Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

4.5  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

নিঃসঙ্গতার বিকেল

নিঃসঙ্গতার বিকেল

4 mins
711



বিকেল ৫ টা।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয় হেমেন ।

হেডফোন আর মোবাইলটা নিয়ে ছাদের দিকে

রওনা হয়।চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো কাটে

নি।

বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে ছাদের দিকে

এগোচ্ছে।বাড়িটা দোতলা তাই ছাদে যেতে এত

সময় লাগে নি।ছাদে উঠতেই গেটটা ধাক্কা

দিয়ে খানিকটা সরিয়ে দেয়।গেটটা সরাতেই

পশ্চিম দিকের ঢলে পড়া মিষ্টি আলোটা চোখে এসে লাগে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখটা ঢেকে

নেয়।তারপর আবার হাতটা সরিয়ে মিষ্টি

রোদের আলোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে

নেয়।

আস্তে আস্তে ছাদের বাঁ দিকে যেতে শুরু

করে হেমেন। বাঁ দিকে একটা বসার জায়গা

আছে সেখানে গিয়ে বসে হেমেন। ঘুম ঘুম চোখে

পকেট থেকে হেডফোনটা নিয়ে মোবাইলে প্লাগ ইন

করে।তারপর মিউজিক প্লেয়ারে গিয়ে

অহসানের “তোমায় নিয়ে ” গানটা ছেড়ে দু-

কানেই হেডফোন গুঁজে দেয়।ফুল সাউন্ডে

গানটার সাথে তাল মিলাতে থাকে আর দু-হাতে ভর করে নিচে পা টা নাড়াতে থাকে।

ইদানীং হেমেনের চুল আর দাড়ি একটু বড় হয়ে গেছে।এমন না যে কাটতে সময় পায় না। সময় পায় কিন্তু নিজের প্রতি একটা অবহেলা

কিছুদিন ধরে কাজ করছে ওর ভিতর।আর

এমনিতেও চুল আর দাড়ি বড় রাখতে ভাল লাগে

হেমেনের । চুল আর দাড়ি বড় রাখার পিছনে একটা দুষ্টু গল্প আছে: /// ক্যাম্পাসে একদিন কবিতার সাথে বসে থাকার

সময় হেমেন অন্য একটা মেয়ের দিকে তাকায় আর

কবিতা তা লক্ষ্য করে খুব রাগ করে।কবিতার রাগ ভাঙানোর অনেক চেষ্টা করে হেমেন,কিন্তু কিছুতেই রাগ ভাঙানো যাচ্ছিল না।অবশেষে

যখন হেমেন কবিতাকে একটু হাসিয়ে দেয় তখন

কবিতা হেমেনের বড় চুলগুলো ধরে একটা মোচড়

দেয়।আর দাড়িগুলা নাকি কবিতার খুব পছন্দ

হতো, তাই ও দাঁড়িগুলো রেখে দেয়।

এখন আর কবিতা এই দুনিয়াতে নেই কিন্তু ওর

ভাল লাগার স্মৃতি হিসেবে এই দাড়ি আর চুলগুলা

রেখে দিয়েছে।চুল মাঝে মাঝে কাটলেও দাড়িতে

কোন প্রকার কাঁটাছেড়া করে না হেমেন । ৫ বছর আগে ব্রেষ্ট ক্যান্সারে মারা যায় কবিতা।

তার আগে প্রতিদিন বিকেলেই দুজন ছাদে উঠে হাত ধরে গান গাইত আর বিকেলটাকে উপভোগ করতে।যা এখন হেমেন একাই করে।

///

বলতে বলতে অনেক সময় পার হয়ে গেল,

গানগুলোও একের পর এক চেঞ্জ হতে লাগল।এতক্ষণ প্রতিটা গানের সাথেই তাল মিলাচ্ছিল হেমেন । এখন “আমি শুনেছি সেদিন তুমি” গানটা বাজছে।

বসার উচু স্থানটা ছেড়ে পশ্চিমের রেলিংটার

সামনে গিয়ে দাড়ায় হেমেন ।সামনের ডুবন্ত

সূর্যের দিকে চেয়ে গানটার প্রথম দুটি লাইন

বলছিলো হেমেন :

>আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরেরও ঢেউ চেপে

>নীল জল সমুদ্র ছুঁয়ে এসেছ।

লাইনটা বলার পরই কেন জানি হেসে দেয়

হেমেন ।মুচকি মুচকি হাসে।তারপর গানের ধ্যান

ভেঙে মনের কথায় মগ্ন হয়ে পড়ে।নিজে

নিজেই বলতে থাকেঃ

কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি।সত্যি খুব মনে

পড়ছে তোমার কথা।তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?

