Doyel Kar

Inspirational Others

4  

Doyel Kar

Inspirational Others

বিয়ের দেনা পাওনা

বিয়ের দেনা পাওনা

4 mins
355



আজ একটা বিশেষ দিন কারণ আজ পাত্রপক্ষ আসবে মেয়ে দেখতে তাই খুব তোড়জোড়।সকাল থেকে উঠে মা ব্যস্ততার সাথে লেগে পরল সব আয়োজন করতে আর বাবা গেল বাজার করতে...

দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে এলো ব্যাস প্রহর শেষ হতে যায় বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল বড় বড় একটা গাড়ি একে একে নামে পাত্রপক্ষ....

প্রথমে নামল পাত্রের বাবা সঙ্গে রয়েছে তার মা আর এসেছে পাত্রের ঠাকুমা তারপর সব শেষে গাড়ি থেকে নামল পাত্র।

পাত্রীর বাবা সবিনয়ের সাথে স্বাগত জানাল... আসুন আসুন ভেতরে আসুন বসুন।


পাত্রের বাবা বলল ঠিক আছে দাদা এত কিছু করার দরকার কি ছিল...?

তারপর বসল পাত্রের পক্ষের সবাই।

এবার বিচার হবে পাত্রীর ,,,,

বিচারের কাঠগড়ায় পাত্রীকে হাজির হতে হবে তাই পাত্রের ঠাকুমা বলল এবার আপনাদের মেয়েকে নিয়ে আসুন.....


আরকি মেয়ের বোন দিদিরা মিলে নিয়ে এলো আমাদের পাত্রীকে। ৫ ফুট লম্বা গোলগাল চেহারা গায়ের রং চাপা দেখতে মোটেই খারাপ নয় তবু লোকে বলে শ্যাম বর্ণা।

পাত্রী এসে প্রথমে সবাইকে প্রণাম করলো।

সবাই বললো থাক মা থাক তোমাকে বাড়ির লক্ষী করে নিয়ে যাব.....

তারপর বসতে বলল পাশে ,

পাত্রের ঠাকুমা জলখাবার খেতে খেতেই জিজ্ঞাসা করল মা তুমি কি কি জানো..??


পাত্রী বলল অনেক কিছুই জানি কিন্তু সবকিছু করতে পারি না...


তখন পাত্রের মা বললো " মা তুমি রান্না করতে জানো.....?"


পাত্রী বলল হ্যাঁ পারি


"বাহ্ বেশ বেশ "


তারপরে পাত্রের বাবা বলল "মা তুমি কত দূর পড়াশোনা করেছ.....??"


পাত্রী উত্তর দিল এই সবে গ্রাজুয়েশন পাস করেছি।


পাত্রের বাবা বলল "তুমি কত নাম্বার পেয়ে পাস করেছ....??"


পাত্রী বলল এই 89 পার্সেন্ট নাম্বার পেয়ে আমি পাশ করেছি।


"বাহ বাহ খুব ভালো খুব ভালো "


এইভাবে চলল কিছু কথা কিছু আলাপ পরিচয়

পাত্র আড়চোখে দেখে পাত্রীকে.... তার মনে কিন্তু কিন্তু......

আমি তো ফর্সা মেয়ে চাই কিন্তু মেয়েটা শ্যাম বর্ণা মন মেজাজটা খারাপ তবে প্রকাশ করল না..।


সব শেষে পাত্রের বাবা, ঠাকুমা বলল দাদা আমাদের মেয়ে বেশ পছন্দ হয়েছে আপনাদের অনুমতি থাকলে খুব তাড়াতাড়ি আমার বাড়ির লক্ষী করে নিয়ে যাব..।


সবাই খুব খুশি এরপরে পাত্রের বাবাকে পাত্রীর বাবা বলল আপনারা বিয়েতে কি পন চান....?


পাত্রের বাবা বলল আমাদের কিছু চাই না শুধু আপনার মেয়েকে চাই...।

সেই মতো কথা পাকা হলো বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হলো আজ সেই শুভক্ষণ কারণ আজ পাত্র-পাত্রীর শুভ পরিণয়।


বিয়ের সময় ঠাকুরমশাই আদেশ করলেন যান গিয়ে পাত্রীকে নিয়ে আসুন। কথামতো পিড়িতে বসিয়ে পান পাতা ঢেকে পাত্রীকে নিয়ে আসা হল। শুভদৃষ্টি হলো তার সঙ্গে আরো এক ধরনের শুভদৃষ্টি হলো সেটা হল......পাত্রের মা বলল একি মেয়ের গায়ে তো সোনার গহনা নেই শুধু একটা সুতোর মতো সোনার চেন! আর হাতে ওগুলো কি এগুলো কে কি সোনা বলে! যেন কাঁচের চুড়ি ।


পাত্রের ঠাকুমা বলল আর পাত্রকে বরণে একটা ঘড়ি এরকম কি বিয়ে হয়...একে কি বিয়ে বলে...??


পাত্রীর বাবা বলল আপনারা তো বলেছিলেন আপনারা কিছু চান না শুধু মেয়ে চান।



পাত্রের বাবা বলল আমরা চাইনি বলে দিতে হবে না ? আমরা তো ভেবেছিলাম আপনার মেয়েকে আপনি ভালো করে গয়নাগাটি পরিয়ে ভরিয়ে দেবেন কিন্তু এখনতো দেখছি আপনি কিছুই দিলেন না ।


তখন পাত্রীর বাবা বলল আমি আমার সামর্থমতো দিয়েছি আর তাছাড়া অনুষ্ঠান করতে অনেক খরচ করেছি এখন আর খরচ করার সামর্থ্য নেই।


এই কথা শুনে পাত্রের মা বলল আমার একমাত্র ছেলে তার কি এই পাবার যোগ্য ? এমনিতে শ্যাম বর্ণ গায়ের রং! ভেবেছিলাম আপনারা অনেক কিছু দেবেন না চাইলেও,তাই এরকম একটা মেয়েকে আমরা বাড়ির বউ করতে চেয়েছি...

নয়তো কে চায় এ রকম মেয়েকে বিয়ে দিতে...?


পাত্রের ঠাকুমা বলল বিয়ে থামাও এ বিয়ে এখন হবে না, আগে পাত্রীর বাবা একটা শিক্ষিত পাত্রের যোগ্য জিনিস দিক তারপর নয়তো বিয়ে হবে...।


সবাই থমথমে ভাবে তাকিয়ে রইলো কি হলো ব্যাপারটা...


পাত্রীর বাবা মিনতির সুরে হাতজোড় করে বলল আপনারা তো পন নেবেন না বলেছিলেন তাহলে এখন কি করে দেবো? অন্তত এ বিয়েটা হতে দিন পরে আস্তে আস্তে নয়তো আমি কিছু কিছু জিনিস দিয়ে দেবো, গয়না গড়িয়ে দেবো ।



পাত্রের বাবা বলল কোথায় আমরা পন চেয়েছি? এটাকে কি বলে এটাকে তো আপনার মেয়ের জন্য সামান্য কিছু দান করা বলে...।


তখন থেকে পাত্রী বসে বসে সব শুনছিল হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে সবার সামনে বললো...

আমি বিয়ে করতে চাই না। যেখানে একটা মেয়ের সুখের জন্য বাবাকে সর্বস্ব দিয়ে দিতে হবে তার বিনিময় মেয়েকে বিয়ে করতে হবে সেরকম বিয়ে করার থেকে না করাই ভালো ।

আচ্ছা আপনার একটা কথা বলুন মানুষের গায়ের বর্ণ কী তার মূল্য ঠিক করে???

যদি করে থাকে তাহলে বলব এই যে আপনারা শিক্ষিত হয়েও একটা অশিক্ষিত...! যারা বিয়েতে বিয়ে আটকে ছেলের যোগ্য জিনিস দাবি করে সে ক্ষেত্রে কেউ কিছুই বলছে না এখানে কি ধরনের শিক্ষিতের পরিচয় পাওয়া যায়....আপনারা বলুন?

আর হ্যাঁ আমি একটা মেয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে বাবার পরিচয় ছেড়ে আমি অন্যের বাড়িতে যাব, সেখানে তাদের পরিচয় নিজের পরিচয় বানাবো, তাদের সেবা যত্ন করব কিসের বিনিময়ে? শুধুমাত্র ভালোবাসার বিনিময়ে।

......এই ভালবাসার মূল্য কি আপনারা দিতে পারবেন???

আসলে জানেন তো দোষটা আপনাদেরও নয় দোষটা এই শিক্ষিত সমাজের, তারা বিয়ের দেনাপাওনা তুলে দিয়েছে শুধু মুখেই বলে....

কিন্তু নতুনভাবে বলে আমরা কিছু চাইনা শুধু চাই মেয়েকে সাজিয়ে দিন এটা হল আধুনিক যুগে নতুন তালে দেনাপাওনা....

ভেবে দেখবেন আসলে আপনাদের ও মেয়ে আছে তাকেও বিয়ে দিতে হবে.....

যদি শিক্ষিত হয়ে আপনারা নিজেদের চিন্তাধারার না পাল্টান তাহলে শিক্ষিত হয়ে লাভ কি....??

এই বলে পাত্রী মন্ডপ ছেড়ে চলে গেল....

আর সেখানে উপস্থিত সবাই দর্শকের নেয় দাঁড়িয়ে রইল আর ভাবতে লাগলো আর নিজেদের প্রশ্ন করতে লাগল আসলে কি তারা শিক্ষিত ?????????











                সমাপ্ত



ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।

আর যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই জানাবেন রিভিউ দেবেন।


ধন্যবাদ।

🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational