রিয়াল লাভার
রিয়াল লাভার
ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটা মেয়ে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য কোন কিছু না ভেবেই ছুটে চলেছে। পেছনে অনেকগুলো লোক মেয়েটাকে ধরার জন্য ছুটে ছুটে যাচ্ছে।
মেয়েটা ছুটতে ছুটতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল। একদিকে নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা আরেক দিকে শরীর ক্লান্ত কি করবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।
মেয়েটা অনেক দূরে এগিয়ে গিয়ে জঙ্গলে মোটা বট গাছের গোড়ায় লুকিয়ে গেল।
লোকগুলো ছুটতে ছুটতে এসে যখন মেয়েটাকে আর দেখতে পেল না লোকগুলো নিজেরা আলোচনা করতে লাগলো মেয়েটা গেল কোথায়?
একটা লোক বলল মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি কোথায় হারিয়ে গেল? এক্ষুনি তো এখানেই ছিল।
তখন আরেকটা লোক বলল মেয়ে হয়ে এই ঘন জঙ্গলে রাত্রে যাবে কোথায়? সৌদামিনী নিশ্চয়ই এখানে কোথাও লুকিয়ে আছে। ভালো করে খোঁজো এত বড় জঙ্গল একসঙ্গে গেলে হবে না আলাদা আলাদা ভাবে খুঁজতে হবে। আমাদের স্যার বলে দিয়েছে যে করে হোক সৌদামিনীকে খুন করতেই হবে। ও যদি বেঁচে ফিরে যায় তাহলে স্যার আমাদেরকে প্রানে মেরে ফেলবে।
তখন বাকি লোক গুলো বলল না না আমরা এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না আমরা সৌদামিনীকে মেরে ফিরে যাব।
লোকগুলো চারটা দলে বিভক্ত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
সৌদামিনী নিজের মুখে চাপা দিয়ে শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ আটকে রাখার চেষ্টা করল।
লোকগুলো খুঁজতে খুঁজতে চারিদিকে বিলুপ্ত হয়ে গেল। এই সুযোগে সৌদামিনী আবার ছুটে ছুটে অন্যদিকে যেতে লাগলো।
ঘন জঙ্গল তাই সৌদামিনী বুঝতে পারছে না রাস্তা কোন দিকে!
সৌদামিনী কান্না করতে শুরু করে দিল।
লোকগুলো অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল তারপর আবার ছোট ছোট ভাবে বিভক্ত হয়ে গেল।
একটা লোক খুঁজতে খুঁজতে দূর থেকে দেখতে পেল সৌদামিনীকে, লোকটা জঙ্গলে একটা লাঠি কুড়িয়ে সৌদামিনীকে মারার জন্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো।
সৌদামিনী যখন পায়ের শব্দ অনুভব করল তখনই পেছন ঘুরে তাকালো আর ঠিক সেই মুহূর্তে ঝড়ের বেগে কেউ এসে সৌদামিনীকে তুলে নিয়ে গেল।
লোকটা বুঝতে পারল না সৌদামিনী কোথায় মিলিয়ে গেল!!
কয়েক ঘন্টা পর সৌদামিনীর যখন জ্ঞান ফিরলো দেখল সৌদামিনী একটা খুব সুন্দর রুমে বিছানাতে শুয়ে আছে।
সৌদামিনী অবাক হয়ে চারিপাশটা দেখতে লাগলো।
সৌদামিনী মনে করতে লাগলো কিছুক্ষণ আগে কি হয়েছিল, তখনই মনে হল সে জঙ্গলে ছুটে যাচ্ছিল আর পেছনে অনেক গুন্ডা মস্তান টাইপের লোক তাকে তাড়া করে মারার জন্য ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
সৌদামিনী বিছানা থেকে উঠে আশেপাশে দেখতে লাগলো।
তখনই একটা স্মার্ট হ্যান্ডসাম লম্বা ছেলে জলের গ্লাস নিয়ে রুমের ভেতরে এলো।
সৌদামিনী ছেলেটাকে দেখে ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো আর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল আপনি কে? আর এখানে আমি এলাম কি করে?
ছেলেটা জলের গ্লাস টেবিলের ওপর রেখে বলল সৌদামিনী এভাবে আমাকে ভয় পেয়ো না আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। ওই লোকগুলোর হাত থেকে আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি।
সৌদামিনী অবাক হয়ে বলল কে আপনি? আর আমার নাম জানলেন কি করে?
ছেলেটা হেসে বলল আমি তোমাকে খুব ভালো করে জানি আর তুমিও আমাকে জানতে কিন্তু এখন জানি না তুমি আমাকে মনে রেখেছো কিনা।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে ছেলেটাকে দেখতে লাগল।
ছেলেটা সৌদামিনীর হাতে ধরে সৌদামিনীকে বিছানাতে বসিয়ে বলল সৌদামিনী এত রাত্রে তুমি জঙ্গলে যাচ্ছিলে কেন?
সৌদামিনী আগে বলুন আপনি কে? আর কেন আমাকে বাঁচালেন?
ছেলেটা হেসে বলল আমি রোহন বসু তোমার কলেজের নিউ টিচার। তোমার অ্যাকাউন্টেন্সি ডিপার্টমেন্টের এইচ ও ডি ।
সৌদামিনী বড় বড় চোখ করে রোহনকে দেখতে লাগলো।
রোহন হেসে বলল এভাবে দেখার প্রয়োজন নেই আমি নিউ জয়েন্ট করেছি। তুমি গত দুদিন কলেজে আসোনি তাই আমাকে চিনতে পারোনি।
সৌদামিনী সন্দেহ দৃষ্টিতে রোহনকে দেখতে লাগল।
রোহন সৌদামিনীকে দেখে সৌদামিনীর মনের কথা বলল তুমি এটাই ভাবছো তুমি যদি না কলেজে এলে তাহলে আমি তোমাকে কি করে চিনলাম?
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে বলল আপনি কি করে জানলেন আমি এটাই ভাবছিলাম ?
রোহন হেসে বললো আমি সবকিছুই জানি। অতীত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান দেখার ক্ষমতা আমার আছে।
সৌদামিনী রোহনের কথার কোন অর্থই বুঝতে পারল না।
রোহন জলের গ্লাস সৌদামিনীর হাতে দিয়ে বলল বেশি ভাবলে তোমার ছোট মাথা ফেটে যাবে ধরো জল খেয়ে নাও।
সৌদামিনী ভয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল।
সৌদামিনী জল খেয়ে গ্লাস রোহানের হাতে ধরিয়ে দিল। রোহন মুচকি হেসে গ্লাস টেবিলের ওপর রেখে বলল তোমার খিদে পাচ্ছে তুমি কিছু খাবে?
সৌদামিনী এখনও আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে কোন উত্তর দিতে পারছে না।
রোহন সঙ্গে সঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
সৌদামিনী নিজে নিজে বলল ছেলেটাকে দেখে সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না! নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে? আমাকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। সৌদামিনী আশেপাশে দেখে দরজা খুলে ছুটে ছুটে বাড়ির মেন দরজার কাছে গেল। যেই দরজা খুলবে হাওয়ার বেগে রোহন এসে সৌদামিনীর বাহু ধরে নিল।
সৌদামিনী ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল।
রোহন গম্ভীর গলায় বলল এভাবে চিৎকার করছো কেন? আর না বলে তুমি কোথায় যাচ্ছিলে?
সৌদামিনী জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল আপনি কি করে এখানে চলে এলেন? এমন ভাবে এলেন যেন মনে হবে ভূত এসেছে!
রোহন ভ্রু কুঁচকে বলল আমাকে কি দেখে তোমার ভূত বলে মনে হচ্ছে ?
সৌদামিনী শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো।
রোহন সৌদামিনীকে কোলে তুলে নিয়ে আবার রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
সৌদামিনী ভয়ে নিজের চিন্তা করার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলল।
রোহন সৌদামিনীকে রুমে এনে বিছানাতে বসিয়ে বলল কোথাও যাবে না এখানে বসো আমি এক্ষুনি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
সৌদামিনী - আমার খিদে পাচ্ছে না।
রোহন - মিথ্যা কথা বলবে না, আমি জানি তোমার খিদে পাচ্ছে তুমি বসো আমি এক্ষুনি যাচ্ছি এক্ষুনি আসছি।
রোহন রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
সৌদামিনী রোহনকে বেরিয়ে যেতে দেখে যেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সঙ্গে সঙ্গে হওয়ার বেগে রোহন খাবারের প্লেট নিয়ে পৌঁছে গেল।
সৌদামিনী রোহনকে দেখে আবার চেঁচিয়ে উঠলো।
রোহন - কি হলো তুমি চেঁচাচ্ছ কেন?
সৌদামিনী জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল সত্যি করে বলুন তো আপনি কি কোন ভূত? আপনি গেলেন কি করে? আর এলেন কি করে?
রোহন হাসতে লাগলো।
সৌদামিনী খেয়াল করল পুরো বাড়িটা মৃদু আলোয় আলোকিত কোন বড় আলো জ্বলছে না।
সৌদামিনী ভয়ে ভয়ে বললো আপনি বলুন তো আপনি কোন ভূত নয় তো ? পুরো বাড়ি এত অন্ধকার কেন?
রোহন হেসে বলল তুমি অন্ধকারে ভয় পাও?
সৌদামিনী - না ভয় পাই না কিন্তু আপনার বাড়িটা দেখে খুব ভয় লাগছে।
রোহন চুটকি বাজালো সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সমস্ত আলো জ্বলে উঠলো।
সৌদামিনী আরও আশ্চর্য হয়ে গেল তার সঙ্গে ভয় পেতে লাগলো।
রোহন - কি হলো ভয় পাচ্ছ কেন?
সৌদামিনী - সত্যি করে বলুন তো আপনি কে? আপনি চুটকি বাজাতেই কি করে বাড়ির সব আলো জ্বলে উঠলো?
রোহন হেসে বলল এটা আধুনিক টেকনোলজি। তুমিও চুটকি বাজাও দেখবে সব আলো বন্ধ হয়ে যাবে আবার জ্বলে উঠবে।
সৌদামিনী - এমন কখনো হয় নাকি?
রোহন - তুমি তাহলে নিজেই চেক করে নাও।
সৌদামিনী রোহনের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে চুটকি বাজালো। সৌদামিনী দেখল সত্যি সত্যি বাড়ির সমস্ত আলো বন্ধ হয়ে গেছে। সৌদামিনী আবার চুটকি বাজালো দেখল বাড়ির সব আলো জ্বলে উঠেছে।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে বলল সত্যি সত্যি এমন হয়!
রোহন হেসে বলল হ্যাঁ হয়। এই নাও তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নাও না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
সৌদামিনী খাবারের প্লেট নিয়ে দেখতে লাগলো। খাবারের প্লেটে সৌদামিনীর পছন্দের লুচি আলুর দম রয়েছে।
সৌদামিনী অবাক হয়ে বলল আপনি কি করে জানলেন আমার লুচি আলুর দম ভালো লাগে?
রোহন সৌদামিনীর চোখে চোখ রেখে বলল বললাম না আমি তোমার সম্পর্কে সবকিছুই জানি।
সৌদামিনী রোহনের চোখের গভীরতায় যেন হারিয়ে যেতে লাগলো। গভীর কালো চোখের মায়ায় যেন সৌদামিনী জড়িয়ে পড়ল।
রোহন - তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমি এক্ষুনি আসছি।
সৌদামিনী চুপচাপ খাবার খেয়ে নিতে লাগলো।
রোহান রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
রোহান কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস নিল পরক্ষনেই রোহনের চোখে মুখের রং পাল্টে গেল। রোহনের গভীর কালো চোখ রং বদলে একেবারে নীল হয়ে গেল। রোহনের মুখে ক্রোধের আভা ফুটে উঠলো। সেকেন্ডের মধ্যেই রোহন হওয়ার মধ্যে মিলিয়ে গেল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রোহন সেই গভীর জঙ্গলে পৌঁছে গেল যেখানে একটা ভয়ংকর বট গাছের ডালে আট জন গুন্ডা মস্তান টাইপের ছেলে উল্টোদিকে ঝুলছে।
ছেলেগুলো যেই সামনে রোহনকে দেখল ভয়ে কেঁপে উঠল হাতজোড়ো করে রোহানের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইল।
রোহন জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
লোকগুলো রোহনের পিশাচের মত হাসি দেখে ভয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল।
রোহন হেসে হেসে বললো তোমরা আমার সৌদামিনীকে মারার চেষ্টা করেছিলে তাই না? এবার দেখো তোমাদের কি পরিণতি হয় হা হা হা
লোকগুলো হাত জড়ো করে রোহনের কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল। রোহন জোরে জোরে হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই নিজের রূপ বদলে নিল রোহনের বদলে যাওয়া রূপ দেখে লোক গুলোর আত্মা শুকিয়ে যেতে লাগলো।
চলবে,,,,,,,,,,,
রোহনের রূপ কেমন হয়েছিল? রোহন আসলে কে? সৌদামিনীর সঙ্গে রোহনের কি সম্পর্ক?