শেষ কথা
শেষ কথা
দ্বিতীয় পর্ব
মহাকাশ থেকে একটি পাথর কে পৃথিবী পৃষ্ঠে ছুঁড়লে সেটি যে গতিবেগে পড়বে তাঁর থেকেই দ্বিগুণ বেগে আমার মনটা ধাক্কা খেল।আমি বললাম "তোকে তো একনিষ্ঠ পুরষ হিসেবেই আমি জানতাম,নারীর প্রতি এহেন তীব্র আকর্ষণ কবে থেকে?নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ এ যে স্বাভাবিক ব্যাপার,কিন্তু এইভাবে নিজের পুরুষত্বকে গঙ্গায় নিরঞ্জন করে নিজেকে দুর্লভ বলে পরিচিতি দেওয়া টা ঠিক বলে মনে হচ্ছে কি?"
সে বললে "তুই ওইসব বুঝবি না,তোর নাস্তিক মার্কা সুঠাম মাথায় রবি ঠাকুর চেপে বসতে পারে তবে ভালোবাসার দায় পরে নি যে সে সেখানে ঘর বাঁধতে যাবে".
"দরকার নেই আমার ওই খেলার যেখানে জয়ের আগে পরাজয়ের চিন্তা করতে হয়।আমি আমার রবি দাদু কে নিয়ে অনেক সুখে আছি।"
"হ্যাঁ তাই ভালো"।এইবলে সেদিনের মত আড্ডার সমাপ্তি ঘটলো।কিন্তু সেদিন আমি পন রেখেছিলাম যে পরের রবিবার আমাকে তার সাথে নিয়ে যেতেই হবে নাহলে বন্ধুত্ববিচ্ছেদ ঘটে যাবে।মনীশ আর যাই করুক সে আমাদের বন্ধুত্বকে শ্রদ্ধা করে তাই অগত্যা আমি তার সাথে হাজির হলাম রবিবার বিকেলে বাগবাজার ঘাটে।কিছুক্ষন বসার পরেই হটাৎ মনীশ আমাকে আড়চোখে একটি মেয়ের দিকে তাক করে ইঙ্গিত করলো।শরতের নীল আকাশে হটাৎ করে কালো বাদল এসে যেমন আকাশের বুকটা কাঁপিয়ে যায় ঠিক সেইরকম আমার শিরদাঁড়া হতে একটি শিহরণ খেলে গেল।এ আমি কাকে দেখছি লাল পারের সাদা শাড়ি পড়া,ফর্সা,চুলটি যত্ন সহকারে বাঁধা, ঠোঁটে লিপস্টিক,কপালে লাল টিপ,চোখ দুটিতে কিসের জানো একটা আকর্ষণ রয়েছে সেই চুম্বকীয় আকর্ষণ আমার শক্ত লোহার মতো মনকে গলিয়ে তার আগুনে পুড়িয়ে দিলো।সাথে সাথে আমি মনীশ কে জিজ্ঞেস করলাম "মেয়েটির নাম কি?"
সে বললে "স্নেহা"
"তোর সাথে আলাপ কিভাবে হলো?"
মনীশ একটু সংকোচ করেই উত্তর দিল "আমার এক বন্ধুর বোন।"
সেদিন মনীশের ব্যবহারেই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম সে ওই মেয়েটির কথা বলতে ঠিক স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে না।সেইদিন বাড়ি ফিরেছিলাম নেশাতুর অবস্থায়,সেই মহা মানবীর কোনো এক দুর্লভ পাত্রের সুরা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্ময়ের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিল।সেই নেশাতুর অবস্থায় সেদিন রাতভোর নিদ্রা আমার মনের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতে পারে নি,অনাহুত অবস্থায় নিদ্রাহীন ভাবেই সেই রাতটি আমাকে কাটাতে হয়।আমার মনের প্রশস্ত আঙিনা যেন তার সুবাসেই পরিপূর্ণ ছিল।নতুন এক অজানা,অচেনা উত্তেজনা বার বার নিজের মধ্যে খোঁচা দিচ্ছিল,সেটিকে এড়িয়ে যাওয়ার সমস্ত রকম প্রচেষ্টাই বার বার ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছিল।এ কেমন যুদ্ধ যেখানে নিজের বিরোধী আমি নিজেই।সেই উত্তেজনা বেশিদিন বশ করে রাখা সম্ভব হলো না,মাঝখানের শুধু একটি রবিবার বাদ দিয়ে আবার গেলাম মনীশের সাথে সেই মহামানবী এর উদেশ্যে।প্রথমদিন বোধ করি কিছুটা আশ্চর্জচকিৎ হওয়ার ফলেই হয়তো তার সাথে আলাপ করার অদম্য সাহসটা আমি দেখাতে পারিনি কিন্তু আজ আগেভাগেই ভেবে চিন্তে গেছিলাম তার সাথে আলাপ সেরে আসবো।