খানিকটা মনস্থির করে আবার মুচকি হেসে

ভাবতে লাগেঃ

তুমি তো চলে গেছ।কিন্তু তোমার দেয়া একটা জিনিস আমাকে খুব ভালবাসে আর আমিও

তোমার মতোই ওটাকে ভালবাসি।ভালবাসার

যে অভ্যাসটা করে দিয়ে গেলে তা কখনোই

ভোলার মতো নয়।

সূর্য ডুবতে আর খানিক সময় বাকি।সন্ধ্যা

সন্ধ্যাভাব।পিছ থেকে ছোট পায়ের দৌড়ানোর একটা আওয়াজ পাওয়া গেল কিন্তু হেমেন তা শোনার মতো নয়।কারন কানের হেডফোনের আওয়াজে বাইরের কিছুই শোনা যায় না।সূর্য্যকে ডুবতে দেখে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়ে হিমেল।

পশ্চিমেই তাকানো আর রেলিংটার উপরে হাত

দুটো দেয়া।

কেউ একজন হিমেলের ডান পা দু হাত দিয়ে

কষে ধরে নিয়েছে।এতক্ষনে ধ্যান ভাঙলো হেমেনের । নিচে তাকাতেই পায়ের পিছন থেকে চাঁদের মতো একটা হাসি ফুটে উঠল।তা দেখে হেমেনও একটা মুচকি হাসি দিয়ে উঠল।কান থেকে

হেডফোনটা নামিয়ে কষে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিল

হেমেন । হাতটা ছাড়াতেই মুখটা ঘুরিয়ে চলে যেতে লাগল। পিছনে ঘুরতেই হেমেন ঝাপটা মেরে ধরে

জিজ্ঞাসা করতে লাগলঃ >কি হয়েছে মামনি।পাপার সাথে কি রাগ করেছ?


হেমেন যার সাথে কথা বলছে সে তার ৫ বছরের মেয়ে কথা ।

কথা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।হেমেন

হাসতে হাসতে আবার জিজ্ঞাস করেঃ > বলনা মামনি কি হয়েছে?

কথা হেমেনের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে

আমতা আমতা করে বলেঃ > তোমার সাথে কথা বলব না।

>কেন মামনি?

কথা পাকামো ভাব ধরে বলেঃ >তুমি পচা।ঘুম থেকে উঠে একাই ছাদে চলে এসেছ।

হেমেন দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলেঃ > কেন মামনি?তুমি কি ভয় পেয়েছ?

কথা একটু রাগি ভাব করে বলেঃ >না।আমি ব্রেভ গার্ল।আমি ভয় পাই না। >ও তুমি তো পাপার ব্রেভ গার্ল আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কথা ভুরু কুঁচকে বলেঃ >আবার আজ আমার বার্থডে,তুমি আমাকে চকলেটও দাওনি।তোমার সাথে কথা নেই।

হেমেন জিভে কামড় দিয়ে কানে ধরে বলেঃ

>সরি মামনি আমি ভুলেই গিয়েছি।মাফ করে

দাও।

কথা রাগ ভেঙে বলেঃ

>ঠিক আছে।কিন্তু আমার চকলেট দাও।

হেমেন দাঁড়িয়ে গিয়ে কথাকে বলেঃ

>পকেটে একটা যাদুর রাজ্য আছে ওখানে হাত

দাও পেয়ে যাবে।

কথাটা শুনে ততক্ষনাৎ পকেটে হাত দেয় কথা ।

আর পকেটে থাকা চকলেট গুলি নিয়ে খুশিতে

লাফাতে থাকে।

আর হেমেন বলে উঠেঃ >হ্যাপি বার্থডে মামনি।এখন খুশি তো? কথা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। তারপর হেমেন কথাকে কোলে নিয়ে পশ্চিমের আকাশে চেয়ে মনে মনে বলেঃ> দেখেছ।তোমার মেয়ে কত বড় হয়ে গেছে।আজ ৫ বছর হলো।ও সম্পুর্ন তোমার মতো।রাগ করে থাকতেই পারে না।

সূর্য সম্পুর্ন ডুবে গেছে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তাই

হেমেন কথার সাথে কথা বলতে বলতে নীচে

চলে যায়।আর শেষ হয়ে আরেকটা নিঃসঙ্গ

বিকেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance