সেরা প্রাপ্তি
সেরা প্রাপ্তি


আকাশের সাথে ডিভোর্সটা হয়ে যাওয়ার পরেও গার্গী সম্পর্কের ট্রমাটিক সার্কেল থেকে বেরোতে পারে নি। একটা খারাপ সম্পর্ক যে মানুষকে কতটা ফোপড়া করে দিতে পারে, সেটা চোখের সামনে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। পাত্র হিসেবে আকাশ অত্যন্ত লোভনীয় ছিল। টাটার মত কোম্পানিতে উচ্চপদে কর্মরত, সল্টলেকে ঝা-চকচকে ফ্ল্যাট, মা-বাবার একমাত্র সন্তান। যতদূর সম্ভব খোঁজ নিয়েছিলেন প্রমথেশ বাবু, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগে। কোনো খারাপ খবর পান নি।
প্রথম দিকে কিছু বুঝতেও পারেন নি। যখন জানতে পারলেন সবটুকু, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। দু, দু-বার অ্যাবরশন করানো হয়েছে জোর করে , টাকা দিয়ে সোনোগ্রাফি রিপোর্টের জেন্ডার ডিটেক্ট করে।
গার্গীকে যখন নিজের কাছে নিয়ে এলেন তখন ওর মানসিক স্থিতিশীলতা একেবারেই ছিল না। এখন অবশ্য সাইকিয়াট্রিক কাউন্সিলিং-এ অনেকটা সামলে উঠেছে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয় প্রমথেশ বাবুর। তার অদূরদর্শীতার মাশুল গুণছে মেয়েটা। কেন যে আরও আগে বুঝতে পারলেন না। ওর মা বেঁচে থাকলে হয়তো এই ভুল করত না।
"প্রমথেশ সান্যাল কে আছেন...?"
রিশেপসেনিস্টের ডাকে চমকে উঠলেন প্রমথেশ বাবু। সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে বসে কখন যে অতীতে হারিয়ে গিয়েছিলেন....
"আমি, আমি।", শশব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলেন।
"আপনাকে ভেতরে ডাকছে।"
কে জানে, কিছু খারাপ বলবে নাকি। গার্গীর তো বেশ ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছিল।
ভয়ে ভয়ে ভেতরে যান প্রমথেশ বাবু।
"আমার মেয়ে এখন একদম সুস্থ মানসিক ভাবে। ও আবার নতুন করে শুরু করতে চায় সবকিছু। আমি ওনাকে একটা স্কুলে কাজের প্রোপোজাল দিয়েছি। আপনারা দু'জনে মিলে ডিসাইড করে আমাকে জানাবেন।", ডাক্তারবাবু বললেন।
প্রমথেশ বাবুর বেশ চিন্তা হচ্ছিল - - গার্গী কি পারবে? কখনও তো বাইরে কাজ করে নি। তাছাড়া ওনার যা আছে তাতে করে গার্গীর জীবনে কখনও অর্থ সংকট হবে না। কিন্তু বাড়িতে একলা একলা থাকলে আবার হয়ত ডিপ্রেশনে চলে যাবে। এই ভেবে রাজি হয়েছিলেন। তা বেশ কয়েকমাস হল গার্গী কাজ করছে। বেশ ভালোই আছে, হাসিখুশি।
আজ গার্গীর জন্মদিন। প্রমথেশ বাবু আজ ওকে কাজের জায়গায় ছুটি নিতে বলেছিলেন, কিন্তু গার্গী রাজি হয় নি। বরং আজ ওনাকে নিজেকে কাজের জায়গা দেখাতে নিয়ে এসেছে।
গার্গী ঢুকতেই একগাদা কচিকাচা ওকে ঘিরে ধরে হ্যাপি বার্থ ডে গাইতে লাগল। কেক কাটা হল।
"জানো বাবা, এরা প্রত্যেকেই অনাথ। এটাই ওদের ঠিকানা। এখানে আমার মত আরও কিছু মানুষ মিলে ওদের পড়াই, ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তি - - এইসব শেখাই।
দেখো বাবা, ভগবান আমাকে কত সন্তান ফিরিয়ে দিয়েছে।", গার্গীর গলা ধরে আসে কান্নায়।
চোখ ভিজে প্রমথেশ বাবুরও।
মেয়ের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন, বলেন," এই তো তোর সেরা প্রাপ্তি মা।
রবি ঠাকুর তো কবেই বলেছেন তাই, 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।' "