স্নেহা তার বন্ধুদের সাথে প্রতি রবিবারই বাগবাজার আসে ফলস্বরূপ স্নেহার আকর্ষণে মনীশও তাদের আড্ডায় যোগদান করে।প্রথম দিন আমি দূর থেকেই তাদের সমস্ত আড্ডাটা হজম করেছিলাম,কিন্তু আজ মনীশ এর আগেই আমি এগিয়ে গেলাম আলাপচরিতার জন্যে সেই সময় মনীশ এর চোখে একটু বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করেছিলাম।প্রথম আলাপেই কিরকম যেন একটা দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গিয়েছিল আমাদের,তাঁর চোখে আমি কিছু প্রশ্ন দেখতে পেয়েছিলাম আশা করি বিপরীত দিক থেকেও সেই একই জিনিস অনুভূত হয়েছিল কিন্তু শেষ অব্দি সম্ভাষণ দিয়েই শুরু করতে হয়েছিল।তারপর সে যেন আমাকে একেবারে আমাকে চমক করে দিয়ে বললে -"আগের দিন ওইভাবে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথাবার্তা দেখছিলেন কেন?সামনে আসার সাহসটা বুঝি আজ জুগিয়ে আনলেন?তা এতে করে তো কিছু মাত্রায় আপনার পৌরুষত্বের মান কমলো তাই না কি?
আমি তো প্রথমে একেবারে চমকে গিয়ে পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেম -"এ কথা বলতে দ্বিধা করবো না যে আগের দিন আপনাকে কিছুটা ভয় হয়েছিল..
"মানে ভয়??সেকি আমি তো নিজেকে একজন ভালো মানুষ বলেই জানতাম"
"আমাকে বলতে দিন আগে"
"আচ্ছা বলুন"
"ভয় বলতে সেই ভয় নয়, আপনার ব্যাক্তিত্ব,চালচলন এবং গাম্ভীর্যতাকে সেদিনই আমি মনে মনে শ্রদ্ধা করেছিলাম এবং সেখান থেকে হয়তো কিছু পরিমান আবেগরোধী ভয় সৃষ্টি হয়েছিল বৈকি।কিন্তু আজ তৃতীয় বিশেষণটিকে ছুটি দিচ্ছি আপনার জন্যে।ওটা দেখছি আপনার সাথে একেবারে বেমানান।"
"হ্যাঁ তা আপনি মন্দ বলেন নি,ওটা আপনার ভুল ধারণাই ছিল কারণ আমি একেবারেই গম্ভীর নই।"
সেদিন আমি শুধু স্নেহার চোখ দুটির দিকে তাঁকিয়ে সুবোধ ছাত্রের মত ওর কথাগুলি হজম করছিলাম,কিরকম যেন একটা তৃপ্তি হচ্ছিল,মনে হচ্ছিল আমি যেন এক সুন্দরের দেশে হারিয়ে যাচ্ছি যেখান থেকে বেরোবার কোনোরকম ইচ্ছে আমার নেই।এইভাবেই চলতে থাকলে আরো অনেকগুলি রবিবার ক্রমাগত স্নেহার সাথে দূরত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকলো আমি আরও কাছে যেতে লাগলাম।এইসময় রবি ঠাকুরের গান গুলি যেন মনে বেশিমাত্রায় বাসা বাঁধছিল।প্রতিটি লেখায় যেন একটি করে নিজ মূর্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম।অবশেষে এক রবিবার মনীশের শরীর খারাপ ঘটলো কিন্তু আমি বাগবাজারকে ভুলতে পারলাম না,আমার প্রাণটা যে এখন ওই গঙ্গার জলেই সাঁতার দিয়ে বেড়াচ্ছে।মনীশ আমাকে বললো -"আজ আর যাওয়া হবে না,শরীরটা খুবই খারাপ ।তুই একা একা যাসনা ব্যাপারটা বাজে দেখাবে "
আমি বললাম "কেন এতো বাজের কি আছে?আমি তো এখন ওদের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ"।
শেষকালে বেশরকম জোর করেই আমাকে যেতে হয়েছিল।সেদিন আমি মনীশ কে প্রথম রাগতে দেখি এর আগে কোনোদিন এই ঘটনা ঘটেনি।যথারীতি আমি বাগবাজার পৌঁছে গেলাম ঠিক সময়ে আর ভাগ্যক্রমে ওইদিন স্নেহাও একা এসেছিল। সে আমাকে প্রশ্ন করলে "মনীশ আসেনি আজ?"
বললেম -"না"।
"তুমি একাই চলে এলে বন্ধুকে ছেড়ে?এত কিসের টান?গঙ্গার আবহাওয়ার?"
"হ্যাঁ গঙ্গার এই আবহাওয়া টিকে যে আমি বিশেষেরকম ভালোবাসি,যে ভালোবাসা একেবারে খাঁটি সোনা।"
"এত ভালোবাসা আসে কোথা থেকে শুধুই গঙ্গাকে দেখে,এটা যে মানতে বড় কষ্ট হয়!"
"কেন কষ্ট হয় কেন?"
"তুমি যদিও একটি অন্য প্রকৃতির মানুষ তবু তোমার মধ্যে এতটা প্রকৃতি প্রেম আছে ইহা ভাবা যে দায়।"
"সব প্রেমের কি রূপ থাকে?চন্দ্র যে দিন-রাত অবিশ্রাম রত অবস্থায় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, পৃথিবীর অন্ধকার রাত গুলিকে আরো মায়াবী করে তুলছে তবুও তো সে আজ অব্দি পৃথিবীর কাছে এক ফোঁটা আলোর দাম চায় না বা তার পরিশ্রমের এক বিন্দু মূল্য!"
"তুমি কি আজকাল কবি হয়ে যাচ্ছ?এটাও কি গঙ্গার প্রভাব?"
হঠাৎ করে স্নেহার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললেম-"শুনতে চাও সত্যি টা কি??"
সে রীতিমত ঘামতে শুরু করেছে ,রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে বললে-"হ্যাঁ চাই।"
"শোনো তাহলে,হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার টানেই ছুটে আসি প্রত্যেক রবিবার এই স্থানে।গঙ্গার আবহাওয়াটা হয়তো আমার ভালোবাসা কিন্তু সেই ভালোবাসার অনুঘটক তুমি,যে আমার কাছে সর্বদাই ধ্রুবক।আমি সবকিছু হারাতে পারি কিন্তু তোমাকে না।"
সেদিন স্নেহা আমার সাথে ওই বিষয়ে আর কোনো কথা বলেনি সে শুধু চুপ করে আমার কথাগুলি শুনে যাচ্ছিল।তার মধ্যে আমি একটা বিস্ময়সূচক ভাব পেয়েছিলাম।এরপর থেকে যতবারই এই বিষয়ে স্নেহার সাথে কথা বলেছি তাঁর মধ্যে একটা এড়িয়ে যাওয়া ভাব লক্ষ্য করেছি।বোধ করি একটু বিরোক্তিজনক ভাবই প্রকাশ পেয়েছিলাম,আমার এই কথাগুলি যেন কিছুতেই তার মনে বসছে না।আমাদের দেখা করার মাত্রাটিও অনেক ত্বরান্বিত হয়েছিল,আমরা তখন সপ্তাহে রবিবার ছাড়াও অন্যদিন গুলিতেও দেখা করতাম,তবু অত মেলামেশার মাঝেও কোনোদিন আমি আমার প্রতি তার অনুভূতির ভাব জানার অবকাশ পাই নি সেই অর্থে বলতে গেলে সে অবকাশ দেয়নি।কিন্তু সে আমার সাথে দেখা করতে নিয়মিত আসতো এবং এই পুরো ঘটনাটাই চলত মনীশের অজান্তে।প্রথম কয়দিন হয়তো আমি নিজেই নিজের ভাবনায় ডুবে থাকায় মনীশের ব্যবহারের পরিবর্তনটি লক্ষ্য করিনি কিন্তু দিনকতক পর তার চরিত্রের আমূল পরিবর্তনটি আমি লক্ষ্য করেছিলাম।আমাকে সে সহ্য করতে পারছিল না।আমি বোধহয় ভুলেই গেছিলাম স্নেহাকে ও ভালোবাসত,ওর সূত্রেই আমার স্নেহার সাথে পরিচয় কিন্তু আমি সেই ভাবনা বিসর্জন দিয়ে স্নেহাকে নিজের মনের পূজনীয় বানিয়েছি।কিন্তু আমি কি করতে পারি যে অবস্থার সামনে এখন আমি দাঁড়িয়ে সেথা হতে স্নেহাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।প্রতিটি অঙ্গে -প্রত্যঙ্গে ,শিরা -উপশিরায় আমি তার মালা গেঁথে রেখেছি,সেই মালা ছিড়তে গেলে যে আমায় নিজেকে ধ্বংস করতে হবে,ইহা সম্ভবপর হওয়ার সম্ভাবনাই যে অসম্ভব।একদিন হটাৎ মনীশ আমাকে বলে উঠলে -"প্রসূন তুই আমার সাথে আর বন্ধুত্ব রাখিস না।আমাদের সম্পর্কটা ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে তার চেয়ে যেইটুকু ভালোবাসা উপস্থিত আছে তাকে যত্ন করে রেখে দেওয়াই ভালো"।
আমি বললেম "তুই কেন এইসব কথা বলছিস,আমি তো চাইনা এই বন্ধু বিচ্ছেদ এইরকম বন্ধুত্ব যে অমৃতের সমান।"
"না ভাঙা জিনিসকে শক্ত করে জোড়া দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।সম্পর্কের মিথ্যা জালের থেকে আমি ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে বেশি ভালোবাসি আর যে সম্পর্কে স্বাধীনভাবে মেলামেশার অধিকার থাকে না সেইরকম সম্পর্ক আমি মেটাতে পারবো না।"
"তুই ভুল করছিস কিছুই শেষ হয় না সব ঠিকই আছে।"
"ঠিক আছে?হাসালি যে!"
"কেন কি করেছি আমি?"
"তুই এখনো জিজ্ঞেস করছিস?লজ্জা করেনা তোর?"
"না করেনা আমার।কেন করবে বলতো?তুই জানিস আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি স্নেহাকে দেখে।আমি আবার প্রতিটি জিনিসকে ভালোবাসতে শিখেছি।"
"হ্যাঁ হয়তো শিখেছিস।কিন্তু নিজের বন্ধুকে আরো দূরে ঠেলে দিয়ে।তুই যে ভালো করে জানতিস আমি স্নেহাকে ভালোবাসি তারপরেও কি করে তুই এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা করলি"।
"তুই এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা বললি?"
"তাছাড়া কি এটা!"
"আচ্ছা তাহলে তাই কিন্তু স্নেহাকে আমি ভালোবাসি আর আমাকেও সে ভালোবাসে তুই ওকে ভুলে যা তুই ভালো থাকবি তাতে"।
এরপর মনীশ রেগে বেরিয়ে যায় তারপর সাথে আর কোনো কথা হয়নি তার সাথে।একটি বিশুদ্ধ সম্পর্ক ধ্বংস হয়েছিল সেদিন ভালোবাসার কাঁটা তাঁরের অন্তরে।মনে হচ্ছিল খুব দামি একটা জিনিস হারাচ্ছি তবু ভালোবাসার প্রলেপে তাহা বার বার পিষ্ট হচ্ছিল।চাপা যন্ত্রণায় মনটা ফেঁটে যাচ্ছিল কারণ মনীশকে আমি কখনোই হারাতে চাইনি,রাখতে চাইনি তাকে স্মৃতির আস্তাকুঁড়ে, তাকে সবসময় উজ্জ্বল বর্তমান করতেই চেয়েছিলাম কিন্ত ভালোবাসার মোক্ষ জীবাণুর ফলে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই সেই বর্তমান ধ্বংস হয়েছিল।পরের দিন স্নেহার সাথে দেখা করতে গেলে আমি প্রথম প্রশ্ন করে বসি -"তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো?"
স্নেহা বললে"হটাৎ প্রথমেই আজ এই প্রশ্ন? রবি ঠাকুরের ছোঁয়া কি আরো বেশি করে গাঁয়ে লাগছে নাকি?"
আমি বললাম -"যারা রবি ঠাকুর কে নিজের মনের মনিকোঠায় বসায় তাদের ছোঁয়া পেতে লাগে না তাঁরা রবি ঠাকুরের আশীর্বাদ পায়।যে কোনো অবস্থার পরিণতি দেওয়ার ক্ষমতা তদের এমনিতেই চলে আসে,এটা রবি ঠাকুরের মহা প্রসাদ সবাই এর ভাগ পায় না কারণ তার জন্য আগে পূজাটি করতে হয়।তুমি শুধু আমার প্রশ্নটির উত্তর দাও।
স্নেহা আবার ঘর্মাক্ত অবস্থায় কিন্তু একটু ভেবে চিন্তে উত্তর দিল -'আমার উত্তরটি যদি না হয় তবে?"
আমি বললেম -"তবে বুঝবো যে গোলাপকে আমি নিজভেবে বাগান থেকে তুলে এনেছিলাম সেটির সৌরভ টুকুই আমার প্রাপ্য,ফুলটিকে নয়।আমি সবার মতো তার সৌরভের অংশীদার কিন্তু তার জীবনের নয়।
"আহঃ কিসব যে তুমি বলনা প্রসূন আজকাল,আমি কিছুই বুঝতে পারিনা শুধু হেঁয়ালি।"
"তুমি যাকে হেঁয়ালি বলছো তাকে আমি রত্ন মনে করি,তা
হার মূল্য তুমি বুঝবে না।উত্তরটি কিন্তু এখনো পেলাম না"।
"কিসের এত তারা তোমার প্রসূন?আমি কি মরে যাচ্ছি নাকি।"
"মরা বাঁচা তো শারীরিক যন্ত্রের খেল,যন্ত্রের মেয়াদ ফুরালে তোমাকে যে যেতেই হবে ওই তোমাদের মতে যাহা বিধাতার খেল।তাই মরণের দোহাই দিয়ে একটি সত্য কথাকে কবরস্থ করোনা।"
"বাপরে তোমার সাথে দেখছি আর বেশি কথাই বলা যাবে না পাছে যে পৃথিবীর সমস্ত কালো রূপধারী মেঘবালিকা দের নিয়ে বজ্রপাত সৃষ্টি হবে।"
"তা হবে বৈ কি।আমি একটু বেশিই আত্মদৃঢ় কিনা।"
"প্রসূন তুমি আমাকে ভুলে যাও।"হটাৎ বলে উঠলো স্নেহা।এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত।দেহের শিরা-উপশিরা দিয়ে বাহিত রক্তস্রোত তখন হৃদপিন্ডে যে জোরালো ধাক্কা দিলো তার ভীত ধ্বনি যেন স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছিলাম।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বার কয়েক বার গলা ঠিক করে বললেম -"এ তুমি কি বললে?এ হেন উত্তর যে আমি কিছুতেই আশা করতে পারিনা।আমি তোমার থেকে শুধু ধনাত্মক দিকটাই আশা করছি,ঋণাত্মক ভাবে তুমি দিতে চাইলেও যে আমি সেটা নিতে পারিনা,তাহা একেবারে সম্ভব নয়।তুমি যদি এই জন্যে আমাকে স্বার্থপর,লোভী বলে আখ্যা দাও আমি তাহলে তাই কিন্তু অত মহান আমি হতে পারিনা।"
হটাৎ করে স্নেহা আমার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টি দেখে নিয়ে একটু উচ্ছস্বরেই বলে উঠলো-"আজ অনেক দেরি হয়ে গেল,আজ যাই।"
সেই প্রসঙ্গে তারপর আর কোনো কথাই হলো না।সেইরাত আমাকে বিনিদ্র অবস্থায় কাটাতে হয়।চোখের পাতাগুলি নিজেদের কথোপকথনে একাগ্রভাবে ব্যাস্ত ছিল ওরা কিছুতেই চুপ করেনি সেই রাতে।মনের কড়া নেড়ে বারবার বিবেক শুধু একটি কথাই বলে যাচ্ছিল "স্নেহা আমার,ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না"।সেদিন হটাৎ করেই আমার খুব জ্বর আসল একেবারে অসময়ে,অসঙ্গতভাবে এইভাবে জ্বর আমার কখনোই আসতো না।এরপরে দিন কতক স্নেহার সাথে দেখাই হয়নি,মন মেজাজ খুব নিরস হয়ে পড়েছিল।এখন প্রায় ঘন ঘনই জ্বর আসতো তবু তার কারণ কিছুতেই খুঁজে বার করতে পারছিলাম না।আজ আবার স্নেহার সাথে দেখা করতে গেলাম কিন্তু সেদিন সে নিজেই আমাকে প্রস্তাব করলে- "চলো আজ একটু বেরিয়ে আসি।"
বেরিয়ে আসি কারণ আমার বাড়ি শ্যামবাজার চত্বরেই আর স্নেহার বাড়িও বাগবাজারে তাই এইরূপ কথা। আমি বললেম -"কোথায় যাবে?"
স্নেহা বললে -"ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল চলো।"
শ্যামবাজার থেকে বাস ধরে দুজনে ভিক্টোরিয়া পৌছালাম,পশ্চিমগামী সূর্যটা তখন শেষ কয়েকবার উঁকি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভিক্টোরিয়া এর ভিতরের ঝিল টির পাশে বসে হঠাৎ আছি দুজনেই,বিনা বাক্যব্যয়ে হঠাৎ করেই স্নেহা আমার হাতদুটি কে তালুবন্ধ করে বললে-"আমি ভালোবাসি তোমাকে।"
আমি রীতিমত অপ্রুস্তুত হয়েই বললেম -"এত সময় নিলে এই ৩টে শব্দ উচ্চারণ করতে।"
"হ্যাঁ নিলাম সময়,কারণ আমার মনে যে ভয় হয় তোমাকে হারিয়ে না ফেলি"।
"মানে?এতে হারানোর কথা কোথা থেকে আসছে এরফলে তো আমরা আরও কাছে এসে পড়লাম"।
"সেটাই তো সবচেয়ে বড় ভয়,একবার কাছে এসে পড়লে যে দূরে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয় পড়ে।"
"এতে তো আমাদেরই ভালো,আর এখন দূরে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন?আমি এই সম্পর্কের সর্বোত্তম পরিণতি দিতে চাই।"
"প্রসূন তুমি এটা যত সহজ ভাবছো এটা ততটা সহজ হবে না।আমরা দুজন কিন্তু দুটি ভিন্ন মেরু।তোমার বিপরীত সব গুন গুলি যে আমার মধ্যে বর্তমান।আমি একজন ঈশ্বর বিশ্বাসী,আস্তিক মানুষ।"
"একটি নির্মম ভালোবাসার কাছেও কি আজ ধর্ম সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াবে?"
"এই কারণেই যে তোমাকে বলছি।তুমি যে কোনো ক্ষেত্রেই তোমার নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবে না আমি জানি।আমি নিজেও চাইনা আমার জন্যে তোমার নীতির কোনো পরিবর্তন ঘটুক,তুমি যেমনটি আছো সেটাই ভালো।"
"স্নেহা তোমার জন্য আমি নিজেকে পরিবর্তন করে নেব।তোমার পুজোতে সামিল হতে না পারলেও প্রসাদ টুকু আমি হাসি মুখে গ্রহন করতে পারবো তবু তুমি আমাকে ছেড়ো না।"
"কিন্তু সেইটি যে আমি চাইনা তুমি কেন আমার জন্যে নিজেকে পরিবর্তন করবে।তোমার স্বাধীনতা আমি দেখতে পারি কিন্তু পরাধীনতা নয়।"
"আমি কিছুতেই একটি বিশুদ্ধ সম্পর্ক কে ধর্মের বেড়াজাল দিয়ে পৃথক করতে পারবো না,আমি নিজেকে তোমার মত করে তৈরি করে নেব স্নেহা।"
"তুমি কেন বুঝতে পারছো না প্রসূন যে পথে তুমি হাঁটতে চলেছ সেটি সুগম নয়,প্রতি পদক্ষেপে এখানে তোমাকে ঝড়ের সম্মুখীন হতে হবে।"
"ঝড় হোক আমি সেই ঝড় ই উপভোগ করবো,কারণ সেই ঝড়ের প্রতিটি বায়ু কনাতেও যে তোমার নামই থাকবে।মাথা পেতে নেব আমি ওই ঝড়।"
"জীবনটা কবিতা নয় প্রসূন যাকে তুমি যেমন খুশি করে অলঙ্কারিত করতে পারবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এখানে অলঙ্কার প্রয়োগ করতে হয়।"
"নিয়ম যাই হোক কবিতাটি সাজাবো আমার তোমার নামেই এতেই আমার কবিতা সার্থকতা পাবে।চেয়ে দেখো না আজকের এই আকাশ,বাতাস প্রকৃতির দিকে সবাই আজ আমাদের মিলনের গান গাইছে আর আমি সেই মিলনের চূড়ান্ত পরিণতি চাই।"
"উফ যত দিন যাচ্ছে তুমি আরো বেশি কবি কবি হয়ে যাচ্ছ"
"কি করি বল স্নেহা তোমার ভাবনা আমাকে কবি বানাতে ছাড় দিচ্ছে না আর সেই ভাবনা রবি ঠাকুর কে আরো আপন করে নিচ্ছে।"
"তোমার সব কোথায় রবি ঠাকুর কোথা থেকে চলে আসে আমি বুঝি না।তুমি বাস্তব কে গ্রাস করছো যার ফলাফল ভয়ঙ্কর"।
"সর্বোপরি বাস্তবের উর্দ্ধে মানুষটাকে নিয়ে যার আনাগোনা তাকে তুমি বাস্তবের ভক্ষক বলছো।রবি ঠাকুর মানুষ কে বাস্তব বোঝাতে শিখিয়েছে তাকে বাদ দিয়ে এগোনো যে মহাপাপ"।
"আচ্ছা বাবা তাই কিন্তু তুমি কি রবি ঠাকুর?"
