প্রতিচ্ছায়া
প্রতিচ্ছায়া


সামনের সপ্তাহ থেকে খালপাড়ের বস্তিতে একদিন করে চ্যারিটি ট্রিটমেন্ট করবো ।রিমোটে এসির ঠাণ্ডাটা অ্যাডজাস্ট করতে করতে আলগা ভাবেই কথাটা বলে কুন্তল ।টাকাগুলো আলমারির লকারে গুছিয়ে রাখতে রাখতে একটু থমকে দাঁড়ায় মিঠু ।
ডাঃ কুন্তল লাহিড়ীর হঠাৎ কি হলো যে এসি চেম্বার ছেড়ে খালপাড়ের বস্তিতে .....
মিঠুর কথা শেষ করার আগেই খেঁকিয়ে ওঠে কুন্তল , দেশের খবর-টবর রাখো না নাকি কিছু !!
মুখভার করতে গিয়েও রাগটা সামলে নেয় মিঠু ।
---কি হলো কি , শান্ত স্বরেই জানতে চায় ।
যেভাবে ভুয়ো ডাক্তারদের ধরাধরি চলছে , একবার ধরা পড়লে কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো ।গরীবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করলে হয়তো শকুনের নজর থেকে বাঁচা যাবে ।সমাজসেবা করলে হয়তো ....
----কতবার বলেছি , যত টাকা লাগে লাগুক , নিজের পাশের সার্টিফিকেটটা পাকাপোক্ত করো ; গজগজ করে ওঠে মিঠু ।
----এতো বছর তো ঐ সার্টিফিকেটেই চলছিল , অভাব তো কিছু ছিল না ।
----কি হবে গো যদি ধরা পড়ে যাও ।সামনে এখন কতো খরচ । মেয়েটাকে এইবছর-ই একটা ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করতে হবে । গাড়ির ই.এম.আই.টা এখনো শোধ হয়নি .....
---বাহ্ বাহ্ তোমরা নিজেদের স্বার্থের কথা
ভাবছো । ধরা পড়লে আমার যে জেল হয়ে যাবে এটা ভেবেছ একবার !!!!!
----সেকি গো , জেলও হতে পারে ? কুন্তলের কথায় আকাশ থেকে পড়ে মিঠু ।
----ওসব কোন ব্যাপার নয় , এখন থেকে একটা ভালো ল-ইয়ারকে ফিট করে রাখো । টাকার অঙ্কটা মোটা হলে উনিই সব সামলে দেবেন ।
মিন্তি কখন ঘরে ঢুকেছে খেয়াল-ই করেনি ওরা দুজনে । মেয়েকে দেখে দুজনেই যেন চমকে ওঠে । মেয়ে সব কথাই তবে শুনে ফেলেছে !!!!
----কদিন পরে পরীক্ষা , আর তুমি পড়া ফেলে লুকিয়ে লুকিয়ে বাবা-মায়ের কথা শুনছো ?এতটুকু ম্যানার্স জ্ঞান নেই তোমার ?মেয়েকে একটু জোর গলায় শাসন করতে যায় মিঠু ।
---শোনো তোমাদের কথা শোনার কোন ইচ্ছা নেই আমার । কালকে আমার পনের হাজার টাকা লাগবে , সেটাই বলতে এসেছিলাম ।
----পনের হাজার টাকা কি করবে , জানতে চায় মিঠু ।
----একটা ফিজিক্স সাজেশন কিনব , 95% সিওর কমন আসবে ।
----তোমাকে ভালো স্যারের কাছে পড়ানো হচ্ছে , টাকা দিয়ে সাজেশন কিনে পরীক্ষা দিতে হবে ?
----এর আর নতুন কি !!!! বাবাও তো......
মিন্তির শেষ না করা কথাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না কারো । সমস্ত প্রাচুর্য-ঐশ্বর্যকে ভেদ করে নিজেদের কঙ্কালসার সত্যিটার সামনে নির্বাক তিনজনেই.......