" আমার পরিচিতি, আমি মানুষ! "
" আমার পরিচিতি, আমি মানুষ! "
আমি সাগরিকা,,, সাগরিকা ভূঁইয়া। আমি ঠিক আর পাঁচটা মেয়ের মতো না!!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের দেখলেই টোন কাটা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা, গালি দেওয়া, ওই থার্ডক্লাস ছেলেদের দেখলে যে মেয়েরা লুকিয়ে পড়ে, আমি ঠিক তাদের দলে পড়ি না। আমি শুধু এটাই জানি যে, " যে অন্যায় করে সে যেমন অপরাধী, যে অন্যায় সহে সেও সমান অপরাধী!! "আমি জানি, ইট মারলে পাটকেলটিও খেতে হয়!! তাই ওই পাড়ার অসভ্য ছেলেগুলো যখন আমায় বাজে ভাষাগুলো বলে, আমি মুখ লুকিয়ে থাকি না। বরং দুটো উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দিই। আর এজন্যই অনেক সময় অপমানিতও হয়েছি। কখনো কখনো বাজে মন্তব্যও শুনেছি নিজের কাছের মানুষদের থেকেই। অনেক প্রতিবেশী আবার আমার মা বাবাকে বলেছে, " এই তো ছিরির মেয়েকে বানাচ্ছো!! রাস্তার মোড়ে পাড়ার ছেলেদেরকে মারধোর করে। এ মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে তো?? যা মারকুটে!! শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আবার নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়িকেই না মেরে ফেলে। বড্ড অহংকারী তো মেয়েটা!! " আজব তো শ্বশুর শ্বাশুড়িকে মারবো কেন?? ছেলেগুলো আমায় বাজে কথা বলছিল, আর আমি সেগুলো মুখ বুজে মেনে নিতাম?? এটাই ভালো হতো কি?? এর উত্তর আমি আজ অবধি খুঁজে পাই নি।
আচ্ছা আমার বিয়ে নিয়ে এতো চিন্তা কেন আমার ওই প্রতিবেশীদের?? এটা তো আমার বিয়ে!! তাই নয় কি?? তাহলে ওদের কি হচ্ছে?? ওদের কেন এতো সমস্যা?? আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করে দিলেই কি ওদের শান্তি?? এর উত্তরও আমি ঠিক পাই নি। " প্রচন্ড অহংকার আমার!! " এটাই শুনি সবসময়। তা অহংকারটা কোথায় দেখিয়েছি?? কেউ বলতে পারবে আমায়?? নাঃ!! অহংকার আমি কখনোই দেখাই নি। কিন্তু এইসব কথা শুনে দমে যাওয়ার মতো মেয়েও কিন্তু আমি নই।
আমার পোষাক নাকি আমাকে একজনের লালসার শিকার বানিয়ে দিতে পারে। আমি এটাই শুনেছি, কিন্তু মানি নি কখনোই। কারণ আমি জানি এটা আমার পোষাকের দোষ নয়। এটা ওই নোংরা মানুষদের মানসিকতার দোষ। সমাজ কেন সবসময় মেয়েদের দায় করবে?? কেন আমাদের স্বাধীনতা বলতে কিচ্ছু নেই?? ছেলেরা তো গায়ে পোষাক না দিয়েই থাকে!! কই তাদের তো পোষাক নিয়ে কখনোই দায় করা হয় না!! কেন হয় না?? কেউ বলতে পারবে?? আমাদের দোষটা কি?? আমরা মেয়ে তাই?? আমি মানি না ছেলে মেয়েদের মধ্যে বৈষম্য, ভেদাভেদ!! আসলে এগুলো তো আমরাই তৈরী করি!! বাড়িতে ছেলে আর মেয়ে থাকলে, ওদের দুজনের মধ্যে খাওয়া কিংবা অন্যান্য বিষয় নিয়ে যখন খুনসুটি, ঝগড়া-মারপিট হয়। তখন আমরা মেয়েটাকে সরাসরি বলে দিই, " দাদা চাইছে যখন দিয়ে দে না!! তুই নাহয় পরে পেয়ে যাবি। " কখনো এটা বলা হয় না, " চল দুজনেই সমান সমান করে নে। " এমন করেই ছেলেটাকে দিনের পর দিন বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ছেলেটাই এই সমাজে বেশী প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। মেয়েটা নয়। মেয়েটা ফেলনা। ওকে সহজে মানিয়ে নেওয়া যাবে। নাঃ!! মানিয়ে নিতে হবে!! কারণ এটাই আমাদের সমাজ। আমি এগুলো মানি না। যদি তার জন্য আমি অহংকারী, তাহলে আমি সেই অহংকারীই হতে চাই। আমি চাই না, আমার ভাইএর সাথে আমাকে কমপেয়ার করা হোক। ও বেশী আমি কম পাই। এটা হিংসে নয়!! আমি চাই আমার ভাই যাতে কোনো মেয়েকে ছোট না মনে করে!! ও যাতে জানতে পারে, সবাই সমান!! সবাই এক!! আর আমাদের একটাই পরিচিতি, " আমরা মানুষ! "