"না না সে আবার হয় নাকি ভগবানের পুজো মানুষ করে,তার প্রসাদ গ্রহণ করে কিন্তু নিজে কখনো ভগবান হতে পারে না, আর আমার কাছে রবি ঠাকুর ভগবান।"
এইভাবে নানান তর্কে বিতর্কে সেদিন বিকেল টা কেটে গিয়েছিল।এরপর বেশ কিছুদিন স্নেহার সাথে দেখা করা হয়নি আমার শরীরের অবস্থা আরো বেগতিক হয়ে যাওয়ার দরুন।সে তার এক বন্ধুকে দিয়ে আমার খবর নিয়ে ছিল।জ্বর আমার সাথে সংসার পেতে বসেছিল সে আমাকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না।শেষ মেশ বাধ্য হয়েই বাড়ির অভিভাবক এবং নিজের কিছুটা ইচ্ছা দিয়েও ডাক্তার এর কাছে গেলাম।আমার শরীরের আচরণ এর কথা শুনে ডাক্তার একটু অবাকই হয় তাই সাথে সাথে কিছু টেস্ট করতে বলে।টেস্ট হওয়ার পর জানতে পারি জীবন আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে যেকোনো সময় সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে,আমার জন্য তার বরাদ্দ সময় মাত্র সাতাশ বছর আরো হয়তো কিছু মাস যোগ হবে।হ্যাঁ ডাক্তার আমাকে সরাসরি বলে দিয়েছিল আমার হাতে সময় খুব কম কারণ আমার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে।এটা শুনে সেদিন দুঃখের সাথে সাথে জীবনের উপর খুব হেসেছিলাম সেদিন চোখকে কিছুটা ব্যারাম দেওয়ায় জন্য।মা প্রথম থেকেই সবটা জানতো কিন্তু বাবা হৃদরোগী হওয়ার দরুন বাবাকে জানানো হয়নি।প্রতিদিন মা এর চোখের জলেই আমি নিজের শেষটা দেখতে পেতাম সান্তনা দেয়ার মতো কোনো মুখ আমার ছিল না।প্রায় দেড় মাস পর আবার স্নেহার সাথে দেখা করতে গেলাম সেই ভিক্টোরিয়া তে।স্নেহ বললে -"শরীর কেমন আছে এখন।"
আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললেম -"ভালো আছি।"
"কিন্তু তোমার গায়ে কে তীব্র জ্বর।"
"না না ওটা আমার নিত্য সঙ্গী এখন,তুমি বলো কি বলবে।"
"আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই প্রসূন।অনেক ভেবে দেখলাম এটাই আমার শেষ সিদ্ধাম্ত।জীবনে যা বাঁধা বিপত্তি আসবে আমরা সেসব হাসি মুখে দমন করবো।তোমার কবিতার নামকরণ হতে চাই আমি।"
চোখ থেকে প্রায় জল বেরিয়ে যাচ্ছিল আমার,মনে মনে ভাবছিলাম এ কেমন ছলনা জীবনের।যখন আমাকে পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল তখন জীবন আঁকড়ে ধরেছিল।আর আজ যখন আমি সফল তখন সে আমায় এইভাবে ধোকা দিল।অনেক কষ্ট করে নয়নজল কে ফিরিয়ে দিয়ে বললাম -"আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।"
সাথে সাথে স্নেহার পূর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্র মুখটি অমাবস্যার গভীর অন্ধকারের মতো হতাশায় ঢলে পড়লো।সে বললে -"এ কেমন কথা প্রসূন তুমিই না আমাকে সেদিন এতভাবে বুঝিয়েছিল।আজ কথায় গেল তোমার সেই কবিতা,কোথায় গেল রবি ঠাকুর এই পুরুষত্ব তোমার।তুমি এইভাবে অন্ধ প্রকোষ্ঠে লুকিয়ে পড়লে এইরকম কাপুরুষত্ব দেখালে"।কথা বলতে বলতে তার চোখের জল বেরিয়ে পড়েছিল।সে যতই চেষ্টা করছিল ফিরিয়ে দেওয়ার ততই গতিবেগে তাহা বেরিয়ে আসছিল।আমিও আর পারছিলাম না বুকের ভিতরটা তে কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে মনে হচ্ছিল।নিজেকে আরো একবার শক্ত করে বললাম-"স্নেহা আমি তোমাকে আমার নামের সাথে জড়িয়ে চিরজীবনের মত তোমাকে একা করে দিতে পারবো না।"
"আবার হেঁয়ালি করছো তুমি,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না প্রসূন।"
