পুজোর মরশুম
পুজোর মরশুম
দেবাশিসের অফিসে ছুটি মেলে না পুজোর মুখে। অগত্যা সুজাতাই শনিবার অফিস সেরে মিঠাই-কে নিয়ে পুজোর বাজার করতে গিয়েছিল। পুজোর মুখে জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে জেরবার হয়ে যেতে হচ্ছে। আজ আর বাড়ি ফিরে রান্না করার মতো ধৈর্য্য অবশিষ্ট নেই। দেবাশিসকে ফোনে ধরে সুজাতা, তাঁর আজ নাইট-ও করতে হবে। তখনই মনে মনে প্ল্যান করে নেয় সুজাতা। মিঠাই তো বিরিয়ানি পেলে আর কিচ্ছুটি চায় না। তাহলে আজ বরং মা-মেয়ে-তে একেবারে বিরিয়ানি খেয়ে ফিরবে।
ও মা, মেয়ে তো দাঁতে কাটছে না কিছু--চামচে করে কাটাকাটি খেলছে প্লেটে। বিরিয়ানির সাথে এহেন বিরোধ, এ তো স্বাভাবিক নয়।
"কি রে মিঠাই, খাচ্ছিস না কেন?", সুজাতা জানতে চায়।
"কিছু না, এই তো খাচ্ছি।", মুখ নিচু করে জবাব দেয় মিঠাই।
কিন্তু তারপরেও খাবার কোনও লক্ষণ চোখে পড়ে না সুজাতার। তাহলে কি ওর পছন্দের জামাটা কিনে দেয় নি বলেই রাগ হয়েছে?! কিন্তু মিঠাই তো কোনোদিন
ই এত জেদি বা অবুঝ না!
" কি রে কি হয়েছে? ", আবার জিজ্ঞেস করে সুজাতা।
মিঠাই এবার মুখ তুলে তাকায়। ওর দু-চোখে জল টলটল করছে। ও আঙুল তুলে আমার পেছনের দিকে ইঙ্গিত করে। তাকিয়ে দেখি, রেস্টুরেন্টের কাচের দেওয়ালের ওপাশে একটা বাচ্চা মেয়ে, ছেঁড়া ময়লা জামা পরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে সবার খাওয়া দেখছে। বুঝতে পারলাম, মিঠাই-এর মনখারাপের কারণ।
আমরা খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে বাচ্চাটাকে ডাকতেই ভয়ে ছুটে পালাচ্ছিল। মিঠাই দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে নিয়ে আসে। বিরিয়ানির প্যাকেটটা দিতেই চোখেমুখে হাসি ফুটে ওঠে। গোগ্রাসে গিলতে থাকে খাবারটুকু।
মিঠাই সুজাতার কানে কানে বলে, "মা গো, ওকে আমার থেকে একট নতুন জামা দেবো?"
সুজাতা ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেয়।
পুজোর মরশুমের একটা অন্ধকার মুখ হঠাৎ আলো ঝলমল করে ওঠে।
মিঠাই-এর মা হিসাবে গর্ব হয় সুজাতার।