Subhadip Ghosh

Classics

2  

Subhadip Ghosh

Classics

শেষ কথা

শেষ কথা

4 mins
725


প্রথম পর্ব


বর্ষার শেষ বৃষ্টিটা যেভাবে নিজের কনায় কণায় বিদায় বার্তার উড়ো চিঠি নিয়ে এসে নতুন ঋতুর আবির্ভাব বার্তা দেয় ঠিক সেইভাবেই আমার জীবনের নতুন একটা অধ্যায় এর সূচনা হয়েছিল।গল্পের বিস্তৃতির সাথে সাথে সেটা নিজ রূপ ধারণ করবে।আমার জীবনের নামকরনটি জানো বিভিন্ন রূপধারী তাই ইহার নামকরণের দায়িত্বটা আপনাদের উদ্দেশ্যেই ছেড়ে দিলাম।


একজন ভুমিষ্ট হওয়া শিশুর কপালে যেভাবে অদৃশ্য মাঙ্গলিক চিহ্ন পৃথিবীর নূন্যতম রসটি অনুভব করার আগে ভাগেই ছেপে দেওয়া হয় আমার ক্ষেত্রেও সেইরূপ আচরণের কোনো ব্যাতিক্রম ছিল না।ছোট বেলা থেকে শুধুই হাত জোর করা শিখতে শিখতে বাঙালি আজ লুট হতে বসেছে।অল্প বয়স হতে আমিও একজন ঈশ্বরবাদী হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণ জ্ঞান আহরণের পর তাঁর উত্তাপে সেই ঈশ্বরভাবী জীবাশ্ম ক্রমাগত গলে,বাষ্প হয়ে মন থেকে শূন্যে ধাবিত হয়েছে।তাই আমার মধ্যে এই কথাটি বলতে এতটুকু সংকোচ নেই যে আমি নাস্তিক,ধর্মনিরপেক্ষ,আত্মবিশ্বাসী,সর্বোপরি মানুষে বিশ্বাসী একজন মানুষ।আমাদের সমাজের একটাই দোষ তাঁরা একটু বেশিই অন্ধ,ধর্মের ঠুলি পরে থাকা সেই নমুনা দের কাছে তাই আমি একজন নিতান্তই বাজে মানুষ সেই অর্থে বলতে গেলে যাকে তাঁরা নিজেদের ধর্মগ্রন্থের ওজনে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলতে চাই,তবু হার মানতে হয় আমার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী মনোভাব এবং আমার ব্যক্তিত্বের কাছে।যাই হোক এই গেল আমার সমাজ বিরোধিতার পর্ব মানে ওই নমুনাদের পরিপ্রেক্ষিতে।ছোটবেলা থেকেই মাথাটা ভালো ছিল মাত্র ৭ বছর বয়সে আমি গোটা গীতাটি মুখস্ত করে ফেলেছিলাম।এর ফল স্বরূপ আমার নামটি রাখা হয়েছিল বাসুদেব যা কিনা গীতার এক এবং অদ্বিতীয় নায়ক।তাই বাধ্য হয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর নিজেই নিজের নামকরনটি করেছিলাম তাই আমার বন্ধু সম্প্রদায় এর সকলেই আমাকে প্রসূন বলেই চেনে এক কথায় বলতে গেলে বাসুদেব এই নামটার চিহ্ন আমি একেবারে মুছে ফেলেছিলাম।বাঙালি রা একটু বেশি এবং ঈশ্বর আশ্রিত;ব্যতিক্রম দিকটা তে আর গেলাম না কারণ সেটা মুরভূমি হতে এক কণা বলি আবিষ্কার করার মতো।সেই হেতু আমার নামকরণের এই অশুভ ঘটনা টিকে শুভ পথ প্রদান করার উদ্দেশে বাড়িতে ঠাকুর ,দেবতার চাঁদের হাঁট বসেছিল যতই হোক স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার সাথে পালা নিয়েছিলাম।এমনকি ১৫দিন ব্যাপী একটি লম্বা ছুটি আমাকে ঘরে বন্দি হয়েই কাটাতে হয়েছিল পাছে কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।একে অপরে বিশ্বাসী অন্ধকার কণার মধ্যে আমি যেন এক বিশ্বাসঘাতক জোনাকি রূপে আবির্ভাব হয়েছিলাম তাই প্রাণপনে সেই কনাগুলি আলোর শেষটুকু আশাকে গ্রাস করতে চেয়েছিল কিন্তু তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।সপ্তম শ্রেণীতে প্রথবার প্রথম স্থান অধিকার সেই শেষবারের মত ওই ভাবনাবিহীন,দৃষ্টিবিহীন কলপনীয় কবিটির পা ছুঁয়েছিলাম তারপর হইতে ইউনিভার্সিটির স্নাতকত্বের পরীক্ষা পর্যন্ত আমি ওই কবির আশীর্বাদ ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছিলাম।পদার্থবিদ্যা তে মাস্টার ডিগ্রি করার সময় পিতা একবার মুখ ফুটে আমায় বলেছিলেন-"বাবা একবার ঠাকুরের ফুলটা ব্যাগে করে নিয়ে যা,পরীক্ষা ভালো হবে।"

আমি বলেছিলাম-"যেদিন ভালোবেসে তুমি নিজে আমাকে একটা ফুল দেবে সেদিন থেকে ওই ফুলটি আমি সারাজীবন ধরে বইবো কিন্তু ওই কবির দান নিতে আমি পারবো না।"

পিতা চক্ষু বিস্ফারিত করে বলেছিলেন-"জানোয়ার ছেলে তুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবি না,এইভাবে যে ভগবানের অপমান করে তার শাস্তি এটাই হওয়া উচিত!"

কিন্তু অগত্যা আমার পিতা এবং তার ভগবানের মানের অপমান করে আমি মাস্টার ডিগ্রীতেও ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলাম।পরীক্ষার ফলাফল বেরোবার পর আমি কোনো উচ্ছাস দেখাই নি,শুধু নিজের মনের আত্মবিশ্বাসকে আরো একধাপ দৃঢ় করেছিলাম।আমার এক খুব কাছের বন্ধু ছিল মনীশ তাঁর সাথে আমার ফুটবল থেকে শুরু করে খাবারের স্বাদ গ্রহণ পর্যন্ত মিলত।আমরা দুজন দুটি নদীর ধারা হলেও আমাদের মোহনা সর্বদা একই সাগরে এসে মিলিত হতো।মনীশ ছেলেটা চিরকালই ডানপিটে স্বভাব এর ছিল,ছেলেবেলায় আমরা কত দুষ্টুমি করে বেরিয়েছি সেথা বলাই বাহুল্য।লম্বা,ছিমছাম, ফর্সা, টিকালো নাক,এবড়ো খেবড়ো চুল,চোখ দুটি যেন কিসের সন্ধান করে চলেছে সবসময় এককথায় যাকে বলে মনীশ খুব সুন্দর না হলেই ওর মধ্যে একটা যে মিশুকে স্বভাব ছিল সেটাই সবার মন জয় করে ফেলার ক্ষমতা রাখতো।খুব ভালো ফুটবল খেলতো ও তার ফলে ও আমার কাছে আরো প্রিয় ছিল।মনীশ বলতো-"বাঙালিকে যদি অস্থির সাথে তুলনা করি তবে সেই অস্থির মজ্জা হলো ফুটবল।ফুটবল বাঙালির অঙ্গে প্রত্যঙ্গে জড়িত,ঢেউ ছাড়া যেমন সমুদ্রকে কল্পনা করা যায় না ঠিক সেইরকমই ফুটবল ছাড়া বাঙালী ভাবা যায় না।" আমি সবসময় ওর কথাতে আরেকটু করে রস যোগ করতাম যাকে বলে একেবারে বাঙালী আড্ডা।মনীশের ওর কলেজের কিছু বন্ধুদের সাথেও আমার পরিচয় করিয়েছিল কিন্তু তাদের পৃথিবীটা ছিল অন্য জগতের তাঁরা সবাই ছিল ধনশালী,বিত্তশালী পরিবার বর্গের তাদের সাথে আমাদের মিশেলটা ঠিক হয়ে ওঠে না।আমি ওকে প্রায়ই বলতাম "ভাই মনীশ তুই এইরকম সম্পর্ক কি করে বজায় রাখিস যেখানে একটা শ্বাস নিতে একবার ভেবে নিতে হয়"

সে বলতো "ওটা আমার এক সুপ্ত প্রতিভা বলতে পারিস,মানুষের মনটা আমি ভালোভাবে পড়তে পারি এবং আলাপচরিতাও ঠিক সেইভাবেই চলে।

"নমস্কার ভাই তোর এই অদ্ভুত প্রতিভাকে, আমার মধ্যে ইহা এত গুনে নেই।আমার পৃথিবীটা রবি ঠাকুর আর ফুটবল নিয়েই ভালো আছে।"

"হ্যাঁ তাই বুঝি আজকাল রবি ঠাকুরকে ভেবে তুই কিছু লেখালেখিও শুরু করেছিস?"

"সে আর বলতে রে,রবি ঠাকুর তো সমুদ্র সেখান থেকে যা কিছু শেখার তাই দিয়েই মনের রত্নভান্ডারকে গড়ে তুলছি।সৃষ্টিটা হোক ভালো করে,বিস্তৃতির পর্ব তো পড়ে।"

"সত্যি তোর প্রতি আমার একটা অদ্ভুত শ্রদ্ধা আছে জানিস কারণ আগুন লাগাতে সবাই জানে কিন্তু আগুন নিয়ে খেলার সাহস সবার থাকে না।তোর মনের বেড়াজাল টি এত পরিমান সাফল্যের আকাঙ্খা দিয়ে তৈরি যার মাপ নেওয়া একেবারে অসম্ভব।"

মনীশ সত্যিই আমাকে খুব সম্মান করতো,ওর কথা বলার সময় ওর চোখে এই উজ্জ্বলতা আমি পেতাম।সপ্তাহে প্রায় রোজই আমরা আড্ডা দিতাম কখনো আমার বাড়িতে বা কখনো ওর বাড়িতে কিংবা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে।ঘন্টার পর ঘন্টা যে কখন কেটে যেত মালুম পেতাম না।শুধু মাত্র রবিবার দিনটা আমাদের আড্ডা হতো না,মনীশ জানো কোথায় যেত সেই প্রসঙ্গে সে আমাকে এড়িয়ে যেত।একদিন বেশ জোর করেই তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কোথায় যায় সেদিনও সে এড়িয়ে যেতে চাইলে আমি তাকে বেশ ধমক দিয়েই বলি-"এত বছরের বন্ধুত্বে আমাদের মধ্যে তো কোনো অসংকোচে ভাব ছিল না তবে আজ কেন??তোকে আজ বলতেই হবে।বেশ জোর করার পর সে বাধ্য হয়েই বললো-"প্রত্যেক রবিবার আমি বাগবাজার ঘাটে যাই স্নেহা কে দেখতে"।


Rate this content
Log in

More bengali story from Subhadip Ghosh

Similar bengali story from Classics