন হয়েছে শুনে চলে আইসি,এসে দেখি ওদের লাশ আর অনু মামণি হসপিটালে ভর্তি আছে। হসপিটালে থেকে ফিরে ও হাসেনা কথা বলেনা, আগে কত হইচই ছিল। এখন সব শেষ, তুমি নাকি অনু মামণিকে ঠিক করতে আইছো , তারমানে আগের মতো সব হয়ে যাবে তাই না। ( রামুকাকা)


বুড়ো মানুষটা এই বাড়ির লোকজন কে খুব ভালোবাসে, তাই হয়তো এতো চিন্তা করছে ওদের জন্য । সবটা কথা শুনে অয়ন্তিকা ঠিক করলো এবার একটু একটু করে রোজ অনুর কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবে। অয়ন্তিকা খাওয়া সেরে দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই বলেই বাড়িটা চারদিকের পরিবেশ একটু ঘুরে দেখবে বলে ফোনটা নিয়ে সাথে হেডফোন লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অনেকবার বলা সত্ত্বেও অরিন্দম নিজ দায়িত্বে ড্রাইভার পাঠিয়ে অয়ন্তিকার বাড়ি থেকে ওর জিনিসপত্র নিয়ে ওর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। নাহ ছেলেটা ভারী দায়িত্ববান অয়ন্তিকার মনে হলো তো ! যাক গে প্রথম দেখায় কারোর জন্য চটজলদি ভাবা আবার ঠিকঠাক না।


(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance