STORYMIRROR

Riya Singh

Romance Classics

4  

Riya Singh

Romance Classics

শেষ ঠিকানা তুমি (চার)

শেষ ঠিকানা তুমি (চার)

6 mins
345

অরিন্দম বিকালে ফিরে এসে রামুকাকাকে জিজ্ঞেস করলো অয়ন্তিকার কথা। রামু কাকা জানালো দুপুরে খাওয়ার পর নতুন দিদিমণি পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখবে বলেছে। এরপর বাকিটা উনি জানেন না, কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে এটুকুই বলতে পারবেন। রামু কাকার কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে অরিন্দম ভাবলো একবার মিস বসুর সঙ্গে কথা বলে , বাকি দিনগুলোতে কিভাবে কি সবটা করবে তার একটা ডিসকাশন করে নিলে মন্দ হয় না, অন্তত বোনটা কে সুস্থ হতে দেখলে কোন দাদার ভালো লাগে না !এতে বোনের সুস্থ হয়ে যাওয়ার সুযোগ অনেকটাই বেশি আর তাড়াতাড়ি সম্ভব।


 অনুর রুমের দিকে পা বাড়িয়ে কাছাকাছি গিয়ে ভেতর থেকে অরিন্দমের কোন গানের সুর ভেসে এলো। ও আরেকটু ভালো করে কান খাড়া করে শুনলো একটা মিষ্টি গলায় কেউ গান করছে, এটা শুনতে পেয়ে থমকে গেল অরিন্দম। এখন কে গান করবে তাও মিষ্টি গলায়? খেয়াল করে যখন চেষ্টা করে দেখলো গানটা কোথা থেকে আওয়াজ আসছে, একটু এদিক ওদিক দেখে তারপর এগিয়ে গিয়ে অনুর ঘরের দরজায় কান পেতে বুঝলো এইখানে থেকে আসছে গানের সুর, সেইদিকেই গিয়ে একটু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখতে পেলো অয়ন্তিকা অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে একমনে গান করে যাচ্ছে। গান শেষ করে মুখটা তুলে দেখতে পেলো অয়ন্তিকা মিস্টার স্যানাল একমনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।


কিছু বলবেন মিস্টার স্যানাল ? কখন এলেন? আসলে গান টা করছিলাম আপনাকে আর লক্ষ্য করিনি।( অয়ন্তিকা)


ইটস ওকে, আমি আপনার গান টা শুনেই এই ঘরে এলাম, অনু কি ঘুমিয়ে গেছে ? যাক ও যে আর ভায়োলেন্ট হয়নি দেখে খুশি হলাম।ও অচেনা মানুষ দেখলে এতো হাইপার হয়ে পড়ে তখন সামলানো মুশকিল! (অরিন্দম)


অয়ন্তিকা বরাবরের মতো মিষ্টি হেসে একটু তুলনামূলক নিচু গলায় বলার পর অরিন্দম চোখের পলক ফেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো, 


না কিছু সেরকম বাড়াবাড়ি হয়নি তো ? সেটাই চেক করতে এসেছিলাম। আপনি গান গাইছিলেন শুনছিলাম আর কি, একদিনের মধ্যে এতো ভোলবদল হয়ে গেছে অবাক হলাম। আপনার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা জানাবেন।


ধীরে কথা বলুন মিস্টার স্যানাল অনু এই সবেমাত্র ঘুমিয়েছে । যদিও যখন এলাম তেড়ে আসছিল কিন্তু আদর যত্নের ভাষা সবাই বোঝে , জানেন তো সেটাই প্রয়োগ করে দেখলাম শান্ত হয়ে গেলো ব্যস... (অয়ন্তিকা)


অয়ন্তিকা বুঝতে পারছে প্রথম দিনের দেখা রুড বিসনেসম্যান কথাগুলো বলছে না বরং এই মুহূর্তে একজন দাদা বোনের ব্যাপারে প্রটেক্টিভ হয়ে নিজের চিন্তা গুলো প্রকাশ করছে। এটা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত ভালো না যে! তাই কথার ভাঁজে একটু ভেবে উত্তর দিলে উনি চুপ হবেন হয়তো । তাই উত্তেজিত না হয়ে ধীরগলায় বললো,


অনুর প্যানিক অ্যাটাক এসেছিল, বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হেডফোনে গান শুনছিলাম একটা একদিকটা খুলে রেখে গান চালিয়ে রেখেছিলাম। ওর গোঙানির আওয়াজ আসছে দেখে এসে জড়িয়ে ধরি, যেটুকু বুঝলাম সেদিনের ঘটনা ওকে প্রচুর পরিমাণে ডিস্টার্ব করছে। তাই বাধ্য হয়ে গান গাইতে ওকে ঘুম পারিয়ে দিলাম। আজ আর বেরোবো না, এইমুহুর্তে বেরোনোর থেকেও ওর ভয় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে ওটাই জরুরি বেশি। আর একটা কথা অনু নিজের মেডিসিন এগুলো রেগুলারলি নেয় না কারণ আমি দেখলাম হিসেব মতো অনেক গুলোই ওষুধ মেডিসিন পাতা থেকে কমে আসার কথা সে জায়গায় দেখলাম দু'তিনটে ছাড়া আর কোন মেডিসিনে নেওয়া হয়নি ঠিক মতোই, এই দিকটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আপনি কি তাহলে ওর কেয়ার করেননি? আপনার কেয়ারলেস থাকাটা বোধহয় আরো একা করে দিয়েছে ওকে তাই হয়তো...


অয়ন্তিকার বলা কথাগুলো অরিন্দমের মনে কাঁটার মত কোথাও গিয়ে আজকের মনে হচ্ছে ওর বোনের এ অবস্থার জন্য দায়ী হয়তো ও আছে।সময় দিলে আরো যত্ন করলে ওর বোন এতটা একা হয়ে যেত না। আজ একজন অচেনা মানুষ ওকে সেই কথাগুলো স্পষ্ট করে বলে দিলো। গিল্টি ফীল হলেও সেটা আর বাইরে প্রকাশ না করেই নিজের রুমে চলে গেল অরিন্দম। । অরিন্দম কে ডাকতে গিয়ে ওর ফ্যাকাসে মুখটা চোখ এড়িয়ে যায়নি অয়ন্তিকার। অচেনা মানুষ হয়েও এগুলো বললেও সত্যি এটাই তাই থেমে গেল ওখানে। বরাবরই সোজাসুজি কথা বলা অয়ন্তিকা একটু দমে গেল কি!

  তখনের মতো দুজনের মধ্যে কেউই একে অপরের মুখোমুখি হয়নি, ব্যাপারটা ওখানে ই স্থগিত ছিল। রাতের দিকে অনু কে অয়ন্তিকা নিজে খাইয়ে দিয়েছিল।যদিও সেটা রামু কাকা অরিন্দম কে জানায়, খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাতের দিকে বোনের ঘরে গিয়ে অনুর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলো অরিন্দম। আলতো হাতে মাথাটায় হাত বুলিয়ে একটা চুমু খেয়ে বেরোতে গিয়ে দেখলো মিস বসু ঢুকছে। অরিন্দম বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই অয়ন্তিকা পিছু ঠেকে বললো,


বোন ঘুমন্ত অবস্থায় আছে তখন আদর না করে ও জেগে অবস্থায় ওকে ভালোবাসতে শিখুন। তাহলে ওর জলদি সুস্থ হওয়ার চান্স বেশি।


অরিন্দম কোনদিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল আর অয়ন্তিকা ওখানে ই বসে পড়লো। ও খুব করে চাইছে মেয়েটাকে সুস্থ হয়ে উঠুক। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে এরা নিস্প্রাণ হয়ে থাকলে মানায় বুঝি! আপাতত অনু কে কদিন বুঝিয়ে ওর বন্ধু হয়ে ওর ভিতরকার কষ্ট গুলো টেনে বার করতে হবে তবেই...


অরিন্দম অনুর রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের বারান্দায় ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো, অনেকদিন পর আজ সিগারেট টা ধরিয়ে সুখটান দিলো। মনের ভিতর এর অস্থির ভাবটা কিভাবে কমাবেন তার উপায় হিসেবে সিগারেট বেছে নিয়েছে। বহুদিন পর শখের বশে সিগারেট এর টান। কিছু একটা ভাবতেই অরিন্দমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো, মনে মনে কিছু ভাবনা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তবুও কোথাও গিয়ে ভরসা আছে ওর বোন ঠিক হবে।সেটা স্বীকার করতে ওর মাথা সায় দিলো না তাই বলে উঠলো,


এতো জলদি একদিনে একটা মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে পারে মানুষ এটা একটা ট্যালেন্ট নাকি আমি একটু বেশি ভাবছি। আদৌও মিস বসু সেরকম নয় আমিই বরং ওনাকে আনিয়েছি আঙ্কেলের রেকোমেন্ডে।যত ভাবছি জট পাকছে এদিকে এখনো আসল কালপ্রিট ধরাই পড়ছে না।


হ্যালো,মা আমি ঠিক আছি। না অসুবিধা হয় নি , এখানে সবাই ভালো আর রাজীব আঙ্কেল এর চেনা তো সব ভালো ই হবে। মা এখনো রেগে আছে নাকি বাপি? ওষুধ খেয়েছো বেশি চিন্তা করো না । সব ঠিকঠাক হবে আই হোপ সবটা আগামী দিনেও ভালো হবে রাখছি। ( অয়ন্তিকা)


অয়ন্তিকা ওর বাবার সাথে আরো কিছু জরুরী কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো, মোটামুটি ভালো একটা রেসপন্স করছে না অনু তবুও আজ ভয় পেয়েও যখন অয়ন্তিকা ওকে বাচ্চাদের মত জড়িয়ে ধরে শান্ত করছিলো তখন মায়া লাগছিল যতটা সম্ভব ওকে চেষ্টা করতেই হবে।

কিন্তু ঘুম বড় বেইমানি করলে আর কি করা যাবে? মাঝরাতের দিকে অয়ন্তিকা কে আবার উঠতে হলো অনুর জন্য।

আবার সেই প্যানিক অ্যাটাক অরিন্দম অনুর চেঁচামেচি শুনে হুমড়ি খেয়ে এলো। সমানে বোন কে শান্ত করার চেষ্টা করছে, তাই একটা ঘুমের ওষুধ জলের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে আপাতত ওকে শুইয়ে দিলো। নাহ আর আলাদা নয় এইবার ওকে অনুর সাথে ই থাকতে হবে। নয়তো কি হয়ে যায়? অনু কে ঘুমোতে থাকতে দেখে অয়ন্তিকা অরিন্দম কে বাইরে আসতে বলে দরজা ভেজিয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। বোনের কপালে একটা চুমু দিয়ে অয়ন্তিকা পিছন পিছন আসে।

দরজা ভালো করে বাইরে থেকে লক করে এসেছেন তো ?

অয়ন্তিকার কথা শুনে অরিন্দম ফ্যাল ফ্যাল করে ভাবলো একটা মানুষ কিভাবে এতো কিছু বুঝতে পারে মানছে সাইকোলজিস্ট তাও বেস্ট তবুও এতো শার্প কেন ব্রেন?

শুনছেন! কোথায় হারিয়ে গেলেন মিস্টার স্যানাল!( অয়ন্তিকা)

ওহ কিছু না। আপনি ডাকলেন হঠাৎ! কোন অসুবিধা হচ্ছে কি? (অরিন্দম)

একদম না, আপনি নিশ্চিত থাকুন এই ব্যাপারে, কিন্তু আমাকে বলুন আপনার বোন আপনার সাথে শেষ এই কদিনে কবে কথা বলেছে? বা এমনকিছু ও খুব পছন্দ করতো বাধ্য হবে সাড়া দিতে আমাকে বলুন এগুলো। ( অয়ন্তিকা)


দেখুন মিস বসু সেরকম কিছু না কিন্তু ও পাখি ভালোবাসে নতুন নতুন কিছু ট্রাই করতে পছন্দ করে আগে তো সারাক্ষণ পিছনে লাগতো। বিরক্ত করতো এখন...

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অরিন্দম।

সেই অনু কেই ফিরিয়ে আনবো কথা দিলাম। আপনিও সহযোগিতা করবেন তাহলে ই হবে। লেটস বি এ ফ্রেন্ডস বলেই হাতটা অরিন্দমের দিকে বাড়িয়ে দিল অয়ন্তিকা।

অরিন্দম কিছুক্ষণ থমকালো তারপর মাথা চুলকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।

তাহলে মিস্টার স্যানাল ও দোনোমোনো করে কাজ করে বাহ বেশ ভালো ব্যাপার তো। সিক্রেট টা আমি ধরেও নিয়েছি এতো জলদি!

অয়ন্তিকার কথা শুনে অরিন্দম বুঝলো ওকে জেনে বুঝে অয়ন্তিকা ক্ষ্যাপাচ্ছে। তাই কোনরকম কিছু রিয়্যাকশন দিলো না। শুধু বললো,

মিস বসু রাত হচ্ছে যান ঘুমিয়ে পড়ুন গুড নাইট। 

অয়ন্তিকা ও শুধু গুড নাইট বলে চলে গেল।


(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance