**ফাঁদ**
**ফাঁদ**


বাকি রাতটুকু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়েই কাটালো তনুজা।
পরদিন কথামতো চিত্রা ক্যাফেতে দেখা করলো দুজনে।
---"এতো চিন্তা করছিস কেন? একটা রাস্তা ঠিক বেরোবে।"
চৈতির গলায় আশ্বাসের সুর।
--- "এতবড়ো মিথ্যের সাথে লড়বো কি করে? তুই আমায় বাঁচা চৈতি!"
---"ভয় পাসনা। আমি আছি তো!দেখ,এইসব ছেলেরা বেসিক্যালি খুব লোভী হয়। তুই টাকার টোপ দিলে বোধহয় গিলে ফেলবে।"
---"টাকা?কত টাকা?"
---"কথা বলে দেখতে পারি। এইসব ছেলে সব করতে পারে তনুজা।তাই আমার মনে হয় টাকাপয়সা দিয়ে যদি ব্যাপারটা মিটে যায়-----"
----"ঠিক আছে তুই কথা বল।"
----"ওকে,চল উঠি। রাতে ফোন করবো। তবে সাবধান!এইসব কথা ভুল করেও কাউকে বলতে যাস না।সায়নদার কানে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।"
ক্যাফে থেকে বেরিয়ে অন্যমনস্কভাবে হাঁটছিলো তনুজা।অ্যামাউন্টটা বড়ো হলে তার পক্ষে জোগাড় করা মুশকিল। তাছাড়া সমস্যা থেকে আপাতত মুক্তি পেলেও, সেটা যে চিরকালীন হবে তার গ্যারান্টি কোথায়?
---"হ্যালো তনুজা?"
---"হ্যাঁ বল চৈতি, কথা হলো?"
---"দশের কমে কিছুতেই রাজি হচ্ছেনা রে।আমার ভাবতে অবাক লাগছে এই ছেলেটাকে তুই একদিন ভালোবেসেছিলি!"
---"দশ লাখ!কোথায় পাবো এতো টাকা?"
---"এর অন্যথা হলে তোকে চরম বিপদে ফেলতে দু'বার ভাববে না বলেছে। আমি বলি কি,যেমন করে পারিস টাকাটা জোগাড় কর।"
সন্ধ্যে প্রায় আটটা, গলির ভেতর একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্টে বসে ঘনঘন ঘড়ি দেখছিলো অভিক।
দোকানে খদ্দের কম।অভিক ইচ্ছে করেই এরকম একটা জনসমাগমহীন দোকানে আসতে বলেছে ওদের।একটুপরেই চৈতিকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলো তনুজা।
----"আরে এসে গেছো?বসো,কি খাবে বলো?"
---"বাজে কথা ছাড়ো, তোমার কথামতো পুরো ক্যাশ এতে আছে। কিন্তু এটা পাওয়ার পর তুমি যে আবার আমায় ব্ল্যাকমেল করবে না,তার গ্যারেন্টি কোথায়?"
তনুজার দেওয়া টাকার প্যাকেটটা ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে কালো দাঁতগুলো বেরিয়ে এলো অভিকের।
---"দেখো এটুকু বিশ্বাস তোমার আমাকে করতেই হবে। কথা দিচ্ছি এ বান্দা সিক্রেট ডিসক্লোজ করবে না।হাজার হোক একদিন তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে।তবে হ্যাঁ,কাল ক্যায়া হোগা ও তো আনেবালা কালহি বাতায়েগা।"
---"কাল যা হবে সেটা দেখার সৌভাগ্য আপনার হবে কি মিস্টার অভিক?"
---"কে?কে আপনি?"
---"বলছি,এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? এমনিতেও এই দোকানের ভেতর যাদের দেখছেন,তারা প্রত্যেকে পুলিশের লোক, এমনকি ঐ ওয়েটারগুলো পর্যন্ত।অতএব আপনার পালানোর রাস্তা বন্ধ।আমার সাথে থানায় গিয়ে আজকের রাতটা লকআপে কাটান।কাল কোর্টে চালান করে দেবো।এই ব্যানার্জী, ওনার ফোনটা সিজ্ করো।"
কটমটিয়ে চৈতির দিকে তাকালো অভিক।
অফিসার সেটা লক্ষ্য করে বললেন---
"চিন্তা করবেন না, হিসেব মতো উনিও আপনার সঙ্গী হবেন।"
চমকে উঠলো চৈতি!
---"আ--আ--আমি কি করেছি?"
----চৈতিদেবী,তনুজাদেবীর হবু বর সায়ন আমার বিশেষ বন্ধু।এই সায়ন উঠে আয়।"
কোনের টেবিলে মাফলারে মুখ ঢেকে বসে থাকা ভদ্রলোকটি উঠে এলেন।
---"হ্যাঁ যেটা বলছিলাম,তনুজাদেবী আপনার বারণ না শুনে সব কথা অকপটে খুলে বলেন সায়নকে।সায়ন আমার হেল্প চায়।অভিককে ট্রেস করার জন্য আপনার ফোন ট্র্যাপ করে আসল সত্যিটা জানতে পারি।অভিকবাবুর সঙ্গে তনুজাদেবীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ফটোগুলো সুপার ইমপোজ করে ওনাকে ব্ল্যাকমেল করার এই প্ল্যানে গোড়া থেকেই আপনি অভিকবাবুর সাথে ছিলেন। টাকার জন্য আপনি এতটা নীচে নামতে পারেন,এই কথাটা তনুজাদেবীকে বিশ্বাসই করাতে পারিনি প্রথমে।"
চৈতি আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে------
"তার মানে তুই সব আগে থেকেই জানতিস তনুজা?"
ঠাসিয়ে একটা চড় মারলো তনুজা চৈতির গালে।
---"এখনো তুই কথা বলছিস বেইমান?"
এতক্ষণে সায়ন মুখ খুললো---
"শুনুন ওই ফটোগুলো যদি আসলও হতো, তবুও তনুজার সাথে আমার বিয়েটা আটকাতো না। জীবনের পথে চলতে গিয়ে অনেকসময় নর্দমার নোংরা জল গায়ে এসে পড়ে। পোশাকটা বদলে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ঠিক আছে চলি রে অমিত। অনেকটা হেল্প করলি।"
----"আরে এটা তো আমার ডিউটি।"