পুরোনো ধ্বংসাবশেষ
পুরোনো ধ্বংসাবশেষ
আমি হলাম রাইমা রায় চৌধুরী। রায় চৌধুরী বংশের মেয়ে। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে "ধ্বংসের জন্য এসেছি বলে" সবাই বলেছিল। কিন্তু আমার কি দোষ ছিল যে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো নিজের বাড়ি থেকে? আমি মেয়ে বলে?? এমনকি আমার নিজের বাবাও আঁটকালেন না আমাকে। কাকিমাকে একবারের জন্যও প্রতিবাদ করে বললেন না, "না এটা আমার বাড়ি। আর আমি আমার মেয়েকে, আমার রাইকে কোত্থাও যেতে দেবো না!!" কই করেন নি তো !! বরং উঠে চলে গিয়েছিলেন রুম থেকে । কেন আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে? আমি তো সামান্য কাজের লোকের চাকরি করে এতদিন থেকেছি। একবারের জন্যও কেউ খোঁজ খবর নিতে আসে নি।
একদিন যখন শুনি যে আমার মা আমাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু গ্রহণ করেছে, সেই দিন থেকে ঐ বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য আমার কাছে অত্যন্ত ঘৃণ্য!! আমি যখন শেষ বারের মতো মাকে ছুঁতে যাচ্ছিলাম, তখন কাকিমা বলেছিল , "তুই ছোঁস না রে!এমনিতেই নিজের মাকে খেয়েছিস, আজ আবার কি খেতে এসেছিস?? যা বের হ এই ঘর থেকে! যা বলছি!!" সেদিন চুপ করেই ছিলাম কারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর সময় ঠিক দিয়ে দেয়! আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে এই প্রশ্নের যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য। আমি যে মাকে কথা দিয়েছিলাম আমি সবাইকে যোগ্য জবাব দিয়েই ছাড়বো!! আমার মায়ের একজন ঠাম্মা ছিল বড্ড ভালো মানুষ। কিন্তু ঐ যে এখনকার যুগে ভালো মানুষের জায়গা নেই। ছুট্টে গেলাম ওনার কাছে! কামিনী রায় ওনার নাম। ওনার কাছেই আমি মানুষ। হ্যাঁ আজ উনি আর আমার সাথে নেই। মায়ের কাছে চলে গেছেন। কিন্তু আজ আমি আমার যোগ্য জবাব দিতে পেরেছি। হ্যাঁ মা তোমার মেয়ে পেরেছে!!
আজ এই রায় চৌধুরী বাড়ি আমি কিনে নিয়েছি। যেখানে আমার থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিল না, সেখান থেকে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে আমি থাকবো মা! হ্যাঁ মা আমি পেরেছি!! আজ কাকিমাকে বললাম , "কি গো কাকিমা আমি তো ডাইনি তাই না?? এবার দেখো এই ডাইনিই তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিল!!" আজ অনেক দিন পর আমার খেলার সাথি আমার চিলেকোঠার ঘরটায় ঢুকলাম!! গিয়ে দেখি ওটা কি একটা ঘর নাকি ছোটো একটা ধ্বংসাবশেষ?? চারিদিকে মাকড়সার জাল দিয়ে ঘেরা। ইঁদুর চুঁই চুঁই করছে। হয়তো মা চলে যাওয়ার পর থেকেই এই ঘরটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কেউ সাফ পর্যন্ত করেনি! এগিয়ে গেলাম আমি। দেখলাম আমার পুতুল গুলো যেগুলো মা কিনে দিয়েছিল। নাঃ!! আজ আর তেমন ভাবে পুতুল গুলো নেই, পালটে গেছে!! ইঁদুর গুলো কেটে দিয়েছে ওগুলো! মায়ের কিছু শাড়িও রাখা আছে এখানে!! আরে এইত্তো আমি তো এই শাড়িটা পরেই আগে বউ বউ সাজতাম।
এটাও তো একটা ধ্বংসাবশেষের রূপ নিয়েছে! আজ অনেক দিন পর আবার দেখা হলো আমার পুরোনো কিছু স্মৃতি, কিছু কষ্ট কিছু স্বপ্ন পূরণ, ওহ হ্যাঁ এটা তো বলাই হয় নি আমি এখন সায়েন্টিস্ট রাইমা রায় চৌধুরী। তাই তো আজ টাকার জোরে বাড়িটা কিনে ফেললাম! যাই হোক আজ এই বাড়িটাকে কেমন জানি অচেনা অজানা লাগছে! সবাইকে আসল রুপে দেখে ফেলেছি যে! অনেকদিন পর দেখতে পেলাম আমার এই ছোট্ট ধ্বংসাবশেষ!! দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ গুলো এখন আমার হৃদয়ের মাঝখানে রয়েছে। নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে আটকে রেখেছি ওগুলো নিজের বাহুডোরে। আমার ঐ ধ্বংসাবশেষগুলো আজো যে আমার ঐ মনের মনিকোঠায় অবস্থান করছে। মাতো আর নেই শুধু মাত্র ধ্বংসাবশেষগুলোই রয়ে গেছে
