রিয়াল লাভার পর্ব ৩
রিয়াল লাভার পর্ব ৩


সৌদামিনী যেই শুনল রোহন তাকে ভালোবাসে সঙ্গে সঙ্গে বলল কি বললেন আপনি? আপনি আমাকে ভালোবাসেন!!
রোহন মুচকি হেসে বলল হ্যাঁ ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
সৌদামিনী - আপনি আমাকে পাগল মনে করেছেন? কি ভেবেছেন আপনি কালকে আমার জীবন বাঁচিয়েছেন বলে আপনি যেটা বলবেন আমি সেটা বিশ্বাস করে নেব। কে আপনি? কোথা থেকে এসেছেন? আপনাকে চিনি না জানি না আর আপনি বলছেন আমাকে ভালোবাসেন!!
রোহন - তুমি শান্ত হও আমি জানি তুমি এখন বুঝতে পারছ না আমি কে কিন্তু আমি বিশ্বাস রেখে বলতে পারি তুমিও আমাকে খুব ভালবাসো শুধু বুঝতে পারছ না আমি কে।
সৌদামিনী - মনে হচ্ছে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আপনি আমাকে রাস্তা বলে দিন আমি বাড়ি ফিরে যাব।
রোহন - তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমি তোমাকে নিজে বাড়ি দিয়ে আসবো।
সৌদামিনী - না আমি খাব না, আমি বাড়ি যাব। বলা যায় না আপনি খাবারের মধ্যে যদি কিছু মিশিয়ে রাখেন যদি আমি মরে যাই।
রোহন সৌদামিনীর মুখে 'মরে যাই' কথা শুনে রেগে সৌদামিনীর দুই বাহু চেপে বলল একদম মরার কথা বলবে না। তুমি কখনোই মরবে না। আমি বেঁচে থাকতে থাকতে তোমাকে কখনো মরতে দেবো না। তুমি শুধু আমার।
রোহন সৌদামিনীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
সৌদামিনী রোহনের এমন ব্যবহারে হতভম্ব হয়ে গেল।
সৌদামিনীর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও হাত দুটো আপনা আপনি রোহনের পিঠে উঠে গেল।
সৌদামিনীও রোহানকে জড়িয়ে ধরল।
রোহান সৌদামিনীকে ছেড়ে বলল আর কখনো মরার কথা বলবে না। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।
সৌদামিনী আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাবার খেয়ে নিতে লাগলো।
রোহন একটু আড়ালে গেল সেখানে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করল। চোখের সামনে ভেসে উঠল সৌদামিনীর কাকা সুব্রত সেন সৌদামিনী মরেছে কিনা জানার জন্য চিন্তিত হয়ে বারবার ফোন নিয়ে নিজের লোকেদের ফোন করছে। যত খবর পাচ্ছে না ততই রেগে নিজের মাথা চাপড়াচ্ছে।
রোহন চোখ খুলে হেসে নিজে নিজেই বললো তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন সৌদামিনীকে মারতে পারবে না। আমি বেঁচে থাকতে থাকতে কখনোই সৌদামিনীর কিছু হতে দেব না। তোমার কাছে কি শক্তি আছে যার কারণে আমি তোমার মন পড়তে পারছি না? কিন্তু আমিও হাল ছেড়ে দেব না আমি জেনেই ছাড়বো তুমি আসলে কে? তোমার মধ্যে কি ক্ষমতা আছে?
রোহন চোখের পলক ফেলেই নিজের জামা কাপড় বদলে নিল তারপর সৌদামিনীর কাছে এলো।
রোহন - চলো তোমাকে আমি তোমার বাড়িতে দিয়ে আসি ।
সৌদামিনী - হ্যাঁ হ্যাঁ আগে আমাকে বাড়ি দিয়ে এসো আমার কাকা আমার জন্য চিন্তায় ছটফট করছে।
রোহন সৌদামিনীকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এল।
সৌদামিনী বাড়ির সামনে বাগান দেখে আশ্চর্য হয়ে চারিপাশটা দেখতে লাগলো।
রোহন - কি দেখছ ?
সৌদামিনী - আপনার বাড়ির বাগানটা খুব সুন্দর। আপনি নিজের হাতে বানিয়েছেন?
রোহন গাড়ির কাছে যেতে যেতে বলল আমি আর তুমি দুজনে মিলে বানিয়েছি।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে বলল আমি বানিয়েছি! কিন্তু কিভাবে? আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।
রোহন - আমি মিথ্যা কথা বলছি না তুমি মনে করতে পারছ না।
সৌদামিনী - এটা কি করে সম্ভব? আমি কেন মনে করতে পারবো না?
রোহন - তোমার কিছু স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে তুমি মনে করার চেষ্টা করবে দেখবে তোমার ঠিক মনে হয়ে যাবে। তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চেনো। এমনকি আমার বাবা মাকেও ভালো করে চেনো। তুমি এই বাড়িতে আগেও এসেছো।
সৌদামিনী অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। সৌদামিনী আশেপাশে দেখে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো সত্যিই কি সে এই বাগানটা বানিয়েছে ?
সৌদামিনী দেখল বাগানের এক কোণে বড় বকুল গাছ আছে।
সৌদামিনী গাছটিকে দেখে কিছু মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো।
সৌদামিনীর মনে হতে লাগলো গাছটি যেন আগে থেকেই তার চেনা। সৌদামিনী ধীরে ধীরে গাছটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। চোখের সামনে কিছু আবছা আবছা দৃশ্য ভেসে উঠতে লাগলো।
সৌদামিনীর মনে হতে লাগলো একটা ষোল বছরের ছেলে আর একটা দশ বছরের মেয়ে গাছটির সামনে খেলাধুলা করছে। ছেলেটা মেয়েটাকে গোল গোল করে কোলে তুলে ঘোরাচ্ছে আর হেসে হেসে বলছে সৌদামিনী আমাদের বন্ধুত্ব সারা জীবন এমনই থাকবে। তখন ছোট মেয়েটা হেসে বলল হ্যাঁ রোহন আমি সবসময় তোমার বন্ধু হয়েই থাকবো।
তখন ছোট রোহন বলল আমি যখন বড় হয়ে যাব তখন আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার কাছে রেখে দেবো তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।
তখন ছোট সৌদামিনী হেসে হেসে বললো আমি তো তোমার কাছে থাকবো না, আমি তোমাকে বিয়ে করব না। আমি আমার বাবা মায়ের কাছে থাকবো।
ছোট রোহন ছোট সৌদামিনীকে গাছের কাছে দাঁড় করিয়ে বলল তুমি সত্যিই আমার কাছে থাকবে না? আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
ছোট রোহন মন খারাপ করে গাছের উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
ছোট সৌদামিনী ছোট রোহনের হাতে ধরে বলল রোহন তুমি রাগ করছো কেন? আমি সব সময় তোমার কাছেই থাকব, আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি পড়াশোনা করে খুব বড় হও আমিও পড়াশুনা করে খুব বড় হব তারপর আমি তোমাকে বিয়ে করবো তোমার সঙ্গে থাকবো। যেমন আমাদের বাবা মা একসঙ্গে আছে।
ছোট রোহন - তুমি ভুলে যাবে না তো তুমি আবার পরে বলবে না তো তুমি আমাকে চেনো না?
ছোট সৌদামিনী হেসে বলল একদমই না তোমার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আমি তোমাকে একটা প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি, যদি কোনদিন আমি তোমার কথা ভুলে যাই তোমাকে
বিয়ে করতে না চাই তুমি আমাকে এই প্রমাণ দেখাবে আমি ঠিক তোমাকে চিনে নেব।
সৌদামিনী মাটি থেকে একটা লোহার খুরপি নিয়ে বকুল গাছে গাছের ছাল তুলে তুলে লিখল,,,,,
রোহন সৌদামিনী নামটি লিখে তাতে হার্ট চিহ্ন করে দিল।
ছেলেটা হেসে হেসে ছোট সৌদামিনীর গালে চুমু খেয়ে বলল আমি তাড়াতাড়ি বিদেশ থেকে পড়ে এসে তোমাকে বিয়ে করব।
রোহন যেই সৌদামিনীর কাঁধে হাত রাখল সৌদামিনী ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো। সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলো আর বললো ছোট ছেলে মেয়ে দুটো গেল কোথায়?
রোহন - তুমি কি বলছ?
সৌদামিনী ঘেমে যেতে লাগলো।
রোহন পকেট থেকে রুমাল বের করে সৌদামিনীর ঘাম মুছে দিয়ে বলল তুমি কোন স্বপ্ন দেখছিলে এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই।
সৌদামিনী ভয়ে ভয়ে বলল আমার যেন মনে হচ্ছে আমি এর আগে কখনো এখানে এসেছি। আমার সঙ্গে একটা ছোট ছেলে ছিল। ওই বকুল গাছে আমি কিছু একটা লিখেছিলাম।
সৌদামিনী ছুটে ছুটে বকুল গাছের কাছে চলে গেল।
রোহন খুশি হয়ে নিজে নিজে বলল সৌদামিনী তোমার কিছু কিছু কথা মনে আসতে শুরু করেছে, আমার বিশ্বাস আছে আমি তোমার পুরনো সমস্ত স্মৃতি ফিরে আনতে পারব। আমি বুঝতে পারছি না তোমার মস্তিষ্ক থেকে বিগত পনের বছরের স্মৃতি কি করে মুছে গেল? এটা কি করে সম্ভব?
সৌদামিনী বকুল গাছের কাছে গিয়ে সেই লেখাটা খুঁজতে লাগলো।
সৌদামিনী দেখল সত্যি সত্যি গাছে লেখা আছে রোহন সৌদামিনী
সৌদামিনী খুশি হয়ে বলল দেখলেন আমি সত্যি কথা বলেছিলাম আমি কোন মিথ্যে গল্প বলিনি। এই দেখুন,,,,
রোহন সৌদামিনীর সামনে এসে বলল হ্যাঁ দেখেছি আমি তো আগেই বলেছি তুমি আমাকে চেনো আমিও তোমাকে চিনি। এই গাছে নাম তুমি লিখে ছিলে ।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে রোহনকে দেখতে লাগলো।
রোহন বেশি কিছু ভাবতে হবেনা তোমার ধীরে ধীরে আমার কথা মনে হয়ে যাবে চলো তোমাকে আগে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসি।
রোহন সৌদামিনীর কাঁধে হাত দিয়ে সৌদামিনীকে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
সোদামিনী বারবার পেছন ঘুরে বকুল গাছটা দেখতে লাগলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রোহন সৌদামিনীকে নিয়ে সৌদামিনীর বাড়িতে পৌঁছে গেল।
সুব্রত বাবু অধীর হয়ে চিন্তা করছিল সৌদামিনী এখনও বাড়িতে ফেরেনি কেন? সৌদামিনী কোথায় আছে ?
বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই সুব্রত বাবু বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলল যেই সামনে সৌদামিনীকে দেখল সুব্রত বাবু আশ্চর্য হয়ে গেল।
সৌদামিনী সুব্রত বাবুকে জড়িয়ে ধরে বলল কাকা আমি বাড়িতে এসে গেছি।
সুব্রত বাবু মুহূর্তের মধ্যে প্রচন্ড রেগে গেল তারপর যেই সামনে একটা ছেলেকে দেখল সঙ্গে সঙ্গে কান্নার নাটক করে বলল সৌদামিনী তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আমি তোমার জন্য কত চিন্তায় ছিলাম জানো, তুমি এত রাত্রে কোথায় ছিলে?
সৌদামিনী - কাকা এই হল রোহন স্যার আমাকে কাল রাত্রে অনেকগুলো ছেলের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল যারা আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল। আমি বুঝতে পারছি না ছেলেগুলো কেন আমাকে মারতে চেয়েছিল। কাকা এরপর থেকে আমি রাত্রে আর কোন কিছু কিনতে যাব না।
সুব্রত বাবু রোহনকে বাড়ির ভেতরে এনে হাতজোড়ো করে বলল আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আপনি আমার প্রাণটাকে ফিরিয়ে দিলেন। কাল থেকে আমি খুব চিন্তায় ছিলাম।
রোহন গম্ভীর গলায় বলল আপনি এত রাত্রে সৌদামিনীকে একা কেন বাজারে পাঠিয়েছিলেন?
সুব্রত বাবু - আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রান্নার তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই রান্না তেল আনতে পাঠিয়েছিলাম। যদি জানতাম মেয়েটার সঙ্গে এত কিছু হয়ে যাবে তাহলে কখনোই পাঠাতাম না। সৌদামিনী আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি এরপর থেকে কখনো তোমাকে বাইরে পাঠাবো না। আমি প্রয়োজন পড়লে নিজেই গিয়ে নিয়ে আসবো।
সৌদামিনী রোহনকে বলল স্যার আপনি বসুন আপনার জন্য চা বানিয়ে আনছি।
রোহন - ঠিক আছে যাও ।
সৌদামিনী বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
সুব্রত বাবুর মুহূর্তের মধ্যে মুখের রং পাল্টে গেল।
রোহন সুব্রত বাবুর চোখে চোখ রেখে সুব্রত বাবুর মন পড়ার চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই পারল না। যখনই সুব্রত বাবুর ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখনই একটা তীব্র আলোকরশ্মি রোহনকে বাধা দিয়ে দিচ্ছে। রোহন খেয়াল করল সুব্রত বাবুর গলায় কিছু একটা আছে।
সুব্রত বাবু রোহনকে অদ্ভুত ভাবে দেখে বলল আপনি কে? এত রাত্রে আপনি কি করে জঙ্গলে গিয়েছিলেন?
রোহন - আমি রোহন রায় সৌদামিনীর কলেজের নতুন প্রফেসর।
সুব্রত বাবু যেই রোহন রায় নাম শুনল চমকে উঠল। আশ্চর্য হয়ে রোহনকে দেখতে লাগলো। রোহন সুব্রত বাবুকে দেখে হেসে বলল আপনি যেটা ভাবছেন সেটা ঠিক আমি রোহন রায় আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেছি।
সুব্রত বাবু হাতের মুঠো শক্ত করে যেই কিছু বলবে তখনই সৌদামিনী সামনে এসে বলল কাকা তুমি রাত থেকে কিছুই খাওনি? আমি তোমার জন্য খাবার বানিয়ে দিচ্ছি।
সুব্রত বাবু হাসিমুখে বলল হ্যাঁ মা তুমি যেটা চাও সেটা বানিয়ে দাও। তুমি বাড়িতে এসে গেছ এবার আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে।
সৌদামিনী আবার চলে গেল।
রোহন আর সুব্রত বাবু দুজনে একে অপরকে খেয়ে ফেলার দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো।
চলবে,,,,,,,,,,,
গল্পটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।