রিয়াল লাভার পর্ব ২
রিয়াল লাভার পর্ব ২
রোহন আটটে ছেলেকে দেখে হাসতে হাসতে হঠাৎ ভয়ংকর হতে লাগলো। রোহনের চোখ গাঢ় নীল হয়ে গেল তারই সঙ্গে রোহনের শরীরের রূপ বদল হতে লাগলো। ছেলেগুলো রোহনের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
মুহূর্তের মধ্যে রোহন একটা ভয়ংকর পশুতে পরিণত হয়ে গেল। রোহনের সামনে বড় বড় হিংস্র দাঁত বেরিয়ে গেল শরীর লোমের আবরণে ঢাকা পড়ে গেল।
ছেলেগুলো চিৎকার করতে লাগলো প্রাণভিক্ষা চাইতে লাগলো।
রোহন হিংস্র হয়ে একটা ছেলের গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে তার রক্ত শুষে নিতে লাগলো।
বাকি ছেলেগুলো কান্না করতে থাকলো।
রোহন জোরে জোরে গর্জন করে বলল তোদের সাহস কি করে হল আমার সৌদামিনীকে মারার চেষ্টা করার! আমি তোদের সবগুলোকে শেষ করে ফেলব। সত্যি করে বল তোদেরকে কেন সুব্রত সেন সৌদামিনীকে হত্যা করতে পাঠিয়েছে??
ছেলেগুলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল আমাদের ছেড়ে দিন আমরা সব সত্যি কথা বলবো।
রোহন আবার ভয়ংকর গর্জন তুললো।
একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলল আমাদেরকে সুব্রত বাবু কিছু বলেনি শুধু সৌদামিনীকে হত্যা করতে বলেছে।
রোহন গর্জে উঠে বলল মিথ্যা কথা!! রোহন ছেলেটার গলা কেটে ছেলেটার রক্ত পান করতে লাগলো। বাকি ছেলেগুলো একইভাবে রোহনকে মিথ্যে বলার চেষ্টা করতে লাগল রোহন একইভাবে একের পর এক সব ছেলেগুলোকে একইভাবে মৃত্যু দিল শেষে বাকি রইল শুধু একটা ছেলে।
রোহন ছেলেটাকে চুটকি বাজিয়ে গাছ থেকে নিচে ফেলে দিল।
ছেলেটা ভয়ে কান্না করতে শুরু করে দিল।
রোহন নিজের পুরনো রূপে ফিরে এসে বলল সত্যি করে বল তোদেরকে কেন সৌদামিনীকে হত্যা করতে পাঠিয়েছে? কি জন্য? আমি জানি তুই টাকার জন্য বাধ্য হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছিস, তোর পরিবারে তোর কিছু হয়ে গেলে তোর পরিবারের সবাই বেঁচে থাকতে থাকতে মরে যাবে। তাই কোন কিছু না লুকিয়ে সত্যি কথা বলে দেয় না হলে বাকি সবার মত তোরও আমি একই অবস্থা করব।
ছেলেটা হাতজোড় করে বলল আমি সত্যি বলছি আমি কিছুই জানিনা। সুব্রত সেন আমাদের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দিয়েছে যে করে হোক সৌদামিনীকে মারতে হবে। যদি আমরা মারতে পারি তাহলে আমাদের আরো টাকা দেবে আমাদেরকে কোন কারণ জানায়নি ।
রোহন ছেলেটার কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কয়েক ঘন্টা আগের মুহূর্তে গেল। রোহন কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করে বাম হাত দিয়ে আকাশের দিকে একটা নীল রশ্মি প্রেরণ করল তাতেই কয়েক ঘন্টা পূর্বের সমস্ত দৃশ্য ভেসে উঠতে লাগলো।
রোহন দেখলো সুব্রত সেন ছেলেগুলোকে টাকা দিয়ে সৌদামিনীর হত্যা করতে পাঠিয়েছে। কেন পাঠিয়েছে সুব্রত সেন কাউকে কিছুই বলেনি।
রোহন চোখ বন্ধ করে সুব্রত সেনের মন পড়ার চেষ্টা করল তখনই একটা তীব্র লাল রশি রোহনকে ঝটকা দিয়ে দিল।
রোহন সুব্রত সেনের মন পড়তে পারল না।
রোহন নিজে নিজে বলল কি হচ্ছে আমি যখনই সুব্রত সেনের মন পড়ার চেষ্টা করছি তখনই এই তীব্র আলোকরশ্মি আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কি এমন শক্তি আছে সুব্রত সেনের কাছে??
রোহন ছেলেটার মাথায় তিনবার হাত বুলিয়ে কয়েক ঘন্টার সমস্ত ঘটনা ছেলেটার মন থেকে মুছে দিল তারপর রোহনের চোখ থেকে একটা তীব্র নীল আলোক রশ্মি বের হয়ে যেই ছেলেটার শরীরের উপর পড়লো ছেলেটা অদৃশ্য হয়ে নিজের বাড়ির বিছানাতে পৌঁছে গেল।
রোহন বাকি মৃতদেহ গুলিকে মাটির মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে বলল যারা যারা আমার সৌদামিনীর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদের সবার পরিণতি এমন ভয়ঙ্কর হবে। সুব্রত সেন তুমি আমার জান পাখির প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করেছ আমি তোমাকে ছাড়বো না। রোহন চোখ বন্ধ করে নিল আবার মিলিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছে গেল।
রোহন নিজের রুমে গিয়ে দেখল সৌদামিনী বিছানার উপর এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।
রোহন সৌদামিনীর সামনে এসে সৌদামিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল সৌদামিনী আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দেব না। আমি সবসময় তোমাকে প্রটেক্ট করব। তোমার ভালোবাসার টানে আমি মৃত্যু থেকে আবার ফিরে এসেছি। তুমি আমাকে চিনতে পারছ না আমি তোমার সেই ছোটবেলার বন্ধু তোমার রিয়েল লাভার রোহন রায়।
রোহন সৌদামিনীর কপালে চুমু খেয়ে সৌদামিনীকে ব্ল্যাঙ্কেট ঢাকা দিয়ে শুইয়ে দিল তারপর নিজে সৌদামিনী এক পাশে শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রোহন সৌদামিনীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে যখন সৌদামিনীর ঘুম ভাঙলো সৌদামিনী অনুভব করল সে নড়তে পারছে না। সৌদামিনী ধীরে ধীরে চোখ খুলে যেই তাকালো অনুভব করল তাকে দুটো হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, সৌদামিনী সঙ্গে সঙ্গে পেছন ঘুরে তাকালো দেখল রোহন পরম শান্তিতে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য সৌদামিনী রোহনের মুখের মায়ায় হারিয়ে রোহনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো পরক্ষণেই মনে হলো রোহন একজন অজানা ব্যক্তি সৌদামিনী নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো।
রোহন চোখ বন্ধ করেই বলল একটু আগে তো আমাকে খুব ভালো করে দেখছিলে এখন কেন ছটফট করছ?
সৌদামিনী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আপনি কি করে জানলেন আমি আপনাকে দেখছিলাম?
রোহন এক ঝটকায় সৌদামিনীকে নিজের একেবারে কাছে টেনে নিয়ে বলল আমি সব কিছু জানি গুড মর্নিং সৌদামিনী ।
সৌদামিনী রোহনের হাত ছাড়িয়ে উঠে বসে বলল আপনি কে বলুন তো ? আপনি কেন আমাকে এখানে এনেছেন? আপনি কি করে জানলেন কালকে আমি বিপদের মধ্যে ছিলাম?
রোহন উঠে বসে বলল বললাম না আমি তোমার সম্পর্কে সবকিছু জানি।
সৌদামিনী - সত্যি করে বলুন তো আপনি কে?
রোহন - বললাম তো আমি তোমাদের নিউ টিচার। তোমার যদি না বিশ্বাস হয় তাহলে তুমি আজকে কলেজে গেলে আমাকে দেখতে পাবে। চলো তোমাকে আমি তোমার বাড়িতে দিয়ে আসি তোমার কাকা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে বলল আপনি কি করে জানলেন আমার কাকা আছে ?
রোহন সৌদামিনীর গাল টেনে বললো আমি সবকিছু জানি তোমার বাবা মা মারা যাওয়ার পর তুমি তোমার কাকার কাছে মানুষ হয়েছো, তোমার কাকা বিয়ে করেনি তাই তোমাকে নিজের মেয়ের মত পালন করেছে কি ঠিক বলেছিতো?
সৌদামিনী অবাক হয়ে রোহনকে দেখতে লাগলো।
রোহন - তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমার জামা কাপড় রেডি করে রেখেছি।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে বলল আপনি এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠলেন আপনি কি করে আমার জামা কাপড় রেডি করলেন?
রোহন - তোমার যদি না বিশ্বাস হয় তুমি বাথরুমে গিয়ে দেখো তোমার জন্য আমি সব কিছু রেডি করে রেখেছি। ওখানেই তোমার জামা কাপড় রাখা আছে ।
সৌদামিনী কিছু না বলে চুপচাপ বাথরুমে চলে গেল ।
রোহন রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর সৌদামিনী ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। রোহন রুমে চলে এলো।
সৌদামিনী যেই পেছনে ঘুরলো রোহনকে দেখে ভয় পেয়ে গেল।
সৌদামিনী জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল আপনি কি কোন ভূত? হঠাৎ এভাবে চলে আসেন কি করে? জানেন আমি কত ভয় পেয়ে যাই।
সৌদামিনী এবার দিনের আলোয় বাড়িটা দেখতে লাগলো।
রোহান - কি দেখছো?
সৌদামিনী - আমি আপনার বাড়ি দেখছি দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরনো।
রোহন - হ্যাঁ পুরনো বাড়ি আমি নতুন কাজ করিয়েছি তাই কিছুটা অন্যরকম লাগছে।
সৌদামিনী রুম থেকে বেরিয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলো।
রোহন - তুমি আমার বাড়ি ঘুরে দেখবে?
সৌদামিনী মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
রোহন সৌদামিনীর হাতে ধরে বাড়িতে ঘোরাতে লাগলো।
সৌদামিনী আশেপাশে দেখতে লাগলো তখনই যেন মনে হল বাড়িটা খুব চেনা চেনা।
সৌদামিনী যেতে যেতে একটা রুমের সামনে থেমে দাঁড়িয়ে গেল।
রোহন - কি হল তুমি দাঁড়িয়ে গেলে কেন?
সৌদামিনী রুমটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকে রইল।
রোহন সঙ্গে সঙ্গে সৌদামিনীকে ওখান থেকে নিচে নিয়ে এলো।
সৌদামিনী পেছন ঘুরে ওই রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
রোহন সৌদামিনীকে সোফাতে বসিয়ে বলল তুমি বসো আমি জল খাবার আনছি।
সৌদামিনী আমতা আমতা করে বলল আপনার বাড়িতে আর কে কে থাকে? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না।
রোহন রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল আমি একাই থাকি।
সৌদামিনী আমতা আমতা করে বলল আপনার মা বাবা ভাই বোন কেউ নেই?
রোহন সৌদামিনীকে দেখে ভাবুক হয়ে বলল না কেউ নেই সবাই গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে শুধু আমি বেঁচে গেছি।
সৌদামিনী রোহনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলল সরি।
রোহন - সৌদামিনীর জন্য জলখাবার বানাতে লাগলো।
সৌদামিনী মুখ ঘুরিয়ে চারিপাশটা দেখতে লাগলো।
রোহন এই সুযোগে চোখের পলক ফেলাতে লাগলো সঙ্গে সঙ্গে সৌদামিনীর জন্য জলখাবার প্লেটের মধ্যে রেডি হয়ে যেতে লাগলো।
মুহূর্তের মধ্যে রোহন জলখাবার রেডি করে সৌদামিনীর জন্য নিয়ে আসতে লাগলো।
সৌদামিনী আশেপাশে দেখে যেই সামনে মুখ ঘুরালো দেখল রোহন দাঁড়িয়ে আছে।
সৌদামিনী - আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন একটু আগে তো জল খাবার বানাতে গিয়েছিলেন!
রোহান হাসিমুখে বলল আমার জলখাবার বানানো হয়ে গেছে এই নাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
সৌদামিনী খাবারের প্লেটের দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল তার পছন্দের কেক, চমচম, স্যান্ডউইচ, ফ্রায়েড ডিম সেদ্ধ, মৌসুমী লেবুর জুস আর তিন রকম ড্রাই ফ্রুট।
সৌদামিনী আশ্চর্য হয়ে রোহনকে দেখে বলল আপনি এগুলো বানালেন কখন? আপনি এক্ষুনি তো রান্নাঘরে গেলেন আবার এক্ষুনি ফিরে এলেন।
রোহন হেসে বলল তোমাকে খেতে দিয়েছি তুমি খেয়ে নাও কিভাবে হল কেন হল এগুলো জানতে হবে না। নাও তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না হলে আমি খেয়ে নেব। তোমার পছন্দের চমচম আছে তুমি খেয়ে নাও ।
সৌদামিনী - আপনি কি করে জানলেন আমি চমচম খেতে পছন্দ করি?
রোহন - কাল থেকে তোমাকে কতবার বলেছি বলতো আমি তোমাকে খুব ভালো করে জানি,নিজের থেকে ও বেশি তোমাকে জানি। তোমার পছন্দ অপছন্দ, তোমার ইচ্ছে, তোমার খুশি, দুঃখ সবকিছু জানি। খুব ভালোবাসি তোমাকে।
সৌদামিনী রোহনের মুখে ভালোবাসি কথা শুনে হতভম্ব হয়ে রোহনকে দেখতে লাগলো।
চলবে,,,,,,,,,,,,
।