Sucharita Das

Inspirational

2  

Sucharita Das

Inspirational

নিঃসঙ্গতা

নিঃসঙ্গতা

3 mins
1.8K


পার্কের বেঞ্চে বসে অমর বাবু ভাবছে,"ধূর এই নিঃসঙ্গ জীবন থাকার থেকে চলে গেলেই তো ভালো। কি লাভ বেঁচে থেকে। শুধু শুধু নিজের কষ্ট, আর তার সঙ্গে অন্যকে কষ্ট দেওয়া নানা শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে। আর যাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকার ইচ্ছা ছিলো, সেই যখন রইলো না, তখন আর কি হবে বেঁচে থেকে।" 

"কি ভাবছো অমর দা এতো?" পাশে এসে বসলেন কমলবাবু। এই বছর দুয়েক হলো রিটায়ার করেছেন। আর তাই রোজ সকাল বিকেল পার্কে একটা চক্কর দিয়ে যান। সেই সূত্র ধরেই আলাপ হয়েছে অমর বাবুর সঙ্গে। "কিছু না কমল। তোমার বৌদি আমাকে একেবারে নিঃসঙ্গ করে দিয়ে চলে গেছে। আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। সেটাই ভাবছি কি দরকার এমন বেঁচে থেকে। আমিও তো চলে গেলেই হতো তোমার বৌদির সঙ্গে । এভাবে একা তো থাকতে হতো না তাহলে।।এই নিঃসঙ্গতা আমার কাছে অভিশাপ মনে হচ্ছে।"

আসলে অনেক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সকাল বিকালের আস্তানা এই পার্ক। কতো রকমের গল্প যে হয় এখানে। খাওয়া দাওয়া, সিনেমা, থিয়েটার, এমনকি নিজেদের ঘরের সুখ দুঃখ সব। বলা ভালো এই বয়সে একদল সম মনোভাবাপন্ন মানুষ নিজেদের একটা আলাদা জগত তৈরী করে নিয়েছে এই পার্কে র মধ্যে।


 অমর বাবুর মনমরা ভাব দেখে কমল বাবু বললেন, "অমর দা আপনি নিজেকে নিঃসঙ্গ বলছেন তাই তো। কারণ বৌদি আর আপনার জীবনে নেই। কিন্তু অমর দা আপনি তো তাও বৌদির সঙ্গে চল্লিশ বছর থেকেছেন। কতো সুখ-দুঃখের স্মৃতি একসঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। কতো আনন্দ-কষ্ট একে অপরের হাত ধরে উপভোগ করেছেন। বৌদির সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত আপনার বাকি জীবনের বাঁচার পাথেয় হয়ে থাকবে। অথচ আমাকে দেখুন, আমি তো বিয়েই করিনি।না আছে আমার জীবনে আপনজনের সঙ্গে কাটানো কোনো সুখকর মূহুর্ত,আর না কোনো ভালো লাগার স্মৃতি। সারাটা জীবন শুধুই নিজের জন্য বাঁচলাম। একটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটালাম চিরটা কাল। অথচ আপনি নিজেকে নিঃসঙ্গ বলছেন। কেন এরকম ভাবছেন অমর দা। বৌদির সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত কে নিজের স্মৃতির মণিকোঠায় যে সঞ্চয় করে রেখেছেন, তার থেকে রোজ একটু একটু স্মৃতিকে মন্থন করে নিজের বাকি জীবনের বেঁচে থাকার রসদটা জোগাড় করে নিন না অমর দা। আর বাকি সময় আমাদের সঙ্গে থাকুন, বাগান করুন, বই পড়ুন।দেখবেন সময় কোনখান দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে বুঝতেই পারছেন না।


 তারপর হঠাৎই রাস্তার অপরদিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাচ্চা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো , "জানেন অমর দা সেদিন ওই বাচ্চা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন পড়াশোনা না করে ভিক্ষা করছিস। উত্তরে ও কি বললো জানেন, বললো," বাবু যার বাবা, মা কেউ নেই এই পৃথিবীতে ,সে ভিক্ষা ছাড়া আর কি ই বা করবে বলো। কে খেতে দেবে আমাকে। তোমাদের মতো বাবু রা সবাই তো বলে যে কেন আমি ভিক্ষা করছি। কিন্তু কেউ তো এটা বলেনা যে ,চল আমার বাড়ি।তোর বাবা, মা নেই তো কি হয়েছে, আমি তোকে খেতে দেব, তোর সব দায়িত্ব নেব।"

অমর দা আপনি নিজের নিঃসঙ্গতা দেখছেন, ওই বাচ্চা ছেলেটার নিঃসঙ্গতা অনুভব করুন, যে জন্ম থেকেই বাবা,মা হারা।ওর কাছে না আছে আপনার মত কোনো সুখের স্মৃতি আর না আছে কোনো অবলম্বন। যাকে আঁকড়ে ধরে ও বড়ো হয়ে উঠবে। তাই এবার থেকে নিজেকে একা ভাবার আগে আমার কথা, এই বাচ্চা ছেলেটার নিঃসঙ্গতার কথা অনুভব করবেন। তাহলেই দেখবেন নিজেকে আর একা মনে হবে না। আসলে জানেন তো অমর দা, আমরা সবসময় নিজেদের সুখদুঃখের কথা ভাবতে গিয়ে ,এটাই মনে করি যে আমাদের থেকে দুঃখ বোধহয় আর কারুর নেই। কিন্তু যদি আপনি অন্যের দুঃখের সঙ্গে নিজের দুঃখের তুলনা করেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন যে আপনার দুঃখ কতো কম।


এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিলেন অমর বাবু , কমল বাবুর কথা। এবার বললেন, "তোমার কথা গুলো মনে বেশ প্রভাব ফেললো কমল। ভেবেছিলাম জীবনে বেঁচে থাকার আর কোনো মানে নেই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে,আর তো কটা দিন বাঁচব,যে কটা দিন বাঁচব বরং জীবনটাকে ভালোবেসে বাঁচব। তোমার কথায় উপভোগ করে। আর যদি কখনও মনে হয় যে আমার মতো নিঃসঙ্গ কেউ নেই। তখন তোমার কথা গুলো মনে করবো। আর তোমার বৌদির স্মৃতি তো আছেই সঙ্গে। সেটাকে ই বাকি জীবনের সম্বল করে বেঁচে থাকবো। আর শুধু আমি ই কেন, আমার মতো যত নিঃসঙ্গ মানুষ আছে সবাই তো এইভাবেই বেঁচে আছে, কারুর স্মৃতি কে আঁকড়ে ধরে। আর এইভাবেই জীবন এগিয়ে যাবে তার নিজের রাস্তায়।,"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational