Ayan Hossain

Tragedy Classics Inspirational

4.0  

Ayan Hossain

Tragedy Classics Inspirational

সাদা গোলাপ

সাদা গোলাপ

3 mins
479


সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া সঙ্গে বৃষ্টিটা লেগে ছিল। যদিও বৃষ্টির সঙ্গে আমার আলাদা রকমেরি সম্পর্ক। সাধারণত বৃষ্টির দিন আমার ভালোই লাগে, কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম। সকালে উঠে মনটা ভালোই ছিল বৃষ্টিটা দেখে। এক কাপ কফি নিয়ে দিয়া আমার পাশে এসে বসলো, ও জানতো যে আমার বৃষ্টির দিনে কফি খেতে ভালো লাগে, সঙ্গে একটা গোল্ড ফ্লেক বা বড়ো নেভি কাট। ও বারণ করতো, আজ তো কপট রাগ করে বলেই ফেললো, "হয় আমি, নয় তোমার ওই অভ্ভাস, ভেবে বলো কোনটা ছাড়বে।" আমি আদর ভরা গলায় বললাম, "আরে ছেড়ে দিবো বলেছি তো বাবা।" ও কিছু না বলে চলে গেল। বুঝলাম রাগ করেছে। আজ কিবার দেখতে একবার ক্যালেন্ডার এর দিকে তাকালাম। তাকাতেই মনটা একটু খারাপ হলো। হটাৎ দিয়া ডাক দিয়ে উঠলো, রবিবার বলে কি স্নান করবে না। আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বললাম, "হ্যা হ্যা আসছি।"


স্নান সেরে সবে উঠেছি দেখছি ঘড়িতে দশটা তিরিশ বাজে। বাইরে এখন একটু রোদ উঠেছে। অন্যদিন হলে আজ খেয়ে দেয়ে অফিস বেরোতাম। কিন্তু আজ দিয়া আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলো যে বাইরে খাওয়াদাওয়াটা সারবে। ওর প্রত্যেক উইকেন্ড এই কোনো না কোনো প্ল্যান থাকে। তাই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রেস্তোরার উদ্দেশ্য। আমি ভেবেই রেখেছিলাম যে আজ হাট অফ হার্টস নামক এক রেস্তোরায় খাবো। ওটা ৩৩২ মেমোরি রোড লাগোয়া, গ্যাস স্টেশন এর পাশে।

ওখানে পাশেই একটা ছোট্ট খ্রীষ্টান কবরস্তান আছে। ওই কবরস্তান টা আমাদের রেস্তোরা যাওয়ার পথেই পড়ে। গাড়িতে করে যেতে যেতে আমার চোখে পড়তেই আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। দিয়াকে আমি বললাম, "একবার আমার সঙ্গে একটু আসবে?"। ও জিজ্ঞেস করলো কেন। আমি বললাম, "আরে এসো না"। দিয়া আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নামলো। ও লক্ষ্য করেনি যে আমার হাতে একটা সাদা গোলাপ ছিল যা আমি আমাদের বাড়ির বাগান থেকে তুলে এনেছিলাম।


আমার পেছন পেছন দিয়া অনেকটা আসার পর আমি একটা কবরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। সামনের হলফ এ স্পষ্ট লেখা মিমি মন্ডল (২৩শে জুন ১৯৯৬ - ৫ঐ জানুয়ারী ২০১৭)। ফলক টাই অনেকটা ধুলো জমে গিয়েছে। আমি পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ওটা মুছে দিলাম। আর ওখানে রেখে দিলাম সাদা গোলাপ আর আর আমার পকেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট ডায়েরি মিল্ক টা। আজ ও 5ঐ জানুয়ারী। সালটা শুধু ২০২৩। ৬ বছর হয়ে গেল। এই ৫ বছর ধরে আগলে রেখেছিলাম ওকে আমি। আর পারলাম না। দুই মিনিট ওখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। দিয়া ও কিছু বললো না আমাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। দিয়াকে বললাম, "চলো যাওয়া যাক"। গাড়ির মধ্যে ঢুকে ড্রাইভারকে বললাম "চলো"। গাড়ির চাকা গড়াতে লাগলো সঙ্গে সময়ের চাকাও।


আরো তিন বছর পেরোলো। আজ আমি একটা মেয়ের বাবা। দিয়া ই আদর করে ওরর নাম রেখেছিলো মিমি। কারণ ও জানতো আমার কাছে নামটার মাহাত্ম। আজ আমার মিমি এর দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী। আজ দিনটা আমরা খুব খুশির, কিন্তু আজও কোথাও সম্পূর্ণ হয়ে যেন অসম্পূর্ণ আমি। সাদা গোলাপ ফুলের মতো আমার নিষ্পাপ মেয়েটা এখনো মনে করাই আমার প্রথম ভালোবাসাকে, সেই মিমিকে।।


Rate this content
Log in

More bengali story from Ayan Hossain

Similar bengali story from Tragedy