শাস্তি
শাস্তি
বিচারক রায় ঘোষণা করলেন। ঘোষণা করলেন যে শাস্তি প্রাপক তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আদালত জুড়ে হইচই হল। পরেরদিন খবরের কাগজে খবরটা বেরোলো যে আদালত এক বিচিত্র রায় দিয়েছে। বিচিত্র রায়টি এটাই সাধারণভাবে সশ্রম কারাদণ্ড এটাই ঘটে। কিন্তু পরিবর্তে কারাদণ্ড দিয়েছে তবে যাবত জীবন। এই ঘটনাটি এই পর্যন্ত একরকম ছিল।
কিন্তু যারা এই ঘটনার সাক্ষী তারা তাদের কৌতুহলকে পরিমিত করতে পারেনি বলেই তারা খুঁজেছিল,এই শাস্তির প্রাপককে। খুঁজেছিল প্রকৃত শাস্তির বিধানটি কি? একটি শিশু তার মায়ের কাছে থাকবে না বাবার কাছে থাকবে এই বিচার চেয়েই সন্তানের মা তার সন্তানকে নিয়ে বিচারের দোরগোড়ায় এসেছিল। এসেছিল সন্তানের বাবা। তবে সন্তানের বাবা তার সন্তানের কাছে আবদার করেছিলো সন্তান যেন তার কাছে থাকে। কিন্তু সন্তান বাবার কাছে থাকে নি।
কারণ সন্তান সেদিন আদালতে যা বলেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতেই শাস্তি পেয়েছিল সন্তানের বাবা। কি ঘটেছিল সেদিন আদালতে? সন্তান কি বলেছিল আদালতে? যা বলেছিল তা এইরকম।
জান বিচারক আঙ্কেল, আমার বাবা মাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। বাবা-মাকে খুব ভালোবাসতো। ওরা দিনে এক বেলা খেয়ে তাদের জীবন কাটাততো। মায়ের কাছে শুনেছি। মাকে বিয়ে করেছিল বলে বাবা মাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে উঠতে পারেনি। তবে যেদিন বাবা মাকে নিয়ে উঠেছিল বাবার বাড়িতে। সেদিন রাতে বাবা হঠাৎ করে কেমন পাল্টে গিয়েছিল। বাবা সেদিন মার সাথে একটু কথা বলেনি। মায়ের সাথে একটু কথা বলেনি। আমাকে একটুও ভালোবাসে নি। সেদিন রাতের পর থেকে বাবা-মার সাথে থাকত না। আমার জন্ম হবার পরেও আমি মাকে একাই দেখেছি। মা রাতদিন ঘরের কাজ করার পর ঘরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেবলই কাঁদত।তারপর একদিন ঐ শ্বশুরবাড়ির লোক আমার বাড়িগো। তারা মাকে আর আমাকে ঘর থেকে একরকম তাড়িয়ে দিল। কিন্তু আমি সেদিন লক্ষ্য করেছি কাকু; আমার বাবা আড়ালে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে। কিন্তু বাবা আমাদের কারো কাছে আসেনি। সেদিন মা আমাকে নিয়ে স্টেশনে সারারাত কাটিয়ে ছিল। তারপর মা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল মামাবাড়ি। সেখানে গিয়েও মা শান্তি পায়নি। জানি মেয়ের বিয়ে হলে মেয়ে বাপের বাড়িরও পর হয়।
হঠাৎই মা তার অধিকারকে ফিরে পাবার জন্যই বিধান নিতে আমাকে নিয়ে তোমার কাছে এসেছে। আমার বাবা সত্যি খুব ভালো। তবে কেন যে বাবা করেছিল এমন জানিনা। তবুও তার শাস্তি তো প্রয়োজন? তোমরা বাবাকে শাস্তি দিয়ো। এই সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিচারক সন্তানের বাবা কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছিলো। তার স্ত্রীর সাথেই একই ঘরে থাকতেই হবে। শাস্তিটি অপূর্ব। এমন শাস্তি যেন বিচারকদের হয় ভাঙ্গা সংসার জন্য। তবে এর পেছনে প্রকৃত দোষী যারা যাদের নামে কোন শাস্তির অভিযোগ জমা পড়েনি, তার অনুসন্ধান ও বিচারক করবেন; এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