"প্রবাহমান বর্তমান আমাকে অতীত করতে চলেছে আর আমি কোনো মতেই তোমাকে সেই বর্তমানের শরিক করতে চাই না"।
"আমি কিছুই বুঝতে পারছি না দয়া করে একটু বুঝিয়ে বল না,তুমি রবি ঠাকুরের জাতের লোক কিন্তু আমি সাধারণ মূর্খ বাঙালি তাই এত হেঁয়ালি আমি নিতে পারি না।"
"বাঙালী কে মূর্খ বলো না শুধু মাত্র কাজের কুঁড়েমির জন্য আমরা আজ পিছিয়ে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিভার দিক থেকে আমরা পৃথিবীর সর্ব গুন সম্পন্ন সভ্যতার সমকামী।"
"আচ্ছা তাই!তুমি আসল কথাটি বলো এবার।আমি আর ধৈর্য রাখতে পারছি না।"
"তোমাকে যে এখন ধৈর্য রাখতেই হবে,এটাই তো তার সঠিক সময়।তুমি আমাকে হাসি মুখে বিদায় না দিলে আমি তো যেতে পারবো না।"
"বিদায়?আমি তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি আর তুমি কিনা বিদায়ের কথা বলছো"।
"হ্যাঁ বলছি কারণ আমার বিদায় যাত্রা খুব শীঘ্রই আসতো চলেছে।আমার দিন ফুরিয়ে এসেছে স্নেহা যেকটা দিন পরে আছে সেইগুলো কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে নিচ্ছি জীবনের থেকে।আমি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত তাই আমার কাছে আর খুব অল্প সময় পরে আছে।এবার তুমি বলো এইরকম একটা তিক্ত সত্যের সাথে আমি তোমায় কিভাবে জড়াবো।"
স্নেহার নয়ন থেকে অশ্রু ধারা আরো গতিবেগে প্রবাহিত হতে লাগল।সে বলল -"না তুমি আমাকে এইভাবে ঠকাতে পারোনা প্রসূন কিছুতেই না।"
"জীবন আমাকে ঠকিয়েছে স্নেহা তার মাশুল আমার সাথে তোমাকেও গুনতে হচ্ছে তাই আমি চাইনা সারা জীবন তোমাকে এর মাশুল গুনতে হয়।আমি আজ আছি কাল নেই এইভাবে একজন ক্ষণস্থায়ী ব্যাক্তির সাথে তুমি কেন নিজেকে জড়াবে।"
"আমি কিছু জানি না আমি শুধু তোমার হয়ে থাকতে চাই।"
"সে তো তুমি আমারই,সব সম্পর্কের বিয়ের দরকার হয় না আমাদের ভালোবাসা এইভাবেই অমর হয়ে থাকবে।এখন খুব বেশি করে পরজন্মে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে যা আমি কোনোদিন করিনি।আমি এই আস্থা নিয়েই মরবো যে পরের জন্মেও যেন তোমাকেই আমি আমার সঙ্গিনী হিসেবে পাই"।
স্নেহার চোখ থেকে অশ্রুজল বাধাহীন ভাবে এক হতাশার বাণী নিয়ে ক্রমাগতই বয়ে চলেছে কিছুতেই সেথা থামবে না।কিছু বলার মত শক্তি সে হারিয়েছে এবং এক হতবাক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মনে মনে শুধু এইটুকুই প্রার্থনা করেছিলাম স্নেহা যাতে আমাকে ভুলে যেতে পারে কারন আমার জীবন ধ্বংস হয়েই গেছে কিন্তু আমার জন্যে ওর জীবন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাক ইহা আমি কখনোই চাই না।সেদিন অনেক কষ্ট করে স্নেহাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম।তারপর থেকে আমি শয্যাশায়ী এখন আর উঠে দাঁড়াতেও পারিনা ঠিক করে তাই স্নেহার সাথে আর দেখা হয়নি আমার।যেইটুকু সময় শরীর সহযোগিতা করে তখনই আমার এই খাতাতে জীবনলিপি টা লিখে ফেলি।প্রিয় বন্ধু মনীশের সাথে আর কোনদিন মনে হয় দেখা হবে না,যে কারণে তার সাথে এই বিভেদ সেই ভালোবাসাকে জয় করেও আমি তাকে ছুঁতে পারলাম না,তার সাথে হয়তো আর জীবন্ত অবস্থায় দেখা হবে না যদি সে ফিরে আসে তবে আমার ছবিকেই দেখবে। যেইদিন এই লেখাটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন বুঝবো জীবন আমার থেকে শেষ আশীর্বাদের ফুল টুকুও কেঁড়ে নিল।আর বাকি অভিশাপটা যা পরে রয়েছে তাহা আমার সাথেই ছাই হয়ে মিশে যাবে।।